জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা, দুর্গাপুর:

এখান থেকেই সমাজ বিজ্ঞানের  বুনিয়াদী প্রশ্নটা উঠে আসবে।আর
এই বিশ্বাস নিয়ে, ভারতীয় উপমহাদেশ এবং
চিনের সাথে এই উপমহাদেশের সম্পর্ককে ঘিরে
সমাজবিজ্ঞানের অতি-গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়
----- জাতীয়তা সম্পর্পকীত লেখালেখি, তার ৪০ তম
অংশটি শেষ করবোঃ
বিশ্বজোরা 'করোনা' মহামারি ,  অন্য কাউকে না হোক
এই উপমহাদেশের সাম্যবাদীদের
ভারতীয় তো বটেই এই উপ মহাদেশে
গনতন্ত্র  যে কোথায় কোনটাসা হয়েছে
সে সম্পর্কে নতুন করে ভাবাবার
সুযোগ করে দেবে।
যে কালে রেনেশার প্রবর্তকরাই গনতন্ত্রকে তৃনমুল স্তরে নিয়ে যাওয়ার পথ রুদ্ধ করে, সংসদীয় ব্যবস্থাকে 'শুঁয়োরের খোয়ারে বদলে দিতে  গনতন্ত্রকে খন্ডিত বিখন্ডিত করার নীতি নিয়েছে,
----- সেখানে,   যে ভূখন্ডে 'সনাতনি সমাজ' ইতিমধ্যে শুধু বৌদ্ধিক নয়, বৈদিক ইতিবাচকতাকে ধ্বংস করেছে, জাতীকে বর্নাশ্রমের নামে বিশ্বের সব থেকে বিপজ্জনক দাসত্বকে একাত্ম করিয়েছে
----- 'মৃত ছাগ শিশুকে' টেনে হিচরে এমন এক অন্ধকার গর্তে নিয়ে গিয়েছে, যেখান থেকে সামন্তিক সাম্রাজ্যের কালেও,জাতীয়তার ভ্রুনগুলি কিভাবে জন্ম হয়েছিলো - জাতীয় পূনঃর্গঠনের কালেও মানুষকে ভাবতে সুযোগ করে দেয় ন-------  সে কাল অশোকের কিংবা গুপ্ত অথবা কনিষ্ক এবং এমন কি মোঘল অথবা বৃটিশ হোক । স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম কালে -- এমন কি তখনো যখন ১৮৮৫ সালে ভারতে প্রথম প্রজাতান্ত্রিক দল হিসেবে, আমরা কংগ্রেস বানালাম তখনো -- সাধারনভাবে কংগ্রেস নিজেও সেই অন্ধ সাম্রাজ্যের বাসিন্দা।
 আমরা সাম্যবাদীরাও মেনে চলি যেন
---- সনাতনিরা আধুনিক যুক্তিবাদী  শিক্ষা এবং সমাজ সংস্কারকে আটকিয়েই কাজ শেষ করেছে এবং সেটা করেছে বাইরে থেকে। আসলে সর্বনাসটার বেশীটাও করেছে ভেতরে থেকে
প্রথমতঃ আধুনিক বিশ্ব নির্মানের পরিবর্তে 'গ্রাম ভিত্তিক'  গরুর গাড়ীর জমানাকে রেখে দেওয়া।
দ্বিতীয়তঃ মহাত্মাকে দিয়ে 'রামরাজ্য' কিংবা দেশকে 'মহাকাব্যিক যুগে' বেঁধে রাখাটাকে 'গেলানোর' কাজটা এরাই করেছে।

এইভাবে পুরো স্বাধীনতা আন্দোলনটাকেই
বৃটিশ বিরোধীতা থেকে ঔপনেবিশিকতা বিরোধীতায়
তুলে আনা সম্ভব  হয় নাই।
----- সেই বিন্দুতেই ফ্যাসিবাদ বিরোধীতার স্তরে উঠতে পারে নাই । মহান নেতা রাস বিহারী এবং সুভাষের মতো বীরগাথাও অনেকটাই মলিন
হওয়ার সুযোগ পেয়েছে।

যারা উল্লেখিত পরিপ্রেক্ষিতকে সমাজ বিজ্ঞানের আলোকে বিচার করার
যোগ্যতা হারিয়েছেন তারা কিছুতেই ভারতীয় স্বাধীনতা এবং স্বাধীনতা
পরবর্তী কালে স্বাধীনতাকে অক্ষুন্ন  রাখায়  নিম্ন লিখিত অবদান
গুলিকে কিছুতেই চিহ্নিত করতে পারবেন না।

প্রথমতঃ
কংগ্রেস পরিচালিত, ঔপনিবেশিকবাদে থেকে স্বাধীনতার দাবীকে পরিবর্তনকামীতায় উঠিয়ে আনায় অক্টোবর বিপ্লব এবং ভারতে
সাম্যবাদী এবং শ্রমিক-কৃ্ষক আন্দোলনের অবদান।
দ্বিতিয়তঃ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং সেই যুদ্ধ যে 'পুজির' বিশ্ব স্বার্থে উপনিবেশগুলিকে নতুন করে ভাগাভাগী করে নেওয়ার বিষয়টিকে,   চাপা দিতে, যুদ্ধকে রক্তের সম্পর্ক প্রশ্নের সাথে গুলিয়ে দেওয়ার বিশ্ব স্বরযন্ত্রকে
------ আটকে দিতে মেহনতিদের ঘিরে  স্তালীন নেতৃ্ত্বে, সেই বিশ্বজুরেই পালটা অভিযান শুরু করা হয়েছিলো । ছন্দে, গানে কবিতা এবং মানবিক গবেষনায় বিশ্বকে বেধে ফেলে,'রক্ত' বা 'ব্রাহ্মন্যত্বের নামে লোক সমাবেষকে আটকে দেওয়া গিয়েছিলো।
তৃতীয়তঃ
সনাতনি এবং আমেরিকান জাল ভেংগে, ভারতীয় স্বয়ং সম্পূর্ন্তার
প্রশ্নে 'নেহেরু-স্তালীন'  চুক্তি, এবং সোভিয়েত টিকে থাকার শেষ
দিন পর্য্যন্ত সোভিয়েত আর্থীক এবং কারিগরি সাহায্য।
চতুর্থতঃ
এই জাল ছিড়ে দেশকে বাইরে নিয়ে আসতে নেহেরু, ইন্দিরা সহ কংগ্রেস দলে এবং বাইরের বিশ্ববোধ সম্পন্য যুক্তিবাদী মানুষদের অবদান।
পঞ্চমত এবং  খুবই বিস্ময়কর
কমিউনিষ্টরাও আজকের দিনে বোঝাতে ভূলে যায়, যদি এই দেশে যুক্তিবাদ কিঞ্চিৎ হলেও বাসা বেধে থাকে, কংগ্রেস দল না হলেও নেহেরুর নেতৃত্বাধীন
সরকার যদি অর্থনৈ্তিক স্বয়ং সম্পূর্ণতা ---  নব্য শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং কিঞ্চিৎ
হলেও জাতীয়তা যদি যুক্তিবাদী পথে হেটে থাকে
----- সেখানে, সেই নীতিগুলি জারি রাখতে সাম্যবাদি,বাম পন্থী এবং শ্রমিক, কৃ্ষক, আদিবাসি, দলিতদের সংগ্রাম বিপুল আবেদন রেখেছিল।

এসব সত্বেও করোনা সূচ ফুটিয়ে আসল কথাটা শিখিয়ে দিলো
---- অর্থনীতির স্বয়ং সম্পূতা হক, কিংবা সংসদিয় ও সাংবিধানিক গনতন্ত্র
হোক
গনতন্ত্রকে যদি তৃণমূল স্তরে নিয়ে যাওয়া এবং তাকে অক্ষুন্ন রাখার মতো করে
জাতীয়তাকে নতুন করে নির্মান করা না যায়, তবে সব কিছু 'আধা আধা' করে
রাখার চিন্তাটা
--- দেশের সংসদীয় ব্যবস্থাকে শুয়োরের খয়োরে বদলে যাবার সাথে সাথে
সব 'আধা আধা ভেঙ্গে গুড়িয়ে শয়তানেরা পুর 'গনতন্ত্র'টাকেই শেয়ালের গর্তে টেনে নিয়ে যায়। প্রশ্নটা উঠবে সংসদীয় গনতন্ত্রটাই যে  শুয়োরে বদলে
গেছে তার প্রমান?
অন্য কারুর নামে  বিশ্বাস না হলেও, নিজেকে  প্রমান দাড় করিয়ে দেখিয়ে দেবে, সে কার্য্যকারন সম্পর্ক যাই হোক
-----ফলিত বিজ্ঞান সাধনা,  পড়াশুনা এবং যেকোন মূল্যে মানুষের সাথে সাপ্টে থাকাটা থেকেও, এই সেদিন পর্য্যন্ত এক খন্ড গেড়ুয়া কাপড়ের দাম, জনসমর্থনের জন্য  অনেক বেশী মূল্যবান ছিলও। এখন, তো 'নর্তকীরাই' 'রোজগারের দিক থেকে সর্বোত্তম', তেমনি 'দেশপ্রেমেও আকাশচুম্বী!' জনপ্রেম
যতই ' শ্নো-পাউডারে মোড়া হোক না কেন?' 
এসব কথাকে জনি,
----  রাজনীতির ছাপ্পা লাগিয়ে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এতোদিন এবং  হবেও।
এখন  'করোনা' এসে যখন
--- প্রজাতান্ত্রিক ভারত এবং  গন তান্ত্রিক চিনকে পাশাপাশি দাড় করিয়ে দিয়েছে
তখন আসল প্রশ্নটা মূর্তীমান 'যম'  হিসেবে সামনে দাড় করিয়েছে।
-----চিন যখন ২০০ কোটিকে সুশৃংখল ভাবে, কার্য্যত এক অখন্ড নিশ্চুপতায় একা একা 'এই মহামারিকে' আটকে দিয়েছে, চিকিৎসা এবং রাজনৈ্তক আক্রমনের উভয় প্রান্তে
------ এতো সময় পেয়েও, সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ভারত সরকারের পা' কাপছে । শেষ পর্য্যন্ত  সংখ্য বাজিয়ে, কাসর ঘন্টায় দেবতার স্মরন করতে বলা হচ্ছে। যদিও এসব বাদ্য, জাতীয় সংহতীর বিপরিত মেরুতেই বিরাজমান।
এটাই প্রমানীত হয়,
চিন প্রজাতন্ত্র যখন তার গনতন্ত্রকে সর্বোচ্চ স্তর থেকে চিন্তায়, চেতনায়, সংস্কৃতীতে, বোধে এবং রাজনীতিতে জাতীয়তা  সমাজের তলদেশ পর্য্যন্ত  যেভাবে বিস্তৃত হওয়ার সুযোগ পেয়েছে
-----  সেখানে জন অংশগ্রহন এক স্বতস্ফুর্ত শৃংখলায় উচু থেকে নিচু পর্য্যন্ত বাধা বাধা । আমাদেরটা অচৈতন্যতার শেকলে স্বতঃস্ফুর্ত্ততায় টই টুম্বর।
জীবন রায়ের সময়েও সংসদীয় ব্যবস্থার উপর তলার জাতীয়তায় কিঞ্চিৎ
দম ছিলো । এখন উপর থেকে নিচু পর্য্যন্ত হয় ' গো-মুত্রবাদ' নয়তো 'নর্তকীবাদ।কাজেই যা ঘটার ঘটছে।

বিপর্য্যয়ের পথটা নির্মিত হয়েছে, সনাতনিদের একটা 'শ্লোগানে'।
সেখানে  দল হিসেবে কংগ্রেস এবং বাইরের সনাতনিদের
---- অতিক্রম করে সরকারী কংগ্রেস এবং সাম্যবাদীরা এগুতে পারে নাই।পরিনামে, সনাতনিতন্ত্র ক্রমে সংবিধানের রক্ষা কবচ গুলিতেও ফাটল ধরিয়েছে শুধু  নয়, সাম্য এবং বামপন্থিদের মধ্যেও ভাবগত অসুচিতার অনুপ্রবেশ ঘটাতে পেরেছে। এই রক্ষাকবচগুলি; হোলঃ
(ক) ধর্মের প্রশ্নে রাষ্ট্রের নিরপেক্ষতা
(খ) অর্থনীতির বুনিয়াদী প্রতিষ্ঠানগুলি রাষ্ট্রীয় মালিকানা।
(৩) গোষ্টি নিরপেক্ষতা পররাষ্ট্রনীতির প্রশ্নে।
(৪) সংসদ, সংসদীয় কমিটি সমুহ, বিচার, সেনা ইত্যাদি
প্রতিষ্ঠান গুলি, শিক্ষা ব্যবস্থা ইত্যাদি নিদৃষ্ট নিয়মের মধ্যে
 স্বাধীন  কাজকর্ম।

শ্লোগানটা কি?
কোন মতেই স্বাধীনতার প্রশ্নে চিনের পথ নেওয় চলবে না, সম্পর্কের প্রশ্নে 'বিষধরের' সাথে  ঘড় করা যেতে পারে, কিন্তু কোন মতে চিনের সাথে নয়।
এখান থেকেই, গনতন্ত্রকে তৃণমুল স্তরে নিয়ে যেতে হলে
---- সামাজিক রুপান্তর ঘটিয়েই, সনাতনবাদের পূর্ন উচ্ছেদ ।
এই সুত্রেই বুঝে নেওয়া দরকার ছিলো ঃ
চিন কখনো 'সাম্য' কিংবা 'সমাজতন্ত্রের ' আহ্বানে রুপান্তরের সংগ্রামের
ডাক দেয় নাই । যা বলা হয়েছিলও
------ বিপ্লবের  মুল লক্ষ ছিলো, ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের উচ্চতর একটা রাষ্ট্র নির্মানের উপযোগী করে জাতীয়তার পূনঃর্গঠন করা।এই পূনঃর্গঠনের অর্থ
হোল, রুপান্তরের পর্যায়েই "সনাতনবাদকে মূল' পর্যন্ত উচ্ছেদ এবং বিশ্ব ফ্যাসিস্তদের বাহক বিসেবে যারা আত্মপ্রকাশ করতে পারে, তগাদের গুড়ি ধরে টান। এই রুপান্তর প্রকৃয়া চিনের নিজস্ব। রুশ বিপ্লবের মতো, সেটা  কোন সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ছিলও না । তাই চিন প্রজাতন্ত্রের  নাম দেওয়া হয়েছ্বে
---- চিন গনতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র।রাস্তাও ছিলো রুশ বিপ্লব থেকে সম্পূর্ন পৃথক।
অনুরুপভাবে
১৯৬৪ সালে সিপি আই এম যে কর্মসূচী নিয়েছেন, সেটাতেও রুপান্তরে
সমাজতন্ত্রের প্রস্তাব নেই।চিনের মতোই এক লক্ষ এক। মাটি থেকে 'সনাতনবাদ উচ্ছেদ । তার সাথে ফ্যাসিবাদের বাহকদের।
কিন্তু সেখানেও চিন থেকে পৃথকতার কথা বলা হয়েছে। চিন গ্রাম ধরে ,ভারতীয় রুপান্তর শুরু হবে, শহরের কারখানা, খনি বন্দর শিল্পগুলিকে
ঘিড়ে...।
যাই হোক সব কথা বলা হোল, একটা বাদে
----- ভারতের বুদ্ধিজীবিদের কেউ এমন দাবী করেন নাই
----যেন 'চিনের সব মানুষ করোনায় মড়তে চেয়েছিলো,
বন্দুক উচিয়ে  বাচিয়ে দিয়েছে।" (সমাপ্ত)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours