শামা আরজু, লেখক, বাংলাদেশ:
টিভির একটা বিজ্ঞাপন আমার কানে এসে লাগলো। টিভি দেখা হয় না আমার। যখন অবসর নেবো তখন কেবল ঘুমাতে হয়,ঘুম পায় যে! শুয়ে পড়ার আগ মনে হয় বুঝি ঢলেই পড়ে যাবো।কিন্তু শোয়ার পর ঘুম পলিয়ে যায় অস্থিরতার বাড়িময়।ঘুম না হলে পরেরদিনের সকল দৌড়ঝাঁপ বিঘ্নিত হবে।অগত্যা ঘুমের ওষুধই আপাততঃ ভরসা।
সকাল বেলা উঠে আবার আমার শুরু হয়ে যাবে দৌড়। আমার কাছে জীবনের অপর নাম তাই দৌড়!
বিজ্ঞাপনের কথায় আসি। কথা হচ্ছিলো দুই জেলের মাঝে।এক জেলে আরেক জেলেকে বলছেন, ছেলেকে কাজে নিয়ে আসতে। তাতে আরেক জনের উত্তর দিলেন,জেলের ছেলে কী জেলেই হবে! অমনি গ্রামীনফোনে ফোন আসে - বাবা আমি জিপিএ ফাইভ পেয়েছি! কি অবাক কান্ড! বইতে শিশুদের পড়াই কোনো পেশাই ছোটো নয়। এই বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে কি ছোটো করা হলো না জেলেদের পেশাটাকে।যদি শ্রেণীবৈষম্য রাখতেই হয় তবে বইয়ের ভাষা শিশুদের কেন মিথ্যে পড়াবো? জিপিএ ফাইভ শিশুমনে ভীতির অপর নাম। ফলাফল সন্ত্রাস। গ্রামীণফোনে নয় কেবল।অন্যান্য মিডিয়াগুলিও নিউজ করার জন্য আগে এই রেজাল্টই খুঁজে বেড়ায়।
আমার বিদ্যালয়ে এবার একজন শিশুও জিপিএ ৫ পায়নি । এটা কোন দুঃখ আমার নেই । কারন আমার শিশুরা ভালো নাম্বার নিয়ে পাস করেছে কিংবা মোটামুটি পাস করেছে । আমি আমার প্রায় প্রত্যেকটা শিশুর জীবনের গল্পের ভেতর ঢুকতে চেষ্টা করি। আমার যে শিশুটি আজ জিপিএ ৫ পায়নি বলে আমার মন খারাপ লাগার কথা সেটাও আমার লাগছে না । আমার সেই শিশুটির মা লজ্জায় গ্রামে কাজ করে না অথবা এও বলা যায়, গ্রামে আসলে কাজ নেই। সেই শিশুটির মা শহরে বাসাবাড়িতে কাজ করে । তারপরও তার মাদকাসক্ত বাবা তারই সামনে তার সেই মাকে মারধোর করে। গালিগালাজ তো কোন ব্যাপার না। হ্যাঁ, আমার সেই শিশুটি ভালো নাম্বার পেয়েছে এতেই আমি ধন্য । আমার বিদ্যালয়ের এক কিলোমিটারের মধ্যে দুইটা কেজি স্কুল । একটুখানি সচেতন বলেই যাদের মনে করি তাদের পরিবারের সন্তান গুলো চলে যায় ওই কেজি স্কুলেই। বাদবাকি যে শিশুগুলি আমাদের স্কুলে আসে তারা যে বিদ্যালয়ে আসে পডতে, এতেই আমি আনন্দিত। জিপিএ ৫ পেয়েছে বলে যে শিশুগুলি আজ খুব আনন্দিত তাদের দেখে আমি খুব আন্দোলিত হই না। বরং পরীক্ষায় খারাপ করলো বলে মন খারাপ করলো যে শিশুটি , চোখে জল টলমল করলো যার সেই শিশুটিই বরং আমাকে বড় বেশি ভাবায়। জিপিএ ফাইভ ,ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সচিব... অনেক তো হয়েছে! তাতে অধিকাংশ জনগণের কি এমন আসলো গেল ! এদেশের কম সংখ্যক মানুষ ভোগ করছে বেশি সংখ্যক মানুষের সম্পদ এবং সুবিধাগুলি ভোগ করছে কমসংখ্যক মসগুলি অথচ বেশিরভাগ জনগোষ্ঠী তার বিপরীত। আমি ওদের ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার সচিব হওয়ার মত বড় বড় স্বপ্ন দেখাতে সাহস করি না। প্রয়োজনও মনে করিনা আপাতত। আগে দরকার ওদের ভালো মানুষ হবার। জরুরি হলো পড়াকে আনন্দের সহিত নেবার বিষয়টি। বরং আমি ওদের এই স্বপ্ন দেখাই যে, ওদের দ্বারা মানুষ উপকৃত হবে ।ওদের ছোট ছোট হাতেই ওরা অনেক বড় বড় কাজ করতে পারবে এক সময়। যদি ওদের সদিচ্ছা থাকে, আন্তরিকতা থাকে। চাই সঠিক আন্তরিকতা সঠিক দিকনির্দেশনা। সমাজে যে সকল ইতিবাচক পরিবর্তন আমরা দেখতে পাই তার বেশির ভাগই কিন্তু তথাকথিত মেধাবী শিক্ষার্থীদের দ্বারা হয়নি। যাদের আমরা কম মেধাবী বলে জানি, যারা জিপিএ ফাইভ পায়নি। সেই খেটে খাওয়া মানুষের রক্ত জল করা শ্রম দিয়ে তৈরি হয়েছে আমাদের উপরে ওঠার সিঁড়ি!
আমার শিশুরা মানুষই হোক কেবল!
টিভির একটা বিজ্ঞাপন আমার কানে এসে লাগলো। টিভি দেখা হয় না আমার। যখন অবসর নেবো তখন কেবল ঘুমাতে হয়,ঘুম পায় যে! শুয়ে পড়ার আগ মনে হয় বুঝি ঢলেই পড়ে যাবো।কিন্তু শোয়ার পর ঘুম পলিয়ে যায় অস্থিরতার বাড়িময়।ঘুম না হলে পরেরদিনের সকল দৌড়ঝাঁপ বিঘ্নিত হবে।অগত্যা ঘুমের ওষুধই আপাততঃ ভরসা।
সকাল বেলা উঠে আবার আমার শুরু হয়ে যাবে দৌড়। আমার কাছে জীবনের অপর নাম তাই দৌড়!
বিজ্ঞাপনের কথায় আসি। কথা হচ্ছিলো দুই জেলের মাঝে।এক জেলে আরেক জেলেকে বলছেন, ছেলেকে কাজে নিয়ে আসতে। তাতে আরেক জনের উত্তর দিলেন,জেলের ছেলে কী জেলেই হবে! অমনি গ্রামীনফোনে ফোন আসে - বাবা আমি জিপিএ ফাইভ পেয়েছি! কি অবাক কান্ড! বইতে শিশুদের পড়াই কোনো পেশাই ছোটো নয়। এই বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে কি ছোটো করা হলো না জেলেদের পেশাটাকে।যদি শ্রেণীবৈষম্য রাখতেই হয় তবে বইয়ের ভাষা শিশুদের কেন মিথ্যে পড়াবো? জিপিএ ফাইভ শিশুমনে ভীতির অপর নাম। ফলাফল সন্ত্রাস। গ্রামীণফোনে নয় কেবল।অন্যান্য মিডিয়াগুলিও নিউজ করার জন্য আগে এই রেজাল্টই খুঁজে বেড়ায়।
আমার বিদ্যালয়ে এবার একজন শিশুও জিপিএ ৫ পায়নি । এটা কোন দুঃখ আমার নেই । কারন আমার শিশুরা ভালো নাম্বার নিয়ে পাস করেছে কিংবা মোটামুটি পাস করেছে । আমি আমার প্রায় প্রত্যেকটা শিশুর জীবনের গল্পের ভেতর ঢুকতে চেষ্টা করি। আমার যে শিশুটি আজ জিপিএ ৫ পায়নি বলে আমার মন খারাপ লাগার কথা সেটাও আমার লাগছে না । আমার সেই শিশুটির মা লজ্জায় গ্রামে কাজ করে না অথবা এও বলা যায়, গ্রামে আসলে কাজ নেই। সেই শিশুটির মা শহরে বাসাবাড়িতে কাজ করে । তারপরও তার মাদকাসক্ত বাবা তারই সামনে তার সেই মাকে মারধোর করে। গালিগালাজ তো কোন ব্যাপার না। হ্যাঁ, আমার সেই শিশুটি ভালো নাম্বার পেয়েছে এতেই আমি ধন্য । আমার বিদ্যালয়ের এক কিলোমিটারের মধ্যে দুইটা কেজি স্কুল । একটুখানি সচেতন বলেই যাদের মনে করি তাদের পরিবারের সন্তান গুলো চলে যায় ওই কেজি স্কুলেই। বাদবাকি যে শিশুগুলি আমাদের স্কুলে আসে তারা যে বিদ্যালয়ে আসে পডতে, এতেই আমি আনন্দিত। জিপিএ ৫ পেয়েছে বলে যে শিশুগুলি আজ খুব আনন্দিত তাদের দেখে আমি খুব আন্দোলিত হই না। বরং পরীক্ষায় খারাপ করলো বলে মন খারাপ করলো যে শিশুটি , চোখে জল টলমল করলো যার সেই শিশুটিই বরং আমাকে বড় বেশি ভাবায়। জিপিএ ফাইভ ,ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সচিব... অনেক তো হয়েছে! তাতে অধিকাংশ জনগণের কি এমন আসলো গেল ! এদেশের কম সংখ্যক মানুষ ভোগ করছে বেশি সংখ্যক মানুষের সম্পদ এবং সুবিধাগুলি ভোগ করছে কমসংখ্যক মসগুলি অথচ বেশিরভাগ জনগোষ্ঠী তার বিপরীত। আমি ওদের ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার সচিব হওয়ার মত বড় বড় স্বপ্ন দেখাতে সাহস করি না। প্রয়োজনও মনে করিনা আপাতত। আগে দরকার ওদের ভালো মানুষ হবার। জরুরি হলো পড়াকে আনন্দের সহিত নেবার বিষয়টি। বরং আমি ওদের এই স্বপ্ন দেখাই যে, ওদের দ্বারা মানুষ উপকৃত হবে ।ওদের ছোট ছোট হাতেই ওরা অনেক বড় বড় কাজ করতে পারবে এক সময়। যদি ওদের সদিচ্ছা থাকে, আন্তরিকতা থাকে। চাই সঠিক আন্তরিকতা সঠিক দিকনির্দেশনা। সমাজে যে সকল ইতিবাচক পরিবর্তন আমরা দেখতে পাই তার বেশির ভাগই কিন্তু তথাকথিত মেধাবী শিক্ষার্থীদের দ্বারা হয়নি। যাদের আমরা কম মেধাবী বলে জানি, যারা জিপিএ ফাইভ পায়নি। সেই খেটে খাওয়া মানুষের রক্ত জল করা শ্রম দিয়ে তৈরি হয়েছে আমাদের উপরে ওঠার সিঁড়ি!
আমার শিশুরা মানুষই হোক কেবল!
Post A Comment:
0 comments so far,add yours