সীমন্তী দাস, লেখিকা, দুর্গাপুর:

কয়েকবছর আগে আমির খানের সিনেমা "তারে জমিন পর"দেখে চোখের জলে বুক ভাসায়নি,এমন কঠোর হৃদয়  ভারতবাসী বোধহয় একজন ও ছিলেন না।
ঈশান অবস্তির কষ্ট, ছবির পর্দায় দেখে অনেক মানুষ সোচ্চার হয়েছেন।চায়ের আসরে ,অফিস ক‍্যানটিনে টেবিল চাপড়ে সিস্টেমের গুষ্টির ষষ্টি পুজো করেছেন।

ঘরে ফিরেই ঐ তারাই নিজের সন্তানের ভালো রেজাল্টে বুক ফুলিয়েছেন অথবা তার না পারার ব‍্যর্থতাকে পাশের বাড়ির অমুক বাবুর সমান টাকা খরচ করেও কেন ফল পেলেননা,তার হিসেব চেয়েছেন সেই অবোধ শিশুর কাছে বা তার মায়ের কাছে।
"সারাদিন কি করোটা কি"?আমি কিসের কম রেখেছি তোমাদের মা ,ছেলের?
ঠিক ঈশানের বাবার মত।

ঐ অফিসের টেবিল চাপড়ানো আপনিই ,
হ‍্যাঁ মশাই,আপনাকেই বলছি।

ঠিক সেই সময়েই সিনেমার মত একটা ঘটনা ঘটে চলছিলো এই দুর্গাপুরের এক ঈশানের সঙ্গে।নামী স্কুল পাগল বলে তাড়িয়ে দিল তাকে।বাড়ির লোকের অভিযোগ অনুযোগের তলায় দমবন্ধ ঈশানের মায়ের কাছে ডিসলেক্সিক বা ডিসলেকসিয়া একেবারেই নতুন শব্দ।সে ছেলেকে বুকে চেপে পাখির ছানার মত আঁকড়ে রাখে ,পৃথিবীর সব ঝড় ঝঞ্ঝা থেকে।
এমন সময় এক নিকুম্ভ স‍্যারের খোঁজ পায় সেই মা।এক ঝড় বাদলের দিনে সেই স‍্যার আসে তার বাড়িতে ।
তার ছেলেকে অনেক বাজে কথা বলে।
ও লেখাপড়া পারেনা।
মার ভীষন রাগ হয়।
তাঁর কথা গুলো গায়ে যেন হুলের মত ফোটে।
লোকটা ভীষন খারাপ।

সেই রাতে ঐ মানুষটার খারাপ কথা গুলো বারবার ভাবতে ভাবতে একটা প্রশ্নই মাথায় আসে,
"ওনি,কেন ,কিসের উদ্দেশ্যে আমার ছেলেকে খারাপ বললেন?
ঐ এক কাপ চা ছাড়া কি দিয়েছি ওনাকে আমি?কোন চাঁদা চাননি, মিনিমাম ফি।
তবে?

আবার যাওয়া সেই মানুষটির কাছে।সমস্যাতো বললেন।উপায় বলুন।পথ দেখান।

এক মুখ হাসি নিয়ে এগিয়ে এলেন একজন নয়,অনেক  নিকুম্ভ স‍্যার,ম‍্যাডাম।যারা এই শহরেই থাকেন‌। শুরু হল ঈশানের নতুন পথ চলা।মা জানতে পারলো লেখাপড়ার সমস্যা হল ডিসলেকসিয়া।এরমধ্যে অক্ষর চেনার অসুবিধা, অঙ্কের ফিগার চেনার অসুবিধা ও সাথে অন‍্যমনস্কতা।
"স্পেশাল ইনস্ট্রাক্টর" ছাড়া এই বাধা কাটানো অসম্ভব।নিকুম্ভ স‍্যারের দল ঐ ঈশানের মাকে বড় বড় সেমিনারে নিয়ে চললো।যেখানে আরো আরো মানুষের সাথে পরিচিত হল মা ও ছেলে।
ভয় পাওয়া বা গুটিয়ে থাকা নয় চ‍্যালেঞ্জ অ্যাকসেপ্ট করলো তারা।
দৃষ্টি স্থির করতে ঘরে টি ভি কানেকশন বন্ধ হল।ঘড়ি ধরে শুরু হল টার্গেট প্রাকটিস।ব‍্যাটে বলে সংযোগ।সঙ্গে ডায়েট।
এসবের মধ্যেই চলে গেল চারটে বছর।
ঈশানের পাহাড় একটু একটু সরছে।ছবি আঁকার পরীক্ষায় যে আজ রাজ‍্যে নাকি দশ নম্বর ।
বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড এ জাতীয় স্তরে সে।
নিজের গতিতে এগিয়ে চলেছে সে।
সারাদিন কুকুর, বেড়াল,মহাকাশ নিয়ে তার জগত।
উচ্চারণ এখনো অস্পষ্ট।বাঙলা এখনো অধরা।
লড়াই চলছে।
কাল  "তারে জমিন পর" দেখে বাস্তবের ঈশান তার পুরানো খাতা দেখতে চায়,সে এই সমস্যা পেরিয়ে এগোচ্ছে, এবার সে নিকুম্ভ স‍্যার হতে চায় তার গৌতম মামা শম্ভু মামার মতো।

(স্টারের কর্নধার শ্রী গৌতম ভট্টাচার্য্য ও সাহসের কর্নধার শ্রী শম্ভুনাথ জাজোডিয়া)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours