জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা, দুর্গাপুর:

ভারতের সংবিধান এবং যুদ্ধোত্তর বিশ্ব যদি বিভাজনোত্তর ভারতের জাতীয়তাকে পূনঃর্গঠনের যে বিপুল সুযোগ এনে দিয়ে থাকে তবে,
(ক) কংগ্রেস দলের বেপোরোয়া সাম্য বিরোধীতার নীতি, তাকে সব সময় হিন্দুত্বের কাছাকাছি রেখেছে
(খ) উত্ত্যগ্র রাষ্ট্রীয় প্রতিরোধ মোকাবিলা করার সাথে সাথে,  'শ্রমের[' স্বাধীনতার আন্দোলনকে, , ভারতের  জাতীয়তার পূনঃর্গঠনের সাথে
একাত্ম করার 'সাম্যের' বিফলতা।
এই পোস্টিংটা মুলতঃ তাদের জন্য,
--- যারা একদিন ভারতীয় জাতীয়তাকে আন্তর্জাতীক মুখীন করে নিয়ে সাম্যার সারথি হবেন।
--- যারা ভারতে সংবিধান পন্থি, কংগ্রেসের মতো সেকুলার দলগুলিতে সেক্যুলারিজম ফিরিয়ে আনতে, অর্থনৈতিক স্বয়ংসম্পুর্নতায় ফিরিয়ে আনতে,
ফিরিয়ে আনতে ভারতীয় জাতীয়তাকে সংবিধানের সর্তের প্রতি দায়বদ্ধ করতে সহযোগীতার ভিত্তিটি নির্মান করবেন
---- তাদের প্রতি নিবেদিত।

 মেনে চলা উচিত হবেঃ
 কংগ্রেসের 'জাতীয়তাবাদী' নীতির স্বার্থের কথা বিবেচনা করলেও, নতুন বিশ্ব পরিস্থিতিতে  এবং ভারত  বিভাজনের পর,  জাতীয়তাবাদকে সংহত করার স্বার্থেই, এবং এমন কী, কংগ্রেসের 'সাম্যকেই যদি ' প্রধান শত্রু  হিসেবে মেনে নিতে হোত তথাপী
-----  দলটিকে  মতাদর্শ এবং সাংগঠনিক দিক থেকে, তাকে সর্বাগ্রে,  সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়কে ঘিড়ে ফেলে  যে সাম্প্রদায়ীক রাজনীতি এদেশে শক্তি বাড়াচ্ছিলো, প্রথমে  তাকেই  সমুলে উৎপাটন করে ফেলতে হোত।
----- এ কাজটা শেষ করার পর যদি তারা সাম্য নিধন করার কাজে লাগতেন, তবে কংগ্রেস জাতীয়তাবাদ এবং সাম্যের উন্নত প্রাজাতন্ত্রের জাতীয়তাবাদী সংঘাত, নিশ্চিতভাবেই, জাতীয় ভাবাদর্শকে আজকের আদিভৌতিকবাদী অসভ্যতায় নেমে আসার সুযোগ করে দিতে পারতো না।
----  দল যখন একটা ভাবাদর্শহীন, ক্ষমতামার্কা, ব্যক্তি কেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠানে নেমে যায়, তখন  'দল ' নিজেকে একটি পরিবারের দয়াপার্থী হয়ে বেঁচে থাকতে হয় আর সেই মানুষ জনকে যারা বিভিন্ন দিক থেকে 'সাম্প্রদায়ীকতার' শিকার হতে
চান না কিংবা 'সাম্যকে' এখনো নির্ভরতার যায়গা বলে ভাবতে পারছেন না
----  তেমন অনেকে এবং অন্যরা ছিটে ফোটা গনতন্ত্র, ছিটে ফোটা সেক্যুলারিজম কিংবা স্বয়ংম্পুর্নতার জন্যেও সেই 'একই পরিবারের' উপরেই নির্ভর করতে হয়।
দলে আর একজন কে আছেন, যিনি সব রকম সাম্প্রদায়ীকতা কিংবা বণ বা জেন্ডার হিংস্রতার উর্ধে উঠে, মানুষের কিঞ্চিৎ আস্তাভাজন হতে পারতেন। সেই ব্যক্তি্র মতো নেতারা যারা -
---   রাষ্ট্রীের দেওয়া পদমর্য্যাদাকে পদ দলিত করে, একমাত্র সরকারে 'পদ প্রাপ্তির' সম্ভাবনায় সাম্প্রাদায়ীক প্রধান মন্ত্রীকে 'রসগোল্লা' খাওয়াতে ছুটেন আবার মোগভংগের পশ্চাতেই, তাকে বকাবকি করেন
----- সে রকম লোকেই ঠাসা এখন কংগ্রেস দল। ব্যক্তিগতভাবে লেখকের ধারনা, শ্রী রাহুল গান্ধীর দলের সভাপতি পদ থেকে সরে আসার একটাই কারন।এই সরে আসাটা, তারপ্রতি এই লেখকের আস্তা বেড়েছে। অন্যদিকে, লেখক নিশ্চিত, উনি সাম্প্রদায়ীকতা বিরোধীতায়, তার পিতাকে ছাড়িয়েও অনেক দূর এগিয়ে যেতে পেরেছিলেন।
----- অন্যদের 'সাম্প্রদায়ীক বিরোধীতা' এখনো 'এম পি' হওয়া কিংবা ব্যক্তিগত ক্ষমতার সর্তের সাথে যুক্ত।
যদি কংগ্রেসের কেউ দাবী করেন, ক্রম বর্ধমান সাম্যের শক্তির কারনেই    , কংগ্রেসকে ক্রমাগত দক্ষিন দিকে ঠেলেছে। ওটাই একটা বাজে কথা। নেহেরু আমলের পর কংগ্রেসে যদি এমন কোন সমাজ বিজ্ঞানী থাকতেন, যিনি ভারতীয় ব্রাহ্মন্য সমাজের পরিপ্রেক্ষিতে\
------ কমিউনিষ্ট পার্টী কমিউনি ভিত্তিকতা থেকে সরে এসে সংসদীয় ব্যবস্থায় কী দুর্গতী হতে পারে, সেটা আন্দাজ করতে পারতেন, তবে তিনি কংগ্রেসকে বোঝাতে পারতেন
-----' তুল্য মুল্যে ত্যাগী এবং মুক্তমনা ' হলেও কিংবা  ব্রাহ্মন্য সমাজের আচার বিচারের বাইরে থাকলেও কিন্তু যারা মুলতঃ আভিজাত রক্তজাত এবং কখনো কারখানা জীবনের সাথে লালিত-পালিত হন নাই, তাদের পক্ষে অতিসহজে পুরানো ভাবজগতের কাঠামোকে ভেংগে এসে
----- বিকল্প আর্থ-সামাজিক এবং সাংগঠনিক কাঠামো নিয়ে, কংগ্রেস পরিচালিত সাংবিধানিক গনতন্ত্রকে চ্যালেঞ্জ জানানোর ক্ষমতা অর্জন তার পক্ষে,  নিজ কাঠামোকে কর্মসূচীর অনুকুলে না নিয়ে আসা পর্য্যন্ত কখনোই সম্ভব ছিলো না।
এই সুত্রেই কোন, সমাজ বিজ্ঞানী, পঞ্চাশের দশকে কিংবা সত্তোরের দশকের সাম্যবাদী দলগুলির নির্বাচনী সাফল্যের প্রাথমিক কারনগুলির
----- প্রথমটিকে কাকদ্বীপ, তেলেঙ্গানা, নৌ বিদ্রোহ এবং উদ্বাস্ত সমস্যা সমাধানের ইতিবাচক ভূমিকার কারন হিসেবে চিহ্নিত করতেন।
অনুরুপভাবে  সত্তোরের সাফল্যগুলিকে, কংগ্রেস দলের নেতীবাচকতার
পরিনাম হিসেবেই চিহ্নিত করতেন এবং দল কিছুতেই, নরসিমহারাও এবং মনমোহন সিংহের পাল্লায় পরে আমেরিকার মিলিটারী তন্ত্রের পদযুগলে আশ্রয় নিতে গিয়ে, ভারতে শিল্পপুজির আধিপত্য বিনাস করে,বানিজ্যিক পুজির রাজ কায়েমের দিকে যেতেন না। সিংগুর থেকে 'টাটা উচ্ছেদের' পর, ভারতের কোথায়, বুনিয়াদী শিল্পে, পুজির বিনিয়োগ হয়েছে? সেটা সরকারী কিংবা প্রাইভেট যাই হোক না কেন?
----- স্বয়ংসম্পূর্নতা কীভাবে এগুতে পারতো, যখন সরকারকে দিয়ে ইতিমধ্যেই আভ্যন্তরীন ক্ষেত্রে বুনিয়াদী গবেষনা, বুনিয়াদী শিল্পের সব রিসার্ছ কেন্দ্র ইত্যাদির সব কিছুকে গুড়িয়ে দিতে বাধ্য করা হয়েছে।
চিত্রটা যদি বিপরীত হোত,
সাম্য যদি, জাতীয়তাকে আন্তর্জাতীকতার আত্মমর্য্যাদার
শিলাস্তম্ভবের উপর স্থাপন করতে পারতো,
--- তবে চিনের মতো  না হক, সংবিধানে বর্নীত জাতীয়তাবোধেই
দেশটাকে এবং কিংগ্রেস দলকে সোজা করে দাড় করিয়ে দিতে পারতো।
দেশকে আজ যে অবস্থায় দাড় করা হয়েছে, সেখানে
অর্থনীতৈতিক উৎপাদ ব্যবস্থা, তার বন্ঠনের দিক থেকে , সামরিক নীতির
কোন কিছুতেই স্বাধীন নয়। সংসদীয় ব্যবস্থা  এখন এই পরাধীনতারই
পাহারাদার।
দল হিসেবে কংগ্রেস দল। প্রথম দিন থেকেই
----- সাম্যকে আটকারনার জন্য সমতালে  আর এস এস কে তোল্লা দিয়েছে। অথচ, ভারতীয় সংগসদীয় গনতন্ত্রকে বাচিয়ে রাখতেই, উল্টো পথটাই নিতে হোত।
----- দ্বিতীয় যুদ্ধ কালীন সময়ে, আর এস এস যদি হিটলারের পক্ষ নিয়ে থাকে, তবে তার ভিত্তিটা মহাত্মা নিজে তৈ্রী করে দিয়েছেন তার তথাকথিত নিরপেক্ষতার নীতির কারনে। সবাই জানেন, বিশ্ মানবিকতার অস্তিত্বের প্রশ্ন যে বিষয় যুক্ত সেখানে কোন রকম নিরপেক্ষতার ভান করার অর্থ হোল, ফ্যাসিস্তদের সাহায্য করা। রোমা রোলার বর্ণনা অনুযায়ী, মহাত্মা, মুসৌ্লিনির সাথে দেখা করার জন্য বৃটেন থেকে  হাটা দিয়েছিলেন প্রায়। চলেও যেতেন, যদি না, রোমা রোলাহ সমেত ফ্রান্স থেকে ফ্যাসিস্তদের দ্বারা বিতারিত বুদ্ধিজীবিরা তাকে না, আটকাতেন। প্রসংগত রোমা রোলাহ, জীবনের শেষ দিন পর্য্যন্ত গান্ধী অনুরাগী ছিলেন।
স্বাধীনতাত্তোর কালেঃ
কংগ্রেস দল  ধারাবাহিকভাবে আস্র এস এস এর সুযোগ বাড়িয়ে
---- এক প্রান্তে সাম্যবাদীদের সাথে, শক্তি সন্তুলনে নিজের সুবিধা নিয়েছেন।
অনেক সময় মনে হয়েছে, 'দলটা আর এস এস এর, আর সরকারটা নেহেরুর,
ধর্ম  ও গোষ্টি নিরপেক্ষতা এবং অর্থনৈ্তিক স্বয়ং সম্পূর্নতার। 
প্রথমতঃ
 (ক)    সংবিধানে আধুনিকতার কথা বলা হয়েছে, কিন্তু মহাত্মার অর্থ ও সমাজ নীতি হিসেবে 'রাম রাজ্যকে' বাতিল করা হয় নাই। সেটাকেই তো বিজেপি হাতিয়ার করেছে এখন।
(খ)    জাতীয় সংগীত  হিসেবে  সরকার যখন ঃ 'জনগনমন", কংগ্রেস কার্য্যতঃ বন্দেমাতারমকে চিহ্নিত করেছেন, এবং সেটাকে জাতীয় সংগীত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এখন আর এস এস, জাতীয় সংগিতকে বদলে  দিয়ে, ওটিকেই সামনে এনেছেন।
(গ)   মহাত্মা গান্ধী হত্যার পর, গোপাল গডসের   স্বিকারোক্তি অনুযায়ী, নাথুরামকে অ-আর এস এস বানানো হয়েছিল - ইতিমধ্যে কারাগারে নিক্ষিপ্ত , সংগঠন প্রধান  গোলওয়ালকরের মুক্তির প্রয়োজনে।
----- পরে ১৯৫০ সালে যখন কমিউনিষ্ট পার্টী থেকে যখন  'বে-আইনীকরন' উঠিয়ে নেওয়া হোল, গোল ওয়ালকরের মুক্তি দেওয়া  হোল সংগে উপ[ঢৌকন হিসেবে ' আর এস এস এর উপর থেকেও, গান্ধী হত্যার পর বে-আইনী ঘোষনাপত্র প্রত্যাহার করা হয়।
উইকপিডিয়ার বিবরন অনুযায়ীঃ
(ক) আর এস এস - দ্বিতীয় যুদ্ধে হিটলারের পক্ষেই ছিলেন তাই নয়, নাৎসি নীতিকেই নিজের বলে মেনেছেন।
(খ) আর এস এস স্বাধীনতা আন্দোলনের সব সময় ব্রিটিশদের সাথে ছিল।
(গ) সাংগঠনিক  গনতন্ত্রের নিশ্চিতি তে কোন সাংগঠনিক কাঠামো নেই।
(ঘ) বলা হয়েছে, বে-আইনী ঘোষনা প্রত্যাহারের সময় নাকি এই ভয়ংকর প্রতিষ্ঠানটি নাকি লিখে দিয়েছিলো , যে সে সংবিধান মানবে বলে সর্তকে মেনে নিয়েছিলো।কিন্তু সেরকম কোন গ্যারান্টীপত্র জাতীয় মহাফেজখানায় নাকি পাওয়া যায় নাই।
উইকপেডিয়া আরো লিখছেঃ গোলওয়ালকর মুক্তির পর বে-আইনী প্রত্যাহারের পর প্রধানমন্ত্রীর কাছে যখন আবেদন  করেন,নেহেরু সাফ জানিয়ে দেন
------ এই প্রশ্নে যা করার উপ প্রধান এবং  স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী করবেন এবং সবটা তিনিই দেখাশুনা করেন।
ইতিহাসকে সাফ রাখতে আরো একটি প্রাসংগিক ঘটনা লিপিবদ্ধ রাখা উচিত হবে। মহাত্মা যেদিন গুলিবদ্ধ  হন, তার দুয়েক দিন পুর্ব থেকেই, শীতের মধ্যেও  নাকি রাজধানীর রাজৈতিক বাতাস উত্তপ্ত হচ্ছিলো। মহাত্মার উপরে আক্রমনের জন্য নাকি বাইরের লোক ইতিমধ্যে দিল্লীতে।
---- নিশ্চিতভাবে কোন রকমের সম্পর্ক নেই। তবে এটা ঘটনা, সেই সন্ধায় ভারতের নব নির্বাচিত  উপ প্রধানমন্ত্রী, যিনি স্বারাষ্ট্র দপ্তরেরো ভারপ্রাপ্ত, রাজধানীর পরিবর্তে আমাদাবাদে ছিলেন। (ক্রমশঃ)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours