জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা, দুর্গাপুরঃ

সাম্যান্ধতার সুযোগে কংগ্রেসে আরএসএস চাপঃ জাতীয়তার সংহতিতে সাম্যবাদী অক্ষমতা (৩১পর্ব)

স্বাধীনতা আন্দোলন কিংবা স্বাধীনতাত্তোর কালের কালের কংগ্রেস দলে কয়েকজনই ছিলেন, যারা দ্বিতিয় বিশ্বযুদ্ধজনীত কারনে স্বাধীনতা পেয়েছে, তেমন দেশগুলিতে
স্বাধীনতা সংহত করতে হলে প্রথমেই
-----  জাতীয়ততাবোধকে আধুনিক করতে হোত। যে দেশের বিগত ছয় হাজার বছেরের ইতিহাসে  কোন সামাজিক বিপ্লবের নজির ইতিহাসে নেই, রাষ্ট্র নায়কদের উত্থান এবং পতনে  স্বরযন্ত্র এবং পাল্টা স্বরযন্ত্রই যেখানে সামাজিক দ্বন্দ্বগুলির সমাধাণ করতে গিয়ে জটিল করেছে , সেই দেশকে  'সোজা' পথে  নিয়ে আসতে,
যদি মেনেও নিতে হয়, ওদের 'চিনের পথ' নেওয়া সম্ভব নয়, অন্ততঃ চিনের সমস্যাগুলি থেকে এদের শিক্ষা নিতে হোত।
স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়, জাতীয়তার পূনঃর্গঠনের  বিষয়টা তাই আন্দোলনের অভিমুখ থেকে যেমনভাবে সরেছে তেমনভাবে দল একপ্রান্তে অতিপ্রাচিনত্বের তলানীতে ডুবেছে, অন্য প্রান্তে  সরাসরি  হিটলার সমর্থনে না আসলেও মিত্র পক্ষ যাতে ভারতে কোন সুবিধা না পায়, তার সব কিছু করয়েছে। একই নীতির অন্যদিক ছিলও, কংগ্রেস দলের আধুনিক অংশ হিসেবে  নেহেরু এবং সুভাস বসুকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা।
আরো একটু তলিয়ে দেখতে গেলেই দেখা যাবে,এই যে জাতীয়তা পূনঃর্গঠনের কাজে এরা হাত না লাগিয়েই সাম্যবিরোধীতার নামে চিন বিরোধীতাকেই দল হিসেবে কংগ্রেস দল এবং ব্যক্তিহিসেবে মহাত্মা গান্ধী কংগ্রেসের মুখ্য অভিমুখ বানিয়ে ফেললেন, ভাবাদর্শের দিক থেকে এমন সব ঘটনা ঘটিয়ে চলছিল,শেষ বিচারে সেগুলিই  কংগ্রেস দলকেই আর এস এস এর আতুরঘড় বানিয়ে ফেলেছিলো। সেটাই
---(ক) স্বাধীনতা আন্দোলনের চারটি শ্রোতকে এক বিন্দুতে আসতে দিলো না এবং মুসলিম লিগ আন্দোলন নির্মানে বৃটিশ স্বরযন্ত্রের সাহায্য করলো এক হতে পারলো না
  (১) কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন প্রধান অংশ (২) মুস্লিমদের আধুনিক অংশের নেতৃ্ত্বাধীন কংগ্রেস ও অ-কংগ্রেসী অংশ (৩) সুভাষ বসুর নেতৃ্ত্বাধীন বাম পন্থি অংশ (৪) সাম্যবাদি নেতৃ্ত্বাধীন বিপ্লবী শ্রমিক কৃ্ষক অংশ ।

মানতে হবে এই সাম্যবাদী অন্ধতাই, এদেশের বিপ্লবী জনসত্বার একটি অংশকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়ে শসস্ত্রতার পথে যেতে হয়েছে। একই সাথে কংগ্রেস দলের মধ্যকার  'সামন্তজাতীয়তার' অন্ধুকুপই নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোসকে, দেশ থেকে টেনে নিয়ে গিয়ে জার্মান দেশে ঠেলে পাঠিয়েছিলো ।

সোস্যাল ডাইনামিজম এদেশে সাম্যবাদীদের বাইরে মহাত্মাগান্ধী বুঝতেন, তার বাইরে নিশ্চিতভাবে  নেহেরু। এই সুত্রেই, সাম্যবাদীদের দিক থেকে চরম দুর্বলতা সম্পর্কে একাধীক লেখায় আমি উল্লেখ করেছিলাম - সত্তোর দশকে যদি সাম্যবাদী আন্দোলন অতি-বামদের দিক থেকে বড় ধরনের আঘাত পেয়ে থাকে, তার প্রধান কারন ছিলো কর্মসূচী থেকে  দূরে সরে আসায়, নবজাগ্রত যৌবনকে দিকভ্রম করতে প্ররোচিত করেছিলো। সেই সরে আসাটা যখন শুরু হওয়ার যেমন কতকগুলি অন্য বিচ্যুতি কাজ করেছে, তেমনি একবার 'আপোষ' যখন শুরু হয় তখন সেটা গড়িয় চল্লো আভ্যন্তরীন সংগঠন আপোষের পথে।

---- এই শুরুটা কখন হোল? অনেকবার উল্লেখ করেছি, সালকিয়া থেকে সরে আসায় দলকে গান্ধী নেতৃ্ত্বনীতির মতো দল নীতি থেকে ব্যক্তি সর্বস্বতার দিকে গেছে। দ্বিতিয়তঃ বর্ধমান প্লেনাম আপোষ হয়ে যাওয়ায়, আন্তর্জতাতীকতা থেকে দল বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়ে, সংগঠনের দিক থেকে দল কংগ্রেসের 'এক নেতা' বাদ বা 'গান্ধীবাদের' দিকে গেছে। তৃতীয়তঃ স্তালিন প্রস্থাবকে নিয়ে এগুতে অস্বিকার কঢ়ে,-
আমেরিকাস যে হিটলার তন্ত্রের উত্তরাধীকার সেই সত্য থেকে দলকে সরিয়ে দিয়েছে।
এখান থেকেই বুঝতে হয়, মহাত্মার নেতৃত্বাধীন কংগ্রেসের ডাইনামিজম কিভাভা মহামারির মতো, দেশের জাতীয়তাবাদের আধুনিক উন্মেষের বিরপরীতে দেওয়াল হয়ে দাড়ীয়েছিলোঃ

(ক) মহাত্মাকে যদি সাম্যকেই আটকাতে হোত , তবে 'রামরাজ্য'র পরিবর্তে, নেহেরুর 'মিশ্র অর্থনীতি' কেই প্রথম থেকে মানতে হোত। কমিউনিজম ভীতি
এতোই তিভ্র ছিলো যে স্বাধীনতা পর্য্যন্ত তড় সইলো না।

(খ) পরিনামে একপ্রান্তে 'রামই' তাকে হত্যা করলো, অন্যপ্রান্তে 'মুসলিম লিগ' নির্মানে সাহায্য করলো। নয়তো, জীবনে নামাজ না পড়া জিন্নাকে পৃ্থক দেশ চাইতে হোত না। অবশ্য, দেশের সব জমিদারদের কংগ্রেসের ঘারে ভড় করাটাও পৃ্থক রাষ্ট্রের দাবীকে মজবুত করেছিলো। এই জমিদারেরা দেশবন্ধুর মৃত্যুর পর যদি, বেংগল প্যাক্ট বাতিল না করতো তবে, কিছুতেই এতো রক্তপাত নিয়ে দেশ স্বাধীনে মান্যতা দিতে হোত না।

(গ) এটা অন্যায় এ কথা প্রচার করা যে মহাত্মাগান্ধী, ভারত বিভাজন চেয়েছিলেন। বরং বলবো, হিন্দু-মুস্ললিম দাঁঙ্গার প্রবনতাকে যদি কেউ দুর্বল করে থাকেন তিনি। সেকালের জনসংঘি বা হিন্দু মহাসভার নেতারা যদি এই দাঁঙ্গা আটকানোর চেষ্টায় অতি-ক্ষুব্দ না হতেন, তবে গান্ধী হত্যা ঘটতো না।

(ঘ)  জাতীয়তার পূনঃর্গঠনের কারনে মহাত্মা ঠিকই বুঝেছিলেন, যে উচ্চ বর্নকে দলিতদের কাছাকাছি আনা। কিন্তু সেখানেই আবার চিনের ভয়। তাই তিনি কাছাকাছি এনে
---- ভারতীয় জাতীয়ততাকে অনেকটাই এগিয়ে দিলেন বটে, কিন্তু তিনি কাপুরুষের মতোই  জাত-পাতের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুল্লেন না।

 আজকাল দেখি
চুস্ত আমেরিকান প্যান্ট পরিধান করে,
গলায় টাই লাগিয়ে, তুতু করে ক্রমাগত ইংরাজী বাত মেরে,
-- আমেরিকার জয়ধ্বনী দিতে  দিতে, দেশ বিভাজনের
বিপরীতে চোখের জলে, পরিধান করা  আমেরিকান জার্সি
ভিজিয়ে মরাকান্না কাদেন।
তাদের বলিঃ
তদানিন্তন ব্রাহ্মন্যবাদীরা যখন বৃটিশের পক্ষে এবং হিটলারবাদে
জীবন উৎসর্গীত, মহাত্মা যখন পুরো নীতিটাই হিটলার যাতে সুবিধা পায় সে দিকে এবং  যে কোন মুল্যে সাম্য আটকানোর নীতিতে বিশ্বাস স্থাপন করেছিলেন
THEN  INDEPENDENCE  WITH ALL OLD BAGGAGE
AND THROUGH AGREEMENT WAS INEVITABLE.
সেই বাবুদের আরো জানিয়ে দিই - যে ইতিহাস এখনো বহুল প্রচারীত নয়
---- সে রাত ১২টায় (১৪-১৫ই আগষ্ট) যখন পুঁথি-পাজি দেখে সই হোল
তখন ব্রিটিশ ইউনিয়ন জ্যাক নামিয়ে, তে- রংগাটাও নামানো হয়েছে।

কাপুরুষদের দলকে আবারো বলিঃ
সব গুছিয়ে গাছিয়ে নিয়ে, এখন বলা হচ্ছে ঃ (ক) সংবিধান থেকে সমাজতন্ত্র বাদ দেওয়া হক (খ) দলিত এবং আদিবাসীদের অধিকারগুলি বাতিল করা হক (গ) মেয়েদের ঘঢ়ে সন্তান উৎপাদন এবং পুরূষের সেবায় এবং পুরুষভোগ্য হিসেবে ঘোষনা করা হক। (ঘ) সংখ্যালঘুদের ভাগিয়ে দিয়ে তাদের জমি-জিরেত এবং ব্যবসাপাতির সব কিছু ভ্রাহ্মন্যবাদীদের হাতে তুলে দেওয়া হক।
কাপুরুষের দলঃ
যদি হিম্মত থাকে তবে আপনারা দাবী করুন, সংসদীয় সংবিধানিক ব্যবস্থায় যদি,
জাতীয়তার উন্মেষ না ঘটে তবে, যেঁ পথে না হাটার কারনে 'চুক্তি হয়েছছিলো' স্বাধীণতার সেই পথে হাটুন। অন্যথায় যা চলছে চলতে দিন।

লেখাটা পরের লেখায় শেষ হবেঃ
শুধু ইংগিত দিয়ে দিয়ে রাখি । প্রথমত নেহেরু বাচিয়ে দিলেন, সমাজতান্ত্রিক ধাঁচের কথা বলে। সেটাও কংগ্রেসে আর এস এস নেতা এবং নেহেরুর চরম প্রতিদ্বন্দ্বির মৃত্যু এবং ভারতের বৃটেনে রক্ষিত সব স্টারলিং ব্যালেন্স লুট
হয়ে যাওয়া, এবং ভারতকে  আমেরিকার শষ্যাগার বানানোর প্রশ্তাব, তার সাঠে পাঁচের দশকে দুর্ভিক্ষাবস্টার সময়
------ সেখান থেকেই, নেহেরু-স্তালিন অর্থনৈ্তিক চুক্তির পর সুবর্ন যুগ শুরু হোল। সেই যুগই ভারতের সব কিছু শেষ হয়ে যাওয়ার  কারনগুলি বিদ্যমান থাকলেও এখন শ্বাস প্রশ্বাস টুকু বিদ্যমান।
এসবের মধ্যেও এক দিন এক মুহূর্তের জন্য ভারতের মাটিতে সাম্যকে নিশ্চিহ্ন করার রাষ্ট্রীয় চেষ্টা বন্ধ হয় নাই। আঘাতের পর এই আঘাগ, অন্য এক সর্বনেশে পরিনাম ডেকে এনেছিলো। (ক্রমশঃ)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours