জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা, দুর্গাপুর:

জাতীয়তার ভেতরকার শক্তি, কোন দেশের আর্থ সামাজিক স্থিতীর গতি প্রকৃতি নির্ধারনে যে কী বিপুল ভূমিকা পালন করে, থাকে সে বোধটাই হয়তো, তার নিদৃষ্ট গতিপথ ধরে এগুতে পারতো না, যদি না অফ্ নিউস পোর্টালে
বিষয়ের উপরে লেখার আমন্ত্রন না আসতো।
লিখতে লিখতেই, সমাজ বিজ্ঞানে পড়াশুনা এবং  প্রয়োগের মধ্যে ফরাকটা বন্ধ করার ভেতরেই তত্ব হিসেবে বিজ্ঞান এবং প্রয়োগ শাস্ত্র বা ফলিত বিজ্ঞান হিসেবে, সমাজ বিজ্ঞানের ফরাকটা চিহ্নিত করা সম্ভব হোত না ।
--- যতটুকু বুঝলাম, জাতীয়তা পরিমাপের মানদন্ড হিসেবে, সাধারন বিজ্ঞান কাজে লাগলেও, সেই বিজ্ঞানকে যত সময় পর্য্যন্ত, প্রয়োগের ভেতর দিয়ে  এক অখন্ড নিরন্তরতায় ইতিবাচক উপাদানগুলির সমন্বয় ঘটিয়েই, জাতীয়তার ভিত্তিকে যেমনভাবে শক্তিশালী ভিত্তির উপরে স্থাপন করা হবে
-----তেমনভাবেই, সে আভ্যন্তরীন ক্ষেত্রে, অতীত ভাবনা চিন্তার এবং বিশ্বপ্রবাহের সুত্রে, নেতিবাচক উপাদানগুলিকে নির্মুল করে জাতীয়তার ভিত্তিকে শক্তিশালী করবে।
এই সুত্রেই বুঝতে হবে,  কোন দেশের জাতীয়তা, শেষ পর্য্যন্ত   ইতিবাচকতা  কিংবা নেতিবাচকতার প্রশ্রয় দেবে, তা নির্ভর করছে, সেই দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা,  পরিবর্তনের ইতিবাচক দিকগুলিকে অথবা নেতিবাচক দিকগুলিকে শক্তি যোগাবে। সমাজ বিজ্ঞানের নিয়মে যদি ইতিহাসের পর্য্যালোচনা করা হয়, দেখা যাবে
------- সোস্যাল ডাইনামিজমের নিয়ম অনুযায়ী,  সমাজের অতি-অতীতের উপাদানগুলি যখন নেতিবাচকতার স্বপক্ষে এবং সমাজের  যুক্তিবাদী অংশ পরিবর্তনের ইতিবাচক দিকগুলির সমর্থনে রাজনৈ্তিক দল ও প্রতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা নিজের মতো করে নেয়। 
দুই।

গতকালের লেখায়, দেখিয়েছিলাম,
----- যে কোন ভাইরাসের মতোই, সনাতনি ব্যবস্থা কিভাবে বৈদিক সমাজচিন্তার ক্রম বিবর্তনের নেতিবাচকতায় উদ্ভুত, একটা ককটেল। প্রথমে বৌদ্ধবাদকে সমাজ থেকে মুছে দেওয়া, পরে ইসলামের সামাজিক সাংস্কৃতিক এবং জ্ঞানগত দিকগুলি থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা,পরে মুস্লিম এবং খৃষ্টানদের ম্লেচ্ছ গন্য করে সব র্মকম আধুনিকতা এবং যুক্তিবাদ থেকে সরিয়ে এনে বৈ্দিক ভাবনাকে ক্রমে প্রগতী বিরোধী সত্বা হিসেবে, সনাতনি রুপে নিজেদের রুপান্তর ঘটায়, প্রতিক্রীয়ার ঢিপি হিসেবে।
ভারত যে 'বিবিধের মাঝে' মিলন মহান সেটা তো ইতিহাস বৈচিত্রেরই দান।এই দানকে মেনে নিয়ে, আজকের দিনের ভাবসমুদ্রের সব থেক একতা বদ্ধ শ্রেনীটিকে সামনে রেখে, সে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ট সৃজনমুখীন গনতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে সে চৈনিক ব্যবস্থাকেও অতিক্রম করতে পারবে
----অথবা সে ইতিহাসের অতলে তলিয়ে গিয়ে, নিজেকে এক অন্ধ ইতিহাসের ক্রিড়নক হিসেবে তৈরী করবে, সেটাই আজকের দিনের কালগত বিধান।

আসুমদ্র হিমাচল বিস্তৃত এই দেশকে
যাদি জাতিয়তার  ইতিবাচকতার কোন অভিমুখে  এগুতে হোত, তবে নীতির আধারে সামন্তিক কালেই ভাবের অখন্ডতা্র পথটিকে চিহ্নিত করতে হোত। খন্ড বিখন্ড রাষ্ট্রীয় সত্বায় কোন অখন্ড সামাজিকতা যেমন গড়ে উঠার সুযোগ ছিল না, তেমনি কোন অভিন্নভাব সত্বায়।
ইতিহাসের দিক থেকে যদি তাকিয়ে দেখা যায় দেখা জাবে, প্রাচীন ভারতে মহেঞ্জোদোরো-হরপ্পার পর, সম্রাট অশোকের পূর্বে কোন সাম্রাজ্য গড়ে উঠার সু্যোগ পায় নাই এবং সেই সাম্রাজ্যের ভাব প্রবাহ, হয়তো বা বৈ্দিক ভাবনার অনেক কিছুকে আত্মিকরন করে নিয়েছিলো, কিন্তু ভাবপ্রবাহ নিয়ন্ত্রিত হয়েছে, মূলতঃ গৌতম বুদ্ধের ভাব সত্বায়।
---- বুদ্ধ ভাবসত্বার এই দিগ-বিজয় যদি এই সত্যকে প্রমান করে,  যে বৈ্দিক সমাজে বিশ্ব সম্পর্কে অনুমান, জীবন ধারা কিংবা সাহিত্যের বিপুল অগ্রগতি ঘটলেও, আসমুদ্র হিমাচল বিস্তৃত কোন মহাসাগরের জীবন বৃত্ত নির্ধারন করার মতো জাতীয়তার ভ্রুনটুকুরো জন্ম হয় নাই তখনো।বহূ শক্তির উত্থান হয়েছে, সীমানা ভেংগেছে এবং বেড়েছে কিন্তু এমন কোন সভ্যতার আত্মপ্রকাশের
সুযোগ পায় নাই যা পারস্পরিকতার ভিত্তিতে  একটি সমাজের বাধুনী নির্মান করে দিতে পারতো।
 অন্যপ্রান্তে সম্রাট অশোককে যদি প্রাচীন ভারতের, শ্রেষ্ট নৃপতি বলে মানা হয়ে থাকে তার প্রধান কারন, তার সাম্রাজ্য আসুমুদ্র হিমাচল ভারতের অধিকাংশ যায়গায় বিস্তৃত ছিলো ।দ্বিতীয় সর্ত বৌদ্ধ ধর্মের ইতিবাচক অভিমুখ বৈ্দিক এবং বৈ্দিক পূর্ব কালের ইতিবাচক সমাজভাবনাকে সুত্রবদ্ধ করে, সেই সাম্রাজ্যের দর্শনগত ভিত্তি দিয়েছিলেন। আবার দুর্বলতা বোধ হয়ে এখানেই , বৌদ্ধ  সমাজ, বৈ্দিক সামাজিক কাঠামোর মধ্যেই, দাসত্বের সব থেকে ধ্বংসাত্মক দিকটিকে এই ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে নাই। সেই বর্ণাশ্রমের রেখে যাওয়া ভ্রুণই সম্ভবত  একপ্রান্তে যেমন ভারতীয় সমাজ কাঠামোর ভিত্তিকে ভেঙ্গেছে, তেমনি বৈ্দিক সমাজকাঠমোকেই 'সনাতনি'তেই নয়, অনেকটা এই 'করোনারই' মতো একের পর এক সভ্যতাকে ধ্বংস করেছে, অন্য সভ্যতার সাথে দেওয়া নেওয়ার পথ বন্ধ করে,
----- ভারতীয় সভ্যতাকে ভেতর থেকে নিজেকে খন্ডিত রেখেছে, ভারতকে বাইরে থেকে বিচ্ছিন্ন কঢ়ে দিতে উপাদান যুগিয়েছে। স্বাধীনতায়, কিংবা দ্বিতীয় যুদ্ধে অথবা স্বাধীনতা উত্তোর কালে কোন অখন্ড অবস্থান নিতে দেয় নাই।
সাধারনভাবে
তৃ্তীয় বিশ্বের সব দেশেই, চিন বা ইন্দোচিনের দেশগুলিকে বাদ দিয়ে কোন দেশই  যুদ্ধোত্তর কালের বিশ্ব পুজির অতিকেন্দ্রিকতার আঘাতকে প্রতিরোধ করতে পারে নাই, কিন্তু অন্য কেউ ভেতর থেকে এতো খন্ড বিখন্ডিত হয় নাই।
সম্ভবত তাই, নেহেরু-স্তালীন চুক্তির বিপুল স্বয়ংসম্পুর্নতার উপাদান যুক্ত
হওয়া সত্বেও
----- ভারতকে এক বিকট আত্মসমর্পনের পথে নেমে আসতে হোল, বিস্মায়ন গ্রহনের পর। বিস্মায়ন উত্তর কালের ভারত এবং চিনের পরিস্থিতির তুল্যমুল্যে
আজকের অবস্থার পারস্পরিকতাতেই বিষয়টি স্পষ্ট হবে।
---- তবু স্মরনে রাখতে হবে, এই ভারত প্রথম ও বৈ্দিক সভ্যতার, ইসলামের  এমন একতা অঞ্চলের  ধারাবাহিকতা, যা আবার আর্য্যদের আদিভূমীর পশ্চাতভূমীতে আত্মপ্রকাশ করেছিলো । এই পরম্পরার সাথে পাশ্চাত্যের স্পর্শে, ঔপনেবিশিক দাসত্বের সংস্কৃতির সাথে রেনেসাঁর আলোর সাথে সাথে দুই মহামানবিক যুদ্ধের  ইতিবাচকতার সাথে সাথে নেহেরু-স্থালীন  চুক্তির ইতিবাচক দিকগুলির উত্তর পুরুষ।

সব মিলিয়ে বুঝতে হবে,
কোন সভ্যতার পরম্পরা যতই সমৃদ্ধ থাকুক না কেন,
সেই সভ্যতা যদি নিজের  জাতীয়তায় ঋনাত্মক
উপাদানগুলিকে যদি সমুল উৎপাঠন করতে ব্যর্থ হয়
---- সেই উৎপাটনে যত শক্তি প্রয়োগ করা প্রয়োজন
হোক না কেন, সেই জাতীয়তা যেমন এক হয়ে
স্বাধীনতার লড়াই লড়তে পারে না, শুধু  অর্থনৈতিক নয়,
রাজনৈ্তিক স্বাধীনতাও হারিয়ে ফেলে।সেখানেই শুধু
বিপর্য্যয় যে থেমে  থাকে না, জাতীয়তার একতা নড়বঢ়ে
শিরদাঁড়া নিয়ে, দুর্ভিক্ষ মহামারি তুফান-ঝঞ্জা তো বটেই
করোনার মত একটা মহামারিকেও স্বতস্ফুর্তার হাতেই ছেড়ে
দেয়।
এই রোগ মোকাবিলায়
আমরা এখন পর্য্যন্ত যেসব ব্যবস্থা নিয়েছি এবং বেশী ভাষন
না দিয়ে যে দৃঢ়চিত্ততার, চিন এই মহামারিকে মোকাবিলা করেছে
তা থেকেই, উভয় জাতীর জাতীয়তাবাদের, নড়বড়ে এবং ঋজু
সত্বার তারতম্য । 'ঈশ্বর না করুন' যদি দ্বিতীয় বা তৃ্তীয় ফেস
কমিউনিটি করোনাতে ছড়িয়ে যায়, স্বতস্ফুর্ততা, নৈ্রাজ্যের দিকে
ঠেলবেই। কাজেই বেশী ভাষন না দিয়ে সামাজিক গনতন্ত্রকে
সম্প্রসারিত করা প্রয়োজন। এটাই চিনের রক্ষা কবচ হিসেবে
কাজ করেছে । (ক্রমশঃ)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours