প্রিয়াঙ্কা ভট্টাচার্য, লেখিকা, বর্ধমান:

আমার বয়স তখন কুঁড়িতে যাপন করছে ; হ্যাঁ,  প্রস্ফুটনের সময় তখন আমার। পরিচয়!  আমার মনে ঝড় ; ধলা মেঘে একলোচা নিবিড় আলোড়ন বয়ে যাচ্ছে ; পিতা আমার ক্ষুদ্র আকারের অধিপতি। আর্যাবর্ত জুড়ে আছে রাজশক্তি প্রধান। কুরু আর পাঞ্চাল ছাড়া সবই তো ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র। মনে পড়ছে, চাষার গরু বিকোয় হাটে৷ পূর্ণ হেঁয়ালি বেয়ে, পারস্পরিক সম্পর্ক যে খারাপ নয় ; ছন্দবদ্ধ বিন্যাসে জীবনকে বাঁধতে হবে এ স্বাদ কার নেই! তাই আমি কি ধন্য রাজ্যের পুণ্য সম্পদ হতে পারি, আমি অসুখী আমি অশান্ত। সন্দেহ নেই অন্ধত্ব আমার মানায় না,  তবু যে মুখ ঘুরিয়ে থাকলে মহাশক্তিধরের শৌর্য প্রদর্শন আমাকেই দেখতে হবে। কি করে ভুলতে পারি,  বাবাজী মহারাজ যে, কোলে পিঠে করে মানুষ করেছেন তাঁকে। তবে কি  আমার মতের মূল্য নেই!
কি পাবো আমি!!  রাজমাতা হবো!  কিন্তু কবে, তাও তো ভবিষ্যতের সম্ভাবনা বলবে৷

বাবা বলেছিলেন, "আমি যে নারী, স্বাধীন মতামতের
অধিকার সংহিতাসম্মত ভাবে নেই!।  তবে কি পুরুষেরই বলার অধিকার! আমি তবে কি গায়ের জোরে লুন্ঠনের জন্য জন্ম নিয়েছি। কই এগিয়েছে সমাজ!  আর ভুলি কি করে অম্বা, অম্বিকা, অম্বালিকার কথা৷ স্বপ্নেও কল্পনা করতে ভয় হয় যে আমার বক্ষু নদীতে নিমর্জিত হবে; কিন্তু বাক্যালাপ নেই, আলোচনা নেই, কেবল জনশ্রুতি!! না, না কৌলিক অভিমান আর আসে না৷ আহত হবে না, রাজনীতিগত ক্ষমতা বিস্তার৷ আমিও তবে রাজনীতির কুঠারে আত্মস্থ হবো; ডাক জানি না, কূটনীতির আশ্রয় নিতে জানি৷।

আমি তো প্রাপ্তবয়স্ক হয়েছি সিদ্ধান্তের বুনোট নিবেদনে। ক্ষেমাংকরীর আহ্বানে আমি তখন নিজেই চোখ বেঁধে ফেলেছি, কারণ আমার  তো নারী হিসাবে অধিকার নেই; আমি কি সৌন্দর্যবতী!  না, তিনিও যে আমাকে দেখবেন না। অন্য পুরুষের  দৃষ্টিশক্তি উৎপাদন করবে, এমনটাও যে আমি চাই না। পুরুষ নারীর আকর্ষণ তো নিরর্থক নয়৷ আমার সংযমী শোধনে অনৈতিক সাধনা যে আমি করতে পারি না৷ এটা আমার স্বেচ্ছান্ধতা কারণ।

আমি সুঠাম, সৌন্দর্যবতী তরুণী। আমি নবীনা, কলাবিদ্যা পারদর্শী ;আমি যে অবধার্য, এড়িয়ে যেতে কি পারি!  আমি যদি ভবির ঘরে পট্টমহিষী না হতে পারি,  তবে আর আমার দুঃখ হবে না, এটা একটু বাহুল্য মনে হয় না!!  ভীষ্ম অধোবদনে মৌন আজ। স্বীকার করলেন, পূর্বে তো নারীর স্বতন্ত্রতা ছিল।
সমাজ প্রয়োজনে পুরুষ এর পরিবর্তন করেছে।  নারীও ক্রমে তা মেনে নিয়েছে। পারস্পারিক স্বার্থবোধ ছুঁয়েই তো এতো স্বতন্ত্রতা, সচেতনতা৷

কিন্তু ধৃতরাষ্ট্র তো পাণ্ডুর স্নেহাপদ। বৈমাত্রেয় ভ্রাতা বলে তো আর দ্বিমত নেই ; এখন ধৃতরাষ্ট্রই রাজা। কালের গতি যে কুটিল৷ তাই "ধৃতরাষ্টকে নিয়ে আপনার মত যে, দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নয়, আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি"। আসলে আরদ্ধ কৃতকর্ম বন্ধ রাখতে কেউ পারে না৷ বিতর্ক তো শুধু প্রতিযুক্তি দেয়৷ আমাকে তো রাজী হতে হবেই, কিন্তু বলির জন্য আত্মদান কি যথেষ্ট নয়, কিন্তু প্রতিবাদ যে চুপ থাকতে পারে না৷ আমি তো কেবল স্বামীর জন্য নয়, প্রতিবাদী হতেই অক্ষিপট বেঁধে ফেলেছি৷ স্বেচ্ছাচারিতা কখনও যুক্তি হতে পারে না।

ভীষ্ম কি তবে এমনই আয়োজনে আবদ্ধ। কোনো বিরোধ কি intelligentsia - র cotery মুক্ত হবে না!  বিচ্ছিন্নতা কি গ্রাস করেনা একচ্ছত্র প্রতিপত্তিকে!  শূন্য মাঠে এ কেমন লড়াই সমর্থনের টান।হ্যাঁ, পোষণ করেছেন, যাপন করেছেন বারে বার। কিন্তু,  প্রতিবাদ তিনি চান। লাঘব করতে চান অরাজকতা। আস্ফালনের প্রেম কারই বা ভালো লাগে!অন্তর নিগূঢ় আত্মা যদি প্রজ্ঞাবান উপহার দেয়, তবে তো অমান্য নেশা বাধা মানে না। তাই, ভীষ্মের কথায়, ভবির ঘরে তীর বেঁধে, উপলক্ষ্যে ইপ্সাকে জারি রেখে বরমাল্য হাতে নিলাম। শুভলগ্ন আজ...; (ক্রমশঃ)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours