জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা:

আজকের ভারতকে যদি বুঝতে হয়, তবে চিনকে বাদ দিয়ে, প্রথম সভ্যতার সাথে যে জনপদগুলি যুক্ত ছিল তাদের বর্তমান অবস্থার দিকে তাকালেই স্পষ্ট হবে এবং সাথে সাথে ভারতের বর্তমান অবস্থার কারন এবং বেরিয়ে না আসতে পারার পরিনতিটাও স্পষ্ট হবে। এমনটিই  এই লেখকের নিশ্চিত ধারনা।
---- কিছুদিন পূর্বেও মনে হোত যেন ভারতে যতই ঝগড়া ঝাটি হোক না কেন ভারতীয় সংসদীয় ব্যবস্থা এবং সাংবিধানিক শাসন, কিছুতেই ভারতকে 'সিরিয়ায়' যে পরিস্থিতিতে রয়েছে, সে বিন্দুতে যেতে দেবে না । সেখানে এখন শুধু আরবের বিভিন্ন মিলিশিয়া নয়, আমেরিকা সমেত বিশ্বের অনেক সৈন্য বাহিনীর উপস্থিতিতে, নর সংহারের চেহারা, এক দীর্ঘস্থায়ী গৃহযুদ্ধের কারন হয়ে দাড়িয়েছে।
কথাটা প্রথমে তুলেছিলেন, ভারতের এক ধর্মগুরু, যাকে সুপ্রিম কোর্ট অযোধ্যা বিবাদে মধ্যস্ততায় রেখেছিলেন। অযোধ্যার মিটমাট না হলে, নাকি ভারত ক্রমে সিরিয়ার অবস্থায় নেমে আসতে পারে। সেখানে গত দু'তিন বছরে কয়েক লক্ষ শিশুই খুন হয়েছে, এই বিদেশী সমর্থিত গৃহযুদ্ধে। এ রকম ভয় দেখিয়েই, আমাদের মহামান্য প্রধান বিচারালয়, অযোধ্যার প্রশ্নে একটি রাজনৈ্তিক সমাধাণ চাপিয়ে দিয়েছিলেন।
---- কিন্তু এতে এবং কাশ্মীরের অধিকার হননে মানুষের নিরপেক্ষ  অবস্থানো কী পারলো, ভারতকে 'দুই জাতী এক দেশ ব্যবস্থা থেকে' বাচাতে। যা করা হোল, দিন যত যাবে ততই 'অনুপ্রবেশের' রাজনীতি পেছেনে যাবে এবং সেই যায়গায় এক  দেশে পরস্পরে  'বিবাদমান দুই জাতীর' বিবাদের বিষয়টি সামনে আসবে। শক্তিশালী পক্ষ দুর্বলকে যত  কোনঠাসা করতে থাকবে, ততই নিজের স্বাধীকারের প্রশ্নে মরিয়াভাবে নিজেদের সংগঠিত করতে থাকবে। সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলি ক্রমে বিভাজন হবে এবং এমন কি সামাজিক ক্রীয়াচার, দুর্গাপুজা  ঈদ ইত্যাদিতে যতটুকু পারস্পরিকতা বিদ্যমান ছিলো, সেগুলিও ভাংগতে থাকবে।
----  ইতিমধ্যে যে ইংগিত স্পষ্ট, সেই বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ট মিলিটারীতন্ত্র, দেশের প্রাচীনত্ব  যে বিন্দুতে নিকৃষ্টতায় পৌচুছে সেই বিন্দুতেই ঘাটি গারতে বাধ্য। আবশ্যিকভাবেই, উপমহাদেশে রাজনীতি আবর্তিত হতে থাকবে।প্রথমে উপমহাদেশের কাছাকাছি বিশ্বশক্তিগুলি অবস্থান নিতে থাকবে।
----- এই সুত্রেই, বংগোপোসাগর হয়ে, সপ্তম নৌবহরকে চট্টগ্রামের উপকুলে পৌচ্ছে দেওয়া হবে। ভারত-পাকিস্থানে কাশ্মীর সিমানায়, চিনের মুখোমুখি বেদেশী সৈণ্য ঢুকবে।ক্রমে দেশের প্রতিটি রাজনৈ্তিক দলগুলির মধ্যে যে যতটুকু অতি-প্রাচীনত্যের কাছাকাছি সেই নিরিখে জোটবন্দি হতে থাকবে।
ক্রমঘনিভূত এই আবর্তে দাড়িয়ে,
এই লেখকও  ক্রমে এই বিশ্বাসে উপনিত হচ্ছেন,  সংসদীয়  এবং সাংবিধানিক কাঠামোতে মানুষকে ধরে রাখর শক্তি যেমনভাবে সংকুচিত হতে থাকবে এবং এগুলির আবেদন খাটো হতে থাকবে এবং
----- পরিস্থিতির অবনতি আটকে, দেওয়ার একমাত্র এন্টিডোটে হিসেবে সাম্যবাদীরা, সাম্যের আবেদনকে এগিয়ে দিতে ব্যর্থ হতে থাকবেন
-----  ভারতবর্ষ নামক দেশটি আজ সিরিয়ার যে অবস্থা, সে দিকেই ঢলে পরতে থাকবে।
ইতিহাস যদিও নিশ্চিতভাবে   ব্যক্তি নিরপেক্ষ নয়, তবু মেনে চলতে হয়
---- সে চলে ব্যক্তির দলবদ্ধ অবস্থান সমুহের শক্তি সন্তুলনের উপরে। আধুনিতাকে যদি আন্তর্জাতীকতার আত্মা বলে মেনে চলতে হয়, এই শক্তি সামে যে যতটুকু আধুনিক সে ততটুকু আন্তর্জাতীক এবং অন্যপ্রান্তে আধুনিকতাবিহীন
প্রাচীনত্বের উপাদান বিপরীত মেরুতে সব সময় মাকরাসার জালে মতো স্বরযন্ত্রের জাল বুনে চলে,
-----    তবে নিশ্চিতভাবে সাম্যের ঘোড়াকে, তার থেকে দ্রুততায় কোন জাতীসত্বাকে আধুনিকতার   আন্তর্জতীকতার দরজায় পৌছে দেওয়ার অবিরাম ধারায় আলোক বর্তিকা হয়ে নিজেকে ভাষ্মর করে তোলার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। 
এসব সুত্রেই,
ভারত যে আজকের দিনে বিশ্ব সন্তুলনের কোন বিন্দুটাতে দাড়িয়ে, সেটাকে চিহ্নিত করতে হলে
----- একপ্রান্তে যেমন এককালে ইউরোপের গনতান্ত্রিক বিপ্লব হওয়া দেশগুলিকে এবং অন্যপ্রান্তে, বিশ্বের প্রথম সভ্যতার দেশগুলির সাথে তুল্য মূল্য খুজে পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যেতেই হবে। সেটা চলতে হবে, অখন্ড নিরন্তরতায় এবং এই তুল্যমূল্যে দেশের রাজনৈতিক অভিমুখকে সন্তুলিত করতে হবে।
সেখানে,
এই সন্তুলনগত অবস্থা এই মূল্যায়নের নিরিখে
দেখা যাবেঃ
------- প্রথম সভ্যতার অংশ দেশগুলিকে  ইতিহাসের ধারা বহনকারী  দেশগুলির  বর্তমান পরিপ্রেক্ষিত সমুহকে বিবেচনা করা হয়, এই সভ্যতাভুক্ত দেশগুলিকে মূলতঃ চারটি গ্রুপে ভাগ করা যাবে এবং এদের রাজনৈতিক অবস্তানের অগ্রবর্তীতা কিংবা পশ্চাতপদতার যে  তারতম্যটি গড়ে উঠেছে
----  সেটি মূলতঃ আর্থ-সামাজিক ব্যস্থার তারতম্য  জনীত কারনে , প্রাচীনত্ব ভেদ করে আধুনিকতার এগিয়ে যাওয়ার কারনে।
সেখানে ইউরোপের সে সব দেশকে যেগুলি অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যে গনতান্ত্রিক বিপ্লব ঘটেছে,
---- সেগুলির সাথে ব্যবস্থা হিসেবে এসব দেশগুলির তুলনা না করা গেলেও, নিশ্চিতভাবে, সেই সভ্যতার বর্তমান রাজনৈতিক-অর্থনৈ্তিক-সামাজিক সন্তলনকে
----- , প্রথম সভ্যতার দেশগুলির আভ্যন্তরিন  পারস্পরিকতা নির্নয়ের মানদন্ড হিসেবে দেখা যেতে পারেই।
---- আফ্রিকা  মনুষ্য আবির্ভাবের প্রথম মহাদেশ এবং প্রাক্ ঐতিহাসিক আফ্রিকান সভ্যতা যদি নীল নদের অববাহিকা ধরে 'মিশর' দেশে কেন্দ্রীভুত হয়ে থাকে,
----তবে স্বাধীনতাত্তোর কালে আবদুল গামের নাসেরের  মিশর কী করে এবং কেন আজকের নৈরাজ্যে নেমে এলো, এক বিপুল মুল্য দেওয়ার পরেও মিশরের মুক্তিকামী মানুষের মধ্যে সেই স্বাধিন চেতনা জন্মাতে পারলো না, যা সেই মহান দেশের পতাকাকে  বিশ্বমাঝে উড্ডিন রাখতে পারতো
জবাব সেই এক বিন্দুতেই।ধর্মান্ধতা থেকে দেশকে মুক্ত করে, নাসেরের প্রগতিবাদী ধারাকে যদি আব্দুল গামালের পরবর্তী প্রজন্মে এগিয়ে না নিয়ে যেতে পেরে থাকে
-------অবস্বাম্ভাবি ভাবেই মিশর, মুসলিম ফান্ডামেন্টালিজমকে  পরাজিত করে সভ্যতাকে এগিয়ে দেওয়ার মতো আর্থ-সামাজিক-ভাবাদর্শগত অবস্থানটিকে চিহ্নিতই করতে পারে নাই ।  নবজাগ্রত আধুনিকতা,  পেছন থেকে  প্রাচীনত্বের তাড়া খেতে খেতেই হুমড়ি খেয়ে পড়তে বাধ্য হয়েছে শেষ পর্য্যন্ত।
অন্যদিকে  দ্বিতীয় গ্রুপ হিসেবে,
ব্যাবিলিনীয় কিংবা টাইগ্রীস বা ইউফ্রেটিস সভ্যতার প্রাচিনতত্বের দেশগুলি,  যদি এখনো,
তাদের পেট্রোল সম্পদের উপরে বোম্বেটেগিরীর বিরুদ্ধে মরনপন সংগ্রাম চালিয়ে যেতে পেরে থাকে এবং চরম আমেরিকান চাপের মুখেও যদি প্রতিরোধের অস্তিত্ব বজার রাখতে পারে, তার কারন মূলতঃ দুটি বলে মনে করার কারন রয়েছে।
প্রথমতঃ
ইরাক, ইরান, লেবানন, জেরুজালেম, লেবানন  এবং সর্বপরি সিরিয়ার এব্ং এমন কী উল্লেখিত প্রাচীনত্বের প্রভাবাধীন তুরস্ককেও যদি ধরা যায়
----- মুসলিম ফান্ডামেন্টালিজমের প্রভাব বিপুল থাকলেও। বিশ্বের সব থেকে আধনিক ধর্মের প্রভাবাধীন থাকার কারনে,
----- দেশগুলির মধেয় স্বাধীনতার আবেদন তুল্য মূল্যে অধিক হওয়ার কারনে, এরা সাম্রাজ্যবাদী অধিগ্রহনের বিরুদ্ধে লড়াইকে প্রানপনে এগিয়ে রাখতে পেরেছে। এসব দেশের মনোভূমিতে তৃতীয় প্রগতির ধারা হিসেবে সমাজতন্ত্রের আবেদন যে যথেষ্ট, তা বোঝা গেলো সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলি থেকে যেমন প্রতিরোধের অভিমুখ দেখে ইরাকে সাদ্দাম হোসেন, জতটা না ধর্মীয় উঘ্রতা থেকে পরিচালিত হয়েছেন
----- তার থেকেও বেশী সমাজতান্ত্রিক ভাবনা দ্বারা পরিচালিত ছিলেন।
  প্রথম সভ্যতার তৃতীয় গ্রুপ হিসেবে ভারতকে (মহেঞ্জোদড়ো, হরপ্পার দেশ) 
যদি বিবেচনা করা হয়,
----তবে দেখা যাবে, এই দেশের মানুষের একটা  বড় অংশ যদি   আজ বিশ্বের সব থেকে পিছিয়ে পড়া ইতিহাস চেতনাকে সামনে সব রকম আধুনিকতার বিপরীত তরোয়াল ধরে থাকে তার প্রধান কারনঃ
 এখানে বিগত পাচ হাজার বছরে
------, ইতিহাসে বাতিল হয়ে যাওয়া উপাদানগুলির পুজ-রক্তটুকুও  সাফ করার সুযোগ ইতিহাস এদেশের মানুষকে দেয় নাই।তাই এদেশের মানুষ, এমন কোন ইতিহাস পায় নাই, যাকে ভারতীয় ইতিহাস কিংবা সেই ইতিহাসের অংগ হিসেবে পেতে পারতো।
----    স্বাধীনতাও এসেছে চুক্তি করে। তার পূর্বে  কোন ইতিহাসই ভারতীয় ইতিহাস হিসেবে পায় নাই।মন্ত্র তন্ত্রে বাধা ডিংগিয়ে ভারতীয় জাতীয়তা বোধটাই এসেছে, মূলতঃ গান্ধীজীর নেতৃত্বে স্বাধীণতর ডাকে
----- জাতীকে এক করার সংগ্রাম  এবং দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের কালে, বিশ্ব মানবতার মহা সংগ্রামের হাত ধরে।
আজেকের দিনে,
ভারতের সংসদীয় এবং সাংবিধানিক কাঠামোটি শক্তিশালী থাকা সত্বেও, এই দেশ কি করে,  শেষ-মেষ, 'ধর্মের ভিত্তিতে দুই জাতিকে নিয়ে-এক রাষ্ট্রের' নীতি মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারলো,
--- তার জবাব, খুজতে হবে, প্রথমতঃ  উপরের উল্লেখিত প্রাচীনত্ব,  বিভিন্নতা  এবং দ্বন্দ্বের ভেতরে, আধুনিকতার প্রভাবের তারতম্য ইত্যাদির মধ্যে ভারতের আভান্তরীন বিভিন্নতার দ্বন্দ্বগুলির ভেতরেই খুজতে হবে।
এসব দুর্বলতাকে চিহ্নিত করতেঃ
প্রথম সভ্যতার আরো দুটি গ্রুপের স্বাধীনতা এবং তার সংহতিবোধের সাথে
তুল্যমূল্যে বিচার করার চেষ্টা করলেই
জবাব গুলি এক এক করে একযায়গায় জমা হয়ে, তার একটি সংহত অভিমুখ দিয়ে দেবে।
এই দুই এর প্রথমটি যদি চৈনিক সভ্যতার প্রাচীনত্ব, আধুনিক চিনকে,
দ্বিতীয়তঃ কিউবা সমেত লাতিন আমেরিকার মুক্তিকামী সংগ্রামের
মুল অভিমুখ।
অনেক তর্ক চলতে পারে, বিতর্ক চলতে পারেঃ
সারা বিশ্বে অনেক ভাগাভাগি হতে পারে। কিন্তু সবাই এক বিন্দুতে একমত হবেনঃ
এই সুত্রেই বিবেচিত হবেঃ
অর্থনৈতিক   স্বয়ংসম্পুর্নতা এবং সাম্যের দ্বৈত রুপকে যদি স্বাধীনতা বলে বিবেচনা করা হয়, তবে মানতে হবে এই 'স্বাধীণতা বোধই, সব রকমের   আধুনিকতার উৎস। ---     এই আধুনিকতাকেই হতে হোত, আন্তর্জাতীকতার আত্মা। (ক্রমশ)



Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours