প্রিয়াঙ্কা সরকার, লেখিকা, বর্ধমান:
পিছনে বাইশ বছর ছেড়ে এসেছিল সুজাতা, আজ ফিরে দেখা স্বপ্নে ফিরে পেলো বিপন্নের জীবন। সন্তানসম্ভবা সুজাতা গুছিয়ে নিচ্ছে ব্যাগ। যন্ত্রণার বুকে কাতর আর্তি, সন্তানের জন্য। সুজাতা তো আগের দিন থেকেই নার্সিংহোমে। ব্রতীর জন্যই তো এতো শ্রম, এতো যন্ত্রণা.. মায়ের প্রাণে ঘুণ ধরা কাঠে কাঠঠোকরার ইশারা। কে জানবে নকশাল আন্দোলনে মুক্তির লড়াইয়ে শেষ হয়ে যাবে এমন নিষ্পাপ প্রাণ। আর হাজার চুরাশি!! সুজাতাই তো ঐ হাজার চুরাশির মা। আচ্ছা! কেও জানবে! ব্রতীর নাম। এক হাজার তিরিশ জনের মৃত্যুর পর কেই বা খবর রাখবে ব্রতীকে। কেই বা গাইবে গান,
" আপাতত চোখ থাক পৃথিবীর প্রতি,
শেষে নেওয়া যাবে শেষকার পথ জেনে। "
সুজাতার স্বামী দিব্যনাথের চরিত্র মানসিকতা সবটাই তো অন্যরকম৷ দায়বদ্ধতা তো মিলের ধোঁয়া। ভালোর গোলকধাঁধায় কেবল ঘুরে মরা৷ লাল প্রত্যুষে শরীরের চাহিদা যেন টিকটিকি ডাক। দিব্যনাথের সঙ্গে আসার কোনো ইচ্ছা নেই, আসেও না। সুজাতার মা হবার যোগ্য শরীর খোঁজা ওর কাজ৷ এ যেন, " পরের দায়ে শ্মশান চষা "জীবন৷ অস্থির কামনায় অশ্লীল মনে হয় সুজাতার৷ বিধির করুণা ছেড়েই দিয়েছে সুজাতা।
আবার মনের পর্দায় সেই ঘুণ ধরা স্বপ্ন। কামনায় বলি হলে যখন দিব্যনাথের গলায় কফ জমে থকথকে হয়ে স্বর বেরিয়ে আসে, তখন কথা হারিয়ে যায় সুজাতার। দেহ না চললে, চাবুক কৃত্রিম যৌনতা তো বন্ধ হয় না৷ আর এই সেই ব্রতী, যার জন্য সুজাতা ভেবেছে, সন্তানের সংশয় যে সে নিতে পারবে না। সেই ব্রতীই আজ গুলিবিদ্ধ। ব্রতীর বুকে, পেটে, গলায় তিনটি গুলির দাগ৷ হ্যাঁ, নীলচে চামড়ার বুকে শরীর ছেঁড়া যন্ত্রণা, উফফ! নিদারুণ। এই ব্রতী শিশু বয়স থেকেই শুকনো ডাঙায় নির্ভয়ে যাতায়াত করে৷ কিন্তু প্রথাগত ভয় তাকে আঁতকে দিয়েছে বহুবার। ব্রতী আসলে তো মাদার্স চাইল্ড। মুক্তির দশকে থেঁতলানো মাংসের অসুখ যে কষ্ট দেয় না৷ শ্মশানে শুয়ে পাষাণ কায়ারা৷ শ্লোগান লিখলেই বুলেট আসবে, হ্যাঁ, জানে তারা৷ সীমানাহীনের কেশারণ্যের দশকে শরীর মনের দ্বন্দ্ব আসে না৷
সুজাতা কোনোদিন চাকরি ছেড়ে দিতে চায় নি। কারণ ব্রতীর আট বছর বয়স পর্যন্ত তাঁর শাশুড়ি বেঁচে ছিলো। দিব্যনাথের প্রেম তো ছিলো না, তাই প্রসাদী হয়ে থাকতে চায় নি আর কোনোদিন। দিব্যনাথ সারাজীবন নোংরামি করেছে, সুজাতা নক্ষত্রবিরহ হয়ে থেকেছে। শাশুড়ী বলেছে, ছেলে পুরুষ বাচ্চা, স্ত্রৈণ নয়৷ কিন্তু ব্রতী ছিলো অন্য। সে তো কারোর পক্ষ পায়নি৷ ব্রতী তো জ্যোতির মতো প্রচুর মদ খেতে পারে নি, বাবার মতো অসহযোগিতা করতে পারে নি, দুশ্চরিত্র হতে পারে নি, তাই কারোর পক্ষ পায় নি৷
ব্রতী সুজাতার রক্তের রক্ত, তাই সুজাতা তো কৃত্রিম হতে পারে না। দিন বয়ে গেছে, ছলনা পেরিয়ে ঘরোয়া হতে অনেকেই পলাতক হয়েছে, ব্রতী হতে পারে নি। যুদ্ধ তো বহুজনের ভ্রূণেই বিষাক্ত বিষ দিয়েছে; যারা আদর্শে দীক্ষিত হয়েছে তাদের কাছে ছলনা রূপক। মুক্তির দশকে তো দেহ দিয়েছে অনেকেই। সমু, শরীরে তেইশটা আঘাত, বিজিত, শরীরে ষোলোটা আঘাত, লাল্টুর নাড়ীর পাক খুলে জড়িয়ে আছে দেহ৷ এই জীবন বিস্বাদ লাগে শোকে৷ শূন্যে রঙ্গে কান্না ছাড়া তো আর কিছু নেই।
সমুর মা দরিদ্র। অকর্মণ্য বুকের চিতায় স্বপ্ন অশরীরী আঘাত না করলে ভয়ংকর পরিস্থিতি খনি গর্ভ হয়ে ওঠে৷ সব বাবা তো দিব্যনাথ নয়৷ ব্রতী নন্দিনীকে ভালোবাসত। আজ সেই নন্দিনী, সুজাতা মুখোমুখি। ব্রতী তো অনিন্দ্যকে বিশ্বাস করেছিল৷ অনিন্দ্য এনেছিল নিতুকে৷ নিতু থাকত দীপু সেজে। সে জানে দিব্যনাথকে৷ সুজাতাকে কেও বোঝে না। আটচল্লিশ ঘন্টা আলোর নীচে থেকে নন্দিনীর চোখের নার্ভ নষ্ট হয়ে যায়। ব্রতী জানতো বাবাকে৷ তুলি যে বাবাকে সাহায্য করেছে৷ সুজাতা সব গহনা ভাগ করেছে৷ নীপা আর বিনীকেও যা দিয়েছে তাই তুলিকে দিয়েছে৷ আজ ব্রতীর দীর্ঘায়ু রেখা দেখানো ঠিকুজি সুজাতা ছিঁয়ে দিয়েছে। সবই যেন আজ নিষিদ্ধ বলে মনে হয়।
আজ সুজাতার মন বলছে সব অনাত্মীয়। অমিত, নীপা, বলাইয়ের কাছে গেলে মরীচিকা মনে হয়। এদের ভ্রূণ মানেই দুষ্ট, নিষ্ফল অপরাহ্ন ছাড়া আর কিছুই নয়। পার্টির মুখে সুজাতার সাথে তুলি আলাপ করায় এক বিশেষ অতিথিকে৷ চমকে মনে পড়ে যায় ব্রতীর মুখ। ব্রতীতো তার সন্তান।ডি. সি. ডি. ভি. সরোজ পালকে দেখেই তো সুজাতার চোখে ভেসে আসে শবদেহের কান্না৷ ব্রতীকে চিৎকার করে বলে, " পালাস না! আমার বুকে আয়। " লাল মেঘে তখন আবছা হয়ে যাচ্ছে ঘৃণ্য প্রাণ। কেবল প্রশ্ন এদের হাতে যেন এই পৃথিবীটা ভাগ না হয়ে যায়৷ ফাঁকা ভাঁড়ারে শুধুই যন্ত্রণা, দিব্যনাথ বলে হয়তো অ্যাপেনডিক্স ফেটে গেছে। লাল ত্রাসে কাঁপে ভবলীলায় মায়ের শরীর৷ আত্মযন্ত্রণায় অকৃপণ পণ্য হয় মৃত্যু যন্ত্রণা।
পিছনে বাইশ বছর ছেড়ে এসেছিল সুজাতা, আজ ফিরে দেখা স্বপ্নে ফিরে পেলো বিপন্নের জীবন। সন্তানসম্ভবা সুজাতা গুছিয়ে নিচ্ছে ব্যাগ। যন্ত্রণার বুকে কাতর আর্তি, সন্তানের জন্য। সুজাতা তো আগের দিন থেকেই নার্সিংহোমে। ব্রতীর জন্যই তো এতো শ্রম, এতো যন্ত্রণা.. মায়ের প্রাণে ঘুণ ধরা কাঠে কাঠঠোকরার ইশারা। কে জানবে নকশাল আন্দোলনে মুক্তির লড়াইয়ে শেষ হয়ে যাবে এমন নিষ্পাপ প্রাণ। আর হাজার চুরাশি!! সুজাতাই তো ঐ হাজার চুরাশির মা। আচ্ছা! কেও জানবে! ব্রতীর নাম। এক হাজার তিরিশ জনের মৃত্যুর পর কেই বা খবর রাখবে ব্রতীকে। কেই বা গাইবে গান,
" আপাতত চোখ থাক পৃথিবীর প্রতি,
শেষে নেওয়া যাবে শেষকার পথ জেনে। "
সুজাতার স্বামী দিব্যনাথের চরিত্র মানসিকতা সবটাই তো অন্যরকম৷ দায়বদ্ধতা তো মিলের ধোঁয়া। ভালোর গোলকধাঁধায় কেবল ঘুরে মরা৷ লাল প্রত্যুষে শরীরের চাহিদা যেন টিকটিকি ডাক। দিব্যনাথের সঙ্গে আসার কোনো ইচ্ছা নেই, আসেও না। সুজাতার মা হবার যোগ্য শরীর খোঁজা ওর কাজ৷ এ যেন, " পরের দায়ে শ্মশান চষা "জীবন৷ অস্থির কামনায় অশ্লীল মনে হয় সুজাতার৷ বিধির করুণা ছেড়েই দিয়েছে সুজাতা।
আবার মনের পর্দায় সেই ঘুণ ধরা স্বপ্ন। কামনায় বলি হলে যখন দিব্যনাথের গলায় কফ জমে থকথকে হয়ে স্বর বেরিয়ে আসে, তখন কথা হারিয়ে যায় সুজাতার। দেহ না চললে, চাবুক কৃত্রিম যৌনতা তো বন্ধ হয় না৷ আর এই সেই ব্রতী, যার জন্য সুজাতা ভেবেছে, সন্তানের সংশয় যে সে নিতে পারবে না। সেই ব্রতীই আজ গুলিবিদ্ধ। ব্রতীর বুকে, পেটে, গলায় তিনটি গুলির দাগ৷ হ্যাঁ, নীলচে চামড়ার বুকে শরীর ছেঁড়া যন্ত্রণা, উফফ! নিদারুণ। এই ব্রতী শিশু বয়স থেকেই শুকনো ডাঙায় নির্ভয়ে যাতায়াত করে৷ কিন্তু প্রথাগত ভয় তাকে আঁতকে দিয়েছে বহুবার। ব্রতী আসলে তো মাদার্স চাইল্ড। মুক্তির দশকে থেঁতলানো মাংসের অসুখ যে কষ্ট দেয় না৷ শ্মশানে শুয়ে পাষাণ কায়ারা৷ শ্লোগান লিখলেই বুলেট আসবে, হ্যাঁ, জানে তারা৷ সীমানাহীনের কেশারণ্যের দশকে শরীর মনের দ্বন্দ্ব আসে না৷
সুজাতা কোনোদিন চাকরি ছেড়ে দিতে চায় নি। কারণ ব্রতীর আট বছর বয়স পর্যন্ত তাঁর শাশুড়ি বেঁচে ছিলো। দিব্যনাথের প্রেম তো ছিলো না, তাই প্রসাদী হয়ে থাকতে চায় নি আর কোনোদিন। দিব্যনাথ সারাজীবন নোংরামি করেছে, সুজাতা নক্ষত্রবিরহ হয়ে থেকেছে। শাশুড়ী বলেছে, ছেলে পুরুষ বাচ্চা, স্ত্রৈণ নয়৷ কিন্তু ব্রতী ছিলো অন্য। সে তো কারোর পক্ষ পায়নি৷ ব্রতী তো জ্যোতির মতো প্রচুর মদ খেতে পারে নি, বাবার মতো অসহযোগিতা করতে পারে নি, দুশ্চরিত্র হতে পারে নি, তাই কারোর পক্ষ পায় নি৷
ব্রতী সুজাতার রক্তের রক্ত, তাই সুজাতা তো কৃত্রিম হতে পারে না। দিন বয়ে গেছে, ছলনা পেরিয়ে ঘরোয়া হতে অনেকেই পলাতক হয়েছে, ব্রতী হতে পারে নি। যুদ্ধ তো বহুজনের ভ্রূণেই বিষাক্ত বিষ দিয়েছে; যারা আদর্শে দীক্ষিত হয়েছে তাদের কাছে ছলনা রূপক। মুক্তির দশকে তো দেহ দিয়েছে অনেকেই। সমু, শরীরে তেইশটা আঘাত, বিজিত, শরীরে ষোলোটা আঘাত, লাল্টুর নাড়ীর পাক খুলে জড়িয়ে আছে দেহ৷ এই জীবন বিস্বাদ লাগে শোকে৷ শূন্যে রঙ্গে কান্না ছাড়া তো আর কিছু নেই।
সমুর মা দরিদ্র। অকর্মণ্য বুকের চিতায় স্বপ্ন অশরীরী আঘাত না করলে ভয়ংকর পরিস্থিতি খনি গর্ভ হয়ে ওঠে৷ সব বাবা তো দিব্যনাথ নয়৷ ব্রতী নন্দিনীকে ভালোবাসত। আজ সেই নন্দিনী, সুজাতা মুখোমুখি। ব্রতী তো অনিন্দ্যকে বিশ্বাস করেছিল৷ অনিন্দ্য এনেছিল নিতুকে৷ নিতু থাকত দীপু সেজে। সে জানে দিব্যনাথকে৷ সুজাতাকে কেও বোঝে না। আটচল্লিশ ঘন্টা আলোর নীচে থেকে নন্দিনীর চোখের নার্ভ নষ্ট হয়ে যায়। ব্রতী জানতো বাবাকে৷ তুলি যে বাবাকে সাহায্য করেছে৷ সুজাতা সব গহনা ভাগ করেছে৷ নীপা আর বিনীকেও যা দিয়েছে তাই তুলিকে দিয়েছে৷ আজ ব্রতীর দীর্ঘায়ু রেখা দেখানো ঠিকুজি সুজাতা ছিঁয়ে দিয়েছে। সবই যেন আজ নিষিদ্ধ বলে মনে হয়।
আজ সুজাতার মন বলছে সব অনাত্মীয়। অমিত, নীপা, বলাইয়ের কাছে গেলে মরীচিকা মনে হয়। এদের ভ্রূণ মানেই দুষ্ট, নিষ্ফল অপরাহ্ন ছাড়া আর কিছুই নয়। পার্টির মুখে সুজাতার সাথে তুলি আলাপ করায় এক বিশেষ অতিথিকে৷ চমকে মনে পড়ে যায় ব্রতীর মুখ। ব্রতীতো তার সন্তান।ডি. সি. ডি. ভি. সরোজ পালকে দেখেই তো সুজাতার চোখে ভেসে আসে শবদেহের কান্না৷ ব্রতীকে চিৎকার করে বলে, " পালাস না! আমার বুকে আয়। " লাল মেঘে তখন আবছা হয়ে যাচ্ছে ঘৃণ্য প্রাণ। কেবল প্রশ্ন এদের হাতে যেন এই পৃথিবীটা ভাগ না হয়ে যায়৷ ফাঁকা ভাঁড়ারে শুধুই যন্ত্রণা, দিব্যনাথ বলে হয়তো অ্যাপেনডিক্স ফেটে গেছে। লাল ত্রাসে কাঁপে ভবলীলায় মায়ের শরীর৷ আত্মযন্ত্রণায় অকৃপণ পণ্য হয় মৃত্যু যন্ত্রণা।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours