জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা, দুর্গাপুর:

৮ই মার্চকে সামনে রেখে, বিশ্বের প্রত্যন্ত প্রান্ত পর্য্যন্ত বিরজমান প্রত্যেক মা, বোন এবং কন্যাসমদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি ; তারা নারীত্ব এবং মাতৃ্ত্বের মর্য্যাদায় গরীয়সী হয়ে উঠুন, এক সোনালী দিনের দাবীতে ঐক্যবদ্ধ হোন - এমনি কামনা করছি।
কখনো কখনো মনে হয়েছে, এসব দিন ঘোষনায়, আসলে আত্মমুক্তির পথকে আড়াল করতে
বিশ্বব্যবস্থায় নারীদের জন্য কোন স্বাধীন সত্বায় নয় - একটি বিশেষ কমিউনিটিগত সত্বায় একত্রিত রাখার অনাদি কাল ধরে চলতে থাকা ব্যাবস্থাকেই
----নতুন আংগীকে স্থায়ী করার আয়োজনের অংগ হয়ে উঠছে কিনা।
---  আবার মনে হয়, এদিন তো অন্ততঃ অনাদি কাল থেকে চলতে থাকা মানবিকতার পঁচন প্রকৃয়া সম্পর্কে দু'চারটি কথা বলার সুযোগ যেমন করে দেয়, তেমনি আত্মবিক্ষারও।

তাছাড়া যতই ভংগুর হোক না কেন, এই দিন মেয়ে এবং মহিলাদের ভেতর তো অন্ততঃ একটি পৃথক সত্বাবোধ জাগ্রত করে।
সাধারন আত্মমুক্তির সংগ্রামকে যদি সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, তবে হয়তো একদিন এক নবচেতনার উন্মেষ ঘটবে।
সেখাবে, বিষয়টি পৃ্থক হওয়ার নয়, সাধারন আত্মমুক্তি এবং ভাবের একাত্মতার প্রশ্নের সাথে যুক্ত ; এই একাত্মতা আবার উৎপাদন সম্পর্কের মানবিক রুপান্তরের প্রশ্নের সাথে যুক্ত।

আমি নিশ্চিত যে যারা সাধারন আত্মমুক্তির সাথে নারী মুক্তির বিষয়টি একসুত্রে দেখতে চান না কিংবা মেনে চলেন এই মুক্তির বিষয়টিকে সামনে না রেখে, শ্রেফ্ সংসদীয় প্রতিনিধীত্বের ভেতর দিয়েই বুঝি প্রকৃ্ত আত্মমুক্তিতে পৌছুনো তারা আমার কথায় হাই হাই করে উঠবেন। কিন্তু,
------- কথা একটাই । যেখান পুঁজির একটি অংশ হীংস্রতার সর্বচ্চো স্তরে আরোহন করার কারনে, যখন জ্ঞান ও সংস্কৃতির এবং শিক্ষা ও জ্ঞানের সেতু বন্ধন ভেংগে চুরমার হয়ে যাচ্ছে ;
------  এবেং তারই সাথে শ্রমিক আন্দোলন এসব প্রশ্নে ক্রমাগত ' নিরপেক্ষ ভূমিকা' নিতে চাইছে তখন সাধারন আত্মমুক্তির বিষয়টিকে বাদ দিয়ে, কেমনভাবে খন্ডীত মুক্তি কোন স্বাধীন সত্বার পথে এগুতে পারবে?

পশ্চীম বাংলায় কয়েক বছর পূর্বেও রাজ্যের প্রত্যন্ত প্রান্তেও রাত বিরেতেও স্বাধীনভাবে মহিলা-মেয়েরা যাতায়ত করতে পারতেম । এখন খোদ কোলকাতাতেই, এক থেকে অন্য পাড়ায় যেতে দুপুর বেলাতেও স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন না।
----  এক কালে নারী নির্য্যাতনের প্রশ্নে  পশ্চীম বাংলার স্থান ছিলো সর্ব নিম্নে ; সে যায়গা পরিবর্তন করে সে এখন সর্বোচ্চ স্থানের অভিমুখ ধরে উল্কার মতো এগুচ্ছে। পূর্বে এরকম সব ঘটনায় মানুষ নিজের মাথায় ব্জ্রাঘাত মনে  করতেন। এখন ঘটনাকেও যখন ইলেক্ট্রনিক বিক্রেতারা ব্যবসার অংগ করেছেন, ভদ্রবাবুরা এতেই দুঃখের উন্মোচনের সাথে সাথে অনেক সময় আত্মতৃপ্তির সুযোগ পাচ্ছেন। আজকাল আবার ক্রাইম শোতে; অল্পবয়সীরা খুব আকৃষ্ট হচ্ছেন। অনুকরনে, সন্ধ্যের সময়ের সিরিয়ালে, অন্ততঃ তিন-চারটে ভিলেন পাওয়া যাচ্ছে। এসব ভিলেনের চরিত্র এখনো সমাজে জন্ম না নিলেও, মিডিয়া তার জন্ম দেওয়াচ্ছেন তাই নয়ঃ সেসব 'ডায়ালগকে জনপ্রিয় করে দিচ্ছে, মহিলা আন্দোলনে বিকৃ্তি ঘটানোর কারনেই।

এই মুহূর্তে এই পরিনতির জন্য নিদৃষ্টভাবে
দায়ী করতে গেলে, অনেক নারী প্রগতিবাদীরাও
ঠাট্টা  করতে শুরু করবেন। তবে কোথায়ো যেঁ
একটা যোগসুত্র রয়েছে সেটা তো মানতে হবে।
দেশে দেশে যেখানে যেখানে  ফ্যাসিবাদের হাত ধরে দাসত্ব আসছে সেখানেই, নাম ও পোষাক বদলে একই ফিল্ম নির্মান হচ্ছে। এদেশে কার্যতঃ
---- একপ্রান্তে শ্রমিক আন্দোলন এবং বুদ্ধিবাবুদের নিঃস্পৃহতা এবং অন্যপ্রান্তে নারী আন্দোলনকে 'নারীত্ববাদে' বদলে দেওয়ার প্রবৃত্তিতে, সংস্কৃতিতেই কার্য্যতঃ নারীর আত্মমর্যায়াদা বৃ্দ্ধি অপেক্ষা, তাদের উপরে সার্বজনীণ অধিকারের দানপত্র নির্মিত হচ্ছে।

নারীমুক্তির প্রশ্নে লেনিনবাদের মুলকথা হোল,
শ্রমের মুক্তি ব্যতিরেখে নারীমুক্তি অনেকটা
'সোনার পাথরবাটীর মতো। সেজন্যেই নারীমুক্তি,
শ্রমিক আন্দোলনের  সব থেকে সম্পৃক্ত বিষয় এবং
--- একই কারনে ফ্যাসিস্তরা এক প্রান্তে
 নারী দাসত্বকে এবং অন্যপ্রান্তে 'নারীত্ববাদ'কে
প্রশ্রয় দেয়।

এদেশের বর্ণপ্রথার ইতিমধ্যে স্থায়ী দাসত্বের পৃষ্ঠভূমী যখন নির্মান করছে, তখন নারী দাসত্বের ভারতে হূহূ করে যেমন বাড়ছে, তেমনি নারীকে সম্পত্তি নির্মানকে সংস্কৃতিতে বদলে দেওয়া হচ্ছে।
ভারতীয় উপমহাদেশের মতো যেসব দেশে, অর্থনীতির স্বয়ংসম্পূর্নতা সমাপ্ত হয়েছে এবং দেশকে আমদানী নির্ভর হতে হচ্ছে
--- সে সব দেশকে সরাসরি কাঁচা  এবং ' নিম্নমানের 'শ্রম' রপ্তানী করে টিকে থাকতে হচ্ছে  বেশী বেশী করে । সেজন্যেই দেখা যাবে  স্বাধীন শিল্প বন্ধ হয়ে
যাওয়ার কারনে, এপার এবং ওপার বাংলা থেকে, নির্মান ও বাড়ীর কাজের জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তেই নয়, বিদেশে বিপুল সংখ্যায় সরকারী ব্যবস্থাতেই বিপুল সংখ্যায় নারী রপ্তানী চলছে । সোস্যাল মিডিয়ার এক সংবাদে প্রকাশ একমাত্র আরব দেশগুলিতেই বিগত কয়েক বছরে একমাত্র আরব দেশগুলিতেই,ভারতের  ৩০,০০০ নারীর মৃত্যু ঘটেছে।
এই সুত্রেই বুঝতে হয়ঃ
সমাজ যদি নিশ্চল হতে থাকে এবং এই নিশ্চলতার কারন হিশেবে যদি unpredictable পলেটিক্সকে চিহ্নীত করা হয়, কেমনভাবে মেয়েরা কোন স্বাধীন সত্বায় ঐক্যবদ্ধ হতে পারবে? সেরকম ঐক্যের অভিমূখ কি পুরুষাভুমিখ হবে? সেখানে যৌবন তো কার্য্যতঃ উদভ্রান্ত হবেই।
----- কে অস্বিকার করতে পারে যে উৎপাদনের সংকট এবং উৎপাদন সম্পর্কের অস্তিরতাই বাংলায় রাজনৈ্তিক স্থিতি ক্রমে lumpenised চরিত্র নিচ্ছে।

কাজেই নারীমুক্তির মতো জটিল বিষয়টকে কোন মনগড়া সাধারনিকরনের নিরিখে বিবেচনায় রেখে
------- আন্তর্জাতীক দিবস উদযাপনের লক্ষটি নিস্ফলা হতে বাধ্য। অখন্ড জ্ঞান ও সংস্কৃতির অভিন্ন লক্ষ সাধনে্র অভিমুখ ধরেই নারীমুক্তির বিষয়টি প্রয়োজন হবে। উৎপাদন প্রকৃয়ার একটি ক্ষুদ্র যায়গায় নারীদের আবদ্ধ রাখায় দায়বদ্ধ থেকে, কি কখনো নারীমুক্তির সংগ্রামকে কোন স্বাধীন সত্ত্বার ঊঠিয়ে আনা যাবে।
 ১৯৭৪ সালে আমি যখন ভারত সরকারের অন্যতম ইস্পাত প্রতিনিধী হয়ে, সোভিয়েত ভ্রমন করেছিলাম, তখন এক দৃশ্য দেখে এতোই পুলকিত হয়েছিলাম যে এখনো ভূলতে পারিনি।
----- ব্লাষ্ট ফার্নেসের নিচে থেকে উপরে তাকিয়ে দেখলাম, কয়েকজন নারী শ্রমিক আমাদের হাত নেড়ে অভিবাদন জানাচ্ছে। খোজ নিয়ে বুঝলাম যে এরা ব্লাষ্ট ফার্নেসের ক্রেন চালিকা।
-------আর আমাদের দেশে এমন সব ট্রেড ইউনিয়ন নেতারাও যারা নারীমুক্তিতে বিশ্বাসী, তাদের মধ্যেও বিস্তৃত ক্ষেত্রে মেয়েদের কাজ প্রসারীত করায় আপত্তি লক্ষ করেছি। আনাদিকাল ধরে চলতে থাকা একটা অন্যায়কে ভাংতে যে ঝুকি নেওয়া এবং সাহস দেখানোর প্রয়োজন তা থেকেও তারা অতীতের কাছে আত্মসমর্পনকে শ্রেয় বলে মেনেছেন। এভাবেই তো আমরা অতীতের কাছে সর্ব প্রশ্নে আত্মসমর্প্ ন করে থাকি।
-----আমার মতে ধীরে ধীরে রাতের সিফটকেও মহিলা শ্রমিকদের খুলে দেওয়া এবং সমগ্র শ্রমিক আন্দোলনকে এই অধিকারের গ্যারান্টার হিশেবে প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন হবে। জীবিকার স্বাধীনতা ব্যতিরেখে কোন দিনই প্রকৃ্ত নারীমুক্তি আসবে না।

নারীমুক্তি আন্দোলনের সম্মুখে যতক্ষন পর্য্যন্ত কর্মরত শ্রমিকদের সামনে আনা সম্ভব না হবে
------, ততক্ষন পর্য্যন্ত এই আন্দোলন বেশীদুর এগূতে পারবে না। এমন কি, সম্প্রতি মহিলা শ্রমিক আন্দোলনের অসংগঠিত অংশে যে গতিমুখ উন্মুক্ত হয়েছে, তার অভিমুখে যদি নারীমুক্তির বিষয়টিকে সামনে আনা না হয়, তবে এই আন্দোলন বেশীদুর এগুতে পারবে না ;
------ক্রমে সংগঠিত শিল্পের শ্রমিক আন্দোলনও দুর্বল হবে। সি আই টি ইউ এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সংগঠনের ভেতরেই একটি নারীশ্রমিক শাখা গড়ে তোলার নেতৃ্ত্ব দিয়েছেন। অজ্ঞানতার কারনে, ভেতর থেকেই এই বাধা এসেছে।ক্রমে এই সংগঠন নিশ্চিতভাবেই এগিয়েছে।ফলও পাওয়া গেছে। কিন্তু প্রকৃ্ত অভিমুখ দুর্বল থাকায় গতিমুখে আন্দোলন খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলেছে।

যাইহোক এককালে নারী সম্পর্কীত অভিমতের জন্য কার্ল মার্ক্স কালান্তরেও তিরস্কৃত হতে হয়েছে ।
-------আমি একথা বলছিনে যে তিনি তার প্রতিটি কথাতেই অভ্রান্ত ছিলেন। ইতিহাসই শেষ কথাটি বলবে। নারীমুক্তির বিষয়টি যে উৎপাদন সম্পর্কের সাথে যুক্ত তা আজ প্রমাণিত।
------- Communist Manifestoতে, এই প্রসংগে বলা তার কথা কয়টি তুলে রেখে যদি আজকের পোষ্টিংটি শেষ করি তবে অনুচিত হবে বলে মনে হয়; " .... what the Communists might possibly be reproached with, is that they desire to introduce, in substitution for a hypocritically concealed, an openly legalised community of women. For the rest, it is self-evident that the abolition of the present system of production must bring with it , the abolition of the community of women springing from that system, i.e. prostitution both public and private."

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours