চন্দন ভৌমিক, ফিচার রাইটার, দুর্গাপুর:

আমাদের ভারতবর্ষের সবচেয়ে ধৈর্যশীল জাতি হচ্ছে মাতাল জাতি...আজকে ভারতবর্ষে যা চলছে তাতে মাতালদের কোনো মাথাব্যথা নেই...সে পেট্রোলের দাম হোক বা পেঁয়াজের দাম...তাদের কিছুতেই কিছু আসে যায় না....কি অসাধারণ ধৈর্যশীল জাতি... সারা দেশে এরকম ধৈর্যশীল জাতি আর পাবেন না.... আর এদের মতো মহান দানবীর আর কোনো জাতির মধ্যে পাবেন না...একটা উদাহরণ দিই...একজন ভিখারি সারা দিন ভগবানের মন্দিরে মন্দিরে ভিক্ষা করছিলো...সারাদিন ভিক্ষা করার পর সন্ধেবেলায় দেখলো.. সারাদিন ভিক্ষা করে যা হয়েছে তাতে একবেলার খাবারও জুটবে না....কি আর করা যাবে ভগবান যা করেন মঙ্গলের জন্যই করেন... এই মনে করে সে বাড়ির পথে রওনা দিলো.....বাড়ি ফেরার পথে একটা মদের দোকান পড়লো...ভিখারিটা ভাবলো দেখি একবার এখানে কিছু পাওয়া যায় নাকি...বলে দোকানের গেটের সামনে ভিক্ষার ঝুলিটা নিয়ে বসে পড়লো...দোকানটা ইংলিশ মদের দোকান...সরকারি ভাষায় "অন শপ"...গোদা বাংলায় "ঘরের বৌ কে লুকিয়ে বন্ধুদের সাথে সস্তায় ইংলিশ মদ খাবার দোকান...সাধারণত এই সব জায়গার মাতালরা একটু বড়োলোক হয়...অর্থনৈথিক সচ্ছলতা থাকে এদের...ফলে মদ খাবার পর মনটাও অনেক দরাজ হয়ে পরে...ভিখারীতো ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে বসে আছে...মাতাল বাবুরা এক এক করে বেরোচ্ছে আর সবাই ১০টাকা, ২০ টাকা কেউ কেউ আবার ৫০টাকাও দিয়ে যাচ্ছে...কিছু সময় পরে ভিখারি দেখলো যে সারাদিন মন্দিরে মন্দিরে ঘুরে যা রোজগার হয়েছে..তার চেয়ে অনেক কম সময় তার থেকে ১০গুন বেশি রোজগার হয়ে গেছে...ভিখারি তখন মনে মনে ভগবানকে ধন্যবাদ দিয়ে বললো....হে ভগবান কোথায় থাকো আর ঠিকানা কোথাকার দিয়েছো ... এরকম অনেক উদাহরণ আছে....মাতালদের আবার জাতিভেদ আছে...নিখিল বঙ্গীয় মাতাল আর অখিল ভারতীয় মাতাল...মানে যারা সরকারি মদ (মানে দিশি মদ খায়) তারা হচ্ছে নিখিল বঙ্গীয় মাতাল জাতি...আর যারা বেসরকারি (মানে ইংলিশ মদ খায়) তারা হচ্ছে অখিল ভারতীয় মাতাল জাতি... আর এই মাতালদের ওপর রাষ্ট্রশক্তির  বার বার নিপীড়ন করেছে....মদ খেয়ে রাস্তা দিয়ে হেটে গেলে তাদের পুলিশ ধরে...থানায় নিয়ে যায়...তবে মারধর করে না...পুলিশ ও সহানুভূতির সাথে তাদের হাজতে ঢুকিয়ে দেয়...এলাকার মুহুরী ঠিক খবর পেয়ে যায়...চলে আসে বেল করাতে....মানুষগুলোকে যেন সারারাত হাজতে না কাটাতে হয়...মাত্র ৩৬০ টাকার বিনিময়ে..মাতাল স্বাধীন ভাবে বেরিয়ে আসে...রাত্রি ১১ টা নাগাদ মনের আনন্দে বাড়ি ফিরে আসে...। এহেন অত্যাচারের পরেও মাতালরা কোনো প্রতিবাদ করে না....কোনো রাস্তা অবরোধ করে না...অনশন আন্দোলন করে না...আজ অবধি মাতালরা কোনো সংগঠন করতে পারেনি...সম্প্রতি সরকারী দিশি মদের দাম বেড়েছে...দাম বাড়লে সরকারের রাজস্ব ও বাড়বে...আর যত ইচ্ছে দাম বাড়াও মাতালরা তো কোনো প্রতিবাদ করবে না...
এতো গেলো মাতালদের  কথা....মাতালদের প্রতি মদের দোকানদাররাও খুব সহানুভূতিশীল...পুরাকালে দিশি মদ শুধু মাত্র সরকার অনুমোদিত দিশি মদের দোকানেই পাওয়া যেত...সম্প্রতি সরকারি আদেশে এখন ইংলিশ মদের দোকানে বাংলা (দিশি) মদ রাখা বাধ্যতামূলক....মাতালদের প্রতি সরকারের এটি বড় অবদান....সাম্যবাদের একটা বড় উদাহরণ....আপনি যদি একটা বড় দামি গাড়ি নিয়ে ইংলিশ মদ কিনতে পারেন....তো আমিও আমার রিক্সা ভ্যানটা নিয়ে দিশি মদ একই দোকান থেকে কিনতে পারি....আরো আছে কিছু কিছু অন শপে বাংলা মদ আবার হাফ দেওয়া হয়....গরিব মাতালদের প্রতি সরকার অনুমোদিত মদের দোকানের সহানুভূতি....দিশি মদের বোতল খুলে কেরোসিন তেল ঢালার ফানেল দিয়ে সুনিপুন ভাবে ইংলিশ খাওয়া পর যে খালি বোতল থাকে তার মধ্যে ঢেলে দিয়ে দেওয়া হয়....(যদিও এটা সম্পূর্ণ বেআইনি )...কিন্তু কে বলবে ? কাকে বলবে....ধৈর্যশীল মাতাল কোনো প্রতিবাদ করে না...যদি প্রতিবাদ করো মাতাল সমাজ তোমাকে সমাজচ্যুত করবে....এই ভাবে লোকের খাওয়া খালি বোতলে মদ দিলে  বিষক্রিয়ায় মানুষের মৃত্যুও হতে পারে....আর এটা দু একটা মাতাল মরলে কারো কিছু এসে যায় না....আন্দোলন তো হবে না....এরপর আসা যাক দিশি মদের অবৈধ খুচরো কারবারিদের কথায়...সরকারি ভাষায় এদের বলা হয় ড্রেনকীপার...মাঝে মাঝে সরকার বৈধ মদ দোকানদারদের সেল টার্গেট দেয়...সেটা কি ? না দোকানদারদের এতো বোতল দিশি মদ এই সময়ের মধ্যে বিক্রি করতে হবে....একদম কর্পোরেট সেক্টর এর মতো ....টার্গেট না করতে পারলে অনুমোদন বাতিল....বেচারা মদ দোকানদার আর কি করে.....তখন ভরসা মদের অবৈধ খুচরো কারবারি বা ড্রেন কিপাররা...সবমিলিয়ে একটা দারুন সহবসস্থান.... সারা বাংলা ব্যাপী এদের বিস্তার...বাংলা বন্ধ হোক বা ভারত বন্ধ.... মাতাল দের ভরসা এরাই...পুলিশ, নেতা, চামচ সব এদের হাতের মুঠোয়...এদের দোকান থেকে মদ খেতে গেয়ে আপনি পালিয়ে এর হাতে ধরা পড়লে এরাই পয়সা দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে আসবে..এইসব দোকানের নাম ডাক নির্ভর করে কে কত তাড়াতাড়ি পুলিশ এর কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসতে পারবে...আর এইসব দোকানের কর্মচারীদের কর্ম দক্ষতা অসাধারণ..কেরোসিন তেল ঢালার ফানেল দিয়ে যখন মদ ভাগ করে...দেখে মনে হয় কোনো বিজ্ঞানী কোনো রাসায়নিক মিশ্রণ বানাচ্ছেন..এইসব দোকানে  কিছু বাংলা ভাষা চলে...যেমন কাটা (মানে একবোতল এর হাফ)...গলাকাটা (মানে গোটা বোতলের এক তৃতীয়াংশ) ..পুরো (মানে এক বোতল)...এছাড়া আছে ১০...২০ টাকার মাপ...সব মিলিয়ে এক বিশাল ইন্ডাস্ট্রি...প্রচুর মানুষ করে খাচ্ছে..তবে মনে হচ্ছে আগামী দিনে মাতালদের একটি সংগঠন শুরু হতে চলেছে...গানে, কবিতায় বলি..."যত মাতাল রাস্তায় এবার নামবো আন্দোলনে....মদ কেন পাবো না আমরা রেশন দোকানে...মদ আমাদের দিতে হবে রেশন দোকানে...
আসলে মদ আমাদের আত্মার আত্মীয়। আমাদের ইহকাল, আমাদের পরকাল!


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours