শুভ্রা গুপ্ত, ফিচার রাইটার ও আইনজীবী, বারাসাত, কলকাতা:

সপ্তাহ শেষ করে ফিরে এলো আরেকটা রবিবার। কয়েকটা কর্মক্লান্ত দিন শেষে আরও একটা ছুটির দিন, আবার পরিবারের সাথে কাটানো, টুকিটাকি গৃহকাজ, আনন্দ হুল্লোড়, গোছগাছ করতে করতে কাটিয়ে দেওয়ার দিন, ফাঁকে একটু শ্বাস নেওয়া। এই দিনটার জন্য হয়তো আমরা অনেকেই অপেক্ষা করে থাকি। আমি, আপনি ও সে ......... । একটু আনন্দ, যেটা না থাকলে জীবনটা হয় অর্থহীন অবসাদের।

"অবসাদ", এই শব্দটা আগে বেশি পরিচিত ছিল অবসরপ্রাপ্ত জীবনের কাছে, রিটায়ারমেন্টের পূর্বের ব্যস্ততম দিনগুলো যখন এক ঝটকায় শেষ হয়ে যেত তখন দিনগুলোও যেন অখন্ড সময় নিয়ে পরিহাস করতো, রোজকার না দেখা সাংসারিক রোজনামচায় নতুন করে দেখে অরুচি ধরলে, ঘিরে ধরতো অবসাদ। সঙ্গীর জন্য অপেক্ষা করে করে বিরক্ত হলে জীবনে আসতো এক বন্ধুর প্রত্যাশা, যে কি না অবসাদে একটু আলো দিয়ে মুক্তি এনে দেবে।

আর এখন অনেক ব্যস্ততা, মিডিয়া, খেলাধুলা, ইনডোর আউটডোর, এন্টারটেইনমেন্ট পেয়েও আট থেকে আশি প্রতিটি দিনেই একটা না একটা সময় ঠিক একাকী চুপ করে যায়, ভুগতে থাকে অবসাদে। কেন হয় এমন বলতে পারেন?
জীবন, আনন্দ ও অবসাদ ... সব পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত। দেখা যায় যে আমাদের প্রতিটি মানুষেরই আলাদা আলাদা মন ও সেই মনের নিজস্ব ভাবনাচিন্তা আছে, যা কি না একে অপরের থেকে আলাদা। তাই জীবন ভাবনা, খুশি, হাসি, দুঃখ, অবসাদও একে অপরের থেকে আলাদাই হওয়ারই কথা।

দেখা যায় আমরা হয়তো শত আনন্দ উচ্ছ্বাস ব্যস্ততম জীবনযাপন করার মাঝেই কখনো কখনো খুব একাকীত্ব বোধকরি কিম্বা জীবনে পাওয়া না পাওয়ার হিসেব গুলো নিয়ে ভাবতে ভাবতে এক বিষাদিত ভাবনায় ডুবে যাই। তখন চুপ করে থাকতে, একা থাকতে ভীষণ ভাল লাগে, কোন কাজ বা কথা বলাও তখন বিরক্তিকর লাগে। এই পরিস্থিতিই হল অবসাদময় জীবনের সূত্র, অবসাদের মাত্রা বেড়ে গেলেই তা পরিণত হয় মানসিক রোগে। তাই সাবধান হওয়া উচিত আগেই, অবশ্য যদি সেটা অনুভূত হয়।

জানেন, আমার মতে যৌথ পরিবার ভেঙে ছোট পরিবারে গমনও অনেকটা অবসাদের কারণ। কেননা যৌথ পরিবারে একাত্মতা একাকীত্ব আসার আগেই মৌনতা ভঙ্গ করতে বাধ্য করতো, যা কিনা ছোট পরিবারে সময় অঢেল হওয়াতে আগুনে বাতাস দেওয়ার মত বাড়িয়ে দেয়। কমাতে পারেনা একটুও।

এই সময়ে যদি নিজেকে ডাইভার্ট না করা যায়, তাহলেই সমস্যা! আমি কত কম পেলাম, কে বেশি পেলো এই ভাবনাই ক্ষতি করে বেশি। এমতাবস্থায় কোনো সহানুভূতিশীল হাত এগিয়ে এসে হাতদুটিতে ভরসার স্পর্শ দিলে ভাল লাগে খুব, কথা বলতে চায় মন। বলুন বন্ধুরা, মন খুলে কথা বলুন, অবসাদগুলো ভাগ করে নিন, ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে এগিয়ে চলুন।
হয়তো সব অভাব কখনোই মেটে না, কিন্তু একটু ভাল তো থাকা যায়। তাই না?

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours