ভবানীপ্রসাদ ভট্টাচার্য, ফিচার রাইটার, দুর্গাপুর:

বিদ্যার্নব  সস্নেহে  কন্যার  মাথায়  হাত  বুলাতে  বুলাতে  বললেন," কিছু  পথ  পেলি?"
          মাটির  দিকে  চোখ  রেখে  বললো "হয়তো  পাবো বাবা"
           তারপরই  বিদ্যার্নবকে  প্রশ্ন  করল " বাবা  তুমি  কি  বেদের  সব  কিছুই  অভ্রান্ত  মনে  কর?"
বিদ্যার্নব  বললেন," হ্যাঁ বাবা  আছে  বেদ ও পুরানে সর্বত্র  নারীর ধর্ম সম্পর্কে  বলা  হয়েছে   সে  স্বামী-সেবা , সন্তান  উৎপাদন  ও প্রতিপালন   করবে! একমাত্র  মার্কন্ডেয়  পুরাণে  মদালসা  ও অলর্কের  কাহিনী  বর্নিত  হয়েছে!  অদ্বৈতবেদান্ত  দর্শনের  পর এল  ব্রাক্ষ্মন্যবাদ! যাঁরা  সমাজের. হাল  বললেৃ! তাঁরা তত্ব আর অধ্যয়নের মধ্যে নিজের সীমাবদ্ধ রাখলেন না, সামাজকে নিয়ন্ত্রন করতে লাগলেন! দিতে শুরু বললেৃ নানা সামাজক  বিধান! স্বর্গবাসের সুলুক সন্ধান আর নরকবাসের  শাস্তি! যদিও বেদে ' নরক' শব্দটি না! কিন্তু  পুরাণ ও  সংহিতাগুলিকে  হাতিয়ার  করে নেমে বললেৃ ব্রাক্ষ্মন্য সমাজ! তাঁদের চিন্তাধারায় সাংঘাতিক প্রভাবিত হ'ল সাধারন মানুষ! দুইহাজার বছর ধরে এই সামাজিক অবক্ষয় চলছে! তখনই স্হির হয় ধর্ম শুধু  পুরুষের  অধীন থাকবে! নারীর নয় - নারী হচ্ছে নরকের কীট- নরকের দ্বার!"
          বিদ্যার্নব নিরুত্তর!
হটী আব ার বলতে লাগলো,"কিন্তু আপনারা বলেন আদি শঙ্করাচার্য ভগবান! গৌতমবুদ্ধ নবম অবতার! সন্ন্যাসজীবনে তিনি স্ত্রী সংসর্গ বর্জিত! কিন্তু তিনি কখনো নারীত্বের অপমান করেন নি! সন্ন্যাস জীবনে গর্ভধারিনী মায়ের সাথে মুখোমুখি বসে স্ব ধর্মের ব্যাখ্যা দিয়েছেন! প্রিয় শিষ্য ' যশ' এর  স্ত্রীকে ধর্মোপদেশ দিয়েছেন! বৈশালীরাজ ও নগরীর বনিকদের আমন্ত্রন উপেক্ষা করে প্রতিমা আম্রপালীর গৃহে একরাতের আশ্রয় চেয়েছেন এবং নির্দিধায় রাত্রিযাপন করেছেন! গুরুদেব আপনি বলতে পারেন? দুহাজার  বছরের  ব্রাক্ষ্মন্য ধর্মে  এরূপ  কোন  উদাহরন  খুঁজে  পাবেন? না, পাবেন  না! কারন  গার্গী- মৈত্রেয়ীরা  বা  তাঁদের  কোন  উত্তরসুরীরা  পুরাণ  বা  সংহিতা  রচনা  করেন  নি! পুরুষরাই  লিখেছেন -ভর্তানিরুপন, পুরুষধর্মের  বিবরন! পরাশর  সংহিতায়  লিপিবদ্ধ  করা  হয়েছে , কামের  বশবর্তী হয়ে  পর নারীতে   উপগত  হলে  কী কী  প্রায়শ্চিত্ত! কিন্তু  আশ্চর্য, পরাশর  মুনীর  একবারও  মনে  হল  না  সেই  হতভাগিনীর  কথা! যে পুরুষের  লালসার  শিকার  হয়েছে, সেই  ধর্ষিতা নারী কিভাবে  সমাজে  পুনঃ প্রতিষ্ঠা  পাবে?  শ্রীমদ্ভাগবত  গীতায়, শ্রীকৃষ্ন  অর্জুনকে  বলছেন,"স্ত্রীষু দুষ্টাষু  হলে ' বর্নশংকর  সন্তান  ' জন্মগ্রহন  করে! অর্জুন  নির্দিধায়  সমর্থন  করলেন!কিন্তু  তাঁর  একবারও  মনে  হল  না, জরাসন্ধ  তাঁর  কারাগারে  এক লক্ষ  দুষ্টা নারীকে  এক  কল্পকাল  বন্দী করে  রাখলেও  তারা  একটিও  বর্নশংকরের  জন্ম  দিতে  পারে নি!
আসলে  অর্জুনও  ব্রাক্ষ্মন্যধর্মের  দ্বারা  প্রভাবিত! তিনিও মানতে  চাননি  পাপ  নারী  একা  করতে  পারে  না! তার  পাপের  অর্ধেক  তার  বাকী  অর্ধেক  পুরুষের! (চলবে)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment: