রিয়া ভট্টাচার্য, লেখিকা, খড়্গপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর:

১৮৯৭ সালে আজকের দিনে জন্মেছিলেন ভারতের এক এমন নেতা যিনি বদলে দিয়েছিলেন স্বাধীনতা আন্দোলনের গতিপথ, তিনিই বীর সুভাষ।

গান্ধীজির শান্তিপূর্ণ অসহযোগ আন্দোলনের বিপরীতে যাঁর আজাদ হিন্দ ফৌজ রণহুংকার দিয়েছিলো ব্রিটিশের বিরুদ্ধে নিজের রক্তকে পন করে। পরপর দুবার ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নির্বাচিত প্রতিনিধি দলের ভেতরেই গান্ধীজির নরমপন্থী নীতির সমালোচনা করেছিলেন প্রচন্ডভাবে, তৈরী হয়েছিল ফরোয়ার্ড ব্লক নামক নতুন দল। গান্ধীজির মতানুযায়ী ব্রিটিশের অধীনে থেকে স্বাধীনতা নয়, তিনি চেয়েছিলেন পূর্ণ স্বরাজ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় গৃহবন্দী থাকা অবস্থায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জার্মানিতে গিয়ে দেখা করেছিলেন হিটলারের সঙ্গে, চেয়েছিলেন সাহায্য। স্বয়ং হিটলারও ফেরাতে পারেননি তাঁকে, জার্মানি - জাপান আজাদ হিন্দ ফৌজকে সাহায্য করেছিলো মুক্তহস্তে। ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ এগারোবার কারারুদ্ধ করেও আটকাতে পারেনি তাঁকে, " তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব " আজ মিথ!

ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে নাৎসী ও অন্যান্য সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলির সঙ্গে হাত মেলানোয় অনেকে সমালোচনা করেন তাঁর, কিন্তু এটা ভুললে চলবে না শুধুমাত্র তাঁর জন্যই " ডোমিনিয়ন স্ট্যাটাস " এর মতবাদে বিশ্বাসী কংগ্রেস " পূর্ণ স্বরাজ " প্রস্তাব গ্রহণে বাধ্য হয়। ভগৎ সিং এর ফাঁসি ও সেই সংক্রান্ত কংগ্রেসের নীতির বিরোধিতা করায় তিনি ভারত থেকে নির্বাসিত হয়েছিলেন এবং নিষেধাজ্ঞা ভেঙে ভারতে ঢোকার ফলে গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় ভালো নম্বর কৃতী ছাত্র স্বাধীনতা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন দেশমাতৃকাকে ভালোবেসে। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের অধীনে তিনি কিছুদিন কাজ করেছিলেন কোলকাতা কর্পোরেশনে, লিখেছেন " স্বরাজ" নামক পত্রিকায়।

জাতীয়তাবাদী নেতা রাসবিহারী বসু তাঁর ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মিকে তুলে দিয়েছিলেন সুভাষচন্দ্রের কাছে, যাতে আলাদা নারীবাহিনী নিয়ে ছিল প্রায় ৮৫০০০ জন সৈন্য। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপান আত্মসমর্পণ করায় এই বাহিনী ভেঙে গেলেও ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে আজাদ হিন্দ ফৌজের ভূমিকা অনঃস্বীকার্য।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের " তাসের দেশ " নাটকটি তাঁকেই উৎসর্গীকৃত। তিনিই প্রথম স্বাধীন ভারত সরকারের প্রতিষ্ঠাতা, আজাদ হিন্দ সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছিল মোট নয়টি দেশ।

তাঁর অন্তর্ধান ও বৈবাহিক জীবন রহস্যে মোড়া ও বিতর্কিত, কিন্তু নেতাজী আজও আপামর বাঙালির হৃদয়ের মনিকোঠায় সযত্নরক্ষিত। দেশমাতৃকার পদতলে প্রাণ বলিদান করা স্বামী বিবেকানন্দের ভক্ত এই মহান বিপ্লবীকে আজও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে সারা বিশ্ব। ভারতবাসী  যেন তাঁর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হতে পারে, কর্মকেই মেনে নিতে পারে শ্রেষ্ঠ ধর্ম। জন্মদিনে বীর নেতাজিকে জানাই অকুণ্ঠ শ্রদ্ধাঞ্জলি, জয়তু নেতাজি।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours