শুভ্রা গুপ্ত, ফিচার রাইটার ও আইনজীবী, বারাসাত, কলকাতা:

জন্মদাত্রী মানে যিনি জন্ম দিয়েছেন, অর্থাৎ যিনি প্রকৃতির সকল নিয়ম মেনে, নিজ গর্ভে সন্তান ধারন করে মা হয়েছেন।
আর জগদ্ধাত্রী হলেন জগতের মাতা, অর্থাৎ কিনা, ইনি প্রকৃতিগত ভাবে মা হতে না পারলেও, হয়তো প্রকৃত মা হতে পেরেছেন বলেই ইনি জগদ্ধাত্রী।
কথায় বলে : - " মা হওয়া নয় মুখের কথা, যে না বোঝে সন্তানের ব্যথা, প্রসবিলেই হয়না মাতা!!! "
 মা শব্দের ব্যপ্তি অনেক, জন্ম দিলেই যে মা হওয়া যায়, এমনটা যদি সবসময় সত্যি হত, তাহলে হয়তো অনাথআশ্রমে একটিও শিশু পাওয়া যেত না! কিন্তু, আজও এত মেকানিক্যাল যুগে অনাথআশ্রমের অস্তিত্ব আমাকে ভাবায়। আবার, আজকের আধুনিক মায়েরা কেবলমাত্র একটি করে সন্তান জন্ম দিয়েই গর্বিত, পারলে পুরো পৃথিবী টাই সন্তানের হাতে তুলে দেন, কিন্তু, ভাবেন না একবারও যে, পৃথিবীটা না দিয়ে যদি শুধু মাটিটা ওর হাতে তুলে দিই, তাহলে হয়তো একটা গোটা পৃথিবী আমার সন্তান নিজে তৈরী করে আমাকে দেবে। মা যতই ঐশ্বর্যের অধিকারী হোন বা না হোন, মা যদি সন্তানকে ধনী, মধ্যবিত্ত, গরীব, সমস্ত স্তরেই মানিয়ে চলা বা তাদেরকে বোঝার মত করে মানুষ করতে পারেন, তাহলে বৈষম্য অনেকটা কমে, কিন্তু সব মা তা পারেন না, উল্টে সন্তানকে কুশিক্ষা দিয়ে বড় করে তোলেন।
আবার এমন মাও থাকেন, যারা হয়তো নির্দিষ্ট কোনও সন্তানকে জন্ম দেননি, কিন্তু, শিক্ষায় রুচিবোধে, ধর্মে মায়ের সঠিক দায়িত্ব পালন করে, সুসন্তান গড়তে পেরেছেন। আগে আমাদের সম্পর্ক গুলো মা, কাকিমা, জ্যেঠিমা, মাসিমা, মামীমা, পিসিমা, ঠাকুমা, দিদিমা নামে সম্বোধন করা যেত, তাই হয়তো তারা জন্ম না দিলেও মায়ের একটা ভূমিকায় থেকে যেতেন, যে খামতি টুকু মায়ের কাছে থেকে যেত, সেটা হয়তো এরা কেউ না কেউ সমাদরে পূর্ণ করে দিতেন তাদের ভালবাসার, শিক্ষার বিভিন্নতা দিয়ে, তাই যদি কোনও সন্তান মাতৃহারাও হতো, সে মা নেই এটা বোঝার আগেই অনেক বড় হয়ে যেত। আর এখন পিছন থেকে মা গুলো উঠে গিয়ে, আন্টি শব্দে, পিপি, মিমি, দিদা, ঠাম ইত্যাদিতে ছোট হতে হতে শিশুদের মনগুলোও ছোট হয়ে যাচ্ছে ক্রমশ, যা কিনা একটি সামাজিক রোগ। তাই বলি, সন্তান মানুষ করা এত সহজ নয়!
অনেক সময় দেখা যায়, অনেক নারী মা হতে অক্ষম, কিন্তু, অন্তরে সে মা, তার কাছে সন্তান থাকলে আদর্শ সন্তান হতে পারতো, কিন্তু পরিবার তাকে বাজা নাম দিয়ে দূরে সরিয়ে রাখে, এমনকি নিজেদের সন্তানদেরও তার কাছে ঘেষতে দেয় না, যত্ত নীচু মানষিকতার প্রকাশ আর কি !   আজকাল অবশ্য অনেকেই এই বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে গিয়ে দত্তক, সরোগেট পদ্ধতি, আই এফ ভি পদ্ধতিতে মা হতে সক্ষম হয়েছেন এবং জন্মদাত্রী অহংকারী মায়েদের তুলনায় অনেক ভাল মা হয়ে সমাজে দৃষ্টান্ত গড়েছেন। তবুও, কোথায় যেন একটা সামাজিক ঘাটতি রয়ে গেছে, অথচ, এরাই আমার কাছে জগদ্ধাত্রী মা, যারা অন্যের সন্তানকেও আপনতা দিয়ে, রক্তের সম্পর্ক ছাড়াই বড় করে তুলছেন।
তাই অহংকারী মায়েদের বলি, নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি  বদলান! ভাবুন, মা সারদাদেবী, মাদার টেরিজা সন্তানের জন্ম না দিয়েও, কত সন্তানের মা হতে পেরেছেন, কত সন্তানের মুখে হাসি তুলে ধরেছেন!  কিন্তু, জন্মদাত্রী মায়েরা কি আদৌ জগদ্ধাত্রী মা হতে পেরেছেন?

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours