সজল বোস, সমাজকর্মী, দুর্গাপুর:

এমনই কথা আজ বলতে হবে তাঁর সম্পর্কে তিনি ১১২ বছর বয়স্ক। বর্তমানে বিশ্বের বয়স্কতম এই মানুষটির নাম বব ওয়েটন নিবাস  ব্রিটেনের হ্যাম্পশায়ার কাউন্টির অলটন শহরে। কিন্ত তাঁর সাথেও সেই করোনার কর্নার কিক রয়েই গেলো।

'কি যে করি এই আতঙ্ক যেনো পিছু ছাড়ছে না কারুর। বিরক্তি আর একঘেয়ে হলেও এটাই বাস্তব আর ভয়েরও। তাই তো নিজেকে আবদ্ধ করে ফেলছি। কোরেন্টাইন এই হোমে।' নিজের জন্মদিনের শুভলগ্নে বিশ্ববাসীকে এমনই বার্তা দিলেন পৃথিবীর প্রবীণতম মানুষটি। করোনা প্রতিরোধ সচেতনতার আলোকে।

গতকালের দিন অর্থাৎ ২৯-০৩-২০২০ রবিবার  ১১২তম জন্মদিনটি ছিলো এই মানুষটির। আর তার উত্তেজনা, সংবাদ বা পারিবারিক ও বন্ধু পরিচিতদের সমাগম হবে না তাই আবার হয়? তাই হবার কথা কিন্তু ঐ যে করোনা ভয়।

এই দিনটির জন্য পূর্ব পরিকল্পনা ছিলো বিশাল। শতাধিক জন সমাগম জাঁকজমক ও বিনোদনের আসর ছিল নির্ধারিত।
জাপানের চিতেতসু ওয়াতানাবের মৃত্যুর পর গত মাসে মি. বব ওয়েটন হলেন  বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক মানুষ।

কিন্তু জন্মদিনে তিনি গতকালটা (রোববার) কেয়ারহোমে তার ছোট ঘরে কাটালেন স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টাইনে।
সংবাদ মাধ্যম সংস্থাকে তিনি বলেন, "সবকিছু বাতিল, কেউ আসবেনা, কোনো উৎসব হচ্ছেনা।"
মি. ওয়েটন বলেন, কোনো লুকোনো নুশখা নেই তার বেঁচে থাকার । তবে তিনি মনে করেন, নিজেকে কখনই বৃদ্ধ হতে দিতে চান নি, কোনদিন মৃত্যুর কথাও ভাবেননি।
তিনি মনে করেন, বইপড়া থেকে শুরু করে উইন্ড-মিলের মডেল তৈরির মত নানা বিষয়ে  তার আগ্রহ তাকে এতদিন পর্যন্ত  বাঁচতে সাহায্য করেছে।

প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বেঁচে যাওয়া বব ওয়েটন করোনাভাইরাস নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন কারণ, তার মতে, পুরোপুরি বোঝা যাচ্ছেনা এই ভাইরাস কতটা ভয়ঙ্কর?  এবং বাঁচতে গেলে ঠিক কি করতে হবে?  কি জানি শেষ পর্যন্ত কী হয়?
কীভাবে এই ভাইরাসকে কব্জা করা যাবে,বিশ্বযুদ্ধের সময় আমরা জানতাম কী করতে হবে, আমাদের লক্ষ্য কী... কিন্তু কেউ এখন পর্যন্ত জানেনা।

স্প্যানিশ ফ্লু নামে একটি ভাইরাস মহামারিতে ১৯১৮ সালে বিশ্বজুড়ে পাঁচ কোটিরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছিল, তখন মি. বব ওয়েটনের বয়স ছিল দশ বছর। তিনি আক্রান্ত হন নি।

ঐ বয়সে তিনি তখন তেমন কিছুই বুঝতে পারেন নি , কারণ তার পরিবারের কেউ বা কোনো ভাই-বোন বা ঘনিষ্ঠ ঐ রোগে মারা যায়নি।
সেসময় একজন শিশুর জগত প্রাপ্তবয়স্কদের জগতের থেকে একদম আলাদা ছিল। ঐ সময় শিশুরা সাংবাদ পত্র পড়তো না রেডিও বা টেলিভিশন  ছিলনা ফলে জানার প্রশ্ন নেই।

এখনতো নানা দিক থেকে আসা খবরে ছোট-বড় সবাই জানতে পারে। কত পরিধি কত ব্যাপ্তি।
তাঁর মতে করোনাভাইরাস নিয়ে যতসব ভুল ধারণা- কি বলছে হু।
এই ভাইরাস কি? এলো কোত্থেকে, ছড়ালো কিভাবে?
১৯১৮ থেকে১৯২০ স্প্যানিশ ফ্লু প্যানডেমিকের সময় মানুষকে সাবধান করতে সর্বত্র লাগিয়ে দেয়া হতো পোস্টার।

১১২ বছর বয়সে তিনি দেখেছেন বহু ঘটনা আর সাক্ষী হয়ে আছেন বব ওয়েটন। এই জীবনে তিনি দেখেছেন  পাঁচজনকে ব্রিটিশ রাজ-সিংহাসনে  বসতে। দেখেছেন ২২জন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ও ২১ জন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। আর এই সময়ে স্প্যানিশ ফ্লু, কলেরা এবং গুটি বসন্তের মত ভয়াবহ মহামারি থেকে সুরক্ষিত ছিলেন। দুর্ভাগ্য যে করোনাভাইরাসের কারণে ১১২ তম জন্মদিনে তাঁর  প্রিয়জনদের সান্নিধ্য বৃদ্ধ এই মানুষটির জন্মদিন পালন আর হলো না।

এই খবর জানার পর হয়ত সকলের মন বিষন্ন হলেও সামাজিক দূরত্ব আর সংক্রমণের হাত থেকে সকলকে সুরক্ষিত রাখতেই তাঁর এই সিদ্ধান্ত বড়ই প্রাসঙ্গিক। হয়ত জন্মদিনের এই আনন্দকে ব্যতি রেখে মানুষকে সচেতন ও বিপদগ্রস্থ হবার হাত থেকে বাঁচাতে এই পদক্ষেপ।

আমরা তাঁর আড়ম্বরপূর্ণ জন্মদিন তাঁকে উপহার দেয়া গেলো না। তবুও পৃথিবীর অন্য প্রান্ত থেকেও তাঁর জন্মদিনে তাঁকে জানাই অনেক অনেক শুভেচ্ছা আর ভালোবাসা,  সুস্থ্য থাকুন ভালো থাকুন আর দীর্ঘজীবি হোন এই প্রার্থনা করছি।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment: