প্রিয়াঙ্কা সরকার, লেখিকা, বর্ধমান:

পুরুষাকর্ষক ধর্ম কি!  মহাভারতকার বলেছেন,  দুর্বাসার ভাষ্যে " ধর্মস্য জননী ভদ্রে"! আবার বলেছেন,  "যং যং দেবং ত্বমেতেন মন্ত্রেণাবাহয়িষ্যসি।  তস্য তস্য প্রসাদেন পুত্রস্তব ভবিষ্যতি। " অর্থাৎ," তুমি যে সকল দেবতাকে আহ্বান করবে, তাঁরা তোমার বশবর্তী হবেন। " আবার বললেন, "তুমি এই মন্ত্র দ্বারা যে সে দেবতাকে আহ্বান করবে,  সেই সেই দেবতার অনুগ্রহেই তোমার পুত্র হবে। " প্রথমটি আশ্রমবাসিক পর্বের ৩৩ অধ্যায়ের ৬ নং শ্লোক। পরেরটি আদিপর্বের ১৫০ অধ্যায়ের ৭ নং শ্লোক। এছাড়া বনপর্বের ২৫৯ তম অধ্যায়ের ১৭ - ১৮ নং শ্লোকে বর্ণিত হয়েছে দুর্বাসার বক্তব্য৷ কিন্তু কোথাও তিনি বলেন নি যে, দেবতারা সংগমে লিপ্ত হবেন। কিন্তু আশ্রমবাসিক পর্বেই শুরু হলো ভগবান কল্পনায় মিলনের অকপট স্বীকারোক্তি।

পাণ্ডবদের জন্ম নিয়ে দূর্যোধনের অনুযোগের বিরতি নেই। কিন্তু দ্রৌপদীকে কেউ তাঁর জন্মরহস্য নিয়ে কটাক্ষ করলেন না৷ তবে বিকট পাশাখেলায় তিনি পঞ্চস্বামী নিয়ে কটাক্ষ শুনলেন। কর্ণ স্পষ্ট বলেছিলেন বেদের নিয়মে স্ত্রীলোকের একজন মাত্র স্বামী থাকে। কিন্তু দ্রৌপদীর তো পাঁচ। হরিদাসসিদ্ধান্তবাগীশ "বন্ধকীতে শব্দের ব্যাখ্যা দিলেন।" তবে একা দ্রৌপদী কেন, কৌরবকুলের পুরনারীরা একাধিক পুরুষের সাথে মিলিত হয়েছেন৷
তাহলে একাধিক ভর্তার যুক্তিতে পুরোনারীরাও বেশ্যা। ব্রহ্মতেজে পরাভূত ক্ষত্রিয়ের বেহ্মতেজসম্পন্ন সন্তানের প্রয়োজন ছিলো রাজা দ্রুপদের। দ্রৌপদী সেই সংঘাতের ফল।
কৃষ্ণের স্বপ্ন ছিল সংহত ভারত। সমকালীন  ভারতে দুই শক্তির অভিঘাত স্পষ্ট। একটি হল কেন্দ্রাভিমুখী শক্তি যা ভারতকে সার্বভৌমত্ব দানের চেষ্টা করেছে। আর একটি হলো কেন্দ্রাতিগ শক্তি। আর্যাবর্তে  পাঁচবার সংহত ভারতবর্ষ গঠনের চেষ্টা হয়। কৃষ্ণ
কেন্দ্রাভিমুখী শক্তিকে গতিদানের চেষ্টা করে। ১) দ্রুপদ রাজার পাঞ্চাল ২) ভীষ্মক ও অকৃতির ভোজ বংশ ৩) শিশুপালের শাসনাধীন চেদি ৪) বৃহদ্রথের অধীনস্থ মগধ ৫) পৌন্ড্র বাসুদেবের অধীনস্থ পৌন্ড্র ৬) বৃদ্ধক্ষত্রের অধীনে সিন্ধু এবং ৭) কৃষ্ণ বলরামের নেতৃত্বাধীন যাদব ও বৃষ্ণি বংশীয়রা। এই সপ্ত শক্তিকে একীভূত করতেই তিনি শক্তিসাম্য প্রতিষ্ঠায় রত হয়েছিলেন " একমেবদ্বিতীয়ম লক্ষ্য। ভারতের মঙ্গলময়ী মাতৃমূর্তি সমগ্র পৃথিবীকে ধারণ করে রয়েছে৷ আর শ্রেণিসংঘাত রোধ হলেই তো কিস্তিমাত। ব্রাহ্মণকে পাশে নিয়ে ক্ষত্রিয়শক্তি সংহত করবে ভারতশক্তিকে৷ সেই জন্যই তো কৃষ্ণের কৃষ্ণাকে প্রয়োজন। সেই তো ক্ষত্রিয়ের মধ্যে জাগিয়ে তুলবে প্রতিহিংসার আগুন ; তাঁর দুজনেই অপস্রিয়মান দ্বাপর যুগের সূর্যাস্তের আলো। তাঁর হাত ধরেই আসবে কলিযুগের সন্ধ্যার অন্ধকার...(ক্রমশঃ)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours