রিয়া ভট্টাচার্য, লেখিকা, খড়্গপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর:

গণতন্ত্র শব্দের প্রকৃত অর্থ কি! যা জণগণের অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করে তাই? নাকি যা শাসকের চাবুকের তলায় রক্তাক্ত করে মানবতা, তাকেই আমরা গণতন্ত্র বলে থাকি! চলুন দেখে নেওয়া যাক!

খেটে খাওয়া যে মেয়েটি মাথায় ইঁটের বোঝা বয়ে পরিবারের মুখে দুমুঠো অন্ন তুলে দেয়, সে বোঝে না গণতন্ত্রের অর্থ কি! ঠিক কতটা স্বাধীনতার বিনিময়ে   চোকানো যায় ক্ষুধার্ত পেটের দাম! তার কাছে রাষ্ট্র হলো সেই মহাজন, যে হাড়ভাঙা খাটিয়েও মজুরি না দিয়ে দৈহিক শোষণের চেষ্টা চালায়। তার কাছে রাষ্ট্র সেই উর্দিধারী গুণ্ডা, মহাজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে গিয়ে যাকে চেয়ারে বসে নোটের তাড়া গুনতে দেখেছিলো সে; ইজ্জতের ঘুষ! তার কাছে গণতন্ত্রের সংজ্ঞা চাওয়া বৃথা। এখানে বিচারের বানী নিভৃতে কাঁদে।
যে বেকার ছেলেটি দিনান্তে ভাতের থালায় মেখে খায় স্বজনের অভিযোগ, বাবার কাছে সন্তান ধীরে ধীরে হয়ে ওঠে আস্ত একটা বোঝা। কিলবিল করে ধেয়ে আসা সমাজ নামক সরীসৃপ আস্তে আস্তে গিলে খায় সম্পর্কগুলোকে, সুযোগ সীমিত হয় মুষ্টিমেয় রাজনৈতিক ঝাণ্ডাধারীদের জন্য। ক্লান্তিতে ভেঙে পড়া কাঁধ গণতন্ত্রের মহিমা বোঝেনা, বুঝতেও চায়না। যেখানে প্রতিরাতে বেঁচে থাকা ঝুটো হয়ে যায় সেখানে গণতন্ত্র মূল্যহীন।

যে ভ্রুণটি কন্যা হওয়ার অপরাধে উপড়ে ফেলা হয় সমূলে, ড্রেনে পড়ে থাকা মনুষ্যত্বের শব খুবলে খায় শেয়াল - কুকুর। একতরফা অভিসম্পাত শেষে দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে দরিদ্রা বধূর লাশ, ভালোবাসার অপরাধে পেটে তলোয়ার ভরে শুয়ে থাকে যুগল। যে দেশে সবচেয়ে কায়েমি খাদ্য ধর্ম, আখের গুছানোর জন্য যে কেউ এখানে খেলে যেতে পারে ধর্মের তাস। যে দেশে প্রতিবাদ হলো রাষ্ট্রদ্রোহিতা, বিরোধী স্বর "পাকিস্তানী" সে দেশে গণতন্ত্রের উৎযাপন হাস্যকর বৈকি!

আজ ৭১ তম গণতন্ত্র দিবস, পতাকা তোলা - মাইকে চালানো বেশ কয়েকটি দেশাত্মবোধক গান আর ইনবক্সে শেয়ার করা রাজ্যের ওয়ালপেপার ; এতেই যেন থেমে থাকে না উৎযাপন। গণতন্ত্র যেন নারী নিরাপত্তার কথা বলে, আইনি গেরোয় বছরের পর বছর ঝুলিয়ে না রেখে ধর্ষকের যেন চুড়ান্ত শাস্তি হয় অপরাধ প্রমাণের সাথে সাথেই। বেকারত্ব সমস্যা, মূল্যবৃদ্ধি কমিয়ে জণগণ যেন দুবেলা দুমুঠো খাদ্যের নিশ্চয়তা পায়, স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়াতে পারে সর্বত্র। ঠিক যেদিন ধর্মের নামে সওদা বন্ধ হয়ে প্রকৃত ঈশ্বরের সাধনা শুরু হবে দেশে," রাজনীতি মানেই নোংরামো নয় " বদলাবে ধারণাটা, সমরের সঙ্গে সালমাও কলার তুলে নিজের অধিকার দাবী করতে পারবে ; ঠিক সেদিন হবে প্রকৃত গণতন্ত্রের উৎসব। ততদিন নাহয় দেখনদারি চলুক, প্রকৃত সকাল আসতে যে এখনো অনেক দেরী। যে সকালে ভয় নেই, নিরাপত্তাহীনতা নেই, নারীজন্ম যেখানে বিপদসংকুল নয়। ততদিন অপেক্ষা করি, গণতন্ত্রকে ছিঁড়ে খাক রাজনীতির পাহারাদারেরা।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours