জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা, দুর্গাপুর:

এদের যে কোন লজ্জ্যার মাথা খেয়ে, সংবাদ মাধ্যম  'উঘ্র জাতীয়তাবাদুত্বের' সম্মান দেয়, সে ভাষা, দেশের বিশেষ কিছু  সম্প্রদায় যদি বিশ্বাস করেন তার কিছু কারন রয়েছে,
---- কিন্তু সংবাদ মাধ্যমের  যারা, সেই বিশেষ  দুটি কারন  ব্যতিরেখে,  এদের 'উঘ্র' জাতীয়তাবাদের 'অলঙ্কারে' অলঙ্কৃত করেন, তাদের যে শব্দে ভূষিত করতে হয়, সেটা নয়ন বা কর্ণ নন্দন হবে না ।
উনাদের ভালো লাগবে না জেনেই বলতে হয় দুটি কথা। এরা  আজকালকার দিনের, খন্ডিতজ্ঞানের ভাষমান পদার্থ   থেকে উদ্ভুত,পদলেহী  চাটুকাকার ব্যতিরেখে কিছুই নয়।
দেশের একদল লোক, বিশেষ উদ্দেশ্যে,   মার-দাংগার শ্লোগানে হারে-রা-রা কঢ়ে তেড়ে আসলেই তাদের  'জাতীয়তাবাদ' শব্দটা যুক্ত করে যখন একটা পদবী লাগিয়ে দিয়ে, সংবাদ ছেপে দেয় কিংবা ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় হই হই করে, তাদের তো অন্ততঃ এটা বলতেই হবে
----- উনাদের ইতিহাস বোধ তো নেইই, জাতীয়তাবাদ বলতে কি বোঝায় সেটাই জানেন না এবং সেই সুত্রে 'নিজেকেও' চেনেন না।

একদল লোক, যারা জাতীয়তাবাদ বিকাশের জন্য কিংবা ভারতীয় জাতীয়তাবাদের সংহত করা তো দুরের কথা, আধুনিক জাতিয়তাবাদ
---- যে অখন্ড জ্ঞানসত্বাকে সামনে রেখে বিকশিত হয়, সেই আধুনিক জ্ঞানের সংহতি বিনাষ ব্যতিরেখে যাদের কর্মকান্ডকে একদিন এগিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়,
যাদের জন্ম এবং বিকাশ সেই পদচিহ্ন ধরে,
----- যারা সক্রেটিসকে বিষ খাইয়ে হত্যা করেছিলো, যারা ইতালিতে সেই সব বিজ্ঞানী এবং আধুনিক দর্শনের প্রবক্তাদের  হয় বধ্যভূমিতে হত্যা করেছিল কিংবা ইনক্যুইজিসনের নামে অন্ধকারায় নিক্ষেপ করেছিলো, ক্যালভিন সারভেটাসকে যারা কাঠে বেধে পুড়িয়ে মেরেছিলো, সেই সময়ে যখন তিনি 'রক্ত সঞ্চালনের' নিয়মটি প্রায় আবিস্কার করেফেলেছিলেন। তাকে প্রায় দু'ঘন্টা ধরে ঝলসিয়ে মারা হয়েছিলো । অবস্য 'জিওনার্দানো ব্রুনোকে নিছক পুড়িয়ে মারাই যথেষ্ট মনে হয়েছিলও।
---- যারা ক্যান্সার গবেষনায় 'গাজা খাওয়ার উপঢ়ে জোর দেন, যারা অর্জুনের ধনুর মধ্যে পারমানবিক অস্ত্র আবিস্কার করেন, যারা গরুর ধুধে সোনা আবিস্কার করেছেন, তাদে নিয়ে আমরা হাসি মস্করা করতে অব্যস্ত। কিন্তু এরা ক্ষমতায় আসলে, যে তদানিন্তন ইতালি কিংব রাষ্ট্র বিজ্ঞানের প্রশ্নে হিটলার কিংব মুসৌ্লিনি থেকেও ভয়ংকর হবে, সেটা কদাচিত আলোচিত হয়েছে।

ইতালিতে যখন এসব কান্ডকারখানা চলছিল তখন সেদেশে ইউরোপীয় রেনেসাঁর কল্যানে, জ্ঞানের অখন্ড রুপ প্রায় আবিস্কার করে ফেলেছে। ইউরোপের মানুষ ইতিমধ্যে
------ প্রথমে ক্যাথলিক  চার্চের অনাচারের বিরুদ্ধে দেবত্বের সাধনায় গনতন্ত্র চেয়ে প্রটেষ্টান্ট চার্চ এবং শেষ মেষে প্রায় সারা ইউরোপে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্টা করয়েছে। আমরা তখন কোথায় ?
------  আমেরিকান মিলিটারীতন্ত্রের পরাকাষ্ঠায়, প্রথম যুদ্ধে জার্মানদের উপর যখন চরম অবমাননা চাপিয়ে দেয়, তাকে হিটলার বিপথগামী করলেও, বিদ্রোহ তো হয়েছিল। জার্মান তখন ইউরোপে শিল্পের দিকে এক শক্তিশালী রাষ্ট্র। সেখানে তাই, প্রতিরোধের শক্তীও জথেষ্ট
আমাদের দেশে,
উঘ্রবাবুদের কোন দিন কোথায় জাতীয়তার পূনঃর্গঠন, শিল্পের স্বয়ং সম্পূর্ণতা, স্বাধীন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, বিশ্ব রাজনীতিতে নিজের স্বাধীন অবস্থান ইত্যাদি নিয়ে কোন মাথাগামাতে হয় নাই । নিশ্চই কেউ ভাবছেন, দেশে কিংবা সাত সমুদ্রের ওপারে। নিশ্চিতভাবে ক্রম উদঘাটন হবে।
----- আপাততঃ এই টুকু বলাই যথেষ্টঃ উল্লেখিত বিষয়গুলি সম্পর্কে যাদের মাথাঘামানোর প্রয়োজন হয় না, তাদের জাতীয় একতার প্রয়োজন হয় না, প্রয়োজন হয় না অর্থনৈ্তিক স্বয়ং সম্পূর্ণতার। তাই এদের স্যাকুলারিজম আপদ হতে বাধ্য। এরা চরিত্রগতভাবে তাই হতে বাধ্য, যা ঘটছে এদেশে এখন। লেখকের ধারনা, হিটলারের অধীনে চুড়ান্ত নিঃসংসতার ইতিহাস রয়েছে। এতো বিপুল সংখ্যায় নারীত্ব বিনাশকারী দেখা দিয়েছিল বলে খবর পাই নাই । এতো উলংগ সাধুদের দেখা যেমন পাই নাই,। এতো কোটিপতি গেরুয়া পরিধানকারীদের সন্ধানো পাই নাই।

ভারতীয় জাতীয়তার সংহত হতে না
পারার সমস্যা পৃথক। আশা করছি পরবর্তী শৃংখলায়
সে বিষয়ে আলোচনায় যাওয়া সম্ভব হবে। শুধু ইংগীতে
বলে রাখিঃ
----- ভারতের সভ্যতা বার বার খন্ডিত হয়ে যাওয়ায় বারংবার ইতিহাস খন্ডিত হয়েছে। সেখানে সিপাহী বিদ্রোহ উত্তর সংস্কার আন্দোলন, যা দুই ধারায়  বিভক্ত ছিলও, (খ) কংগ্রেস দল গঠন এবং সাধীনতা আন্দোলনে মহাত্মার নেতৃ্ত্ব (গ) সাম্যবাদী আন্দোলন (ঘ) স্বাধীনতাত্তোর কালের সাংবিধানিক সংসদীয় ব্যবস্থা
খন্ড খন্ডভাবে এই জাতীয়তাকে এক সুত্রে বাধার চেষ্টা করেছে। কিন্তু ইতিহাসের  ধারাটাকে উল্টে দিয়ে, চিনের মতো সভ্যতাকে সংহত করে জাতীয়তার পূনঃর্গঠনের জন্য কোন চেষ্টা হয় নাই  । এমন কি, স্বাধীনতাত্তোর কালে, নেহেরুর ভারত দর্শনকেও, জাতীয়তা পূন;নির্মানে কাজে লাগানোর চেষ্টা হয়েছে। যেন সরকার এবং দল দুটি ব্যবস্থা।

জাতীয়তা পূনঃর্গঠনে কংগ্রেস দলের এই অস্বিকৃ্তিই, ক্রমে আর এস এস এর হাতে অস্ত্র হয়ে দাড়ায় জাতীয়তা উচ্ছেদে, ব্রাহ্মন্যবাদের অসৎ প্রবৃত্তিগুলিকে পূনঃপ্রতিষ্ঠার কারনে। আসলে কংগ্রেস দলটাই যেঁ মত হিসেবে, আর এস এস এর
স্টোর হিসেবে কাজ করেছে
----- তার প্রমান কংগ্রেস দলের নীতি এবং আর এস এস এর কার্য্যকারন সম্পর্কের বিচারে।
যদি সাল তামামীর হিসেবে যাওয়া যায়, দেখা জাবে
----- যদি ১৯২০ সালে কমিউনিষ্ট পার্টী গঠিতে হয়ে থাকে জাতীয় কংগ্রেসকে বিপ্লবী পথে জাতীয়তা পূনঃর্গঠনের কারনে
----- ১৯২৫ সালে আর এস এস নির্মীত হয়, কংগ্রেস দলকে উল্টোদিকে ঠেলে জাতীয়তার সংহতিকে আটকে দেওয়ার জন্য।
----- এসব করা হয়েছে, বৃটিশের সাথে হাত মিলিয়েছে। এ রকম কোন খবর নেই যে  আর এস এস কখনো বৃটিশের বিরুদ্ধে কোন লড়াই করেছে, যে জাতীয়তার পূনঃর্গঠিত হতে পারতো। ওদের 'এক পিস'কে যদি  আন্দামানে পাঠানো হয়ে থাকে, সেটাও সম্ভবতঃ বোঝাপড়ার ফসল। একটা 'কুমীর ছানাকে' শত বছর ধরে তুলে তুলে দেখানো হয়। তখন আন্দামানে ৭০ভাগ ছিলেন সাম্যবাদীদের থেকে।
------ এদের সংবিধান মানার মুচলেখা নিয়ে,গান্ধী হত্যায় এদের অংশ গ্রহনকে অস্বিকার করেই, যদি আর এস এস এর উপর 'বে-আইনীকরন' তুলে নেওয়ার উদ্যোগ যদি তদানিন্তন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রি নিয়ে থাকেন, সেটার পেছনে দু'পক্ষের স্বার্থ ছিলো
---- উল্লেখ্য ১৯৫০ শে কমিউনিষ্ট পার্টীকে আইনী করার পেছনে পেছনেই এদের খুলে দিয়ে ময়দানে ছেড়ে দেওয়া হয়।
----- কাজেই যারা 'জাতীয়তার' অর্থই জানে না, যাদের জন্মে হয়েছে 'জাতীয়তা' যাতে কোন মতে পূনঃর্গঠিত হতে না, যাদের আইনীকরন করা হয়েছিলো, কমিউনিষ্ট মতাদর্শ  নিঃস্কৃয় রেখে, জাতীয়তাকে মাথা তুলতে না দেওয়ার কারনে কংগ্রেস দলের, আর এস এস পন্থীদের হাত শক্ত করার জন্য
------ তাদের 'জাতীয়তাবাদী' আখ্যা দিয়ে 'বিপ্লবি' তাগা লাগিয়ে দেওয়ার অর্থ একটাই
----  ভারতে ফ্যাসিবাদি মতাদর্শে শক্তি যোগানো। (ক্রমশঃ)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours