দেবর্ষি মজুমদার, লেখক, বীরভূম:
এই একটি দিনে কোথাও কোথাও কেউ কেউ প্রেম দেবতার দিকে খড়্গ হস্ত হয়, তবু এর মাঝে বিশ্বভারতীতে এখনও চলে আসছে অদ্ভুত পরম্পরা। তাই প্রেমের অচলায়তন ভাঙে নি বিশ্বভারতীতে। তাই তো গ্রিটিংস কার্ড বা এস এম এস নয়, প্রেম পত্রই লেখা হয় বিশ্বভারতীতে। প্রতিবারের মত শুক্রবার যথারীতি সেই দৃশ্যই দেখা গেল বিশ্বভারতীতে। যথারীতি কলাভবনের সামনে রাখা হয় লেটার বাক্স। আর তাতেই ফেলা হবে প্রেমপত্র। এভাবেই রীতি চলে আসছে তপোবনে। নিয়ম অনুযায়ী, এখানে সন্ধ্যেয় শিক্ষক ছাত্র মিলে জোরে জোরে পড়া হয় সেই প্রেমপত্র। কেন এই প্রচেষ্টা? নিছকই মজা? তা বোধ হয় না। ব্যাস্ততার যুগে মানুষ প্রেম পত্র লিখতে ভুলে গেছে। তাই প্রেমপত্র নিয়ে সাহিত্য আর হয় না। বিশ্বভারতীর কলাভবনের এই প্রচেষ্টা তাই যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ অবশ্য এব্যাপারে নাক গলায় নি কোন দিন। পাশাপাশি, এই জায়গা উগ্র রক্ত চক্ষু শাসন থেকে তো তারা অনেক দূরে।
প্রবাদের মত শোনালেও, আঙুলের ফাঁকে গোলাপ গুঁজে প্রপোজ করতে গেলে বীরপুরুষেরও পা ঠক ঠক করে কাঁপে। চালচলনে সে যতই কেতা থাকুক না কেন, পছন্দের মেয়েটির হাতে চিঠি দিতে গিয়ে অনেক মহান প্রেমিকও ক্যাবলা বনে যায়। গোবেচারা বাঙালির সম্বল বলতে তাই সরস্বতী পুজো। মন্ত্র একটাই বছরের ওই একটি দিনে যতটা পারো ঝুঁকি নিয়ে ফেল। ১৪ই ফেব্রুয়ারী যখন আলাদা মাহাত্ম্য পায় নি, তখনকার কথা হচ্ছিল। হয় কোন নবমীর রাতে প্রেমিকের হাতে আলতো ছোঁয়া, নয়ত সরস্বতী পুজোর দিন চুপিসারে অঞ্জলির একটি ফুল টুক করে ওর শাড়ির আঁচলে ফেলে দেওয়া! অনুভূতির কোন ভাষা হয় না। তবে হাজারো একটা ভঙ্গি আছে বটে! ভ্যালেন্টাইনস ডেইয়ের কল্যাণে এখন বছরে একটা আস্ত প্রেম দিবস। বাজারে উপহারের ঝকমারিও কম নয়। গ্রিটিংস কার্ড থেকে সফট টয় কারো কারো ভাগ্যে নিশ্চয় জোটে। আরো বেশি কিছু চাইলে, প্রেমিকার মধ্যমায় ডায়মণ্ড পড়িয়ে দিতে কসুর করে না প্রেমিকরা। সরাসরি প্রপোজ করার মত ঝক্কি পোহাতে হয় না প্রেমিক বা প্রেমিকাদের। সাহস যোগাতে হয়েছে কত ফিকির! সৌজন্যে এস এম এস, ফেসবুকে চ্যাট, আরোও কত কি! এই সব উপায়ে কোন রকমে একবার কথা বলে দিলেই কেল্লাফতে! সামনে গিয়ে তো আর দাঁড়াতে হচ্ছে না! বাপরে!
রবিঠাকুরের দেশে যেখানে সারা বছরই প্রেম, সেই শান্তি নিকেতনে ভ্যালেন্টাইনস ডে তে গোপনও কথাটি রবে না গোপনে। সেটাই স্বাভাবিক। তবে তাই বলে কেউ কাউকে বলে না, ‘আই আ মেইড এ্যট ইউর উইন্ডো/ টু বি ইউর ভ্যালেন্টাইন’। তা নাই বলুক, যতই সোস্যাল সাইট থাকুক, শান্তিনিকেতন ধরে রেখেছে তার চিরকালের রেওয়াজ। মনের জানালা খুলতে একটু বুদ্ধি খাটানো আর কি!
কলাভবনের ডিজাইনের তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্রী কিন্তু মনে করেন চিঠির আলাদা একটা মাত্রা রয়েছে। ন্যাকা ন্যাকা প্রেমই হোক কিম্বা আঁতলামি, চিঠি সবেতেই চলে। তার উপর চিঠি লেখা ,মানেই সাহিত্য নিয়ে একটু কচ কচানিও বটে। প্রেমিকাকে সকাল বিকেল মেসেজ না পাঠিয়ে গুছিয়ে বসে একদিন চিঠি লেখা বেশ দড়। প্রপোজ নয়, নিজের প্রেমিক প্রেমিকাকে ঘুরতে ফিরতে চলতে যে কথাগুলো বলা হয়ে ওঠে না, সেগুলো বলতে চিঠিই একমাত্র উপায়। অন্ততঃ সম্পর্কের একঘেয়েমিটা কাটে। প্রথামত ১৪ ফেব্রুয়ারী সকাল সকাল কলাভবনের সামনে রাখা লেটার বক্সে চিঠি ফেলে যায় সবাই। ওই বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্র জানালেন, “ পরস্পরের মন জানতে এই পদ্ধতি খুব কাজে লাগে”। বিশ্বভারতীর ছাত্র ছাত্রীদের মতে এতে অত ঝুট ঝামেলা থাকে না। একে অন্যের মন জানতে পারা যায়। এক পড়ুয়া শোনাচ্ছিল, “ যে সব বন্ধুরা প্রেম করে, তাদের হয়ে অনেক সময় আমরাই চিঠি লিখে দিই। তারপর সন্ধ্যেয় সেই চিঠি সকলের সামনে জোরে জোরে পড়া হয়। বেশ মজা হয়। শিক্ষকরাও সঙ্গে থাকেন”। অনেকেই আবেগ চাপতে পারছিল না। আরেকটা ১৪ ফেব্রুয়ারীর জন্য এখন থেকেই চিঠি লিখতে প্রস্তুত ওদের অনেকেই। মাথা থেকে নিত্য নতুন আইডিয়া বের করতে থাকে ওরা। কতকটা চমকে দেওয়া যায়। ওরা বলল, “ সিনিওর দাদা দিদিদের ব্যাক্তিগত কত কথা জানতে পারি। ব্যাপারটা খুব ইন্টারেস্টিং। প্রেমপত্র নিয়ে বড় বড় কবি সাহিত্যিকরা কত এক্সপেরিমেন্ট করেছেন, আমরা তো কোন ছাড়!- বলল একজন। ইংরেজ কবি চসারের পার্লামেন্ট অফ ফাউলস, কিটসের ফ্যানি ব্রাউনকে লেখা চিঠি কথা আওড়াচ্ছিল ও। “কত নানারকম অভিব্যাক্তি ফুটে ওঠে বলুন তো! এতো আর নিছক প্রপোজ নয়”। - বলতে বলতে প্রাণ খোলা হাসি হাসছিল নতুন যুগেরা দুরন্তরা!
(ছবিঃ লেখকের ফাইল চিত্র)
এই একটি দিনে কোথাও কোথাও কেউ কেউ প্রেম দেবতার দিকে খড়্গ হস্ত হয়, তবু এর মাঝে বিশ্বভারতীতে এখনও চলে আসছে অদ্ভুত পরম্পরা। তাই প্রেমের অচলায়তন ভাঙে নি বিশ্বভারতীতে। তাই তো গ্রিটিংস কার্ড বা এস এম এস নয়, প্রেম পত্রই লেখা হয় বিশ্বভারতীতে। প্রতিবারের মত শুক্রবার যথারীতি সেই দৃশ্যই দেখা গেল বিশ্বভারতীতে। যথারীতি কলাভবনের সামনে রাখা হয় লেটার বাক্স। আর তাতেই ফেলা হবে প্রেমপত্র। এভাবেই রীতি চলে আসছে তপোবনে। নিয়ম অনুযায়ী, এখানে সন্ধ্যেয় শিক্ষক ছাত্র মিলে জোরে জোরে পড়া হয় সেই প্রেমপত্র। কেন এই প্রচেষ্টা? নিছকই মজা? তা বোধ হয় না। ব্যাস্ততার যুগে মানুষ প্রেম পত্র লিখতে ভুলে গেছে। তাই প্রেমপত্র নিয়ে সাহিত্য আর হয় না। বিশ্বভারতীর কলাভবনের এই প্রচেষ্টা তাই যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ অবশ্য এব্যাপারে নাক গলায় নি কোন দিন। পাশাপাশি, এই জায়গা উগ্র রক্ত চক্ষু শাসন থেকে তো তারা অনেক দূরে।
প্রবাদের মত শোনালেও, আঙুলের ফাঁকে গোলাপ গুঁজে প্রপোজ করতে গেলে বীরপুরুষেরও পা ঠক ঠক করে কাঁপে। চালচলনে সে যতই কেতা থাকুক না কেন, পছন্দের মেয়েটির হাতে চিঠি দিতে গিয়ে অনেক মহান প্রেমিকও ক্যাবলা বনে যায়। গোবেচারা বাঙালির সম্বল বলতে তাই সরস্বতী পুজো। মন্ত্র একটাই বছরের ওই একটি দিনে যতটা পারো ঝুঁকি নিয়ে ফেল। ১৪ই ফেব্রুয়ারী যখন আলাদা মাহাত্ম্য পায় নি, তখনকার কথা হচ্ছিল। হয় কোন নবমীর রাতে প্রেমিকের হাতে আলতো ছোঁয়া, নয়ত সরস্বতী পুজোর দিন চুপিসারে অঞ্জলির একটি ফুল টুক করে ওর শাড়ির আঁচলে ফেলে দেওয়া! অনুভূতির কোন ভাষা হয় না। তবে হাজারো একটা ভঙ্গি আছে বটে! ভ্যালেন্টাইনস ডেইয়ের কল্যাণে এখন বছরে একটা আস্ত প্রেম দিবস। বাজারে উপহারের ঝকমারিও কম নয়। গ্রিটিংস কার্ড থেকে সফট টয় কারো কারো ভাগ্যে নিশ্চয় জোটে। আরো বেশি কিছু চাইলে, প্রেমিকার মধ্যমায় ডায়মণ্ড পড়িয়ে দিতে কসুর করে না প্রেমিকরা। সরাসরি প্রপোজ করার মত ঝক্কি পোহাতে হয় না প্রেমিক বা প্রেমিকাদের। সাহস যোগাতে হয়েছে কত ফিকির! সৌজন্যে এস এম এস, ফেসবুকে চ্যাট, আরোও কত কি! এই সব উপায়ে কোন রকমে একবার কথা বলে দিলেই কেল্লাফতে! সামনে গিয়ে তো আর দাঁড়াতে হচ্ছে না! বাপরে!
রবিঠাকুরের দেশে যেখানে সারা বছরই প্রেম, সেই শান্তি নিকেতনে ভ্যালেন্টাইনস ডে তে গোপনও কথাটি রবে না গোপনে। সেটাই স্বাভাবিক। তবে তাই বলে কেউ কাউকে বলে না, ‘আই আ মেইড এ্যট ইউর উইন্ডো/ টু বি ইউর ভ্যালেন্টাইন’। তা নাই বলুক, যতই সোস্যাল সাইট থাকুক, শান্তিনিকেতন ধরে রেখেছে তার চিরকালের রেওয়াজ। মনের জানালা খুলতে একটু বুদ্ধি খাটানো আর কি!
কলাভবনের ডিজাইনের তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্রী কিন্তু মনে করেন চিঠির আলাদা একটা মাত্রা রয়েছে। ন্যাকা ন্যাকা প্রেমই হোক কিম্বা আঁতলামি, চিঠি সবেতেই চলে। তার উপর চিঠি লেখা ,মানেই সাহিত্য নিয়ে একটু কচ কচানিও বটে। প্রেমিকাকে সকাল বিকেল মেসেজ না পাঠিয়ে গুছিয়ে বসে একদিন চিঠি লেখা বেশ দড়। প্রপোজ নয়, নিজের প্রেমিক প্রেমিকাকে ঘুরতে ফিরতে চলতে যে কথাগুলো বলা হয়ে ওঠে না, সেগুলো বলতে চিঠিই একমাত্র উপায়। অন্ততঃ সম্পর্কের একঘেয়েমিটা কাটে। প্রথামত ১৪ ফেব্রুয়ারী সকাল সকাল কলাভবনের সামনে রাখা লেটার বক্সে চিঠি ফেলে যায় সবাই। ওই বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্র জানালেন, “ পরস্পরের মন জানতে এই পদ্ধতি খুব কাজে লাগে”। বিশ্বভারতীর ছাত্র ছাত্রীদের মতে এতে অত ঝুট ঝামেলা থাকে না। একে অন্যের মন জানতে পারা যায়। এক পড়ুয়া শোনাচ্ছিল, “ যে সব বন্ধুরা প্রেম করে, তাদের হয়ে অনেক সময় আমরাই চিঠি লিখে দিই। তারপর সন্ধ্যেয় সেই চিঠি সকলের সামনে জোরে জোরে পড়া হয়। বেশ মজা হয়। শিক্ষকরাও সঙ্গে থাকেন”। অনেকেই আবেগ চাপতে পারছিল না। আরেকটা ১৪ ফেব্রুয়ারীর জন্য এখন থেকেই চিঠি লিখতে প্রস্তুত ওদের অনেকেই। মাথা থেকে নিত্য নতুন আইডিয়া বের করতে থাকে ওরা। কতকটা চমকে দেওয়া যায়। ওরা বলল, “ সিনিওর দাদা দিদিদের ব্যাক্তিগত কত কথা জানতে পারি। ব্যাপারটা খুব ইন্টারেস্টিং। প্রেমপত্র নিয়ে বড় বড় কবি সাহিত্যিকরা কত এক্সপেরিমেন্ট করেছেন, আমরা তো কোন ছাড়!- বলল একজন। ইংরেজ কবি চসারের পার্লামেন্ট অফ ফাউলস, কিটসের ফ্যানি ব্রাউনকে লেখা চিঠি কথা আওড়াচ্ছিল ও। “কত নানারকম অভিব্যাক্তি ফুটে ওঠে বলুন তো! এতো আর নিছক প্রপোজ নয়”। - বলতে বলতে প্রাণ খোলা হাসি হাসছিল নতুন যুগেরা দুরন্তরা!
(ছবিঃ লেখকের ফাইল চিত্র)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours