শেখ ফরিদ, প্রগতিশীল লেখক, বাংলাদেশ:

মোঘল এ আযম সিনেমার সব গানই ছিলো সুপার হিট। যা ভারতের সিনেমার ইতিহাসে  দু-চার বার হয়তো ঘটেছে।  "মোহে পাঙ্ঘাট মে নন্দালাল...." গানের দৃশ্যে মধূবালার সাথে লং সটে  নাচের দৃশ্যে অভিনয় করেছিলেন একজন পুরুষ! শুধু তাই নয়, সেই বিখ্যাত গান, "পেয়ার কিয়া তো ডরনা কিয়া..... " গানের দৃশ্যেও ছিলো দুজন মধূবালা! অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে?
 তাহলে শুনুন "পেয়ার কিয়া তো ডরনা কেয়া.."  গানের নাচের ইতিহাস। মধূবালা তখন ভীষণ অসুস্থ এবং  তার হার্টে ছিদ্র। অন্য দিকে শীষ মহল অনেক টাকা খরচ করে বানানো হয়েছে।  যে টাকা দিয়ে একটি সিনেমাই হয় যায়।  যেখানে থাকবে অসাধারণ নাচের দৃশ্য।  কিন্তু  আনারকলি তথা মধূবালার তো অসুখ। তার উপর তিনি দক্ষ নাচিয়ে ছিলেন না।। তখন ভাস্কর বি আর খের, নক্ষত্রের মত উদয় হন। কে আসিফকে জানান, তিনি মধূবালার নকল মুখায়ব তৈরী করে দেবেন। এবং সত্যিই  রাবার দিয়ে মধূবালার অবিকল মুখোশ তৈরী করে দেন। এর জন্য মধূবালাকে ভাস্করের সামনে দীর্ঘক্ষন দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। নৃত্যগুরু লক্ষী নারায়ণ সেই মুখোশ পরে কঠিন মুদ্রার অভিনয়ে অংশ নেন। মধূবালার নাচে "পেয়ার কিয়া তো ডর না কেয়া..  " গানের দৃশ্য  সিনেমার ইতিহাসে অমর হয়ে আছে।

কিন্তু আসল ঘটনা অনেকেই জানে না, যে; সে নাচের দৃশ্যে অভিনয় করেছেন দুজন মধূবালা। একজন নারী, মধূবালা নিজে। ও  একজন পুরুষ,  লক্ষী নারায়ণ। শুধু তাই ই নয়। একবার দীলিপ কুমারকে দেখে অনেক  সিনিয়র শিল্পীরাই ভরকে যান।  তারা বলে, আজ তো আপনার শুটিং নেই। পরে দেখা গেলো,  আসলে তিনি দীলিপ  কুমার নন। দিলীপ কুমারের মুখোশ পরা অন্য একজন জুনিয়র শিল্পী সেটে হাজির!  এটাও গবেষনার বিষয়, কেন দিলীপ কুমারের মুখোশ তৈরী করা হয়েছিলো? মধূবালা না হয় অসুস্থ ছিলেন এবং কঠিন মুদ্রাগুলোতে নাচতেও পারতেন না, তা বুঝলাম। কিন্তু দিলীপ কুমারের নকল মুখোশ কেন করে রাখা  হয়েছিলো!  এরকম অনেক অনেক গল্পে ভরা মোঘল এ আযম সিনেমা তৈরীর কাহিনী।
মোঘল এ আযম সিনেমার কিংবদন্তী নির্দেশক কে  আসিফ, তার চাচার মিত্র রীতা দেবীকে ভালোবসে বিয়ে করে ছিলেন। এমন কি আবার  এই রীতা দেবীর বান্ধবী, নিগার সুলতানাকেও বিয়ে করে ফলেন এক সময়!  প্রধান নর্তকি বাহারের চরিত্রে  অভিনয় করেছিলেন নিগার সুলতানা। মোঘল এ আযম সিনেমায়  তার অভিনয়ও ছিলো দুর্দান্ত, দেখার মত। এসব দেখে করিমুদ্দিন আসিফের মা, আবার ফিরোজা নামে এক মেয়ের সাথে বিয়ে করিয়ে দেন জোড় করে।  তিনি ফিরোজাকে গ্রামেবাড়ি মায়ের কাছেই রেখে চলে আসেন। এ সব ঘটতে থাকে মোঘল এ আযম সিনেমার সুটিং চলার ১৬ বছর ধরেই। এবার আবার বিয়ে করেন  তার সিনেমার নায়ক দিলীপ কুমারের বোন, আক্তারকে! এতে দিলীপ কুমার  তার বোন আকতারের প্রতি এতই ক্ষুব্ধ হন যে,  অনেক বছর বোনের সাথে কথাই বলেননি। স্ত্রী  সায়রা বানুর অনুরোধে এক সময় বোন আক্তারের সাথে দেখা করেন। যখন তার বোন  আক্তার খুব অসুস্থ ছিলেন।

মোঘল এ আযম সিনেমার দৃশ্যে সম্রাট আকবর পুত্র সন্তানে আশায় মরুভূমির বুক চিরে তপ্ত বালুতে নগ্ন পায়ে হাটার দৃশ্যটা ছিলো সত্য।  যা পৃ্থ্বীরাজের জন্য খুব কষ্টের কারন হয়ে দাড়ায়। কে আসিফ কে , যখন প্রশ্ন করা হয়,  সত্যি সত্যি মরুর তপ্ত বালুর উপর কেন তাকে নগ্ন পায়ে  হটানো হলো? তিনি উত্তরে বলেন, যাতে  সিনেমায় একজন পুত্রের আকাংখায় কাতর  সম্রাট পিতার প্রকৃত  অনুভূতি চেহারায়  ফুটে উঠে। এমন কি,  আকবর রুপী পৃথ্বীরাজের পেছনে তখন নির্দেশকের ভুমিকায় থাকা, কে আসিফও মরুর তপ্ত বালুর বুকে  নগ্ন পায়ে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। এবং আরো অবিশ্বাস্য এই সুট নেয়া হয়েছে প্রায় ১৯ বার!
 এছাড়া মোঘল এ আযম মুভিতে  শাহাজাদা সেলিমের ভুমিকায় অভিনয় করা  দীলিপ কুমারের পায়ের জুতো জোড়াও ছিলে খাঁটি স্বর্নের। এবং নন্দলাল কানাইয়ার যে মূর্তী দেখানো হয় তাও সম্পুর্ন স্বর্নের তৈরী ছিলো। (ক্রমশঃ)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours