সীমন্তী দাস, লেখিকা, দুর্গাপুর:

ছোট্ট মেয়েটার হাতের মধ্যে আঙুল ভরে হাতের পাতাটা খুলতেই লাল টকটকে রঙ যেন গোলাপ পাপড়ি।কি সুন্দর লম্বা লম্বা আঙুল।একটু জোর করেই ওটা নিজের গালে বুলিয়ে নেওয়া।মাস কয়েক গেলেই বড় বড় নখ,সাবধানে কাটো,ইস্,গালটা কতটা কেটেছে রে।
এই হেন আঙুলসহ হাত ও বড় হয়।তাতে শিশুবস্থা থেকে বার্ধক্যও শেষ চিহ্ন  থেকে যায়।
এই আঙুল নিয়েই দু চার কথা।
হাতের পাঁচ আঙুল সমান হয়না।বড়দের এই কথার মধ্যেই ছোট বেলায় শেখা জীবন শিক্ষা।সব মানুষ সমান না।কেউ বেঁটে,কেউ মোটা,কেউ রাগী কোন হাসিমুখ।তাই হাতকে পরিবার ভেবে,আঙুল নিয়ে খুব মজাদার খেলা ছিল, পেন দিয়ে মুখ এঁকে বাবা,মা,দাদু,ঠামি,আর আমি।ডান হাত আমার পরিবারের বাঁ হাত পাশের বাড়ির।একা একা বেশ মজার খেলা।
টিভি, মোবাইলের আগের যুগের বাচ্চারা যারা কুপি বা লন্ঠনের আলোতে বড় হয়েছে তারা রাতের দেওয়ালে আঙুল ভেলকিতে হাতি,ঘোড়া,কুকুরের ছায়াবাজির এক মোহময় জগতের কথা জানে।
বড় হলে বৃদ্ধাঙ্গুল,মধ‍্যমা,তর্জনী, অনামিকা, কনিষ্ঠার সাথে থাম্ব,মিডিল ফিঙ্গার, ইনডেক্স,লিটিল ও পড়তে হত,ছবিতে চেনো মানবদেহ  বইতে।
এই মধ‍্যমা আঙুলটি কেমন বাবা গোছের।তাই একটু গম্ভীর।
তখন আঙুলের বারো,সেই ফর্সা লিকলিকে আঙ্গুলের জন‍্য একটা শাঁখের আংটি এসেছিল রথের মেলা থেকে।দাতা বয়সে খানিকটা বড় হওয়ায় রিং ফিঙ্গারের মাহাত্ম্য সে জানতো।কিন্ত্ত বারোর লিকলিকে রিং ফিঙ্গারে ওটা ঢিলা।তাই অগত্যা মধ‍্যমাতে ঐ ছোট্ট লাল পাথর বসানো শাঁখের আংটি বেশ কয়েক বছর নিজের অধিকার নিয়ে বসে রইলো।
সময়ের নিয়মে সবই আজ স্মৃতি।কিন্তু তা অবশ্যই সুখের।
জীবন জানালো অদৃশ্য অঙ্গুলি হেলনের মহিমা।জীবনের বাঁকে ঐ অদৃশ্য হেলনকে ভয় না পায় এমন মহাত্মার দর্শন আজও মেলেনি।
বছর কয়েক আগে *আধারের**দৌরাত্ম‍্য জানালো পাঁচ আঙুল কতখানি দরকারি।
বৃদ্ধ মানুষ, আঙুল বেঁকে গেছে সেই আঙুলকে সোজা করে পারলে হাত থেকে ছাড়িয়ে প্রাণান্তকর চেষ্টা আমি শ্রী অমুক।আমি না হলে ৭১এর লিস্ট তৈরী হবেনা।তোমার ছেলেপুলে কে খাঁচায় ভরে দেওয়া হবে।
এই আঙ্গুলে আঙুলে ছোঁয়াতে আজ আর মন জাগেনা।বুকের মধ্যে সেই ধুকপুকানিও ইতিহাস।হাত ধরেই হ‍্যাচকা টানে সিধা সিক্স প‍্যাক।
আঙুল তাই আজ একটা প্রয়োজন।
নেই ভাবের বুড়ো নেই আড়ির কড়ি।
তর্জনী তুলো সেই সবুজ পোষাকের কেউ আর বলেনা,রক্ত দাও।
মধ‍্যমা যে ছিল বাবা গোছের।সে আজ মিডিল ফিঙ্গার।সে নাকি আজ বড়সড় গালাগালি।
জন জীবনে ঐ বিশ্বায়নের পাঞ্চ কখন থেকে যেন  হৃদয় নামক ঐ বলটাকে মিডিল ফিঙ্গারের ডগায় নাচাচ্ছে।





Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours