রিয়া ভট্টাচার্য, লেখিকা, খড়্গপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর:

জনবসতি থেকে একটু দূরে, যেখানে দিগন্তবিস্তৃত মাঠটার মাঝখান দিয়ে চলে গেছে সমান্তরাল রেললাইনের দুটি পাত,নিঝুম রাতের নিঃশব্দ অবসরে কখনো গিয়ে বসেছ সেখানে? শুনেছো বাতাসের চুপিচুপি শিৎকার আর বোবা কান্নার শব্দ?স্তব্ধীভূত হিমেল বাতাস যখন কানের পাশ দিয়ে আলতো ছুঁয়ে বয়ে চলে,শিরদাঁড়া ভেদ করে কামড় বসায় মজ্জায়,তখন কান পেতো,শুনতে পাবে মর্মন্তুদ হাহাকার।
সারাদিনের শত বঞ্চনা,হনন,আর্তনাদ বহন করে উত্তুরে বাতাস নেমে আসে মাঠের পরে,একলা অন্ধকারে চলে তার নৈঃশব্দিক হাহাকার,আত্মবৎ কোরো তার শীতল স্পর্শের অভ্যন্তরীণ নোনাজল, শুনতে পাবে না বলা অনেক গল্প,বাস্তবের চাবুকের আঘাতে রক্তাক্ত হওয়া ইতিহাস।
গ্রামের ওই ষোড়শী মেয়েটির গল্প শুনেছো?দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত পরিবার যাকে বিবাহের নামে বিক্রয় করেছিল উত্তরপ্রদেশের প্রত্যন্ত গ্রামে,নিত্যদিনের খাটনির পর রাতে স্বামী ছাড়াও পরিবারের অন্যান্য পুরুষ সদস্যদের কামনা মেটানোর পর রাত্রি গভীরে সে উঠে আসে ছাদে।হিমেল বাতাসে মেশে চোখের জল,যোনি বেয়ে নামে টাটকা রক্ত!!
ওই বছর সাতাশের ছেলেটার গল্প শুনেছ?জীবনে ভালোবাসা চেয়ে রক্তাক্ত হয়েছে বারবার,সকলকে বটগাছ হয়ে আশ্রয় দেওয়া ছেলেটা আজ তিলে তিলে ধ্বংস করে নিজেকে।রাত্রি তার জন্য শান্তির ঘুম বয়ে আনেনা,আনে অব্যক্ত গোঙানির শব্দ আর নিস্তব্ধ নোনাজল।
এ তো মাত্র দুটো গল্প,দুই বিপরীত মেরুর বাসিন্দার কোথায় এক বিন্দুতে মিশে যাওয়া কাহিনী। ওই যে বলে দুটি সমান্তরাল পথ এক হয়না ঠিকই,কিন্তু ছুঁয়ে যায় একে অপরকে,অচেনা মোড়ের মুখে।
বাতাসের মাধ্যমে চিঠি পাঠায় এরা,যদি কেউ কোনোদিন খুলে পড়ে এই চিঠি,দেখতে পায় চোখ দিয়ে শুধু জল নামেনা,কখনো নামে রুধিরধারাও।
বাতাস বহন করে এদের হৃদয়ের গোপন বার্তা,কখনো নিজেকে একাত্ম কোরো প্রকৃতির সাথে,শুনতে পাবে বাতাস গল্প বলে,তারও বুক ফাটে।
হ্যাঁ বাতাস কাঁদে...

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours