তিয়াসা ভদ্র, লেখিকা, কল্যাণী, নদিয়া:

করোনার দাপটে এখন বিশ্ব জুড়ে টালমাটাল। সেটা মানুষের সাধারণ জীবনযাপনই হোক, বা আন্তর্জাতিক স্তরের অর্থনীতি। একটার পর একটা দেশ লকডাউন, স্কুল-কলেজ বন্ধ, উপচে পড়ছে হাসপাতালগুলি। কেউ গোমূত্র পান করে হাসপাতালের বেডে, কেউ বা রীতিমত মন্ত্র পড়ে করোনা তাড়ানোয় উদ্ধত। কিন্তু একবার ভালো করে ভেবে দেখলেই বোঝা যাবে, এই করোনা-আতঙ্ক কিন্তু মূলত মিডিয়া বাহিত। লোকজন যেভাবে সাবধান হওয়ার থেকে বরং ভয়ে সিধিঁয়ে আছে-- তা নিতান্তই ভ্রান্ত!
বিশ্বের মহামারির ইতিহাস ঘাটলেই উঠে আসবে এমন সব তথ্য, যা নিঃসন্দেহে রোমহর্ষক। ঊনবিংশ কিংবা বিংশ শতাব্দীর প্লেগ, কলেরার মত ভয়াবহ মহামারিতে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে গ্রামের পর গ্রাম সাফ হয়ে গিয়েছিল। কয়েক বছর আগের ইবোলা ভাইরাসকে ভুলে গেলেন? মৃত্যু সম্ভাবনা ছিল ৯০ শতাংশের বেশি। নীপা ভাইরাস, জিকা ভাইরাস, সার্স-এর মত আরো ঢের বেশি মারণাত্মক জীবাণুর সাথে মানবজাতি আগেও লড়েছে। এমনকি প্রতি বছর বহু মানুষ টিবি-তে আক্রান্ত হয়ে মারা যান, দারিদ্র্য সীমার নিচে থাকা বহু শিশু অনাহারে মরে প্রতি বছর! ভারতীয় উপমহাদেশে সেই সংখ্যাটি নিঃসন্দেহে করোনা আক্রান্তদের থেকে একশো গুণ বেশি। তাদের নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় কিংবা উচ্চ মহলে এতটা শোরগোল হতে দেখা যায় না কেন? করোনাভাইরাস অবশ্যই সংক্রামক, কিন্তু এটা ভাবা উচিত-- আক্রান্তদের থেকে আপনার শরীরে করোনাভাইরাস যতটা সংক্রমণ ঘটাবে, ততটাই সংক্রমণ ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসও ঘটাবে। অথচ এই মুষ্টিমেয় ভাইরাস নিয়ে বিশ্ব জনগন এমন চাপানউতোর চালিয়ে যাচ্ছেন, যেন ভাইরাস তাঁরা জীবনে প্রথমবার চোখে দেখলেন! দিনের শেষে কিন্তু এই করোনাভাইরাসের মৃত্যু সম্ভাবনা সেই তিন শতাংশই থাকছে!
উপর মহলে এই নিয়ে শোরগোলের কারণ অবশ্যই আছে। বিদেশী এই ভাইরাস আক্রান্ত করলে সবার আগে করবে উচ্চবিত্ত মানুষকেই-- যারা নিয়মিত বিদেশ ভ্রমণে যান। লন্ডন-ফেরত আমলার পুত্র নবান্ন চত্বরে ঘুরে বেড়াতেই একেবারে নড়েচরে বসেছেন নবান্নকর্মীরা। বিরোধী দলও নিজেদের ত্রাতা প্রমাণ করতে উঠেপড়ে লেগেছে সাধারণ মানুষকে গোমূত্র খাওয়াতে। যে দেশে প্রতি বছর হাজার হাজার অনাহারে শিশুমৃত্যু হয়, চিকিৎসার অভাবে প্রাণ হারায় বহু নিম্নবিত্ত মানুষ-- সে দেশে ৩% মৃত্যুহার জনিত এই ভাইরাস নিয়ে মাতামাতিটা বিলাসিতাই বটে!
তবে সাবধান তো থাকবেন অবশ্যই। দেশবাসীর মৃত্যু কখনোই কাম্য নয়। WHO ইতিমধ্যেই নভেল করোনাভাইরাসকে বিশ্ব-মহামারির আখ্যান দিয়েছে। আপনার হয়তো বয়স কম, আপনি হয়তো এক সপ্তাহ জ্বরে ভুগে সেরে উঠবেন-- কিন্তু আপনার থেকে সংক্রমিত হওয়া কোনো সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ, কিংবা কোনো ডায়বেটিস রোগী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে পারেন। সুতরাং অপ্রয়োজনীয় প্যানিক থেকে বেরিয়ে এবার বরং বুদ্ধমানের মত নিজেকে সংযত রাখার চেষ্টা করুন। নিজেকে ভাইরাস-মুক্ত রেখে দেশসেবা করাই হয়তো এই করোনা-ক্রান্তিকালের স্রেষ্ঠ পন্থা।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours