দেবর্ষি মজুমদার, লেখক, বীরভূম:

একে মাতৃ ভাষা দিবস! তাও আবার মনে করিয়ে দিল “ হোয়াইট ম্যান্স বার্ডেন”। নিরুপায়!  ভাষা দিবস উপলক্ষে আগের দিন কথা বলে রেখেছিলুম বিশ্বভারতীর বিভিন্ন আধিকারিকদের সাথে। পাশাপাশি বিশ্বভারতীর ছাত্রছাত্রীদের সাথে। ভেবেছিলাম ভাষা দিবস এক নিখাদ প্রেমের কথা। সেটাই হোক না! আলাপ শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের রাজশাহীতে কেমন কাটতো বাংলাদেশী ছাত্রছাত্রীদের!

ধরুন মেয়েটির নাম ময়ুরাক্ষী বা মৌমিতা! সে জানিয়েছিল, বাংলাদেশে এই দিনটিতে না থাকা মানে বুকের ভেতর একটা মোচড় অনুভব করা! কথা বলেছিলাম অর্ণব ও আব্দুরের সাথে। তাদের কাছে শুনতে পেলাম, কিভাবে পাটকাটি দিয়ে তারা শহীদ মিনার বানাতো পাড়ায়। সেটা অবশ্য তাদের বাল্য বয়সে। তারা বলতে থাকে, বিশ্বভারতীতে যেমন রাত জেগে আলপনা দেওয়া, ঠিক তেমনি, তবে একটু বেশী! ঘটনার অভিঘাত কেন্দ্র তো ওখানেই!  তাই গোটা রাত জাগা হয়। রাত বারোটার পর শুরু হয়  শহীদ মিনারে ফুল দেওয়া! পাড়ায় পাড়ায়, স্কুল কলেজে সর্বত্র। এমনিতেই স্কুল কলেজে শহীদ মিনার থাকেই।  বিকেল, সন্ধ্যের দিকে থাকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।  এই দিক গুলো নিয়েই লেখার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু হলও না দৈনিক কাগজে। কারণ, ওই সাদা চামড়ার দায়িত্ব বোধ!

বিশ্বভারতীর উপাচার্য শিক্ষায় জ্ঞানে অবস্থানে সাদা চামড়ায় তো! আমরা সাধারণ ছা পোষা সাংবাদিক। আমাদের পেট চলে বিশ্বভারতীর গরিমায় কালি লাগিয়ে, বিশ্বভারতীর সাথে যুক্ত শিক্ষকদের অপমানিত করেই। সেই গল্প না পেলে, আমাদের রোজগার হয় না, পেট ভরে না!  কিন্তু সবই ভবিতব্য! কেউ টেনে পাঁকে নামালে কি করব? পদ্ম তুলতে তো আমাদের আপত্তি নেই! তাই তো তুলছি! সে পাঁক ও পদ্ম যে একাকার হয়ে গেল, তাই তো শ্বাসকষ্ট!
প্রসঙ্গ ছিল ভাষা দিবস যেন আনুষ্ঠানিক একটা দিনেই হারিয়ে না যায়! সেভাবেই শুরুটা করেছিলেন উপাচার্য। কিন্তু একরাশ ক্ষোভ বেরিয়ে এল তাঁর মুখ থেকে!  আর সেখানেই জন্ম নিল বিতর্ক!  কি না বললেন তিনি! বামপন্থা, ডান পন্থা, আশ্রমের মাস্টারমশাই! পড়ুয়া, ব্যবসায়ী সমিতি সবাইকে আপাদমস্তক বেত দিলেন!

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে ডানপন্থা নিয়ে  উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী  বললেন,  ‘‘গান্ধির জন্মদিনে রাজঘাটে মাথায় সাদা টুপি পড়ে সারা দেশের বড় বড় চোরেরা বসে থাকে ।''  বিশ্বভারতীতে অশান্তি নিয়েও মুখ খোলেন তিনি, বলেন ‘‘বিশ্বভারতী অসুস্থ’’৷ কিত্রিম শ্বাস প্রশ্বাসে চলছে। ব্যবসায়ী সমিতি যাদের সাথে বিশ্বভারতীর কোন লেনাদেনা নেই, তারা আজ গালিগালাজ করে যাচ্ছেন বাপ মা তুলে।  আমরা চুপ চাপ সহ্য করে যাচ্ছি। কারণ উপাচার্যকে গালিগালাজ করছেন, আমাকে তো দিচ্ছে না।  বিতর্কের আগে, ভাষা দিবস উপলক্ষে একটুকরো বাংলাদেশ হিসাবে সেজে উঠেছিল বিশ্বভারতীর বাংলাদেশ ভবন ৷ বাংলাদেশের পড়ুয়াদের উদ্যোগে বানানো হয়েছে শহীদ বেদী, দেওয়া হয়েছে আলপনা ৷ ২১ ফেব্রুয়ারী সকালে বিশ্বভারতীর ইন্টারন্যাশনাল গেস্ট হাউসের সামনে থেকে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো ২১ শে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি’ গান গাইতে গাইতে পদযাত্রা শুরু করেন পড়ুয়ারা ৷ উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী সহ অন্যান্য আধিকারিক, অধ্যাপক -অধ্যাপিকারা ৷ বাংলাদেশ ভবনে এসে শেষ হয় বৈতলিক ৷ সেখানে শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধার্ঘ জানান উপাচার্য সহ সকলে ৷ অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে উপাচার্য বলেন,  ২ অক্টোবর রাজঘাটে ঢোকা যায় না। ওই দিন মাথায় সাদা টুপি পরে দেশের যত বড় বড় চোর বসে থাকে । আমার বক্তব্যের ভিডিয়ো ভাইরাল হবে জানি৷ এখানে অনেক বদ উদ্দেশ্য নিয়ে ভিডিয়ো করছেন। বিশ্বভারতীকে কালিমালিপ্ত করতে উদ্যত তারা । তিনি আরও বলেন, “বিশ্বভারতী অসুস্থ । কৃত্রিম শ্বাস প্রশ্বাসের মধ্য দিয়ে চলতে হচ্ছে । এই বিশ্বভারতীর জন্য অনেকের পেট চলছে ৷ সাংবাদিক বন্ধুদেরও অনেকের পেট চলে । বিশ্বভারতীর গল্প না পেলে তাদের লেখা হয় না । তারা হলুদ সাংবাদিকতা করেন। বিশ্বভারতীর মাস্টারমশাইরাও ফেসবুকে তাতে কমেন্ট দেন।
’’এমনকি, উপাচার্যের সঙ্গে বোলপুর ব্যবসায়ী সমিতির দ্বন্দ্ব ও নিজের বিরুদ্ধে ওঠা শ্লীলতাহানির ঘটনাও ভাষা দিবসের মঞ্চ থেকে উল্লেখ করে কটাক্ষ করেন উপাচার্য ৷  বলুন তো! মাঠে নেমে কেউ লোফা বল দিলে, পেট চালাতে ওভার বাউণ্ডারি পাঠাতেই হবে! এক্ষেত্রে দোষটা হয় বলের, না হয় ব্যাটের!

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours