সীমন্তী দাস, লেখিকা, কলকাতা:

সেই ২০০২/২০০৩ সালে এই শিল্পাঞ্চল জুড়ে যেন এক উল্টো হাওয়া।কর্মী সংখ্যা কমাতে গোল্ডেন হ‍্যান্টসেক ,কারখানা বন্ধ হয়ে যাবার আশঙ্কা,প্রাইমারি স্কুল, সেকেন্ডারি স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়া সব মিলিয়ে এক অস্থির পরিস্থিতি।
আর তাই শিল্পাঞ্চলের শিল্পচর্চা যেন এসবের চাপেই আরো কোনঠাসা হয়ে পরলো।
এহেন পরিস্থিতিতে শহরের প্রাণের পরশকে বাঁচিয়ে রাখার তাগিদ উপলব্ধি করেছিলেন এই শহরের এক সংস্কৃতিপ্রেমী দম্পতি।

 "রনজিৎ গুহ ও মধুমিতা গুহ।"

এই শহরের মানুষদের নিয়ে তারা এক মিলন মেলার আয়োজন করেন ২০০২সালে।যার নাম দেন
"আমাদের দোল উৎসব।"
এই আমাদের কথাটির মধ্যেই লুকিয়ে আছে তাদের মনের কথা।তাঁরা কখনোই এই শব্দটির সমার্থক হিসাবে "গুহ পরিবারের" কথা বলেননি।বলেছেন গোটা শিল্পাঞ্চলের মানুষের কথা।সেই মানুষ যারা আজ পঞ্চাশ বছর নিজেদের মধ্যে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছেন।
যেখানে ভোজপুরী হোলি গান,পাঞ্জাবের ভাঙড়া, বাঙলার বাউল সবাই তার নিজস্বতা নিয়ে একই মিলনমেলায়।যেখানে  শুধুমাত্র ফাগের আগুন গায়ে মেখে মনের শুদ্ধিকরন।

অনেকেই বলতে চেয়েছেন শান্তিনিকেতনের অনুকরণ।সত্যিই কি তাই? রবি ঠাকুর সব ঋতুকেই তার গানে কবিতায় আবাহন করেছেন।তাই শান্তিনিকেতনে হয় বসন্তোৎসব।অন‍্য ঋতুকে ঘিরেও এমন উৎসব হয় সেখানে।তাই এই দোল কখনোই অনুকরণ নয়।
এই উৎসব সকলকে আপন করে নেয়।আমাদের দোল।
তাই পাঁচ থেকে আশি একসাথে নাচে ,গায়,গাল গল্পে মেতে ওঠেন।প্রায় শ'পাঁচেক লোকে মিলিত হয় দোলের দিন সকালে।নানা সাজে সজ্জিত হয়ে তারা বসন্তের বন্দনা করেন।তার পর উৎসব তার নিজের রুপ নিতে শুরু করে।নানা রকমের গান,নাচ ,সে এক হৈ হৈ ব‍্যাপার।
এর মধ্যেও থাকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন।যা শিল্পাঞ্চলের কোন এক বিশিষ্ট কবির হাতে তুলে দেওয়া হয়।বিগত আঠারো বছর ধরে এই পুরস্কার পেয়েছেন এই দুর্গাপুর শহরের বিশিষ্ট কবিরা।
পুরষ্কারের নাম,
 "অজিত মোহন গুহ সাহিত্য পুরষ্কার।"
এই পুরস্কার কেন এবং শ্রী অজিত মোহন গুহকে না জানলে হয়তো "আমাদের দোল উৎসবের"মর্ম কথাটি অজানা থেকে যাবে।

শেষে,একটি মজার ঘটনা,
এই শহরের এক বিশিষ্ট অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারবাবু ,এক প্রায় পঞ্চাশ  সুন্দরী ভদ্রমহিলাকে দেখেই যাচ্ছেন।
এই বয়সে?
হতেই পারে।
হোলি হ‍্যায় ভাই।
একটু পরে ডাক্তারবাবু মহিলার সাথে দুকদম নাচার চেষ্টাও করলেন,
এবার আর থাকতে না পেরে জিজ্ঞেস করেই ফেললেন,
আপনার "নি রিপ্লেসমেন্ট"?
মহিলা ভুবনমহিনী হাসি দিয়ে,
গোলাপি ঠোঁটে আঙুল চেপে বলে উঠলেন,
হাটে হাঁড়ি ভাঙতে নেই ডাক্তার বাবু। (ক্রমশ)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours