দেবর্ষি মজুমদার, লেখক, বীরভূম:

শীতের ঝরা পাতায় অশোক ও পলাশে বসন্ত আসে শান্তিনিকেতনে! কিন্তু তার আবাহন হবে না? তা কি কখনও হয়?  তাই বসন্তের দ্বার খোলার শুভলগ্নে তার আবাহন করে থাকে পাঠভবনের কচিকাচারা। এই পরম্পরা বেশি দিনের নয়। মাত্র সাত থেকে আট বছরের।

প্রকৃতির রূপ পরিবর্তন ঋতুর সাথে তাল মিলিয়েই। আর তাকে ঘিরেই সারা বছর বিশ্বভারতীর শান্তিনিকেতনে লেগে থাকে বিভিন্ন অনুষ্ঠান। শুক্রবার বসন্ত ঋতুর আগমনকে স্বাগত জানিয়ে এক অনুষ্ঠান করল পাঠভবনের ছাত্রছাত্রীরা। নাচে গানে মেতে উঠল পাঠভবনের অঙ্গন।

পাঠভবন সূত্রে জানা গেছে, প্রকৃতির রূপ পরিবর্তন খুব স্পষ্ট। বসন্তের আগমন আরও স্পষ্ট দেখা দেয় আমের মঞ্জরী, শালের মঞ্জরী সবের মধ্যে। সেই আনন্দকে উদযাপন করা হয় প্রতীকী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। ছেলে মেয়েরা মনের আনন্দে গান করে, নাচ করে পাঠভবনের প্রাঙ্গণে। বসন্তের আগমনকে শ্রদ্ধা জানিয়েই এই উদযাপন। 

 বিশ্বভারতী সূত্রে জানা যায়, এই বসন্ত আবাহনের আরেকটি উদ্দেশ্য আছে।  পাঠভবনের কচি কাচারা বসন্ত উতসবের ভিড়ে যেতে পারে না। তাই বসন্ত উৎসবের আগে, পাঠভবনে বসন্ত আবাহন হয়। এই পরম্পরায় খুব খুশি পাঠভবনের কিশলয়রা।  শান্তিনিকেতনে বসন্ত উৎসবে সাধারণের প্রবেশের পর থেকে এত ভিড় বেড়ে যায় যে আশ্রমের কচি কচি ছেলে মেয়েরা অংশগ্রহণ করতে পারতো না। তাই  আশ্রমের মধ্যে একমাত্র পাঠভবনেই হয়ে বসন্তের আবাহনের আয়োজন। খুব আনন্দ পায় কিশোরমতি কচিকাচারা।
প্রতিবছর ফাল্গুন মাসের প্রথম দিনে শান্তিনিকেতনের পাঠভবনে বসন্ত ঋতুকে স্বাগত জানাতে পালন করা হয় বসন্ত আবাহন। এবারের আবাহন উৎসবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। এদিন সকালে বসন্ত আবাহন উৎসবে পাঠভবনের ছাত্র-ছাত্রীরা মিলিত হয়ে বসন্তের গান,নাচ উপস্থপনা করে শান্তিনিকেতনের আম্রকুঞ্জ জহর বেদিতে। শান্তিনিকেতনের শান্তিনিকেতন গৃহ থেকে শুরু হয় “ওরে গৃহবাসী খোলদ্বার খোল লাগলো যে দোল” সংগীতের মধ্যদিয়ে শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রার শেষে মূল অনুষ্ঠান শুরু হরু হয় আম্রকুঞ্জর জহর বেদিতে। সকাল সাড়ে আটটায় শোভা যাত্রায় একে একে ‘আজি দখিন দুয়ার খোলা’, ‘ওরে ভাই ফাগুন লেগেছে বনে বনে’ থেকে  ‘রাঙিয়ে দিয়ে যাও’ সহ মোট ১২টি  নৃত্য সহযোগে সঙ্গীত পরিবেশিত হয়।  মাঝে ছিল নৃত্য সহযোগে কবিতা পাঠ ‘বসন্ত’ ও ‘দোল’।   

উল্লেখ্য, মূল বসন্ত উৎসব যেটা পালিত হবে এবছর  ৯ মার্চ , তার একটা ইতিহাস আছে।  শমীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাচ্চা বয়সে ১৯০৭ ঋতু উৎসব করেছিলেন। সেটাই ছিল প্রথম বসন্ত উৎসব।  সম্ভবত শ্রী পঞ্চমীতে সেটা পালিত হয়। কারণ এই নিয়ে মতান্তর আছে। পরে মাঘী পূর্ণিমাতে, শ্রী পঞ্চমীতে শান্তিনিকেতনে একাধিকবার বসন্ত উৎসব হয়েছে। ১৯২৫ সালে শ্রী পঞ্চমীতে আম্রকুঞ্জে প্রথম বসন্তোৎসব পালন করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।  দোলের দিন যে বসন্ত উৎসব হয়েছে তা নয়। আবার দোলের দিনও কখনও কখনও হয়েছে। তবে বসন্ত উৎসবের সাথে দোলের কোন যোগ নেই।  সেই উৎসবের ধারা আজও বহন করে চলেছে বিশ্বভারতী।         

তবে এই উৎসব ধারাবাহিক হয়েছে তা নয়। ১৯৮১ সালে  এত ভিড় হয়েছিল এবং আগত জনতা এত অসভ্যতা করেছিল, ১৯৮২ সালে বসন্ত উৎসব বন্ধ করে দিতে চেয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তদানীন্তন উপাচার্য অম্লান দত্ত। যদিও অন্যদিনে, এই বসন্ত উৎসব হয়েছিল।  ২০১০ সালে বসন্ত উৎসবের আগের দিন সঙ্গীত ও কলাভবনের ছাত্র ছাত্রীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সেই সময় কালোবাড়ি ভাঙচুর করা হয়। সে বছর দুই ভবনই বসন্তোৎসব বয়কট করে।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours