কাজল ভট্টাচার্য, সিনিয়র জার্নালিষ্ট, কলকাতা:
অতঃপর খবর হলেন তাঁরা।
একদল ছাত্রছাত্রী। কলকাতা বইমেলায় রাজনীতির শ্লোগান দিলেন। জড়িয়ে পড়লেন, পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়ায়। অভিযোগ, উচ্ছৃঙ্খল পড়ুয়ারা হামলা চালিয়েছিলেন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কাউন্টারে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলেন, হিন্দুধর্মের নানা গ্রন্থ, বইপত্র। এরপরেই ওই দলের একজন, গীতায় পা দিয়ে দাঁড়িয়ে সিএএ'র বিরুদ্ধে বক্তব্য দিতে শুরু করেন। মোটকথা কলকাতা বইমেলায় আগে যা কখনও হয়নি, বইমেলা শেষের ঠিক একদিন আগে পড়ুয়ারা তাই করে দেখালেন।
গোটা ঘটনায় বারবার উঠে এসছে একটি ছেলের নাম। এদিকে তাঁর সাফাই, ঘটনার সময় সে নাকি ছিলো বইমেলা চত্বর থেকে বহু যোজন দূরে। তবুও তাঁকে বিজেপি, আরএসএসের টার্গেট হতে হয়েছে।
কে সত্য কে মিথ্যা, তা বলা সম্ভব নয়। তবে ছেলেটি যে বেশকিছু দিন ধরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় দারুণভাবে সক্রিয় ছিলো, তাতে সন্দেহ নেই। গোড়ার দিকে তাঁকে দেখা গেছিলো সামাজিক স্তরে টুকটাক কিছু কাজকর্ম করতে। কাজের কথা, ছবিও পোস্ট করতো যত্নে। বোঝাই যেত, নানা অজুহাতে প্রচারের আলোয় আসতে অনবরত চেষ্টা চালাচ্ছিল সেই ছেলে।
এরপর দ্বিতীয় পর্বে তাঁকে দেখা গেছিলো বিজেপি বিরোধিতায়। দারুণ ঝাঁজালো সব কথাবার্তা নাগরিক বিল, সিএএ'র প্রতিবাদে । আবার কথার খই ফুটতো তৃণমূলের ওপর আক্রমণ শানানোর সময়েও। স্বাভাবিকভাবেই যে সন্দেহ দেখা দেয়, তাহলে কি অভিযুক্ত ছেলেটি বামপন্থী?
না। সোশ্যাল মেডিয়ায় ছেলেটি নিজে অন্তত তেমন কিছু কোনদিন বলেছিলো বলে মনে পড়ে না। তা সে বাম ডান যে কোনও পন্থী হোক না কেন, ছেলেটির মতপ্রকাশের স্বাধীনতা অবশ্যই আছে। স্বাধীনতা আছে বিজেপি, তৃণমূল বিরোধিতারও। এমনকি ছেলেটি রাজনৈতিক গোত্রহীন হয়েও যদি নাগরিক বিল, সিএএ'র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়, তাহলেও তাকে বলার কিছু থাকতে পারে না। কিন্তু অভিযোগ যদি ওঠে, গীতায় পা দিয়ে দাঁড়ানোর তা কিন্তু মারাত্মক। অন্য যে কোনও ধর্মগ্রন্থকে পা দিয়ে ছোঁয়াও সমান অপরাধের। ওই ধর্মগ্রন্থগুলি তার্কিক, বুদ্ধিজীবীদের বিচারে যাই হোক না কেন, তা মানুষের আবেগের সঙ্গে জড়িয়ে। আবেগকে আহত করার অধিকার পৃথিবীর আর কারোর মতো, ওই ছেলেটিরও থাকতে পারে না। তা সে পড়ুয়া হোক অথবা না হোক, তাতেও কোনও ফারাক করা চলে না।
কিছুদিন আগেই প্রশ্ন তুলেছিলাম, পড়ুয়ারা একেকটি দেবশিশু নাকি? সংরক্ষিত কোনও প্রজাতি। যাঁরা তাঁদের মনমতো চলতে পারেন। তাঁরা কী করবেন, তাও ঠিক করবেন তাঁরাই। সমাজের কোনও আইন-কানুন না মানলেও তাঁদের শাসন করা চলবে না। কলেজ ইউনিভার্সিটিতে পুলিশের ঢোকা মানা। তাতে নাকি প্রতিষ্ঠানের ইজ্জত যায়। আর এই ইজ্জতরক্ষার দায় কি পুলিসের? আর ঠিক এই ব্যবস্থার সুযোগ নিয়েই কলেজ ইউনিভার্সিটি চত্বরে যথেচ্ছাচার চালায় একদল ছাত্রছাত্রীরা। নেপথ্যে থাকে কিছু পাকামাথার কাঠিনাড়া। তাঁরা শিক্ষক, অশিক্ষক কর্মীও হতে পারেন। কিন্তু বাস্তবে, পুলিস প্রশাসনের একমাত্র দায়, যে কোন জায়গায় শান্তি সুনিশ্চিত করার।
একথাগুলি এজন্যই বলা, শনিবার যাঁরা বইমেলায় দাঙ্গা-হাঙ্গামা বাঁধালেন তাঁদের সবাই ছাত্রছাত্রী। বইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক যাঁদের ঘনিষ্ঠতম, তাঁরাই বইমেলায় ওই দুষ্কর্মটা করে বসলেন। বিশ্বহিন্দু পরিষদ বইমেলায় তাদের পছন্দমতো বই বিক্রি করতেই পারে। বইমেলায় ধর্মের বই বেচাকেনা তো আদৌ নিষিদ্ধ নয়। তারপরেও যদি ধরে নিই বই বিক্রির আড়ালে, আপত্তিকর কোনও কাজ-কারবার চলছিলো, তাহলে তার নজরদারি করার দায়িত্ব বইমেলা কর্তৃপক্ষের। কোনও মতেই তা সেই জেহাদি পড়ুয়াদের এক্তিয়ারে পড়ে না।
অভিযোগ, বিশ্বহিন্দু পরিষদের ওই স্টল থেকে নাকি বহু বিতর্কিত নাগরিক বিল, সিএএ'র প্রচার চালানো হচ্ছিলো। হতে পারে, অভিযোগ সত্য। সে ক্ষেত্রেও কারুর অধিকার থাকতে পারে না দলবেঁধে শ্লোগান দিয়ে হুজ্জুতি করার। তা সে ছাত্র হোক অথবা না হোক। তবে এক আন্তর্জাতিক স্তরের বইমেলায় ঝামেলা বাঁধালে প্রচার পাওয়া নিয়ে সন্দেহ থাকে না। বাস্তবে হলোও তাই।
সোশ্যাল মেডিয়ার পাতা থেকে সেই যুবক, আর তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গরা সরাসরি চলে এলেন বোকাবাক্সের পর্দায়, সংবাদমাধ্যমের খবরে। ইউ টিউবেও চললো বাদ- বিবাদ। প্রচারের আলোয় আসার এই রণকৌশল কষতে কোথাও এতটুকু ভুল করেননি পড়ুয়ারা।
'হোক কলরব' এর কথা মনে পড়ে?
এই তো সেদিনের কথা। বেশ এক সুখশ্রাব্য শ্লোগানের জন্ম দিয়েছিলো যাদবপুর। নির্ভেজাল স্বকীয়তা। বংসন্তানরা যতোই বঙ্গপ্রীতি দেখান না কেন, তাঁদের অমোঘ টান অবাঙালির চমকে- দমকে। তাই এখনকার পরিবর্তিত শ্লোগান 'হমকো চাহিয়ে আজাদি'। ওই শ্লোগান শোনা গেছিলো দিল্লির জওহরলাল নেহরু ইউনিভার্সিটি, জামিয়াতে। কিসের আজাদি, কে পড়ুয়াদের স্বাধীনতা হরণ করলো তা বোঝা দুষ্কর। ওই আজাদির শ্লোগান দিতে- দিতেই পড়ুয়ারা সেদিন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের স্টলে হামলা চালিয়েছিলো বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি।
চোখের ওপর পড়ুয়াদের গীতার ওপর পা দিয়ে নাচানাচি করার ঘটনায় একসময় সাধারণ মানুষরাও ক্ষেপে যান বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি। শুরু হয় দু'পক্ষের কথা কাটাকাটি থেকে হাতাহাতি। একদিকে কিছু জনতা অন্যদিকে বিজেপি, আরএসএসের রোষে, বাস্তবেই চাপের মুখে পড়ে যেতে হয়েছিলো 'আজাদি'র রব তোলা ছাত্রছাত্রীদের। চলতে থাকে তুমুল রাজনৈতিক শ্লোগান। বইমেলার ওই অংশ ততক্ষণে রূপ নিয়েছিলো ছোটখাটো এক কুরুক্ষেত্রের।
ঘটনা সামাল দিতে ছুটে আসে বিধাননগর থানার পুলিস। এরপরেই শুরু হয়ে যায় আর এক প্রস্থ গন্ডগোল। মারমুখী ছাত্রছাত্রীরা পুলিসের কথাতেও পিছোতে অস্বীকার করে। বেপরোয়া পড়ুয়াদের সঙ্গে হাতাহাতি বাঁধে পুলিসের। অভিযোগ সে সময় এক মহিলা পুলিসের ওপর আক্রমণ চালায় বিক্ষুব্ধ পড়ুয়ারা। বিন্দুমাত্র দ্বিধা না করে, সঙ্গে সঙ্গে রাজনীতির সীলমোহর দেগে দেওয়া হয় ঝামেলা থামাতে ব্যস্ত পুলিসকর্মীদের ওপরে। তবে পড়ুয়াদের সেই প্ররোচনার ফাঁদে ভুল করেও পা দেননি তাঁরা। পুলিসকে বিজেপি'র দালাল বলে শ্লোগান দিতে থাকে পড়ুয়ারা। তবে যে কোনও সুস্থ মানসিকতার নাগরিক সেদিন মেলামাঠে হাজির ছিলেন, তাঁরা একবাক্যে স্বীকার করেছেন, পুলিস সময় মতো সক্রিয় হওয়ায়, শনিবার ঘটনার জল বেশিদূর গড়ায়নি।
কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় রীতিমতত ছক কষে ঝামেলা পাকানোয় পড়ুয়াদের কয়েকজন মিডিয়ায় প্রচার পেলো বৈকি। কিন্তু এই ঘটনা যে বইমেলার চিরপরিচিত ভাবমূর্তিকে নষ্ট করতে বসেছিলো তাতে সন্দেহ নেই। ঝামেলা সেদিন আরেকটু ছড়ালেই ভিড়ে ঠাসা বইমেলায় মারাত্মক বিপদ হতে পারতো। অল্প সময়ে উচ্ছৃঙ্খল পড়ুয়াদের লাগাম টেনে ধরার জন্য, বিধাননগর পুলিসকে অবশ্যই ধন্যবাদ দিতে হয়।
অতঃপর খবর হলেন তাঁরা।
একদল ছাত্রছাত্রী। কলকাতা বইমেলায় রাজনীতির শ্লোগান দিলেন। জড়িয়ে পড়লেন, পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়ায়। অভিযোগ, উচ্ছৃঙ্খল পড়ুয়ারা হামলা চালিয়েছিলেন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কাউন্টারে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলেন, হিন্দুধর্মের নানা গ্রন্থ, বইপত্র। এরপরেই ওই দলের একজন, গীতায় পা দিয়ে দাঁড়িয়ে সিএএ'র বিরুদ্ধে বক্তব্য দিতে শুরু করেন। মোটকথা কলকাতা বইমেলায় আগে যা কখনও হয়নি, বইমেলা শেষের ঠিক একদিন আগে পড়ুয়ারা তাই করে দেখালেন।
গোটা ঘটনায় বারবার উঠে এসছে একটি ছেলের নাম। এদিকে তাঁর সাফাই, ঘটনার সময় সে নাকি ছিলো বইমেলা চত্বর থেকে বহু যোজন দূরে। তবুও তাঁকে বিজেপি, আরএসএসের টার্গেট হতে হয়েছে।
কে সত্য কে মিথ্যা, তা বলা সম্ভব নয়। তবে ছেলেটি যে বেশকিছু দিন ধরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় দারুণভাবে সক্রিয় ছিলো, তাতে সন্দেহ নেই। গোড়ার দিকে তাঁকে দেখা গেছিলো সামাজিক স্তরে টুকটাক কিছু কাজকর্ম করতে। কাজের কথা, ছবিও পোস্ট করতো যত্নে। বোঝাই যেত, নানা অজুহাতে প্রচারের আলোয় আসতে অনবরত চেষ্টা চালাচ্ছিল সেই ছেলে।
এরপর দ্বিতীয় পর্বে তাঁকে দেখা গেছিলো বিজেপি বিরোধিতায়। দারুণ ঝাঁজালো সব কথাবার্তা নাগরিক বিল, সিএএ'র প্রতিবাদে । আবার কথার খই ফুটতো তৃণমূলের ওপর আক্রমণ শানানোর সময়েও। স্বাভাবিকভাবেই যে সন্দেহ দেখা দেয়, তাহলে কি অভিযুক্ত ছেলেটি বামপন্থী?
না। সোশ্যাল মেডিয়ায় ছেলেটি নিজে অন্তত তেমন কিছু কোনদিন বলেছিলো বলে মনে পড়ে না। তা সে বাম ডান যে কোনও পন্থী হোক না কেন, ছেলেটির মতপ্রকাশের স্বাধীনতা অবশ্যই আছে। স্বাধীনতা আছে বিজেপি, তৃণমূল বিরোধিতারও। এমনকি ছেলেটি রাজনৈতিক গোত্রহীন হয়েও যদি নাগরিক বিল, সিএএ'র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়, তাহলেও তাকে বলার কিছু থাকতে পারে না। কিন্তু অভিযোগ যদি ওঠে, গীতায় পা দিয়ে দাঁড়ানোর তা কিন্তু মারাত্মক। অন্য যে কোনও ধর্মগ্রন্থকে পা দিয়ে ছোঁয়াও সমান অপরাধের। ওই ধর্মগ্রন্থগুলি তার্কিক, বুদ্ধিজীবীদের বিচারে যাই হোক না কেন, তা মানুষের আবেগের সঙ্গে জড়িয়ে। আবেগকে আহত করার অধিকার পৃথিবীর আর কারোর মতো, ওই ছেলেটিরও থাকতে পারে না। তা সে পড়ুয়া হোক অথবা না হোক, তাতেও কোনও ফারাক করা চলে না।
কিছুদিন আগেই প্রশ্ন তুলেছিলাম, পড়ুয়ারা একেকটি দেবশিশু নাকি? সংরক্ষিত কোনও প্রজাতি। যাঁরা তাঁদের মনমতো চলতে পারেন। তাঁরা কী করবেন, তাও ঠিক করবেন তাঁরাই। সমাজের কোনও আইন-কানুন না মানলেও তাঁদের শাসন করা চলবে না। কলেজ ইউনিভার্সিটিতে পুলিশের ঢোকা মানা। তাতে নাকি প্রতিষ্ঠানের ইজ্জত যায়। আর এই ইজ্জতরক্ষার দায় কি পুলিসের? আর ঠিক এই ব্যবস্থার সুযোগ নিয়েই কলেজ ইউনিভার্সিটি চত্বরে যথেচ্ছাচার চালায় একদল ছাত্রছাত্রীরা। নেপথ্যে থাকে কিছু পাকামাথার কাঠিনাড়া। তাঁরা শিক্ষক, অশিক্ষক কর্মীও হতে পারেন। কিন্তু বাস্তবে, পুলিস প্রশাসনের একমাত্র দায়, যে কোন জায়গায় শান্তি সুনিশ্চিত করার।
একথাগুলি এজন্যই বলা, শনিবার যাঁরা বইমেলায় দাঙ্গা-হাঙ্গামা বাঁধালেন তাঁদের সবাই ছাত্রছাত্রী। বইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক যাঁদের ঘনিষ্ঠতম, তাঁরাই বইমেলায় ওই দুষ্কর্মটা করে বসলেন। বিশ্বহিন্দু পরিষদ বইমেলায় তাদের পছন্দমতো বই বিক্রি করতেই পারে। বইমেলায় ধর্মের বই বেচাকেনা তো আদৌ নিষিদ্ধ নয়। তারপরেও যদি ধরে নিই বই বিক্রির আড়ালে, আপত্তিকর কোনও কাজ-কারবার চলছিলো, তাহলে তার নজরদারি করার দায়িত্ব বইমেলা কর্তৃপক্ষের। কোনও মতেই তা সেই জেহাদি পড়ুয়াদের এক্তিয়ারে পড়ে না।
অভিযোগ, বিশ্বহিন্দু পরিষদের ওই স্টল থেকে নাকি বহু বিতর্কিত নাগরিক বিল, সিএএ'র প্রচার চালানো হচ্ছিলো। হতে পারে, অভিযোগ সত্য। সে ক্ষেত্রেও কারুর অধিকার থাকতে পারে না দলবেঁধে শ্লোগান দিয়ে হুজ্জুতি করার। তা সে ছাত্র হোক অথবা না হোক। তবে এক আন্তর্জাতিক স্তরের বইমেলায় ঝামেলা বাঁধালে প্রচার পাওয়া নিয়ে সন্দেহ থাকে না। বাস্তবে হলোও তাই।
সোশ্যাল মেডিয়ার পাতা থেকে সেই যুবক, আর তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গরা সরাসরি চলে এলেন বোকাবাক্সের পর্দায়, সংবাদমাধ্যমের খবরে। ইউ টিউবেও চললো বাদ- বিবাদ। প্রচারের আলোয় আসার এই রণকৌশল কষতে কোথাও এতটুকু ভুল করেননি পড়ুয়ারা।
'হোক কলরব' এর কথা মনে পড়ে?
এই তো সেদিনের কথা। বেশ এক সুখশ্রাব্য শ্লোগানের জন্ম দিয়েছিলো যাদবপুর। নির্ভেজাল স্বকীয়তা। বংসন্তানরা যতোই বঙ্গপ্রীতি দেখান না কেন, তাঁদের অমোঘ টান অবাঙালির চমকে- দমকে। তাই এখনকার পরিবর্তিত শ্লোগান 'হমকো চাহিয়ে আজাদি'। ওই শ্লোগান শোনা গেছিলো দিল্লির জওহরলাল নেহরু ইউনিভার্সিটি, জামিয়াতে। কিসের আজাদি, কে পড়ুয়াদের স্বাধীনতা হরণ করলো তা বোঝা দুষ্কর। ওই আজাদির শ্লোগান দিতে- দিতেই পড়ুয়ারা সেদিন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের স্টলে হামলা চালিয়েছিলো বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি।
চোখের ওপর পড়ুয়াদের গীতার ওপর পা দিয়ে নাচানাচি করার ঘটনায় একসময় সাধারণ মানুষরাও ক্ষেপে যান বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি। শুরু হয় দু'পক্ষের কথা কাটাকাটি থেকে হাতাহাতি। একদিকে কিছু জনতা অন্যদিকে বিজেপি, আরএসএসের রোষে, বাস্তবেই চাপের মুখে পড়ে যেতে হয়েছিলো 'আজাদি'র রব তোলা ছাত্রছাত্রীদের। চলতে থাকে তুমুল রাজনৈতিক শ্লোগান। বইমেলার ওই অংশ ততক্ষণে রূপ নিয়েছিলো ছোটখাটো এক কুরুক্ষেত্রের।
ঘটনা সামাল দিতে ছুটে আসে বিধাননগর থানার পুলিস। এরপরেই শুরু হয়ে যায় আর এক প্রস্থ গন্ডগোল। মারমুখী ছাত্রছাত্রীরা পুলিসের কথাতেও পিছোতে অস্বীকার করে। বেপরোয়া পড়ুয়াদের সঙ্গে হাতাহাতি বাঁধে পুলিসের। অভিযোগ সে সময় এক মহিলা পুলিসের ওপর আক্রমণ চালায় বিক্ষুব্ধ পড়ুয়ারা। বিন্দুমাত্র দ্বিধা না করে, সঙ্গে সঙ্গে রাজনীতির সীলমোহর দেগে দেওয়া হয় ঝামেলা থামাতে ব্যস্ত পুলিসকর্মীদের ওপরে। তবে পড়ুয়াদের সেই প্ররোচনার ফাঁদে ভুল করেও পা দেননি তাঁরা। পুলিসকে বিজেপি'র দালাল বলে শ্লোগান দিতে থাকে পড়ুয়ারা। তবে যে কোনও সুস্থ মানসিকতার নাগরিক সেদিন মেলামাঠে হাজির ছিলেন, তাঁরা একবাক্যে স্বীকার করেছেন, পুলিস সময় মতো সক্রিয় হওয়ায়, শনিবার ঘটনার জল বেশিদূর গড়ায়নি।
কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় রীতিমতত ছক কষে ঝামেলা পাকানোয় পড়ুয়াদের কয়েকজন মিডিয়ায় প্রচার পেলো বৈকি। কিন্তু এই ঘটনা যে বইমেলার চিরপরিচিত ভাবমূর্তিকে নষ্ট করতে বসেছিলো তাতে সন্দেহ নেই। ঝামেলা সেদিন আরেকটু ছড়ালেই ভিড়ে ঠাসা বইমেলায় মারাত্মক বিপদ হতে পারতো। অল্প সময়ে উচ্ছৃঙ্খল পড়ুয়াদের লাগাম টেনে ধরার জন্য, বিধাননগর পুলিসকে অবশ্যই ধন্যবাদ দিতে হয়।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours