দেবর্ষি মজুমদার, লেখক, বীরভূম:

৮৯ বৎসর বয়সে শনিবার সকালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ কৃষ্ণা বসু। এদিন শান্তিনিকেতনে  নিজের প্রতীচি বাড়িতে কৃষ্ণা বসুর প্রয়াণে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেন বলেন,  “ খুব বড় রকম ক্ষতি হল। ওঁর মত লোক পাওয়া খুবই কঠিন। ভারতবর্ষের পক্ষে খুবই ভাগ্যের কথা ছিল। তিনি যে শুধু এখানে ছিলেন তা না। তাঁর সঙ্গে ভারতীয় রাজনীতি, ভারতের সমাজ চিন্তায় এ বিষয়ে তাঁর অবদানগুলি বিশ্বস্তভাবে আমাদের কাছে তুলে ধরেছিলেন। পার্লামেন্টে মেম্বার হিসেবে কাজ করেছেন। সেখানে ফরেন এফেয়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান সভাপতি হিসেবে যা করণীয়, তার জন্য অনেক কিছু থেকে আমরা সবাই খুব লাভবান হয়েছি।
অন্যদিকে, ভারতবর্ষ বা পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি কিরকম চলছে, এ বিষয়ে তাঁর বহু মূল্যবান কথা থেকে আমরা উপকৃত হয়েছি। আমার পক্ষে অবশ্য শুধু ওঁর গুণের কথা বললে চলবে না। তিনি আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। তাঁর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ যখনই পেতাম , তখন আমার খুব ভালো লাগতো। অনেক সময় তিনি তাঁর পুত্র সুগত বসু হাভার্ডের অধ্যাপক তাঁর কাছে যেতেন। আমাদের পক্ষে একটা বড় রকম সুযোগ হত। তখন তাঁর সঙ্গে কাছে বসা, তাঁর সঙ্গে কথা বলা। আমি নিজেকে খুব ভাগ্যবান বলে মনে করি, যে তাঁর স্নেহ, বন্ধুত্ব পাওয়ার সুযোগ আমার হয়েছে এবং তাঁর থেকে নানাভাবে লাভবান হয়েছি। এতে কোন সন্দেহ নেই। তাই নানা দিক মনে পড়বে।  কোনটা কাজের দিক। মানসিক যোগাযোগের দিক, কোনটা চিন্তার জগত। কোনটা কাজের জগত। সব কিছুর মধ্যেই কৃষ্ণা বসু আমাদের চিন্তা, বিশেষত আমার চিন্তার মধ্যে বারবার আসে। এই অভাব পূরণ করা সহজ হবে না। আমার ধারণা তাঁর অভাব প্রতিদিন আমরা বোধ করব। এবং সেই নিয়ে আমরা কতটা ক্ষতিতে পড়লাম, এই মুহুর্তে সেই নিয়েও আমাদের চিন্তা চলতে থাকবে। অনেক সময় যার জন্য লোকে যা যা করেছেন, তাতে আমরা কতটা লাভবান হচ্ছি, সেটা খুব স্পষ্টভাবে বোঝা যায় না, যতক্ষণ তাঁরা কাছে থাকেন। কিন্তু তাঁরা চলে গেলে, আমরা বুঝতে পারি, কে কিভাবে, কতভাবে উনি আমাদের সাহায্য করেছেন, জীবনকে সমৃদ্ধ করেছেন। এ সমস্ত কথা নিশ্চিতভাবেই আমাদের মাথায় এখন ঘুরবে। তাই কৃষ্ণা বসু চলে যাওয়া নিয়ে দুঃখ করার হাজারো কারণের মধ্যে আমাদের নিজেদের যে লোকসান হল, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours