জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা, দুর্গাপুর:

বুদ্ধসমাজ চেতনার কিঞ্চিত নিজেতে আত্মস্ত করার মধ্য দিয়ে, যতই  বৈদিক কালকে সমাজ চেতনায় নিয়ে আসার চেষ্টা হয়ে থাকুক না কেন
---- এই  উদারতা এক প্রান্তে যখন বর্ণশ্রেষ্ট ব্রাহ্মনদেরকেই তুষ্ট করতে চাইলো, তখন সেই বৌদ্ধিক সমাজের সার্বজনীনতা সংকোচনের নীতি, ব্রাহ্মন এবং রাজপুতদের বাইরের সব বর্ণগুলিকে আরো খন্ড খন্ড করে, সেই অংশের মানুষদের লৌহদৃঢ় শেকলে বেঁধেছিলো।
---- ভারতীয় ইতিহাসের আগামী ঊষাকালে, যখন শ্রমিক নেতারা ভারতীয় অতীতের নৃ্তাত্বীক গবেষনায় যাবেন, তারা দেখবেন --- বৌদ্ধিক সত্বা আগ্রাসন এবং পরে, ইসলামকে ম্লেচ্ছ বানাতে গিয়ে
---- বৌদ্ধ উত্তর সমাজকে  ক্রম বিবর্তীত (metamorphosis)    বৈদিকেরা তাদের   সাহিত্যের ৩৩৫  কোটি দেব-দেবী যাগজজ্ঞ সম্বলিত স্বর্গের রাজদরবারের বস্বতা স্বিকার করাতে গিয়ে সভ্যতাকে
প্রত্যেক বর্ণগত অবস্থানের পারস্পরিকতা একে অপরের দাসত্বে বদলে দিয়েছিলো। বর্ণাশ্রমকে আরো শক্তবাধুনীতে বেঁধে, ইসলাম কিংবা পরে বৃটিশদের হাত ধরে, ঢুকে যাওয়া পাশ্চাত্বের প্রগতীর অভিমুখকে  আটকে দিতে এবং বাংলা প্রেসিডেন্সিতে চিরস্থায়ী ব্যবস্থা চলে আসার পর,
----- এক একটি বর্ণকে আরো শত ধারায় বিভক্ত করা হয়, কৃ্ষির উপরে সামন্তিক নিয়ন্ত্রন বহাল রাখতে হয়। শুধু শোষিত বর্ণগুলির পারস্পপরিকতাতেই, অসংখ্য দাতা-গ্রহীতা সম্পর্ক নির্মান হয়েছে তাই নয়,
---- ভ্রাহ্মনদের মধ্যেও 'গোত্র'তেই কেবল নয়, নানা 'শ্রেনী' নির্মান করে দাসত্বের সংস্কৃতিকে পাকা-পোক্ত করা হয়েছিলো। যারা ব্রাহ্মন্য সমাজের সাথে যুক্ত তারা যানেন, সেই সমাজেও পূজো-আছরা-শ্রাদ্ধ যাগ-যজ্ঞের সাথে যুক্ত, তাদের থেকে বেড়িয়ে এসে ক্রমে এক অভিজাত ব্রাহ্মন সম্প্রদায় নির্মীত হয়েছিলো। এদের অনেকে যেমন চিরস্থায়ী বন্দ্যোবস্ত এবং 'ম্লেচ্ছ' সাহেবদের দয়ায়, জমিদার হয়েছিলেন। হিন্দু-মুসলমান দ্বন্দ্ব নিচে নামার কারনো এখানে। সেখানে সামন্তিক শোষনকে বজায় রাখতেই একপক্ষ যক্ষন বৃটিশ সহায়তা নিয়েই একপ্রান্তে বর্ণাশ্রমকে কঠিন থেকে কঠিনতরা করেছে, অন্যপ্রান্তে বর্ণহিন্দুদের সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে উস্কানোর কাজ করেছে।
----- অন্যদিকে ব্রাহ্মন্য বর্ণের মধ্য বিভাজন পরস্পরের সম্পর্কের মধ্যে যেমন প্রাচীর তুলেছে, মেয়দের দাসগন্য করার প্রকৃয়াকে সামাজিক মর্য্যাদা দিয়েছে। ব্রাহ্নন সমাজে  মেয়েদের দেবী বানিয়ে অন্যবর্ণেড় মেয়েদের তুল্যমূল্যে উচুতে স্থান দেওয়া হলেও, নিজ সমাজে সেই দাসের যায়গাতেই রাখা হয়েছে। পারিবারিক সুত্রেই দেখেছি, অসবর্ণ বিবাহকে যখন 'মৃত্যু দন্ড তুল্য' অপরাধ গন্য করা হয়েছে, তখন ব্রাহ্মনদের এক শ্রেণীর সাথে অন্যশ্রেনীর বিবাহকেও
সামাজিক স্বিকৃ্তি থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। ব্রাহ্মনদের রাঢ়ী, বারেন্দ্র, ভরদ্বাগ ইত্যাদি শ্রেনীতে বিভক্ত করা হয়েছিলো।

দুই।

খৃষ্টজন্মের আট'শতাব্দীতে আদী সংকরাচার্য্যের সময় থেকে বৌদ্ধ সমাজের ঝারাই বাছাই এর কাজ যে দ্রুততা পেলো, তার পর থেকেই, বৈ্দিক আধারিত মুক্ত সমাজকে অন্ধ কারাগারে নিয়ে আসার কাজ শুরু হয়। তবে ইতিমধ্যে, কুশান সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা এবং এই কুশানরা বৌদ্ধ ধর্মকে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা হিসেবে গ্রহন করায়,আদি সংকরাচার্য্যের নিদান বেশীদুর এগুতে পারে নাই।
---- ইতিমধ্যে ১০০০ সালে  গজনীর সুলতান মামুদের  ভারত আক্রমন এবং ১০২৭ এর মধ্যে  ১৭ বার এই আক্রমনের ঝঞ্জা বজায় রেখে, ভারতে, সুলতানী সাম্রাজ্যের ভিত্তি স্থাপন এবং  ১১০০ সাল নাগাদ মহম্মদ ঘূরী দ্বারা স্থায়ীভাবে সেই সাম্রাজ্য প্রিতিষ্ঠা
--- ,পঢ়ে ক্রমান্বয়ে পাঠান ও মোগলদের ৬ শত বছরের শাসন ইত্যাদির মধ্যে ইসলাম থেকে দূরে থাকা এবং সনাতনি ব্রাহ্মন্য সমাজকে 'ম্লেচ্ছ' ধর্ম থেকে দূরে সরিয়ে রাখা এবং পরে দু'নম্বর 'ম্লেচ্ছ' পাশ্চাত্য সভ্যতা থেকে দূরে  রাখার নামে
---- টোল সর্বস্য শিক্ষার দৌলতে, আদ্দিকালের বর্ণাশ্রম সর্বস্য নারী বিদ্বেসী হিংস্রতা ফুলে ফলে বিষবৃক্ষ হয়ে, বৈ্দিক সভ্যতার  যে সনাতনি রুপান্তরন ঘটেছিলো,
---- তাই, কয়েক শতাব্দীর অজ্ঞতা এবং কুঃসংস্কারের বিষ বহন করে এনেই, সেই সনাতনি সমাজই, আজকের দিনের, অনেকটা 'করোনার'ই মতো বর্তমান 'হিন্দুত্ব পুনঃজাগরনি সভা। ।
তিন।

শিরোনামায় যেমনটি বলা হয়েছে,
সেই প্রথম সভ্যতার পরম্পরার সুত্র ধরে বৈদিক সভ্যতার এবং বৌ্ধ্য ব্যবস্থার ইতিবাচকতা, ইসলামের নবজাগরনের ইতিবাচকতা সুত্র ধরে ইতিমধ্যে একদিকে বস্তুবাদের অনুমান ধর্মীতা,  অন্যদিকে গৌ্রাঙ্গ-বৈষ্ণব, সুফি, নানক, রামকৃষ্ণ ইত্যাদির  পরম্পরা যেঁ উদারবাদের বিকাশ ঘটিয়েছিলো, তাই বৃটিশ কালে একপ্রান্তে  পাশ্চাত্য শিক্ষা এবং অন্যপ্রান্তে একের পর এক বিদ্রোহের ছ্বটাই
ক্রমে সনাতনি সমাজের মধ্যেই ভাংগন ধরাতে শুরু করে
----- একপ্রান্তে রামমোহন, ঈশ্বর চন্দ্র,  বিবেকানন্দ, ব্রাহ্ম্য সমাজ আর্য সমাজ ইত্যাদির পত্তনে  সমাজ সংস্কার অন্য প্রান্তে প্রথমে পাশ্চাত্য শিক্ষার আলোকে,
যুক্তিবাদী বিদ্যার দরজা উন্মুক্ত হয়ে যায়। এদের মধ্যে ঈশ্বর চন্দ্রের পাদপ্রদী; ধরে ডিরোজীয়ো ইংরাজী শিক্ষার আলোক বর্তিকা এবং বিক্ষাত কোলকাতা ক্লাবের প্রণপুরুষের যায়গাটি দখল করেন।

অনুরুপভাবেই,
বৃটিশ শাসনের প্রয়োজনেও, বিপুল সংখক কেরানী, গোমস্তার প্রয়োজনে সংকুচিত হারে যুক্তিবাদী শিক্ষার বিস্তার ঘটিয়েছিলো।
সব মিলিয়ে সনাতনি ব্যবস্থার বুক চিরেই  একটা অভিজাত সম্প্রদায়
বেড়িয়ে এসেছিলো।
এরাই একদিকে ভারতের প্রথম প্রজাতান্ত্রিক দল হিসেবে  কংগ্রেস  নির্মান, ভারতে যুক্তিবাদি শিক্ষার বিস্তার এবং  পরে বিশ্ব পরিস্থিতির মানবিক মহাবিদ্রয়ের ছোয়ায় সাম্যবাদী দল এবং মেহনতীদের সংগঠন নির্মানের মধ্য দিয়ে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন এবং  স্বাধীনতা উত্তর কালের রাজনীতিতে
পরিবর্তনকামীতার উপাদানগুলিতে শক্তি যুগিয়েছে,
এই মন্থন থেকেই রবীন্দ্রনাথের আবির্ভাব,  উত্তোরকালে কল্লোলযুগের সাহিত্য,
এবং আই পি টি এ আন্দোলনের উত্থান ঘটে।

চার।

সোস্যাল ডাইনামিজমের নিয়ম এটাই যে
যখন  সে উন্মুক্ত হতে চায়, তবে সমাজের অগ্রবর্তী উপাদান গুলি যেমন ইতিবাচক  প্রভাব বিস্তার করে থাকে, তেমনি নেতিবাচক দিকগুলিও উলটো দিকে প্রভাব বিস্তার করে থাকে।
উলটো দিকে যখন কোন বিপ্লবী উদ্যোগ নেতিবাচক দিকগুলিকে যদি ভাষিয়ে নিয়ে যাওয়া না হয়, যেমনটি চিনে হয়েছে,
---- নেতিবাচক দিকগুলির বিশ্বপ্রভাব এবং অতি অতীতের নেতিবাচকতা রুপান্তর কামীতাকে তো  বটেই, ঔপনিবিশিকতা বিরোধী আন্দোনকেও গিলে খেতে চায়।
এসব নিয়ম কার্য্যকরী থেকেই, কংগ্রেসের স্বাধীণতা আন্দোলনকেই নয়, স্বাধীনতা উত্তর কালের সামাজিক সন্তুলনকে নেতিবাচক দিকে প্রভাবতিক করেছে । এখানে সনাতনি সমাজ এবং  হিটলারবাদের একাত্মতা মরক ধরানোর শক্তির উপাদান যুক্ত করেছে।
পরবর্তী কালে বিশ্বায়নের নেতিবাচক সন্তুলনের সাথে উল্লেখিত  উভয় নেতিবাচকতার সাথে  তথাকথিত উদার বুর্জয়া দলগুলিতে নেতিবাচক ঢল
ভারতীয় জাতীয়তাকেই চরম বিপর্য্যয়ে ঠেলেছে।

সেখানে, সেই স্বাধীনতা আন্দোলন উত্তর কালের সংস্কার আন্দোলনকে নবজাগরনের পথে ঠেলে নিয়ে যাওয়া, রেনেশাকে পুনঃজাগরন ঘটিয়ে মানবিকতার পথ উন্মুক্ত করার সাথে সাথে উদারবাদের ঝড়তি-পরতি বিপ্লবী অংশের  সাথে
----- সাম্যবাদী একাত্মতাই, আসন্ন ফ্যাসিবাদি অভ্যুত্থানকে আটকানো সম্ভব। (ক্রমশঃ)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours