অর্পিতা মন্ডল, কবি ও চিত্রশিল্পী, কলকাতা:

সম্প্রতি আমেরিকান সিংগার "লেডি গাগা"র একটা নতুন মিউজিক ভিডিও লঞ্চ হলো, নাম "স্টুপিড লাভ"।ভিডিওটি অবশ্যই ইউটিউবে পাওয়া যাচ্ছে।খুব মনোযোগ দিয়ে বেশ কয়েকবার দেখার পরে ঠিক কি উপলব্ধির প্রয়োজন ছিল সেটা বুঝিনি তবে এটা একদমই ঠিক কথা যে, ভালোবাসা সবসময়েই স্টুপিড;তাই নামটি অন্তত যুক্তিযুক্ত বলেই মনে হলো।তিনি কিন্তু বর্তমানে সদ্য একটি প্রেম করছেন।নিউজে এটিও এসেছে যে, তিনি তার রোজের খাতায় ফোঁকা তিরিশটি সিগারেট ও নাকি বন্ধ করতে চলেছেন তার ব্র্যান্ড নিউ ভালোবাসার জন্য।তাহলে এখানেও উপলব্ধিতে এলো, মেয়েরা কেন এতো স্টুপিড হয়!
যাইহোক, ভিডিওটি তে আসি। পুরো গানটি জুড়ে তিনি কোনো এক ফ্যান্টাসি ওয়ার্ল্ডে কখনো পিঙ্ক, কখনো হলুদ আবার কখনো আবীর রঙের ইরোটিক জাতীয় পোশাক পরে গাইছেন ও নাচ্ছেন। দুটি ছেলে যখন একে অপরের সাথে লড়াই করছে, তখন আবার তিনি অদ্ভুত ক্ষমতার অধিকারিণী হয়ে তাদেরকে নিজের হাতের ক্ষমতার বলে উপরে তুলে আছড়ে ফেলছেন মাটিতে ও শেখাচ্ছেন চারিদিকে শুধু ভালোবাসার প্রয়োজন।সবটাই যদিও খুবই কাল্পনিক লেগেছে,কিন্তু তবুও কোথাও একটা ভালোলাগা ছিলো। ওরকম স্ফটিকের পাহাড়ের কাছে যেতে পারা মানেই জীবনের চরম সচ্ছতাকে উপলব্ধি করা। কিন্তু বাস্তব জীবনে স্ফটিক কজন পায়?

যদিও এখনো পর্যন্ত যা বলেছি, কোনোটাই লেখার আসল বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত নয়,তাহলে আসল বিষয়টা কি?আসল বিষয়টি হলো "সাইবার সেক্স"। হ্যাঁ,ভালোবাসাটা এখন সত্যি স্টুপিড হয়ে গেছে; সম্পূর্ণ ভার্চুয়াল একটি পরিকাঠামো গ্রাস করেছে একে। সবটাই ভার্চুয়াল বা সাইবার সেক্স হওয়ার দরুন মানুষ ভুলে গেছে মন কি! মানুষ ভুলে গেছে ফিলিংস কি বা কতটা হৃদয় খরচ করলে কতটা হৃদয় পরিবর্তে পাওয়া যায়!

পুরানো সময়ে, শুধুমাত্র চিঠির আদানপ্রদান ও কালির গন্ধেই মানুষের প্রেম পেতো আর এখন সেটি মোবাইলের অক্ষরে অক্ষরে মাপা যায়। তবে "সাইবার সেক্স" বিষয়টি কিন্তু নিঃসন্দেহে চটকদার ও চটজলদি ভালোবাসার মোক্ষম ট্যাবলেট।এই ইঁদুর দৌড়ের যুগে, সবকিছুই খুব ব্যস্ত তাই প্রেমটাও ব্যস্ত হয়ে উঠেছে নিউ জেনারেশনের কাছে ও ওল্ড জেনারেশন তার সিকিভাগ এপ্লাই করার চেষ্টা করছে এবং এই বিষয়ের কিংবদন্তি উদাহরণ হলো "সৃজিত-মিথিলা"র বিবাহ।
যদিও এখনো পর্যন্ত "ভার্চুয়াল সেক্স"টা কি, তার গোড়াতেও যায়নি তবে এটা ঠিক গোড়াটা সকলেরই জানা কিন্তু বিশ্লেষণটা একটু মন দিয়ে পাঠ না করলে অনেক কিছু অজানা হয়ে যেতে পারে তাই এটি পরে কখনো ব্রিফে আনবো।
এবার আসি "সাইবার সেক্স" কথাটির বিশ্লেষণে।
"লেডি গাগা"র কথাটি প্রথমেই বলার কারণ হলো
'ইরোটিক' কথাটিকে বোঝানো, যেটি "সাইবার সেক্স" এর একটি চরম পর্যায়। যদিও সাইবার সেক্স এ পুরো ঘটনাটির সবটাই স্পর্শ না করে,ভাবনার উত্তেজনায় হারানো কিন্তু অনুভূতি এখানে সত্যি একটা নিবিড় সংযোগ স্থাপন করে মানসিক পরিস্থিতির সঙ্গে। বর্তমান সমাজে মানুষ এতটাই সেল্ফ সেন্টার্ড হয়ে পড়েছে যে, তৃপ্তির অনুভূতিটাও সেল্ফ সেন্টার্ড হয়ে পড়েছে অজান্তেই। তাই উক্ত বস্তুটির পজিটিভ ও নেগেটিভ দুটি দিকই আছে অবশ্যই। পজিটিভ অবশ্যই তাদের জন্য যারা সংসারে একা, কিন্তু যাদের ফ্যামিলি নিয়ে বসবাস, তাদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটি সত্যিই ঘৃণ্য ও নেগেটিভ। সম্পর্কের বাধনগুলি ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে ইন্টারনেট এডিকসান ও সেক্সচুয়াল এডিকসানের মাধ্যমে যার ক্লিনিক্যাল রূপটি মারাত্মক ভয়ঙ্কর।

এখন প্রশ্ন, এর মাধ্যম কি? প্রথম ও মূল মাধ্যম হলো ডিজিটাল টেক্সটিং, ভিডিও কলিং,ইরোটিক মেসেজেস,ইমোজিস অফ লাভ, কিস ইত্যাদি।একটা সময় ছিল যখন একটা কিস পেতে কেউ কেউ জীবনের অর্ধেকটা সময় অপেক্ষা করে কাটিয়েছে আবার একটা সময় যখন পর্নোগ্রাফির জামানা এলো, তখন ইন্টারনেটের ব্যবহার থাকলেও সাইবার সেক্স এতোটা রমরমা ছিল না কিন্তু বর্তমানে এটি বডি অর্গাজমের জন্য একটি খুব সিডাকটিভ বা লোভনীয় মাধ্যম হয়ে উঠেছে যেকোনো জেনারেশনের মানুষের মধ্যে।

কিন্তু তবুও ব্যাপারটা পরিষ্কার হলোনা। তাহলে আরও একটু অন্যভাবে বলা যেতে পারে, এটি আসলেই 'ইরোটিক ফ্যান্টাসিস'কে উপলব্ধি করা ইন্টারনেট এর মাধ্যমে।ফ্যান্টাসি, যা সামনাসামনি থাকা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে আদান প্রদান হয়না বেশিরভাগ সংসার জীবনে। তখন অবশ্যই সেই ছোটবেলার রূপকথার গল্পের মতো এগুলো মানুষের মাথার মধ্যে ঘুরতে থাকে। প্রয়োজন হিয়ে শুধু আদান প্রদান করার অন্য একটি না কয়েকটি মানুষ। আর ঠিক তখনই বয়েস, পেশা, নেশা, পয়সা কোনো কিছুরই খেয়াল মানুষের থাকে না ও বাইজি ঘরে যাওয়ার মতো তারা সোশ্যাল মিডিয়ার ঘিরে উঁকি মারে। খুজতে থাকে কে বা কারা আছে পর পর লাইনে। শুরু হয়ে যায় আদান প্রদানের এ,বি,সি,ডি।তবে, আমি পার্সোনালি এটিকে নরমাল মানুষের মধ্যে প্রয়োগকে একটু অশোভনীয় বলবো কিন্তু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে শোভনীয় বলে আমার মনে হয়।

এটি অবশ্যই আমার সম্পূর্ণ নিজস্ব চিন্তা ভাবনার জায়গা থেকে বলছি ,যে মানুষগুলো বধির বা বাক হারা,ইচ্ছে হয় বাঁচার মতো বাঁচতে কিন্তু উপায় থাকে না,অথবা ক্যানসার আক্রান্ত কোনো মানুষ ইত্যাদি,অথবা ইতিবাচক কিছু মানুষ যারা সংসার ভাঙবে না, সেই মানুষগুলির ক্ষেত্রে আমার মনে হয় এটিকে সম্পূর্ণভাবে গ্রহণযোগ্য করে নেওয়া উচিত কারণ তাদের জীবনটা অনেকাংশ কিছু না পেয়ে থাকার জীবন। তারা সহজেই নিজের জীবনকে সাজাতেই পারে এভাবে। অবশ্যই এটি সব মানুষের নিজস্ব চিন্তা ও চেতনার ব্যাপার, নেগেটিভ তো বটেই,তবুও সুফল ও কুফল নিয়ে মানুষের বাস। পরকীয়া যখন বৈধ হয়েই গেছে ভারতবর্ষে, তখন এই প্রথাটির উপর একটু জোর কম দিলেও বা ক্ষতি কি? কারণ সবটাই তো নিজেরই মন ও নিজেরই মাথা আল্টিমেটলি। তাহলে চিন্তার প্রসার ঘটিয়ে মাথা ও মনকে একটু অন্যভাবে অন্যদিকে উন্নত করাই যায়।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours