শেখ ফরিদ, প্রগতিশীল লেখক, বাংলাদেশ:

শুনলাম, কদিন আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদার মোদী নাকি বলেছিলেন, যুদ্ধ শুরু হলে ১০ দিনে পাকিস্তানকে পরাজিত করার ক্ষমতা রাখে ভারত।  সম্ভবত এ কারনেই পাকিস্তান  নামক বিচিত্র রাষ্ট্রটি অসম্মান বোধ করতেছিলো। যদিও পাকিস্তান, তিন তিন বার সর্বাত্মক যুদ্ধে  নেমে খুব দ্রুতই  পরাজয় বরণ করেছিলো। ৭১ এ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের ৯৫ হাজার সেন্যর অসহায় আত্মসমর্পণের  ঘা তাদের ঘুমেতে দেয় না।  তাই হয়তো ইমরান সরকারের সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী  আলি মুহাম্মদ খান  পাকিস্তান সংসদে বলেন, "ভারতের বিরুদ্ধে আক্রমনের পরিকল্পনা করে জুম্মু কাশ্মীর দখল করুন।"  আবার পাকিস্তানের একটি ধর্মপন্থী দলের পক্ষে সংসদে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার আহ্বান জানায়। আর সেই ধর্মীয় দলের দলনেতা  তো আরো এক কদম আগে নিকলা৷ মওলনা আবদুল আকবর ছিত্রালী, দিনক্ষন বেধে ইমরান খানকে ১০ ফেব্রয়ারীতেই ভারত আক্রমন করার অনুরোধ করে।
এ মুহুর্তে এমন কোন ঘটনা ঘটেনি যে ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ বেধে যাবে। তবুও কেন এমন যুদ্ধংদেহি মনোভাব নিয়ে দু দেশ কথা বলে চলছে? ধরে নিলাম নরেন্দ্র মোদী পাকিস্তানের প্রতি আক্রমনাত্মক কথা বলে, তিনি তার সমর্থকদের মন জয় করার চেষ্টা করছেন। এবং তিনি একাই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বলে চলছেন। এ বিষয়ে পাকিস্তান ঠিক  উল্টো। প্রায় পুরো সংসদ ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চাইছে। আমার মনে হয়, যদি, এখন পাকিস্তানের মত ভারতের বিরোধী দলগুলোও ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে পাকিস্তানের  বিরুদ্ধে  উস্কে দিতো,তবে এখনি একটি যুদ্ধ বেধে যেতো।
নাকি, পাকিস্তানের সাংসদেরা মনে করছেন, যেহেতু কংগ্রেস,  তৃনমুল কংগ্রেস,  ও বামপন্থীরা বিজেপির বিরুদ্ধে একজোট হয়েছে বলে, এ সময় যুদ্ধ বাধলে  পাকিস্তান সুবিধা পাবে। যদি তারা তা ভেবে থাকে তা হলে ভুল ভাবছে। কোন পরাশক্তি এ সময় পাকিস্তানকে সাপোর্ট করবে বলে মনে হয় না। এক সময় রাশিয়াকে কেবল ভারতের মিত্র মনে করা হতো। বর্তমানে সে অবস্থানে ভারত নেই। আমেরিকাও আজকাল ভারতের বন্ধুরাষ্ট্র। এমনকি ইসরাইলও ভারতের অন্যতম বন্ধু। আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীও কোন ভাবেই পাকিস্তানের উত্থান চাইবে না। তারা মনে করে, পাকিস্তানের উত্থান মানেই 'মুসলিম জঙ্গিদের " উত্থান। তা ছাড়া যুদ্ধ মানেই যদি বাজার দখল হয়, তবে ভারত একটি মস্তবড় বাজার। এ বাজারটা কে হারাতে চায়? ফ্রান্স ইরাকের বিরুদ্ধে ইঙ্গ-মার্কিন যুদ্ধে মার্কিনীদের সঙ্গ না দেয়ায়, মধ্যপ্রাচ্য থেকে একরকম, ব্যাবসায়িক নির্বাসনে ছিলো। আর ভারত পাকিস্তান যুদ্ধে পাকিস্তানের পরাজয় প্রায় নিশ্চিত। অতিত ইতিহাস তাই বলে। সুতরাং কোন পরাশক্তিই  বাজার হারনোর ঝুকি নেবে না, পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে। চীন থাকবে পাকিস্তানের পক্ষে বেলুচিস্তানে বিশাল বিনিয়োগ রক্ষায়। তবে সরাসরি পাকিস্তানের পক্ষে অতীতেও যেমন যুদ্ধে নামেনি ; তেমনি আগামী যুদ্ধেও পাকিস্তানের হয়ে নামবে না।
বরং পাকিস্তান যদি সত্যই জম্মু-কাশ্মীর দখলের উদ্দেশ্য ভারত আক্রমন করে, তাতে এবার পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর ভারতের অংশ হয়ে যেতে পারে৷ এবং নরেন্দ্র মোদী ও
বিজেপি সরকারকে  উৎখাত করতে গিয়ে হিতে বিপরীত হতে পারে৷ নরেন্দ্র মোদী যুদ্ধে জিতে ভারতের হিন্দুদের নিকট সুপার হিরো হয়ে যেতে পারেন। আর  কাকতালীয় ভাবে হেরে গেলে, তিনি ট্রাজেডি কিং ও  হয়ে যেতে পারেন। সব দোষ চাপিয়ে দেবেন, কংগ্রেস ও বামপন্থীদের উপর। বলতে, পারে, কংগ্রেস ও বামপন্থীদের "গাদ্দারীর" কারনে, ভারত হেরে গেছে।
আর ভারত, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জিতে গেলে, এমনিতেই ৫৪৩ লোকসভা আসনে মাত্র  ৫ টি বামের। আর কোন রকমে অর্ধশত কংগ্রেসের!  তাই এই দুই বিরোধী দলের  অবস্থা কি হবে তা সহজেই অনুমেয়।

ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ কি আসন্ন নাকি অনিবার্য?  আমার মনে হয়, আরো একটি  যুদ্ধ অনিবার্য। কেবল, জুম্মু কাশ্মীর ইসু নয় আদর্শিক কারনেই আরো একটি ভারত পাকিস্তান  যুদ্ধ অনিবার্য। আদর্শিক এ জন্যই বললাম, পাকিস্তান সৃষ্টি হয়েছিলো সাম্প্রদায়ীতাকে কেন্দ্র করেই। আর বিজেপিও গনতান্ত্রে বিশ্বাসী হলেও তারা  হিন্দুত্ববাদী দল। পাকিস্তান কখনোই মেলেটারী ও মোল্লাতন্ত্র থেকে বের হতে পারেনি। তাই এবার ভারত ও পাকিস্তান মুখোমুখি হবে এটাই স্বাভাবিক। কথিত সেকুলার কংগ্রেস দলের মত বিজেপি পাকিস্তানকে কখনো ছাড় দেবে না।  আর পাকিস্তান কোন অবস্থাতেই তিন তিন বারের পরাজয়ের গ্লানি সহ্য করতে পারছে না। তাই ভারত ও হিন্দুর উপর পুরনো ক্ষোভ থাকলেও,  পাকিস্তানের নতুন মাথা ব্যাথার কারন  নরেন্দ্র মোদী ও বিজেপি।
তার লক্ষন আমরা দেখেছি। সকল রাজনৈতিক শিষ্টাচার পদদলিত করে, পাকিস্তানের নেতারা  ভারতের একটি রাজ্য সরকার নির্বাচনে বলেই ফেলে, আম আদমী পার্টির কেজরীওয়ালকে দিল্লীতে আবার ক্ষমতায় বসান! আবার চলমান, সংসদে বসে, নিজ প্রধানমন্ত্রীকে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার আহ্বান জানাচ্ছে।  এতে যে বিজেপি ও নরেন্দ্র মোদীর রাজনৈতিক অবস্থান আরো মজবুত হয় এ কথা পাকিস্তানি রাজনীতিকদের মাথায় আসছে না৷ আসবেও না, তাদের অতিত ইতিহাস তা বলে না। এরা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয় না। তাই,  ২৫ বছরের মাথায় পাকিস্তান ভেঙ্গে যায়। এবং বাংলাদেশ নামে একটি দেশের জন্ম হয়। পাকিস্তান আবারো ভাঙ্গবে। পাকিস্তানিদের গোঁয়ার্তুমির জন্য। তারা জুম্মু-কাশ্মীরের দরদী বলে প্রচার করলেও আসলে তা সত্য নয়। যদি  পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের প্রতি পাকিস্তানের দরদ থাকতো, তবে, সেখানে কাশ্মীরী ভাষা নিষিদ্ধ করে রাখতো না। যা তারা ১৯৫২ সালে বাংলাদেশে করতে ব্যার্থ হয়েছিলো। আমাদের মাতৃভাষা কেরে নিতে পারেনি৷ যা,তারা কাশ্মীরে পেরেছে।

 সরাসরি যুদ্ধে ভারতকে কাবু করতে না পেরে, সন্ত্রাসী ও জঙ্গি হামলা করে ঘায়েল করার যে সুযোগ ছিলো। তা সংকীর্ণ হয়ে আসবে জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যে অগণতান্ত্রিক, অসাংবিধানিক ৩৭০ ও ৩৫ এ  ধারাসমূহ তুলে দেয়ার কারনে। পাকিস্তানের জঙ্গি ও সন্ত্রাসী রপ্তানি করে যে  প্রক্সি ওয়ার জারি রেখেছিলো, নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় থাকাতে তা চরম ভাবে ভেস্তে গেছে। আফগানিস্তানের সাথেও পাকিস্তানের এখন সেই  নব্বই দশকের মধুচন্দ্রিমা আর নেই। বরং কাবুল এখন পাকিস্তানকে তার দেশ ধ্বংসের কারিগরদের অন্যতম হোতা মনে করে। ইরানের সাথেও পাকিস্তানের সীমান্ত উত্তপ্ত।
যুদ্ধ হয়তো আসন্ন নয়৷ তবে, ভারত -পাকিস্তান যুদ্ধ অনিবার্য।  তবে ভয় পারমানবিক বোমার। তার চেয়েও বড় ভয়, এ উপমহাদেশ মানুষে গিজগিজ করে,ঘনবসতি। কেউ একবার পারমানবিক বোমা ছুড়লে, যুদ্ধের ইতিহাসের সকল ক্ষয়ক্ষতির হিসাব পাল্টে যাবে। যা আমাদের কল্পনার বাইরে। আমরা যুদ্ধ চাই না, কোন মানবিক মানুষ যুদ্ধ চাইতে পারে না৷ কিন্তু পুঁজিবাদ, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা যুদ্ধ ব্যাতিত ফুলফেঁপে উঠতে পারে না। ভারত ও পাকিস্তানে সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী মানুষে ভরপুর।অন্যদিকে, বিশ্বের পুঁজিবাদী দেশগুলো বাজার দখল, বেদখলও অস্ত্র রপ্তানির নেশায় বুদ হয়ে আছে! মানবিক, অসাম্প্রদায়িক ও যুদ্ধ বিরোধী মানুষগুলো এগিয়ে না এলে, ভারত পাকিস্তানের অনিবার্য আর একটি যুদ্ধ থামানো যাবে না।
Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours