দেবর্ষি মজুমদার, লেখক, বীরভূম:

করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করতে অভিনব পন্থা নিল বীরভূমের এক গ্রামের। যদিও ব্লক প্রশাসনের তরফে আশ্বাস দিয়ে গ্রামবাসীদের বলা হয়েছে, আপনারা আতঙ্কিত হবেন না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।   গ্রামের বাসিন্দারা গ্রামে ঢোকার মুখে ‘ বাঁশ ও তারকাটার বেড়া’ দিয়েছে। তাতে লেখা ‘ রামেশ্বরপুর গ্রামে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষেধ’। একইভাবে গ্রামের আরেক প্রান্তে প্রবেশমুখে একই ব্যবস্থা। রয়েছে পাহারাদের ব্যবস্থা।  এই পথ অবরোধের জেরে দেখে নিষিদ্ধ গ্রামের চেহারা নিলেও,  সুরক্ষার জন্য এই ব্যবস্থা বলে দাবি গ্রামের বাসিন্দাদের।   নলহাটি ১ ব্লকের কয়থা-১ পঞ্চায়েতের অধীন পাঁচ পাড়ার রামেশ্বরপুর গ্রাম। এখানে মোট ভোটার দুই হাজার। বেশিরভাগ খেটে খাওয়া মানুষ। তাদের মধ্যে থেকে প্রায় জনা পঁইতাল্লিশেক গ্রামবাসী ভিন রাজ্যে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করে সংসার চালায়। তাদের মধ্যে ১২ জন ফিরে আসে গ্রামে দিন ছয়েক আগে। তাদের জন্য গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সুকুমার বিশ্বাস, গ্রামের বাসিন্দা পেশায় কন্ট্রাক্টর তাপস কুমার বিশ্বাস এবং গ্রামের বাসিন্দারা মিলে তাঁদের রামেশ্বরপুর অবলাবালা মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রে ‘সেলফ কোয়ারিন্টীনে থাকার ব্যবস্থা করেছেন। তাঁদের ১২ টি মশারি দেওয়া হয়েছে। ৬ ফুট দূরত্বে পরস্পরের বিছানা।
তাপস কুমার বিশ্বাস বলেন,  তৃণমূলের উপপ্রধান সুকুমার বিশ্বাস এবং আমি দুজনা মিলেই তাদের দৈনন্দিন দুবেলা খাবার, টিফিনের ব্যবস্থা করেছি। টিফিনে মুড়ি, শসা, চানাচুর, চা ইত্যাদি থাকে। দুপুর ও রাতের খাবারের মেনুতে থাকে ভাত, সবজি, ডিম। গ্রামের বাসিন্দা অজয় সিংহ  বলেন, গ্রামে বহিরাগতদের ঢুকতে দেওয়া হয় না। গ্রামের ভিতর কাউকে ঘোরাঘুরি করতে দেওয়া হয় না। খুব প্রয়োজন যেমন চিকিৎসা পথ্য, খাবার কেনা ছাড়া কাউকে গ্রামের বাইরে যেতে দেওয়া হয় না। আবার প্রশাসনের সঙ্গ ছাড়া কাউকে গ্রামের ভিতর ঢুকতে দেওয়া হয় না। লকডাউনকে সর্বাত্মক করতে এই ব্যবস্থা।  এম এসকে তে ‘সেলফ কোয়ারিন্টীনে’ থাকা যতীস লেট বলেন, আমি পাঞ্জাবে কাজ করতাম। ৬ দিন আগে গ্রামে ফিরেছি। গ্রামের বাসিন্দা বিশ্ব লেট, দীপঙ্কর লেট বলেন, আমরা যারা ৬ দিন আগে ফিরেছি তাদের কেউ কেরালা, পুনে, জলপাইগুড়ি, পাঞ্জাবে, বর্ধমানে কাজ করত। আমি কেরালায় হোটেলে ম্যানেজার ছিলাম। গ্রামে আমাদের পরিবার ও অন্যান্যদের সাথে বিচ্ছিন্ন করে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। আসার পর পরিবারের লোকজন দূর থেকে আমাদের দেখে চলে যায়। নিয়ম অনুযায়ী এখন ১৪ দিন এখানে থাকতে হবে। আগে নলহাটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে টেস্ট হয়েছে। প্রায় প্রতিদিন স্বাস্থ্যকর্মীরা আমাদের চেক আপে আসেন।  নলহাটি-১ বিডিও জগদীশ চন্দ্র  বাড়ুই বলেন, গ্রামবাসীদের বলেছি, রাস্তা বন্ধ করার দরকার নেই। বহিরাগত কেউ এলেই আমরাই তাদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছি। যাঁরা এসেছেন তাদের পরীক্ষা হয়েছে। তাঁরা নিজের বাড়িতেও সেলফ কোয়ারিন্টীনে থাকা যায়। আপনাদের মাধ্যমে মানুষকে অযথা আতঙ্কিত হতে মানা করছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment: