দেবর্ষি মজুমদার, লেখক, বীরভূম:

হিন্দু সম্প্রদায় মৃতদেহ দাহ করার আগে  মুখাগ্নি করে। সেই মুখাগ্নির জন্য জায়গা দিলেন মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ। ভিন সম্প্রদায়ের মানুষের হাত দিয়ে শিলান্যাস করা হল মুখাগ্নিতলার। সাম্প্রতিককালে সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্পের মধ্যে সম্প্রীতির এই নজিরবিহীন ঘটনার সাক্ষী থাকলেন উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ। ঘটনাটি ঘটেছে বীরভূমের ময়ুরেশ্বরে।
ময়ূরেশ্বরের কানাচি গ্রাম পঞ্চায়েতের মুরুলিডাঙ্গাল গ্রামের রাস্তা তৈরি করতে গিয়ে হারিয়ে যেতে বসেছিল মুখাগ্নিতলা। রাস্তা সেই জায়গা এসে পৌঁছায় মুসলিমদের লাগোয়া জমিতে।  এনিয়ে বিবাদের সৃষ্টি হয়েছিল। বিবাদ থামাতে নিজের জমি দান করে হিন্দুদের শেষকৃত্যে মুখাগ্নিতলা নির্মাণের সুযোগ করে দিলেন গ্রামের ইদ্রিশ শেখ। গ্রাম পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে সেই মুখাগ্নিতলা উন্নয়নের জন্য টাকা বরাদ্দ করা হল। তার জন্য জায়গা দিয়ে সরকারি কাজের প্রথম ভিত কাটলেন ইদ্রিশ শেখ। মুরুলিডাঙ্গা গ্রামে উভয় সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস। হিন্দু সৎকার হিসাবে শ্মশান যাত্রার শুরুতেই মৃতদেহের মুখাগ্নিতলায় শেষকৃত্যের একটি পর্ব হয়।  গ্রামের শেষ প্রান্তে রাস্তার ধারে মৃতদেহ নামিয়ে সেখানেই দীর্ঘদিন ধরে মুখাগ্নি করে আসছিলেন গ্রামের মানুষ। কিন্তু রাস্তা নির্মাণের সময় খাস জমিতে থাকা মুখাগ্নিতলা হারিয়ে যায়  রাস্তা বেড়ে ওঠার সাথে সাথেই। গ্রাম থেকে মল্লারপুর যাওয়ার রাস্তা তৈরি হয় মুখাগ্নিতলার ওপর দিয়েই। ফলে ক্রমশ পিছিয়ে যায় মুখাগ্নিতলা। কিন্তু পিছলেও সেখানে সরকারি খাস জমি ছিল না। বাধ্য হয়ে সেটা গিয়ে দাঁড়ায় গ্রামের ইদ্রিশ শেখদের পরিবারের জমিতে। সে নিয়ে কোনও কোনও শরিকের মন কষাকষি শুরু হয়ে যায়। হিন্দুরা নিজেদের স্বার্থে জমি কিনে নেওয়ার উদ্যোগ নেয়। এলাকার সমাজসেবী দেবব্রত মণ্ডল কথা বলেন শেখ পরিবারের সঙ্গে। কারন ওই পরিবারের সদস্য ইদ্রিশ শেখ তৃণমূল কংগ্রেসের কানাচি এলাকার অঞ্চল সভাপতি।     মুখাগ্নির জন্য সেই জায়গা তিনি দান করলেন হিন্দুদের।  দেবব্রত মণ্ডল জানান, তার এই দান গ্রামের মানুষ চিরদিন মনে রাখবে।  জমিটা না পেলে অসুবিধা হত।  মুখাগ্নিতলা উন্নয়নে অর্থ বরাদ্দ করে কানাচি গ্রাম পঞ্চায়েত। পঞ্চায়েত প্রধান নিবেদিতা দাস জানান, মুখাগ্নিতলার পাঁচিল নির্মানে ৪ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। সে টাকায় কাজ শুরু হয়েছে।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours