দেবর্ষি মজুমদার, লেখক, বীরভূম:

 ভারতবিরোধী  কার্যকলাপে যুক্ত থাকার দায়ে ১৫ দিনের মধ্যে দেশ ছাড়ার নির্দেশ বিশ্বভারতীর বিদেশী পড়ুয়াকে। পড়ুয়ার কাছে সেই নির্দেশ এসেছে সংশ্লিষত ফরেনার্স রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিস থেকে।  সেই নির্দেশ পাওয়ার পর থেকে ভীষন ভয় ও দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছেন ওই বাংলাদেশী শিক্ষার্থী।

জানা গেছে, আফসারা আনিকা মিম নামে বাংলাদেশের কুষ্টিয়া নিবাসী এক ছাত্রী স্নাতকস্তরে বিশ্বভারতীর কলাভবনের ডিজাইনিংয়ের প্রথম বর্ষের পড়ুয়া। বিশ্বভারতীতে সিএএ বিরোধী আন্দোলনরত সহপাঠীদের ছবি তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেন। তারপর সেই পোস্ট নিয়ে ট্রল হয়। সংবাদমাধ্যমকে ওই ছাত্রী জানান, ট্রোলের পর ভয় পেয়ে ওই ফেসবুক একাউন্ট তিনি ডিএক্টিভেট করে দেন। পরে ২৫০ টি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে তাকে দেশবিরোধী বলে তোপ দাগা হয়। সম্ভবতঃ কোং অভিযোগের ভিত্তিতেই বিভাগীয় দপ্তরের কাছ থেকে ভারত ছাড়ার চিঠি আসে। সেই চিঠি পেয়ে তাঁর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। অনেকটা না বুঝেই তিনি একাজ করে ফেলেছেন। জানা গেছে, ১৪, ১৯ ও ২৪ ফেব্রুয়ারী দু’দুবার তাঁকে মেল মারফত কৈফিয়ত তলব করে ২৪ তারিখের মধ্যে দেখা করতে বলা হয়। তারপর দেওয়া হয় এই চিঠি। যদিও ওই ছাত্রী আত্মপক্ষ সমর্থনে বলেন, আমি নিয়মিত মেল দেখি না। তবে আমাকে বলার পর দেখি ঠিকই আমাকে মেল করা হয়েছে।  বৃহস্পতিবার কোলকাতায় যাওয়ার কথা। আমার স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। অনেকের অভিমত, পড়ুয়াকে সুযোগ দেওয়া যেতে পারতো। কিন্তু বলে তাঁর কার্যকলাপকে “ভিসা আইনের” পরিপন্থী হিসেবে দেখছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর। এব্যাপারে বাংলাদেশের এক পড়ুয়া জানান, আমরা ক’দিন ধরেই এটা শুনছিলাম। এখন তো দেশের মিডিয়া থেকেও এব্যাপারে জানতে চাওয়া হচ্ছে। তবে বিদেশী পড়ুয়া হিসেবে এব্যাপারে তারা কোন মন্তব্য করতে পারবেন না। ভিসা দেওয়ার সময়, বলে দেওয়া হয়, কোন রাজনৈতিক কার্যকলাপে যুক্ত থাকা যাবে না। বিশ্বভারতী জনসংযোগ আধিকারিক অনির্বাণ সরকারকে এব্যাপারে ফোন করে কোন উত্তর পাওয়া যায় নি।
তবে শোনা যাচ্ছিল, ওই ছাত্রী বিভাগীয় দপ্তরে ফের আবেদনের পাশাপাশি আইনী পরামর্শ নিতে পারেন। সেই সূত্র ধরে কোলকাতা উচ্চ আদালতের বিশিষ্ট আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যকে প্রশ্ন করা হলে, তিনি প্রতিবেদককে বলেন,    ভারতবর্ষে গণতন্ত্র  বলতে যেটুকু ছিল, মোদী ও অমিত শাহ আসার পর সেগুলো তুলে নিয়েছে।  একজন ছাত্রী বিদেশ থেকে এসেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা গ্রহণ করতে।  বিশ্ব বিদ্যালয় একটি উন্মুক্ত চিন্তার জায়গা।  বিশেষ করে বিশ্বভারতী যেখানে রবীন্দ্রনাথ বিশ্বচেতনার সৃষ্টি করেছিলেন। সেখানে একজন একটি ঘটনার প্রতিবাদ করেন তার সেই গণতান্ত্রিক অধিকার আছে।  তাকে এইভাবে বের করে দেওয়া নিছক স্বৈরাচারী।  বলা যেতে পারে প্রশাসনিক গুণ্ডামী। দিল্লীর বুকে যেমন গুণ্ডারা মানুষ খুন করেছেন,  এক্ষেত্রেও বিশ্বভারতী প্রশাসন প্রশাসনিক গুণ্ডামী করছেন। একজন শিক্ষার্থীকে এইভাবে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। ভারত বর্ষ আর পৃথিবীর মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য স্থান থাকবে না এদের গুণ্ডামির জন্য। এটুকু বলতে পারি, যেকোন মানুষ যখন বিপদে পড়েন, মানুষের অধিকার লঙ্ঘন হয়, আমি তাদের সাথে আছি।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours