চন্দন ভৌমিক, ফিচার রাইটার, দুর্গাপুর:

আজ নাকি হাগ্ ডে...কলেজে এ কাজ করার সুবাদে এই প্রজন্মর সাথে পরিচিত হবার সুযোগ হয়েছে..তাদের আচার ব্যবহার..কথা বার্তা...চাল চলন খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছি...অবাক হয়ে ওদের দেখি আর ভাবি..এরা কি আমার বাংলার প্রজন্ম...আজকে এরা সারাবছর বিভিন্ন রকম দিবস নিয়ে ভাবে...বাংলায় কথা বলার সময় ইংরেজি বাংলা, হিন্দি সব মিশিয়ে এক অদ্ভুত ভাষায় কথা বলে...আমার কিন্তু শুনতে খুব একটা খারাপ লাগে না..ইন্টারনেটের দৌলতে সারা বিশ্বর সাংস্কৃতি আজ আমাদের হাতের মুঠোয়..  আশির দশকে আমরা যখন স্কুল কলেজে পড়তাম তখন এইসব ডে'র নাম আমরা শুনিনি...প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে এই প্রজন্মরও উন্নতি হয়েছে...সোশ্যাল মিডিয়াতে এইসব ডে নিয়ে প্রচুর দাপাদাপি হয়..আমাদের মতো প্রবীণরাও এই মিডিয়াতে আসক্ত...ফলে আমাদের মতো প্রবীণরাও এই সব দিবস নিয়ে জানতে পেরে যাই..যাই হোক এই হাগ্ ডে নিয়ে মানুষ যে এতো বিপদে পড়তে পারে...সেটা সামন্তবাবুর একটা ঘটনা থেকে পরিষ্কার ... আমাদের সামন্তবাবু ব্যাংকে চাকরি করেন..অবসরের সময় প্রায় হয়ে এসেছে .. ধানবাদে পোস্টিং..শনিবারে ব্ল্যাক ডায়মন্ড ধরে বাড়ি চলে আসেন..আবার সোমবারে ফিরে আসেন কর্মস্থলে..হিন্দি ভাষী অঞ্চলে কাজ করলেও সামন্তবাবু হিন্দিতে অতটা সড়গড় নন..কাজ চালিয়ে যেতে পারেন..এখন ব্যাংকে সব নতুন এই প্রজন্মর ছেলে মেয়েরা..গড়গড় করে হিন্দি ইংরেজি বলে..সব ঝা চক চকে সব ছেলেমেয়েরা..সবার সাথে সামন্তবাবুর বেশ ভালো সম্পর্ক...মাঝে মাঝে একটু আধটু ইয়ার্কি ফাজলামোও হয়...দিনগুলো বেশ ভালোই কেটে যায় সামন্তবাবুর...
আজও অন্য সব দিনের মতো সামন্তবাবু সকাল সকাল ব্যাংকে ঢুকেছেন.. ঢোকা মাত্র একটি ছেলে সামন্তবাবুকে বললো..স্যার হাগ্ ডে স্যার..সামন্তবাবু একটু ঘাবড়ে গেলেন..ছোড়া বলে কি...হেগে দিতে বলছে কেন..ইয়ার্কি মারছে নাকি...যায় হোক সামন্তবাবু শুনেও না শোনার ভান করে এগিয়ে গেলেন..ডিপার্টমেন্ট যাবার পথে যার সাথেই দেখা হচ্ছে..সেই বলে....স্যার হাগ্ ডে স্যার.. সামন্তবাবু শুনেও অন্যদিকে মুখ ফিরি নিচ্ছেন...আর ভাবছেন সালা ইয়ার্কির একটা লিমিট আছে..এরা তো কোনো লিমিট মানছে না...এই সব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে শেষ অবধি সামন্তবাবু নিজের কেবিনে এসে বসলেন..ভাবছেন এরা সব আমাকে আজ হাগতে বলছে কেন? ..তবে কি এরা আমার সাথে ইয়ার্কি মারছে..আমি কি অন্যের ইয়ার্কি মারার পাত্র নাকি...যাক শেষ অবধি সামন্তবাবু ভেবে চিনতে কোনো কুল কিনারা করতে না পেরে বেল বাজিয়ে তার পি এ'কে ডাকলেন ... ২৫ ২৬ বছরের সুন্দরী পি এ দরজা খুলে মুখ বাড়িয়ে বললো হ্যাপি হাগ্ ডে স্যার। সামন্তবাবু আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না ... চিৎকার করে বলে উঠলেন..হচ্ছে টা কি ? রাগের মাথায় বাংলাতেই চিৎকার করে উঠলেন..."সকাল বেলায় বাড়ি থেকে হেগে আসলাম...তাও শালারা বলে কি না হাগ্ দে.. হাগ্ দে..ইয়ে অফিস কেয়া হামারা হাগনেকে জায়গা হায়..হাগ্ দে..হাগ্ দে..বলতে হায় ... সামন্ত বাবুর চিৎকার শুনে ব্যাংকের ম্যানেজার আর স্টাফরা এসে হাজির..শেষ অবধি ম্যানেজার সাহেব সামন্তবাবুর সব কথা শুনে বললেন...আরে বাবু আপনাকে সবাই ভালোবাসে...আর আজ তো হাগ্ ডে..তাই আপনাকে সবাই হাগ্ ডের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে..বেপার টা ভালো করে বোঝার পর অবশেষে সামন্তবাবু ঠান্ডা হলেন....

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours