শুভ্রা গুপ্ত, ফিচার রাইটার ও আইনজীবী, বারাসাত, কলকাতা:

পরকীয়া মানেই বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক বা প্রেম, adultery, extramarital love ইত্যাদিকে বোঝায়।
এই পরকীয়া বলতেই কিন্তু সর্বাগ্রে আলোচিত হয় " রাধা কৃষ্ণের প্রেম "। বদনাম জুটি কি আদতেই দায়ী ছিলো এই বদনাম নিতে! সেটা কিন্তু আমরা কখনোই বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করে দেখিনি! কেবলই চেঁচাই পরকীয়া এক সামাজিক অপরাধ বলে। যে পরকীয়া পরে ক্রিমিনাল অফেন্স হয়ে ৪৯৭ ধারায় রচিত হয় অপরাধ ও শাস্তি। যদিও বর্তমানে সুপ্রিমকোর্টের রায় অনুসারে পরকীয়া আর অপরাধ নয়।

পরকীয়া শব্দটি স্ত্রীলিঙ্গ হলেও পরকীয় কিন্তু পুরুষ দ্বারাই সম্ভব ব্যকরণে বলে। কিন্তু আমার চোখে পরকীয়া কিন্তু " স্ত্রীয়াশ চরিত্রম, পুরুষেশ ভাগ্যম, দেবঃ না জনান্তি, কুতু মনুস্যা "। অর্থাৎ স্ত্রীর চরিত্র, পুরুষের ভাগ্য ঈশ্বর স্বয়ং জানেন না তো মানুষ কিভাবে জানবে। অর্থাৎ কোনো মানুষই কাউকে অন্তর থেকে জানতে বা চিনতে পারেন না। অর্থাৎ পরকীয়া কিন্তু একতরফা কখনোই নয়।  একতরফা প্রেম ও যৌন সম্পর্কের নাম ধর্ষণ আর পরকীয়ায় প্রেম ও যৌনতা স্থাপন হয় উভয়ের সম্মতিতে। বাইবেল ও পুরাণমতে কিন্তু পরকীয়া কিছু সাংঘাতিক অপরাধ নয়, স্বামীর দ্বারা স্ত্রী পরিতুষ্ট না হলেই স্ত্রীর পরপুরুষে আসক্তি তৈরি হতে পারে, যা তার ইহজন্মের চাহিদা পূর্ণ করে। কিন্তু ইসলামে পরকীয়া বেজায় অপরাধ। ইসলামে পরকীয়ার শাস্তি  নারী পুরুষ উভয়ের জন্যই সমান। এবং মৃত্যুদণ্ড।
অবিবাহিত নর নারীর জন্য ১০০ বেত্রাঘাত।

যাইহোক আমার আলাচ্য বিষয় আজ কেবল পরকীয়া নয়। আমার জিজ্ঞাসা হল পৃথিবী সৃষ্টির ইতিহাস থেকেই যখন যৌন সম্পর্ককে কন্ট্রোল করা হবে বলেই বিবাহের অবতরণ এই সমাজে, তার পরেও যৌনতাই প্রেমে সর্বোচ্চ দায়ী হয়, তখন কেবল রাধাকৃষ্ণ একা কেন লীলায় বদনাম হলো?
এটা জানতেই আমি কিছু তথ্য পাই কৃষ্ণ পুরাণে, যা আমাকে আরও বিস্মিত করেছে, যার কিছু তথ্য আমি নিম্নে আলোচনা করছি।

" মূল মহাভারত, চার বেদ, ১০৮টি উপনিষদ, গীতার ১৮টি অধ্যায়ের ৭০০ শ্লোক এবং বিষ্ণু পুরান- কোথাও রাধার কোনো উল্লেখ নেই। এই সমস্ত বিষয়, বিচার-বিশ্লেষণ করে, সাহিত্য সম্রাট ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র, তার ‍"কৃষ্ণ চরিত্র" গ্রন্থে এক বিশাল প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেছেন,  ‍  "তাহা হইলে, এই রাধা আসিলেন কোথা হইতে ?‍" রাধার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের চরিত্রে যথেষ্ট কালিমা লেপন করা হয়। কৃষ্ণকে বিশ্বপ্রেমিক প্রমান করতে বলা হয় কৃষ্ণলীলা; আবার কেউ কেউ নিজেদের লাম্পট্যকে ঢাকা দেওয়ার জন্য কৃষ্ণের উদাহরণ টেনে অপরকে প্রশ্ন করে বলে, ‍"কৃষ্ণ করলে লীলা, আর আমরা করলে বিলা ?‍"
এবার বঙ্কিমচন্দ্রের সেই লাখ টাকার প্রশ্নে ফিরে যাই, ‍"তাহা হইলে, এই রাধা আসিলেন কোথা হইতে ?‍"
ব্যাকরণ দিয়েই শুরু করি, যিনি আরাধনা করেন, তাকে এক কথায় বলা হয় রাধা। এই সূত্রে পৃথিবীর সমস্ত নর-নারী, যারা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ভজনা বা আরাধনা করেন, তারা রাধা। কিন্তু রাধা শব্দটি নারীবাচক হলো কিভাবে ?

জীবাত্মা বা মানুষ যখন, পরমাত্মা বা ভগবানের কাছে প্রার্থনা করে, তখন শক্তিশালী ভগবানের কাছে মানুষ- হীন, দুর্বল ও অসহায়। মহাভারত, যা প্রায় ৫ হাজার বছর আগে লেখা, প্রায় ৩২২৮ খ্রীষ্টপুর্বে। যেখানে বলা হয়েছে সেই সময়ে আগস্টের একুশ বা বাইশে কৃষ্ণের জন্মদিন।  যা কৃষ্ণের প্রামান্য জীবনী, তাতে রাধার কোনো উল্লেখ নেই; সুতরাং গীতাতেও রাধার কথা থাকা সম্ভব নয়। এমন কি বিষ্ণু পুরান, যে বিষ্ণুই কৃষ্ণরূপে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হন, সেই পুরানেও রাধার কোনো উল্লেখ নেই।

কিন্তু ব্রহ্মবৈবর্ত পুরানের মতো কিছু অর্বাচীন বা নতুন পুরানে রাধা উল্লেখ আছে। এগুলো রচিত হয়। ১৩০০ থেকে  ১৪০০ খ্রীষ্টাব্দে। এর কারণ কী ? এছাড়াও বৈষ্ণব পদাবলী, যা রাধার, কৃষ্ণের প্রতি প্রেম বিরহ নিয়ে লেখা একাধিক কবির পদ্য এবং শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য, যা মূলত একটি যাত্রাপালা, যাতে রাধা-কৃষ্ণের প্রেম একেবারে মাখামাখি, কৃষ্ণকে নিয়ে এসব রস সাহিত্য সৃষ্টিরই বা কারণ কী ?কিছু আধুনিক পুরান এবং মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে রাধার উপস্থিতিকে প্রামান্য করার জন্যও অবতারণা করা হয়েছে নতুন কাহিনীর। "

এখন আমিও ভাবছি তথ্যগুলো দেখে যে, কৃষ্ণ তো মথুরায় জন্মে বড় হলো গোকুলে। সেখানেই তার সম্পর্কে মামী, আয়ান ঘোষের স্ত্রী রাধার উল্লেখ পাওয়া যায়। আয়ান ঘোষ ছিলেন ইম্পোর্টেন্ট, রাধার সাথে তার স্বামীর শারীরিক সম্পর্কই স্থাপন হয়নি কখনোই। এই সময়ে কৃষ্ণের বয়সই বা কত ছিল, আদতেই প্রেম করার যোগ্য ছিল কি না, তা আমার জানা নেই। এদিকে কৃষ্ণ কিন্তু কিশোর বয়েসেই সে আবার মথুরায় ফিরে যায়, কংসবধ করে ও রাজত্ব সামলাতে শুরু করে। এরপর কৃষ্ণ ভালোবেসে বিয়ে করে সত্যভামাকে। তাহলে কিশোর বয়েসে কি কোনো পুরুষই এতটা প্রেমাসক্ত ও যৌনাসক্ত হতে পারে?
যা তাকে মৃত্যুর পরও এতটা ভাইরাল পরকীয়ার আইডল হিসেবে স্থাপন করে দিলো।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours