জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা, দুর্গাপুর:

শিরোনামাতেই যখন চিনের কথাটা এসে গেলো, তখন শুরুতেই সমাজ বিপ্লবে রননীতি সংক্রান্ত দু'চারটি কথা বলে নেওয়া উচিত হবে। স্মরনে রাখতে হবে, এক আন্তর্জাতীক বাধ্যবাধ্যকতার কারনে, চিন দেশে সংস্কার এসে গিয়েছিলো,
ভারত থেকে অন্ততঃ তিন দশক পূর্বেই।
তখন একপ্রান্তে ভিয়েতনাম যুদ্ধ বিশ্বদ্বন্দ্বের কেন্দ্রবিন্দুতে। আমেরিকা নাপাম থেকে শুরু করে জীবানু যুদ্ধের কোন অস্ত্র প্রয়োগেই পিছিয়ে নেই। চিন এদিকে পাহারের মতো এই যুদ্ধে ভিয়েতনামের পক্ষে।
------ , অন্যদিকে  সোভিয়েত থেকে ক্রুশ্চভ চিনকে'যুদ্ধবাজের' তকমা লাগিয়ে রাজনৈ্তিকভাবে বিচ্ছিন্ন করছে, অন্যপ্রান্তে  সবরকম প্রযুক্তিগত সাহায্য বন্ধ করেছে।
অবশ্য চিন-সোভিয়েত দ্বন্দ্ব স্তালিনের সময় থেকেই শুরু, কিন্তু জন কেনেডির আমলে,  আমেরিকার কিউবা প্রতিরোধের সময় থেকেই ক্রুশ্চভের হটাৎ ডিগবাজী খাওয়ার পর থেকেই এই বিরোধ তুংগে উঠে যায়।আমেরিকার মিলিটারীতন্ত্র যখন সমুদ্র পথে আমেরিকাকে ঘিরে ফেলেছে, সোভিয়েতের আনবিক অস্ত্রবাহীন রনপথ মাঝদড়িয়া থেকেই ফিরে আসে।
---- যযিহোক, ভিয়েতনাম কিন্তু চিনের সব রকম সাহায্য নিয়েও, সোভিয়েতের সাথে সু-সম্পর্ক বজায় রেখেছিলো।
যাইহোক, এই সময়ে ভারত - আমেরিকা - সোভিয়েত সম্পর্কের মধ্যেও কিন্তু একটা চিন বিরোধীতার ত্রিকোন নির্মিত হচ্ছিলো। একদিকে সোভিয়েতের সাথে সম্পর্কের ভিত্তিতে ভারত,  আমেরিকার সাথে দ্বন্দ্ব ও আত্মিকতার এক বিচিত্র সম্পর্ক বজায় রেখে চলছিল । অন্যদিকে চিনের সাথে বিরোধের প্রাচীরটাও শক্ত করছিলো।
------  এদিকে কিন্তু চিন আর্থিক, সামরিক এবং রাজনৈতিক দিক থেকে ভারত থেকে অনেক দূর এগিয়ে গেলেও, প্রযুক্তির দিক থেকে একই গতিতে এগিয়ে যাওয়াটা বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছিলো। প্রসংতঃ বলে রাখা প্রয়োজন, স্তালীনের সোভেয়েতের সাথে বিরোধকালে, চিনের মনোবল অব্যাহত রাখতে - মাও সে তুংকে 'বাঁশের পাইপ বানিয়ে, দেশের অফুরন্ত তেল ভান্ডারে হানা দেওয়ার ডাক দিয়েছিলো। ...আজকাল মনে হয়, চিনকে  যে একটা সময়ে অতিবামের সংকট দানা বেধেছিলো কিংবা তাকে পাকিস্থান সামরিকতন্ত্রের সাথে অবাঞ্ছিত সম্পর্ক রেখে চলতে হচ্ছে,
---- মনে হয়  তার একটা কারন, চিনের প্রজাতন্ত্রকে, যা ইতিমধ্যে সমাজতন্ত্রের কাছাকাছি চলে গেছে, সেটাকে সম্মিলিত কোনঠাসা করার পরিনাম।
এখান থেকেই নতুন গল্পের শুরু,
ইতিমধ্যে আমেরিকার দ্বিমুখীন অর্থনৈতিক সংকট,
প্রথমত সমাজতান্ত্রিক দুনিয়ার হাতে দুই তৃ্তীয়াংশ বিশ্ব বাজার চলে যাওয়া, ভারতের স্বয়ংসম্পূর্নতার পথে এগিয়ে যাওয়ারর ফলে আমেরিয়ান বাজার
সংকট যেমন বেড়েছে
---- অন্যপ্রান্তে, ইলেক্ট্রনিক দুনিয়ায় আমেরিকার বিপুল সাফল্যে এক ধাপে
প্রযুক্তি ক্ষমতা হাজারগুন বেড়ে যাওয়ায়, আমেরিকান সংকট তুঙ্গে। সে সময়
আমেরিকায় রিপাবলিকান সরকারের প্রধান নিক্সন। তার এক অতি চতুর উপদেষ্টা ছিলেন। তার ভিয়েতনাম এবং চিন নীতি, তাকে প্রেসিডেন্ট নিক্সনের
বিশ্ব পরিচিতিকে ডিংগিয়ে গিয়েছিলো। সে কালে ভারতের গড় মধ্যবিত্ত পরিবারের স্কুল ছাত্ররাও তার নাম জেনে গিয়েছিলো, তার ভিয়েতনাম এবং চিন নীতির জন্যেই।
----  উনার নাম কিসিংগার। তার পরামর্শেই ভিয়েতনাম যুদ্ধের অবসান এবং
চিনের সাথে সম্পর্ক ফিরিয়ে আনাকেই, আমেরিকার অর্থনীতিতে ফিরে আসার
সর্ত হিসেবে ঠিক হোল।
এইভাবে ২৭শে ফেব্রুয়ারী, ১৯৭৩ সালে,ভিয়েতনাম যুদ্ধের অবসান চুক্তি সই হোল।কিছুদিনের মধ্যে আমেরিকা সিকিউরিটি কাউন্সিলে চিনের আসনের স্বিকৃতি দিলো তার সাথে শুরু হোল চিন - আমেরিকার যৌথ বানিজ্য এবং শিল্প সম্পর্কের সূচনা হোল।

পরের অংশে আমেরিকা-চিন সহযোগীতা এবং
ভারত-আমেরিকান, অর্থনৈতিক সহযোগীতার
---- উভয়ের পরিনাম, কিভাবে উভয় দেশের
আর্থ-সামাজিক অবস্থানের এবং স্বাধীনতা আন্দোলনের
গতি প্রকৃ্তির উপরে নির্ভরশীল হয়ে উঠেছিলো, সে বিষয়টি
বুঝিয়ে বলার চেষ্টা হবে।
আসলে দুই দেশের সাথে আমেরিয়াকার পারস্পরিকতাই
--- উভয় দেশের জাতীয়তা এবং প্রজাতন্ত্রের  উচ্চতাতেও
হেরফের ঘটেছে, সে সম্পর্কেও ইংগিত রাখার চেষ্টা হবে। (ক্রমশঃ)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours