কাজল ভট্টাচার্য, সিনিয়র জার্নালিষ্ট, কলকাতা:
"যার শিল যার নোড়া
তারই ভাঙি দাঁতের গোড়া।"
এটাই মন্ত্রগুপ্তি অরবিন্দ কেজরিওয়ালের।
ধুরন্ধর রাজনীতিকদের যা শিখতে বছরের পর বছর লেগে যায়, 'আপ' সুপ্রিমো তা শিখে ফেলেছিলেন মাত্র কয়েকমাসেই।
এবার মোদি অমিত শাহর রাস্তায় হেঁটে, তাদের হাত থেকেই বাজি কেড়ে নিলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল।
ন'বছর আগে দিল্লির রাস্তায়, কেজরিওয়াল হেঁটেছিলেন আন্না হাজারের আঙুল ধরে। অঙ্ক কষে ঠিক সময়মতো, সেই আন্নার আঙুল ছেড়ে দিতেও দ্বিধাবোধ করেননি কেজরিওয়াল।
"কেউ কথা রাখেনি।" কবি শক্তি চাটুজ্জের সেই কলি সেদিনের মতো আজও সমানভাবে জীবন্ত। প্রাসঙ্গিক, কেজরিওয়ালের মতো মানুষদের সুবাদে।
ভোটপ্রচার ময়দানে গৈরিক শিবির তখন পাকিস্তান, কাশ্মীর, শাহিনবাগ ফাটাচ্ছে। আর ঝাঁড়ু সুপ্রিমো তখন হত্যে দিচ্ছিলেন হনুমানজির দরবারে। বজরংবলি পার করেগা। হলোও তাই। পাকিস্তান কাশ্মীর শাহিনবাগের ঘেঁটি ধরে পগার পার করে দিলো পবননন্দন। কেজরিওয়াল ঝড়ে উড়েই গেল বিজেপি। আর ভোটের গন্ধমাদন নিয়ে দিল্লির গদিতে জাঁকিয়ে বসলেন কেজরিওয়াল।
তবে হনুমানজিকে কৃতজ্ঞতা জানাতে ভোলেননি তিনি। জেতার খবর পেয়েই পাবলিকলি সেই জিত হনুমানজিকে উৎসর্গ করেছিলেন কেজরিওয়াল। কয়েকঘণ্টার মধ্যেই সপরিবার হাজির হয়ে গেছিলেন কনাট প্লেসের এক প্রাচীন হনুমানজির মন্দিরে। সেখানে গিয়ে বললেন, "হনুমানজি সবার মঙ্গল করবেন।"
মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল।
রাজ্যবাসীর মঙ্গল করার ভার হনুমানজির।
বিজেপির বিরুদ্ধে বারেবারেই অভিযোগ ওঠে হিন্দু তাস খেলার। রামমন্দির তৈরির গল্প শুনিয়েই নাকি দিল্লির মসনদ দখল। অভিযোগে সত্যতা নেই, এমনটা মোটেই নয়।
কিন্তু কেজরিওয়াল কী করলেন?
তিনিও তো সেই তাস খেলেই পদ্মশিবিরকে একেবারে পথে বসালেন। নির্বাচনী ময়দানে নামার আগেই হনুমানজির শরনে। জয়মালা গলায় উঠতেই কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ফের সপরিবার হনুমানজির দরবারে ছোটা। সেই নরম হিন্দুত্বের মোড়কে উন্নয়নের অঙ্গীকার।
মোদি অমিত শাহ রামভক্ত হলে, হনুমানভক্ত কেজরিওয়াল। তারপরেও কেজরিওয়ালের জয়ে সেকুলার বাম ডানপন্থীরা বিজয়োৎসব পালন করেন কোন যুক্তিতে?
আড়ালের গল্পটা অন্য। এই আনন্দ 'আপ'- এর জেতার জন্য নয়। 'বিজেপি'র হারার জন্য।
যে অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে নিয়ে আজ এতো নাচানাচি, তিনি কিন্তু জন্মলগ্ন থেকেই প্রতিশ্রুতিভঙ্গের বাদশাহ। বলা ভালো, 'আম আদমি পার্টি'র জন্মটাই বিশ্বাসঘাতকতার মধ্য দিয়ে।
সবেতো মাত্র ন'বছর আগের কথা।
আন্না হাজারের কথা মনে পড়ে। গাঁধিজির মতাদর্শের এক প্রবীণ পূজারি। দিল্লির রাজপথে সেই আন্নার আঙুল ধরেই হাঁটতে শিখেছিলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তখন তিনি রাজনৈতিক অজ্ঞাতকুলশীল। চারপাশে এমন একটাও মানুষ ছিলো না, যে চেনাতো দূরের কথা, নামটাও শুনেছিলো অরবিন্দ কেজরিওয়ালের।
সাল ২০১১। দিল্লির বুকে আন্না সূচনা করলেন 'দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলন'। দাবি লোকপাল বিল চাই। রাজনীতিকে দুর্নীতিমুক্ত করার দাবিতে 'হমকো চাহিয়ে আজাদি" ধাঁচের ঝাঁজালো কোনও আন্দোলন না। গাঁধিজির দেখানো পথেই অনশন শুরু করলেন আন্না। আর ওই আন্দোলনেই আন্নার বিশ্বস্ত সৈনিকের মুখোশ পরে সেদিন উঠে এসেছিলেন কেজরিওয়াল।
তবে মুখোশ খসে পড়তেও দেরি লাগেনি। অসাধারণ সময়জ্ঞান কেজরিওয়ালের। ঝোপ বুঝে কোপ মারায় বিশেষজ্ঞ।
আন্দোলনের শুরুতেই স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন আন্না, একোনও রাজনীতির ক্ষমতা হাতানো মতলববাজদের মঞ্চ নয়। সুতরাং সবাই সেদিন আন্নার কাছে শপথ করেই আন্দোলনে শরিক হয়েছিলেন, তাঁদের কেউ প্রত্যক্ষ বা অপ্রত্যক্ষভাবে দলীয় রাজনীতিতে নাম লেখাবেন না।
ঠিক একবছরের মধ্যেই বেইমানি করলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। কোনও দলটলে নাম লেখানোর মধ্যে গেলেন না তিনি। সরাসরি নিজেই একটা দল বানিয়ে ফেললেন- আম আদমি কা পার্টি। ২০১২ সালে জন্ম নিয়েই পরের বছর দিল্লির নির্বাচনী ময়দানে নেমে পড়লো 'আপ'।
আন্না যখন কেজরিওয়ালের স্বরূপ বুঝতে পারলেন, তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। আন্না আক্ষেপ করলেন, মানুষ চিনতে ভুল করেছিলেন তিনি। সেদিনের আন্দোলনে কিছু মানুষ পেটে কূবুদ্ধি নিয়েই এসেছিলেন।
গাঁধি অগাঁধিবাদীরাও আজকাল যেমন বলেন, "আর যেন কোনও নাথুরাম গডসে তৈরি না হয়।" ঠিক সেভাবেই গাঁধিভক্ত বর্ষীয়ান আন্না হাজারে সেদিন বলেছিলেন, "আর যেন কোনও কেজরিওয়াল তৈরি না হয়।" সেই সঙ্গে তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, কেজরিওয়াল বা তাঁর দলের কারুর সঙ্গে আন্নার কোনরকম সম্পর্ক নেই।
কপাল ভালো কেজরিওয়ালের।
২০১৩ সালের দিল্লি নির্বাচন। আঠাশটা আসন নিয়ে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে উঠে এলো 'আপ'। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা কোনও দলের কাছেই ছিলো না। শেষপর্যন্ত কংগ্রেসের সমর্থনে সরকার তৈরি করে ফেলেছিলেন ধুরন্ধর অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তবে মাত্র উনপঞ্চাশ দিনের মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর মুকুট নামিয়ে ফের নির্বাচনে যেতে হয়েছিলো কেজরিওয়ালকে।
২০১৫ তে কেজরিওয়াল ফিরলেন ক্ষমতা বাড়িয়ে। হাতে সাতষট্টিটা আসন। তারপর আর পেছন ফিরে তাকাননি তিনি। তাঁর রাজনৈতিক দীক্ষাগুরু আন্না হাজারে ততদিনে চাপা পড়ে গেছেন অতীতে। রাজনীতি মনে রাখে শাসককেই। সেই শাসক হওয়ার কায়দাটা নিজগুণে, দারুনভাবে রপ্ত করে ফেলেছিলেন কেজরিওয়াল। খুব ভালো ভাবে ধরে ফেলেছিলেন, কোন ফুলে কোন দেবতা তুষ্ট। আর তাই এবারের ভোটে শুরু করেছিলেন হনুমানজিকে দিয়ে। শেষেও সেই হনুমানজি।
ফের সেই মুখোশ। আন্নার সময় ছিলো আন্নাভক্তের মুখোশ। এবার তা বদলে হনুমানজির ভক্তের মুখোশ। বেশ একটা নরম হিন্দুত্বের প্রতীক, যা অনায়াসে পাল্লা দিতে পারে মোদি অমিত শাহ জুটির হিন্দুত্বকে।
সেই নরম হিন্দুত্বের মোড়কেই ঝাঁড়ু ব্রিগেডের উন্নয়নের অঙ্গীকার। ঠিক পাঁচবছর আগের দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের কথা মনে করুন তো। আপ সুপ্রিমোর মুখে কি একবারও কি হনুমানজি, বজরংবলির নাম শুনতে পেয়েছিলেন? নাকি ভোটে জেতার পর কোনও হনুমানজির মন্দিরে ছুটতে দেখতে গেছিলো? কোনটাই হয়নি।
আসলে ওই যে বললাম, ঝোপ বুঝে কোপ মারাতেই সিদ্ধহস্ত কেজরিওয়াল।
ইফতার পার্টির দিন শেষ। দিন শুরু বিজেপি'র রামমন্দির, রাহুল গাঁধির উপবীত ধারনের নয়া রাজনীতির। কেজরিওয়াল আবার শরন নিলেন বজরংবলির। তারসঙ্গে সমানতালে মেলবন্ধন করলেন মাগনার জনপরিষেবার মতো তুষ্টিকরণ রাজনীতির। সবমিলিয়ে বাজিমাত আপের। হ্যাটট্রিক অরবিন্দ কেজরিওয়ালের। বজরংবলিকে এই জয় উৎসর্গ করে, এবার রাজপাট সামলানোয় বসলেন তিনি।
"যার শিল যার নোড়া
তারই ভাঙি দাঁতের গোড়া।"
এটাই মন্ত্রগুপ্তি অরবিন্দ কেজরিওয়ালের।
ধুরন্ধর রাজনীতিকদের যা শিখতে বছরের পর বছর লেগে যায়, 'আপ' সুপ্রিমো তা শিখে ফেলেছিলেন মাত্র কয়েকমাসেই।
এবার মোদি অমিত শাহর রাস্তায় হেঁটে, তাদের হাত থেকেই বাজি কেড়ে নিলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল।
ন'বছর আগে দিল্লির রাস্তায়, কেজরিওয়াল হেঁটেছিলেন আন্না হাজারের আঙুল ধরে। অঙ্ক কষে ঠিক সময়মতো, সেই আন্নার আঙুল ছেড়ে দিতেও দ্বিধাবোধ করেননি কেজরিওয়াল।
"কেউ কথা রাখেনি।" কবি শক্তি চাটুজ্জের সেই কলি সেদিনের মতো আজও সমানভাবে জীবন্ত। প্রাসঙ্গিক, কেজরিওয়ালের মতো মানুষদের সুবাদে।
ভোটপ্রচার ময়দানে গৈরিক শিবির তখন পাকিস্তান, কাশ্মীর, শাহিনবাগ ফাটাচ্ছে। আর ঝাঁড়ু সুপ্রিমো তখন হত্যে দিচ্ছিলেন হনুমানজির দরবারে। বজরংবলি পার করেগা। হলোও তাই। পাকিস্তান কাশ্মীর শাহিনবাগের ঘেঁটি ধরে পগার পার করে দিলো পবননন্দন। কেজরিওয়াল ঝড়ে উড়েই গেল বিজেপি। আর ভোটের গন্ধমাদন নিয়ে দিল্লির গদিতে জাঁকিয়ে বসলেন কেজরিওয়াল।
তবে হনুমানজিকে কৃতজ্ঞতা জানাতে ভোলেননি তিনি। জেতার খবর পেয়েই পাবলিকলি সেই জিত হনুমানজিকে উৎসর্গ করেছিলেন কেজরিওয়াল। কয়েকঘণ্টার মধ্যেই সপরিবার হাজির হয়ে গেছিলেন কনাট প্লেসের এক প্রাচীন হনুমানজির মন্দিরে। সেখানে গিয়ে বললেন, "হনুমানজি সবার মঙ্গল করবেন।"
মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল।
রাজ্যবাসীর মঙ্গল করার ভার হনুমানজির।
বিজেপির বিরুদ্ধে বারেবারেই অভিযোগ ওঠে হিন্দু তাস খেলার। রামমন্দির তৈরির গল্প শুনিয়েই নাকি দিল্লির মসনদ দখল। অভিযোগে সত্যতা নেই, এমনটা মোটেই নয়।
কিন্তু কেজরিওয়াল কী করলেন?
তিনিও তো সেই তাস খেলেই পদ্মশিবিরকে একেবারে পথে বসালেন। নির্বাচনী ময়দানে নামার আগেই হনুমানজির শরনে। জয়মালা গলায় উঠতেই কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ফের সপরিবার হনুমানজির দরবারে ছোটা। সেই নরম হিন্দুত্বের মোড়কে উন্নয়নের অঙ্গীকার।
মোদি অমিত শাহ রামভক্ত হলে, হনুমানভক্ত কেজরিওয়াল। তারপরেও কেজরিওয়ালের জয়ে সেকুলার বাম ডানপন্থীরা বিজয়োৎসব পালন করেন কোন যুক্তিতে?
আড়ালের গল্পটা অন্য। এই আনন্দ 'আপ'- এর জেতার জন্য নয়। 'বিজেপি'র হারার জন্য।
যে অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে নিয়ে আজ এতো নাচানাচি, তিনি কিন্তু জন্মলগ্ন থেকেই প্রতিশ্রুতিভঙ্গের বাদশাহ। বলা ভালো, 'আম আদমি পার্টি'র জন্মটাই বিশ্বাসঘাতকতার মধ্য দিয়ে।
সবেতো মাত্র ন'বছর আগের কথা।
আন্না হাজারের কথা মনে পড়ে। গাঁধিজির মতাদর্শের এক প্রবীণ পূজারি। দিল্লির রাজপথে সেই আন্নার আঙুল ধরেই হাঁটতে শিখেছিলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তখন তিনি রাজনৈতিক অজ্ঞাতকুলশীল। চারপাশে এমন একটাও মানুষ ছিলো না, যে চেনাতো দূরের কথা, নামটাও শুনেছিলো অরবিন্দ কেজরিওয়ালের।
সাল ২০১১। দিল্লির বুকে আন্না সূচনা করলেন 'দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলন'। দাবি লোকপাল বিল চাই। রাজনীতিকে দুর্নীতিমুক্ত করার দাবিতে 'হমকো চাহিয়ে আজাদি" ধাঁচের ঝাঁজালো কোনও আন্দোলন না। গাঁধিজির দেখানো পথেই অনশন শুরু করলেন আন্না। আর ওই আন্দোলনেই আন্নার বিশ্বস্ত সৈনিকের মুখোশ পরে সেদিন উঠে এসেছিলেন কেজরিওয়াল।
তবে মুখোশ খসে পড়তেও দেরি লাগেনি। অসাধারণ সময়জ্ঞান কেজরিওয়ালের। ঝোপ বুঝে কোপ মারায় বিশেষজ্ঞ।
আন্দোলনের শুরুতেই স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন আন্না, একোনও রাজনীতির ক্ষমতা হাতানো মতলববাজদের মঞ্চ নয়। সুতরাং সবাই সেদিন আন্নার কাছে শপথ করেই আন্দোলনে শরিক হয়েছিলেন, তাঁদের কেউ প্রত্যক্ষ বা অপ্রত্যক্ষভাবে দলীয় রাজনীতিতে নাম লেখাবেন না।
ঠিক একবছরের মধ্যেই বেইমানি করলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। কোনও দলটলে নাম লেখানোর মধ্যে গেলেন না তিনি। সরাসরি নিজেই একটা দল বানিয়ে ফেললেন- আম আদমি কা পার্টি। ২০১২ সালে জন্ম নিয়েই পরের বছর দিল্লির নির্বাচনী ময়দানে নেমে পড়লো 'আপ'।
আন্না যখন কেজরিওয়ালের স্বরূপ বুঝতে পারলেন, তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। আন্না আক্ষেপ করলেন, মানুষ চিনতে ভুল করেছিলেন তিনি। সেদিনের আন্দোলনে কিছু মানুষ পেটে কূবুদ্ধি নিয়েই এসেছিলেন।
গাঁধি অগাঁধিবাদীরাও আজকাল যেমন বলেন, "আর যেন কোনও নাথুরাম গডসে তৈরি না হয়।" ঠিক সেভাবেই গাঁধিভক্ত বর্ষীয়ান আন্না হাজারে সেদিন বলেছিলেন, "আর যেন কোনও কেজরিওয়াল তৈরি না হয়।" সেই সঙ্গে তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, কেজরিওয়াল বা তাঁর দলের কারুর সঙ্গে আন্নার কোনরকম সম্পর্ক নেই।
কপাল ভালো কেজরিওয়ালের।
২০১৩ সালের দিল্লি নির্বাচন। আঠাশটা আসন নিয়ে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে উঠে এলো 'আপ'। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা কোনও দলের কাছেই ছিলো না। শেষপর্যন্ত কংগ্রেসের সমর্থনে সরকার তৈরি করে ফেলেছিলেন ধুরন্ধর অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তবে মাত্র উনপঞ্চাশ দিনের মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর মুকুট নামিয়ে ফের নির্বাচনে যেতে হয়েছিলো কেজরিওয়ালকে।
২০১৫ তে কেজরিওয়াল ফিরলেন ক্ষমতা বাড়িয়ে। হাতে সাতষট্টিটা আসন। তারপর আর পেছন ফিরে তাকাননি তিনি। তাঁর রাজনৈতিক দীক্ষাগুরু আন্না হাজারে ততদিনে চাপা পড়ে গেছেন অতীতে। রাজনীতি মনে রাখে শাসককেই। সেই শাসক হওয়ার কায়দাটা নিজগুণে, দারুনভাবে রপ্ত করে ফেলেছিলেন কেজরিওয়াল। খুব ভালো ভাবে ধরে ফেলেছিলেন, কোন ফুলে কোন দেবতা তুষ্ট। আর তাই এবারের ভোটে শুরু করেছিলেন হনুমানজিকে দিয়ে। শেষেও সেই হনুমানজি।
ফের সেই মুখোশ। আন্নার সময় ছিলো আন্নাভক্তের মুখোশ। এবার তা বদলে হনুমানজির ভক্তের মুখোশ। বেশ একটা নরম হিন্দুত্বের প্রতীক, যা অনায়াসে পাল্লা দিতে পারে মোদি অমিত শাহ জুটির হিন্দুত্বকে।
সেই নরম হিন্দুত্বের মোড়কেই ঝাঁড়ু ব্রিগেডের উন্নয়নের অঙ্গীকার। ঠিক পাঁচবছর আগের দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের কথা মনে করুন তো। আপ সুপ্রিমোর মুখে কি একবারও কি হনুমানজি, বজরংবলির নাম শুনতে পেয়েছিলেন? নাকি ভোটে জেতার পর কোনও হনুমানজির মন্দিরে ছুটতে দেখতে গেছিলো? কোনটাই হয়নি।
আসলে ওই যে বললাম, ঝোপ বুঝে কোপ মারাতেই সিদ্ধহস্ত কেজরিওয়াল।
ইফতার পার্টির দিন শেষ। দিন শুরু বিজেপি'র রামমন্দির, রাহুল গাঁধির উপবীত ধারনের নয়া রাজনীতির। কেজরিওয়াল আবার শরন নিলেন বজরংবলির। তারসঙ্গে সমানতালে মেলবন্ধন করলেন মাগনার জনপরিষেবার মতো তুষ্টিকরণ রাজনীতির। সবমিলিয়ে বাজিমাত আপের। হ্যাটট্রিক অরবিন্দ কেজরিওয়ালের। বজরংবলিকে এই জয় উৎসর্গ করে, এবার রাজপাট সামলানোয় বসলেন তিনি।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours