প্রিয়াঙ্কা সরকার, লেখিকা, বর্ধমান:
প্রতিটি ঘটনার যে একটি সমান্তরাল কাহিনি আছে, তা মহাভারত বুঝিয়ে দেয়। কৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছিলেন, "আমি লোকক্ষয়কারী বৃদ্ধ কাল, অধুনা লোকসংহারে প্রবৃত্ত হয়েছি "। মধুসূদন জানতেন, তাঁর হাতেই যে নিয়তি সঁপেছে যদুবংশ ধ্বংসের ভার৷ দুর্যোধনের একশো ভাইকে হত্যার পূর্বে ভীম কীচকের একশো পাঁচ ভ্রাতাকে হত্যা করেছিলেন। পুত্রহারা, রাজ্যহারা,সর্বহারা গান্ধারীকে পাণ্ডেরা প্রণাম করতে এলে, আলিঙ্গনে গান্ধারী বুঝতে পারেন, "এই সেই নারী, যার জন্য আমার পুত্রদের মৃত্যু হয়েছে। " তবে যে অন্যায় সামনে এসেও তাকে চোখে দেখেন নি। এটা কি ভুলে গেছেন গান্ধারী! পাপের কলসে নিজে পুড়েছিলেন ঈর্ষায় ; পুড়েছিলেন জন্মান্ধ ধৃতরাষ্ট্র, তাই কি সঞ্চারিত হয়েছিল পুত্রের মধ্যে! পতিব্রতা, ধর্মপরায়ণা হতে গিয়েও যে অশুভ চক্রের দম্ভকে আঁকড়ে নিতেও দ্বিধা করেন নি, তাই ধ্বংস যে তরঙ্গ বেয়েই নেমে এসেছিল। কৃষ্ণ বললেন, "আপনার অপরাধেই বহু লোক মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছে... এখন সেই আত্মকৃত দোষকে আমার উপর আরোপ করার ইচ্ছা করেছেন কেন?"
কুরুক্ষেত্র প্রান্তরে যে বীরেরা ছিলেন, তারা তো নরশ্রেষ্ঠ। অস্ত্রের বেগে দেবগণকে পরাজিত করতে পারতেন কিন্তু আজ কালের আঘাতে সব পরিবর্তন। ভীষ্ম, দ্রোণ, বৈকর্তন, কর্ণ, কৃপ, দুর্যোধন, অশ্বত্থামা,
মহারথ, জয়দ্রথ, বিকর্ণ প্রমুখ সকলেই নিহত আজ। আসলে গান্ধারীর কাছে কোনো কিছুই দুষ্কর নয়। কুহেলিকার স্তরে কি আর কুয়াশার চুম্বন ধরা পড়ে। দম্ভের দাপট তো উন্মাদ প্রমাদ ছাড়া আর কিছুই নয়। অভিযোগ করলেন, "কৃষ্ণ তুমি যখন সন্ধি করতে না পেরে ভগ্ন মনোরথ হয়ে পুনরায় উপপ্লব্য নগরে ফিরে গিয়েছিলে, বলবান হলেও তখনই আমার পুত্রেরা নিহত হয়েছিল।"
বুদ্ধিমান ভীষ্ম ও বিদুর বলেছিলেন, "আপনি আপনার পুত্রদের উপর স্নেহ রাখবেন না।! " কিন্তু গান্ধারী তো মা।রেহাই পায়নি তাঁর সন্তানরা৷ অপরাধীর তরঙ্গে অচ্ছেদ্য অভিশাপ ছুঁয়েই তো আজ কুরুবংশ ধ্বংস হয়েছে৷ কিন্তু কৃষ্ণ তো মহাবাহু। অসংখ্য সৈন্যমধ্যে তিনি প্রয়োজন ও বোঝেন নি কুরুবংশের। তবু তিনি উপেক্ষা করে গেছেন। তাঁকেই উপেক্ষার ফল বোধ করতে হবে। চক্রগদাধর কৃষ্ণকে তিনি অভিসম্পাত করেছেন। প্রবৃত্তি আর পরস্পর জ্ঞাতিকেও উপেক্ষা করেছে এই আঘাত, তাই কৃষ্ণও তাঁর জ্ঞাতিগণকে বিনাশ করবেন। আবার এও বললেন যে, সেদিন থেকে ছত্রিশ বৎসর সময়ে কৃষ্ণ হতপুত্র, হতজ্ঞাতি, হতামাত্য, বনচারী অবস্থায় কুৎসিত নিধন প্রাপ্ত হবেন।
কৃষ্ণ হাসলেন, কারণ এও যে নিয়তি নির্দিষ্ট। একান্ত অন্তরীক্ষ খুঁজে পেতে তো শাপ সম্পাদন করতে হয় না, সুতোর বাঁধন ছিঁড়ে গেলে জীবনও পাতা উল্টাও। বৃষ্ণিবংশীয়গণ যে ধ্বংস হবেন, তাঁরই হাতে৷ আর এখানে তো গান্ধারীর অভিসম্পাত নিরর্থক। দুরাত্মা, ঈর্ষান্বিত, অভিমানী, নির্লজ্জ সন্তানেরা গান্ধারীর দ্বারাই প্রোরোচিত হয়েছে। তখন গান্ধাররাজনন্দিনী নীরব। অবশেষে কৃষ্ণ বললেন, "যে মানুষ অতীত নিয়ে শোক করে, সে মানুষ পুত্র তপস্যা করবে ভেবে ব্রাহ্মণী গর্ভ ধারণ করেন ;সন্তান ভার বহন করবে মনে করে গোরু গর্ভ ধারণ করে; পুত্র দৈড়বে এই চিন্তা করে অশ্বী গর্ভ ধারণ করে;
পুত্র ভৃত্যের কার্য করবে ভেবে শূদ্রের স্ত্রী গর্ভধারণ করে, পুত্র পশুপালন করবে ভেবে বৈশ্যস্ত্রী গর্ভধারণ করে এবং পুত্র যুদ্ধে নিহত হবে ভেবেই আপনার মতক ক্ষত্রিয়রমণী গর্ভধারণ করেন "।
একান্ত অভিসম্পাতে ব্রতী নারী এবার নীরব। নতজানু হয় বোধ। ধ্যানমগ্ন হয় চিত্ত। অপ্রিয় হলেও আলো সত্য এবং অকপট।
প্রতিটি ঘটনার যে একটি সমান্তরাল কাহিনি আছে, তা মহাভারত বুঝিয়ে দেয়। কৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছিলেন, "আমি লোকক্ষয়কারী বৃদ্ধ কাল, অধুনা লোকসংহারে প্রবৃত্ত হয়েছি "। মধুসূদন জানতেন, তাঁর হাতেই যে নিয়তি সঁপেছে যদুবংশ ধ্বংসের ভার৷ দুর্যোধনের একশো ভাইকে হত্যার পূর্বে ভীম কীচকের একশো পাঁচ ভ্রাতাকে হত্যা করেছিলেন। পুত্রহারা, রাজ্যহারা,সর্বহারা গান্ধারীকে পাণ্ডেরা প্রণাম করতে এলে, আলিঙ্গনে গান্ধারী বুঝতে পারেন, "এই সেই নারী, যার জন্য আমার পুত্রদের মৃত্যু হয়েছে। " তবে যে অন্যায় সামনে এসেও তাকে চোখে দেখেন নি। এটা কি ভুলে গেছেন গান্ধারী! পাপের কলসে নিজে পুড়েছিলেন ঈর্ষায় ; পুড়েছিলেন জন্মান্ধ ধৃতরাষ্ট্র, তাই কি সঞ্চারিত হয়েছিল পুত্রের মধ্যে! পতিব্রতা, ধর্মপরায়ণা হতে গিয়েও যে অশুভ চক্রের দম্ভকে আঁকড়ে নিতেও দ্বিধা করেন নি, তাই ধ্বংস যে তরঙ্গ বেয়েই নেমে এসেছিল। কৃষ্ণ বললেন, "আপনার অপরাধেই বহু লোক মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছে... এখন সেই আত্মকৃত দোষকে আমার উপর আরোপ করার ইচ্ছা করেছেন কেন?"
কুরুক্ষেত্র প্রান্তরে যে বীরেরা ছিলেন, তারা তো নরশ্রেষ্ঠ। অস্ত্রের বেগে দেবগণকে পরাজিত করতে পারতেন কিন্তু আজ কালের আঘাতে সব পরিবর্তন। ভীষ্ম, দ্রোণ, বৈকর্তন, কর্ণ, কৃপ, দুর্যোধন, অশ্বত্থামা,
মহারথ, জয়দ্রথ, বিকর্ণ প্রমুখ সকলেই নিহত আজ। আসলে গান্ধারীর কাছে কোনো কিছুই দুষ্কর নয়। কুহেলিকার স্তরে কি আর কুয়াশার চুম্বন ধরা পড়ে। দম্ভের দাপট তো উন্মাদ প্রমাদ ছাড়া আর কিছুই নয়। অভিযোগ করলেন, "কৃষ্ণ তুমি যখন সন্ধি করতে না পেরে ভগ্ন মনোরথ হয়ে পুনরায় উপপ্লব্য নগরে ফিরে গিয়েছিলে, বলবান হলেও তখনই আমার পুত্রেরা নিহত হয়েছিল।"
বুদ্ধিমান ভীষ্ম ও বিদুর বলেছিলেন, "আপনি আপনার পুত্রদের উপর স্নেহ রাখবেন না।! " কিন্তু গান্ধারী তো মা।রেহাই পায়নি তাঁর সন্তানরা৷ অপরাধীর তরঙ্গে অচ্ছেদ্য অভিশাপ ছুঁয়েই তো আজ কুরুবংশ ধ্বংস হয়েছে৷ কিন্তু কৃষ্ণ তো মহাবাহু। অসংখ্য সৈন্যমধ্যে তিনি প্রয়োজন ও বোঝেন নি কুরুবংশের। তবু তিনি উপেক্ষা করে গেছেন। তাঁকেই উপেক্ষার ফল বোধ করতে হবে। চক্রগদাধর কৃষ্ণকে তিনি অভিসম্পাত করেছেন। প্রবৃত্তি আর পরস্পর জ্ঞাতিকেও উপেক্ষা করেছে এই আঘাত, তাই কৃষ্ণও তাঁর জ্ঞাতিগণকে বিনাশ করবেন। আবার এও বললেন যে, সেদিন থেকে ছত্রিশ বৎসর সময়ে কৃষ্ণ হতপুত্র, হতজ্ঞাতি, হতামাত্য, বনচারী অবস্থায় কুৎসিত নিধন প্রাপ্ত হবেন।
কৃষ্ণ হাসলেন, কারণ এও যে নিয়তি নির্দিষ্ট। একান্ত অন্তরীক্ষ খুঁজে পেতে তো শাপ সম্পাদন করতে হয় না, সুতোর বাঁধন ছিঁড়ে গেলে জীবনও পাতা উল্টাও। বৃষ্ণিবংশীয়গণ যে ধ্বংস হবেন, তাঁরই হাতে৷ আর এখানে তো গান্ধারীর অভিসম্পাত নিরর্থক। দুরাত্মা, ঈর্ষান্বিত, অভিমানী, নির্লজ্জ সন্তানেরা গান্ধারীর দ্বারাই প্রোরোচিত হয়েছে। তখন গান্ধাররাজনন্দিনী নীরব। অবশেষে কৃষ্ণ বললেন, "যে মানুষ অতীত নিয়ে শোক করে, সে মানুষ পুত্র তপস্যা করবে ভেবে ব্রাহ্মণী গর্ভ ধারণ করেন ;সন্তান ভার বহন করবে মনে করে গোরু গর্ভ ধারণ করে; পুত্র দৈড়বে এই চিন্তা করে অশ্বী গর্ভ ধারণ করে;
পুত্র ভৃত্যের কার্য করবে ভেবে শূদ্রের স্ত্রী গর্ভধারণ করে, পুত্র পশুপালন করবে ভেবে বৈশ্যস্ত্রী গর্ভধারণ করে এবং পুত্র যুদ্ধে নিহত হবে ভেবেই আপনার মতক ক্ষত্রিয়রমণী গর্ভধারণ করেন "।
একান্ত অভিসম্পাতে ব্রতী নারী এবার নীরব। নতজানু হয় বোধ। ধ্যানমগ্ন হয় চিত্ত। অপ্রিয় হলেও আলো সত্য এবং অকপট।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours