চন্দন ভৌমিক, ফিচার রাইটার, দুর্গাপুর:

ভুড়ি...এগিয়ে থাকে....এগিয়ে রাখে!
ভুড়ি নিয়ে অল্পবিস্তর মাথা ব্যথা প্রায় সকলেরই আছে...বিশেষ করে বাঙালির...আর যে সব মেয়েদের বরেদের ভুড়ি আছে সেই সব বরেদের দুঃখ কষ্টর কোন সীমা নেই...কথায় কথায় শুনতে হয় কটূক্তি...সে বৌ একটু বলতেই পারে তাতে দুঃখ পাবার কোনো কারণ নেই...তবে যাদের ভুড়ি আছে তাদের লজ্জা পাবারও কোনো কারণ নেই...কারণ কম দামি গাড়িতে কিন্তু এয়ার ব্যাগ থাকে না...একমাত্র দামি গাড়িতেই এয়ার ব্যাগ থাকে...গরিব লোকদের ভুরি হয় না...একমাত্র নামি দামি বড়ো লোকদেরেই ভুড়ি হয়....আর নেতা হতে গেলে আপনার ভুড়ি না থাকলে কেউ বড় নেতা বলেই মানবে না...শুটকে, চোয়াল বসা, পেট ঢোকা, এরকম কোনো নেতা দেখেছেন নাকি?...দেখবেন না..কারণ বড় লোকদের একমাত্র ভুড়ি হয়..তাই মানব জীবনে ভুড়ি না থাকলে বৃথা এই মানব জন্ম...ইতিহাস সাক্ষী আছে গোপালভাঁড় এর ভুড়ি ছিল...দামোদর শেঠ এর ভুড়ি ছিল...হাদা ভোদার পিসেমশাই এর ভুড়ি ছিল..। আর কত বলবো...আর ভুড়ির থাকলে অনেক সুবিধা আছে...সুবিধা কি? ধরুন সকাল বেলায় আপনি বৌয়ের হাতে গরম গরম ভাত, ডাল, মাছ দিয়ে ভুরিভোজটি সেরে অফিস বেরোলেন...বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছাবার আগেই দেখলেন পাশ দিয়ে মিনি বাসটা চলে যাচ্ছে, আপনি ভাবলেন আজ বাস মিস করবো, আজ অফিসে লালকালির দাগ..না না ...কোনো চিন্তা নেই..আপনার তো ভুড়ি আছে... মিনিবাস মাঝ রাস্তা থেকেই আপনাকে তুলে নেবে...কারণ মিনিবাসের লোকরা জানে আপনি দৌড়ে বাস ধরতে পারবেন না...এরপর বাসে উঠেই দেখলেন খুব ভিড় বাসে...ভিতরে ঢুকবেন ...এগোতে থাকুন দেখবেন...আপনার ভুড়ি আপনার অনুগত দেহরক্ষীর মতো সামনের লোকজন সরিয়ে দিচ্ছে...ঠিক যেমন মন্ত্রীরা যাবার আগে দেহরক্ষীরা ভিড় সরিয়ে দেয়..এবার দাঁড়াবার পর দেখবেন আপনার সামনে কেউই দাঁড়াতে পারবে না...আপনার ভুড়ির গুঁতোয় সে নিজেই সরে যাবে...
ভুড়ি অনেক রকমের আছে...নোয়াপাতি মার্কা ভুড়ি...থলথলে ভুড়ি...জ্বালার মতো ভুড়ি...এই নোয়াপাতি মার্কা ভুড়ি কিন্তু বাঙালি ছাড়া কারো কাছে পাবেন না..একটা উদহারণ দিই .. আমাদের মিউনিসিপলিটি একজন মেয়র ছিলেন..কমুনিস্ট পার্টির লোক..আগে রোগ পেটকা ছিলেন..মেয়র হবার পর ওনার ছোট্ট একটা নোয়াপাতি মার্কা ভুড়ি হয়েছিল..সাদা পাঞ্জাবির ওপর দিয়ে সেই ভুড়ির দর্শন..আহা..কি দেখিলাম জন্ম জন্মান্তরে ও ভুলিবো না...এই ধরণের ভুড়ি সাধারণত বাঙালি কেরানীদের মধ্যে দেখতে পাবেন...সাদা পাঞ্জাবির উপর দিয়ে ছোট্ট একটা ভুড়ি উঁকি মারছে...এই ধরণের মানুষগুলোর হাত পা সাধারণত লিকলিকে হয়..মুখটা বেশ ভরাট হয়..দেখে মনে হয় শরীরের ওপর যত ইনভেস্টমেন্ট এই দুটো জায়গাতেই বেড়েছে...থলথলে ভুড়ি সাধারণত বিহারীদের মধ্যে বেশি দেখা যাই ...দুধ, ঘি খাওয়া ভুড়ি..কুস্তি করে..মুগুর ভেজে ও এই ধরণের ভুড়িকে কন্ট্রোল করা যায় না.... এইধরণের ভুড়ি ওয়ালা লোক হাসলে ভুড়ি নড়া চড়াটা খুব সুন্দর...বেশ থলথল করে..দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়....আর জ্বালার মতো ভুড়ি ওপরে একটা জাতিরই অধিকার...সেটা মাড়োয়াড়িদের ...ভুড়ি ছাড়া মাড়োয়ারি...আর ঘটি ছাড়া বিহারি...সারা ভূভারতে খুঁজে পাবেন না...ভুঁড়িওয়ালা লোক মানে খাদ্য রসিক...উদার মনের মানুষ... আমাদের সমাজে এই ধরণের মানুষ খুব দরকার...তাই ভুড়িকে অসম্মান করবেন না...ভুড়িকে অপমান  করবেন না...কেউ করলে তাকেও ছেড়ে কথা বলবেন না...প্রয়োজন পড়লে আমরা ভুড়িওয়ালারা সংগঠন করবো...অনশন আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে ভুঁড়িকে অপমান করলে তার প্রতিবাদ করবো...শুধু শুধু হাটাহাটি করে ভুড়ির স্বাস্থ্য খারাপ করবেন না....ভুড়িকে ভুড়ির মতো থাকতে দিন... ভুড়িকে পেট ভোরে খেতে দিন...নিজে বাচুঁন আর ভুড়িকে বাঁচান...ভুড়িতেই  জীবন...ভুড়িতেই  মরণ...ভুড়ি হওয়াটাতে নেই নেইকো কোনো পাপের .... তোমরা যতই সমালোচনা করো নেই কো অপমান....ভুড়ি আমাদের আছে...আপনাদের আছে...আর ছিলো মোদের বাপের ...সর্বোপরি ভুড়ি আপনাকে "এগিয়ে রাখে এগিয়ে থাকে।"

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours