আনন্দিতা রায়, লেখিকা ও সঙ্গীতশিল্পী, দুর্গাপুর:
রবীন্দ্রনাথের বিশ্বানুভূতির চিত্রপটে সীমা অসীম, মিলন বিরহ ,পার্থিব অপার্থিব ,সুখ-দুঃখ ,দেহ দেহাতিত সর্বপ্রকার চেতনা মানব ঈশ্বর এবং প্রকৃতি এই ত্রয়ীর অনন্য সহাবস্থানে সুষম শিল্পরূপ লাভ করেছে। পূজা পর্যায়ের অধিকাংশ গানে কবি শীলিত সংবেদনে প্রথানুগ আকাঙ্ক্ষা আগল ভেঙে ব্যর্থ এ নর জনমকে স্বয়ংসিদ্ধ আনন্দলোকের সন্ধান দিতে চেয়েছেন বারবার।
এই পর্যায়ের বেশ কিছু গানেই একইসঙ্গে লক্ষ্য করা যায় উপনিষদ ও বৌদ্ধ প্রভাব। কখনো প্রত্যক্ষভাবে কখনো পরোক্ষভাবে। সূর্য ,চন্দ্র, পূর্ণিমা, কুসুম, রাত্রি, বন সকলেই যেন মধু বর্ষণ করছে। এ জগতের সবকিছুর মধ্যেই যেন তিনি বর্তমান। তিনি আছেন বলেই সবকিছু এত আনন্দঘন সুন্দর, মধুময়।
"অমল কমল সহজে জলের কোলে আনন্দে রহে ফুটিয়া"
এই গানটিতে স্বতঃস্ফূর্ত আনন্দের কথা বলা হয়েছে। জলে যে পদ্মফুল ফোটে তা নিজ আনন্দেই ফোটে, সে পদ্মের পাপড়িগুলি নিঃসংশয়ে আপন স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতেই বিকশিত হয়। ঠিক তেমন ভাবেই পরম ঈশ্বরের প্রতি মানুষের আনন্দকেও সতঃস্ফুর্ত ও সহজ হতে হবে।
"কোথা আছো তুমি পথ না খুঁজিব কভু, শুধাবো না কোন পথিকে--তোমারি মাঝারে ভ্রমিবো ফিরিব প্রভু যখন ফিরিব যেদিকে।"
"আলোকের এই ঝর্ণাধারায় ধুইয়ে দাও" গানটিতেও দেখতে পাই কবি মনে করেন আমাদের অন্তরের যে সত্তা ঘুমন্ত অবস্থায় আছে তাকে জাগিয়ে তুলতে হবে:
"যে জন আমার মাঝে জড়িয়ে আছে ঘুমের জালে আজ এই সকালে ধীরে ধীরে তার কপালে এই অরুণ আলোর সোনার-কাঠি ছুঁইয়ে দাও।"
প্রেমের আনন্দে মন সুন্দর হয়েছে। মন সুন্দর হলে প্রকৃতি ও সুন্দর, বিশ্বও সুন্দর। প্রকৃতি সুন্দর, মনের কাছে, মন প্রকৃতির অলৌকিক সৌন্দর্য অনুভব করে অনির্বচনীয় মহিমায়। মন শুচিশুভ্র নির্মল না হলে বিশ্ব প্রকৃতি তথা বিশ্বকে সৌন্দর্যের আধার বা আশ্রয় রূপে গ্রহণ করা সম্ভব হবে না।
রবীন্দ্রনাথের মন যত প্রেমের আনন্দে সুন্দর ও নির্মল হয়ে উঠেছে ততই বিশ্বপ্রকৃতিকে তিনি সুন্দরতর, মধুরতম করে অনুভব করেছেন। এই উপলব্ধির কোন শেষ বোধ করি নেই। যত দিচ্ছেন তত তার মনে হচ্ছে দেখার মত করে তিনি কিছুই দেখতে পাচ্ছেন না। পাওয়ার মতো করে কিছুই পাচ্ছেন না। সবই যেন ফাঁকি রয়ে গেল।
"আজ নিখিলের আনন্দধারায় ধুইয়ে দাও মনের কোণের সব দীনতা মলিনতা ধুইয়ে দাও। আমার পরাণ বীণায় ঘুমিয়ে আছে অমৃত গান-- তার নাইকো বাণী নাইকো ছন্দ নাইকো তান।"
কয়েকটি গানের কিছু কিছু পংক্তি পৃথক পৃথক ভাবে তুলে ধরলেই এই অপরূপ মহিমা বা তত্ত্ব চিন্তাটি স্পষ্টভাবে বোঝানো যাবে।
"চিরদিবস নব মাধুরী, নব শোভা তব বিশ্বে--
নব কুসুম পল্লব, নব গীত, নব আনন্দ।"
বা
"সুন্দর বহে আনন্দমন্দানীল,
সমুদ্রিত প্রেমচন্দ্র ,অন্তর পুলকাকূল"।।
বা
"শশী তারা মন্ডিত সুমহান সিংহাসনে, ত্রিভুবনেশ্বর।
পদতলে বিশ্বলোক রোমাঞ্চিত
জয় জয় গীত গায় সুরনর ।"
এই মোহ মুক্ত প্রেম হিল্লোল বা আনন্দের ফলস্বরুপ মানুষ সৃষ্টি করেছে এবং করছে নানা শিল্পকর্ম ভাস্কর্য সংগীত। অনেক আধ্যাত্মবাদী বলেন ঈশ্বর নির্বিকার। তিনি নিজের মহিমাতেই প্রতিষ্ঠিত। তিনি জগতের স্রষ্টা জগত তারি অধীনে চলে। সমস্ত কোলাহল তার দ্বারাই নির্বাচিত হয়। বিশ্বে শান্তিবারি তিনিই সিঞ্চন করে চলেছেন। সব পথের গতি পরমানন্দ মানুষ তার কাছেই পায়। নিরাপদে থাকে তার জন্যই।
একক অখন্ড ব্রহ্মাণ্ড রাজ্যে
পরম এক সেই রাজ -রাজেন্দ্র রাজে
বিস্মিত নিমেষ হত বিশ্ব চরণে বিনত,
লক্ষ্য শত ভক্তচিত বাক্য হারা। (ক্রমশঃ)
রবীন্দ্রনাথের বিশ্বানুভূতির চিত্রপটে সীমা অসীম, মিলন বিরহ ,পার্থিব অপার্থিব ,সুখ-দুঃখ ,দেহ দেহাতিত সর্বপ্রকার চেতনা মানব ঈশ্বর এবং প্রকৃতি এই ত্রয়ীর অনন্য সহাবস্থানে সুষম শিল্পরূপ লাভ করেছে। পূজা পর্যায়ের অধিকাংশ গানে কবি শীলিত সংবেদনে প্রথানুগ আকাঙ্ক্ষা আগল ভেঙে ব্যর্থ এ নর জনমকে স্বয়ংসিদ্ধ আনন্দলোকের সন্ধান দিতে চেয়েছেন বারবার।
এই পর্যায়ের বেশ কিছু গানেই একইসঙ্গে লক্ষ্য করা যায় উপনিষদ ও বৌদ্ধ প্রভাব। কখনো প্রত্যক্ষভাবে কখনো পরোক্ষভাবে। সূর্য ,চন্দ্র, পূর্ণিমা, কুসুম, রাত্রি, বন সকলেই যেন মধু বর্ষণ করছে। এ জগতের সবকিছুর মধ্যেই যেন তিনি বর্তমান। তিনি আছেন বলেই সবকিছু এত আনন্দঘন সুন্দর, মধুময়।
"অমল কমল সহজে জলের কোলে আনন্দে রহে ফুটিয়া"
এই গানটিতে স্বতঃস্ফূর্ত আনন্দের কথা বলা হয়েছে। জলে যে পদ্মফুল ফোটে তা নিজ আনন্দেই ফোটে, সে পদ্মের পাপড়িগুলি নিঃসংশয়ে আপন স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতেই বিকশিত হয়। ঠিক তেমন ভাবেই পরম ঈশ্বরের প্রতি মানুষের আনন্দকেও সতঃস্ফুর্ত ও সহজ হতে হবে।
"কোথা আছো তুমি পথ না খুঁজিব কভু, শুধাবো না কোন পথিকে--তোমারি মাঝারে ভ্রমিবো ফিরিব প্রভু যখন ফিরিব যেদিকে।"
"আলোকের এই ঝর্ণাধারায় ধুইয়ে দাও" গানটিতেও দেখতে পাই কবি মনে করেন আমাদের অন্তরের যে সত্তা ঘুমন্ত অবস্থায় আছে তাকে জাগিয়ে তুলতে হবে:
"যে জন আমার মাঝে জড়িয়ে আছে ঘুমের জালে আজ এই সকালে ধীরে ধীরে তার কপালে এই অরুণ আলোর সোনার-কাঠি ছুঁইয়ে দাও।"
প্রেমের আনন্দে মন সুন্দর হয়েছে। মন সুন্দর হলে প্রকৃতি ও সুন্দর, বিশ্বও সুন্দর। প্রকৃতি সুন্দর, মনের কাছে, মন প্রকৃতির অলৌকিক সৌন্দর্য অনুভব করে অনির্বচনীয় মহিমায়। মন শুচিশুভ্র নির্মল না হলে বিশ্ব প্রকৃতি তথা বিশ্বকে সৌন্দর্যের আধার বা আশ্রয় রূপে গ্রহণ করা সম্ভব হবে না।
রবীন্দ্রনাথের মন যত প্রেমের আনন্দে সুন্দর ও নির্মল হয়ে উঠেছে ততই বিশ্বপ্রকৃতিকে তিনি সুন্দরতর, মধুরতম করে অনুভব করেছেন। এই উপলব্ধির কোন শেষ বোধ করি নেই। যত দিচ্ছেন তত তার মনে হচ্ছে দেখার মত করে তিনি কিছুই দেখতে পাচ্ছেন না। পাওয়ার মতো করে কিছুই পাচ্ছেন না। সবই যেন ফাঁকি রয়ে গেল।
"আজ নিখিলের আনন্দধারায় ধুইয়ে দাও মনের কোণের সব দীনতা মলিনতা ধুইয়ে দাও। আমার পরাণ বীণায় ঘুমিয়ে আছে অমৃত গান-- তার নাইকো বাণী নাইকো ছন্দ নাইকো তান।"
কয়েকটি গানের কিছু কিছু পংক্তি পৃথক পৃথক ভাবে তুলে ধরলেই এই অপরূপ মহিমা বা তত্ত্ব চিন্তাটি স্পষ্টভাবে বোঝানো যাবে।
"চিরদিবস নব মাধুরী, নব শোভা তব বিশ্বে--
নব কুসুম পল্লব, নব গীত, নব আনন্দ।"
বা
"সুন্দর বহে আনন্দমন্দানীল,
সমুদ্রিত প্রেমচন্দ্র ,অন্তর পুলকাকূল"।।
বা
"শশী তারা মন্ডিত সুমহান সিংহাসনে, ত্রিভুবনেশ্বর।
পদতলে বিশ্বলোক রোমাঞ্চিত
জয় জয় গীত গায় সুরনর ।"
এই মোহ মুক্ত প্রেম হিল্লোল বা আনন্দের ফলস্বরুপ মানুষ সৃষ্টি করেছে এবং করছে নানা শিল্পকর্ম ভাস্কর্য সংগীত। অনেক আধ্যাত্মবাদী বলেন ঈশ্বর নির্বিকার। তিনি নিজের মহিমাতেই প্রতিষ্ঠিত। তিনি জগতের স্রষ্টা জগত তারি অধীনে চলে। সমস্ত কোলাহল তার দ্বারাই নির্বাচিত হয়। বিশ্বে শান্তিবারি তিনিই সিঞ্চন করে চলেছেন। সব পথের গতি পরমানন্দ মানুষ তার কাছেই পায়। নিরাপদে থাকে তার জন্যই।
একক অখন্ড ব্রহ্মাণ্ড রাজ্যে
পরম এক সেই রাজ -রাজেন্দ্র রাজে
বিস্মিত নিমেষ হত বিশ্ব চরণে বিনত,
লক্ষ্য শত ভক্তচিত বাক্য হারা। (ক্রমশঃ)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours