জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা, দুর্গাপুর:

আজ  ৭১ তম প্রজাতন্ত্র দিবস। ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন এবং পতাকা তুল্লেন । রাজ্যে রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রীরা অনুরুপ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ৬৯ বারের মতো কাজটার আনুষ্ঠানিকতা শেষ করবেন সারাভারতবর্ষের শ্রমিক কর্মচারীরা একদিনের সবেতন ছূটী ভোগ করবেন। অন্যদিকে,  পিননিক সিজিনের শেষ দিনটা এভাবেই আরো ছয়টা দিনের মতো শেষ হবে।
ক্রমে অন্যান্য অনুষ্ঠানগুলি ফিকে হয়ে  গেলেও, বিদ্যালয়গুলির ছাত্র ছাত্রী,  শিক্ষক শিক্ষিকা এবং অভিবাবকরা এই দিনটিকে সামনে রেখে সামাজিক একাত্মতা প্রতিষ্টার সংগ্রামে একাত্ম হওয়ার শপথ  নিতেন।এই কিছুদিন পূর্বেও। দুর্গাপুর শিশু আকাদমি এখনো এই কর্মসূচীকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে কিন্তু প্রচন্ড প্রতিকুলতাকে মাথায় নিয়েই সেটা করতে হচ্ছে।

আজ যখন 'দুই জাতী - এক রাষ্ট্র' তত্বকে সামনে এনে সংবিধানকেই তুলে নেওয়ার মরিয়া চেষ্টা শুরু হয়েগেছে,
---- কংগ্রেস সহ অধিকাংশ বিরোধী দল  যখন এই নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার কথা ঘোষনা করেছেন,
নিশ্চিতভাবে বুঝতে হবে,
কিছুতেই কিছু করা যাবে না, যত সময় কংগ্রেস দল নিজে,  তিনটি মহা বিপ্লবের আলোকে স্বাধীনতা সংগ্রামের কালটাকে পুনর্মূল্যায়ন শুরু করে সে কালের ত্রুটীগুলির মূল কারনকে চিহ্নিত করতে অস্বিকার করেন।
----- এই মুল্যায়নের সাথে সাথে,  প্রজাতন্ত্রের সাধারন অভিমুখটিকে শক্তিশালি করতে গনশিক্ষার কী ব্যবস্থা কী হয়েছিলও এবং এখন কী করা দরকার
সে সম্পর্কেও নিশ্চিত হতে হবে।
 স্বাধীনতা কিংবা প্রজাতান্ত্রিক কাঠোমোর মধ্যে যে সব ভাব কিংবা সত্যকে ধরে রাখার চেষ্টা হয়েছিলো, সেগুলিকেই যখন একটা বাহ্যিক আবরন কিংবা ফ্যাসাড হিসেবে দেখিয়ে সত্যেকে খোজার চেষ্টা হচ্ছে, তখন সেটাকে
---- প্রবল প্রতিপক্ষ এসে ভাষিয়ে নিয়ে  যাবেই।
দুই

শুনেছিলাম ভাস্কোডাগামা, ভারত আবিস্কারের পর
এই দেশকে এক বিচিত্র দেশ বলে উল্লেখ করেছিলেন।
--- পরে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী যখন আঙ্গুলের চুটকিতে বাংলা বিহার আরে
উরিষ্যার দখল নিলো
---, আর  সাহেবদের চামড়ার রঙ্গে  বিমোহিত হয়েই দেশীয়রাই , টুকরো টুকরো হয়ে থাকা  দেশটাকে,মাথায় বয়ে বয়ে বিলাতিদের পায়ে, সমর্পন করে দিলেন
তখন ক্লাইভ, হেস্টিংসরাও নিশ্চিত, ভারতীয়দের বদান্যতায় বিমোহিত হয়েছিলেন।এইভাবেই,
---   শিরাজ এবং তার বীর সেনাপতি মোহনলাল,, টিপু এবং রঞ্জিত সিং ইত্যাদিদের সংগ্রাম এবং পাহারে জঙ্গলে বড় বড় আদিবাসি বিদ্রোহ সত্বেও
---- সেই একই স্বরযন্ত্র এবং ক্লিবত্তের মুখে আসুমদ্র হিমাচল,  ভারত চলে গেলো বিদেশীদের হাতে,  ইতিহাসের নেতীবাচকতার ধারা ধরেই।
----ক্রমে, ইংরেজ শাসনের ফাকফোপর ধরেই,পাশ্চাতের  আলোর ঝিলিক ধরেই, সিপাহি বিদ্রোহের কিছু সময় আগে থেকে অতীতের টোল শিক্ষার বিপরীতে যুক্তিবাদী শিক্ষার বীজ পরতে লাগলো, অতি অতীতের অনুমান ধর্মীতের মাটিতে।ব্রাহ্মন্যবাদের ভেতর থেকেই যখন একটা অভিজাত সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটলো। এই শ্রোতের সাথেই বিলেত থেকে আসা কেরানীতন্ত্রের মিশ্রনে একতা শিক্ষিত 'মধ্যবিত্ত' সম্প্রদায়ের জন্ম হোল।অন্য দিকে সাধু সন্নাসীদের একটা  অংশ মন্ত্র-তন্ত্র সর্বস্যতা থেকে বেড়িয়ে আসতে
শুরু করেছিলো। এদিকে, প্রজাতন্ত্রের আলোকে, হিন্দুধর্মেও উদারবাদের যেমন বিকাশ ঘটেছে, তেমনি অন্যপ্রান্তে, বৌদ্ধ-ধর্মকে ঘিরে দলিতদের মধ্যেও একটা জাগরন শুরু হয়ে গিয়েছিলো - অনেক সংস্কারকের হাত ধরে । সেখানে মহামতি ফুলের মতো শিক্ষকের জন্ম হয়েছিলও। বোধহয় প্রথম মহিলা শিক্ষক।অন্যদিকে মানতে হবে, খৃষ্টান পাদ্রীদের চেষ্টাতেও এদের মধ্যে শিক্ষার আলোক ঢুকতে শুরু করেছিলো।
 এদিকে রামকৃষ্ণ যেমন কৃষ্ণ ও কালিকে এক করে দিয়ে দেবতাকে মানুষের কাছে নিয়ে এসেছিলেন। সেখান থেকে বৈষ্ণব আন্দোলন ইত্যাদি। ভারতের ইতিহাসে প্রথম বিবেকানন্দ বল্লেন, 'চর্মকার আমার ভাই।
এই ভিত্তির উপরেই, যেমনভাবে ভারতলুন্ঠনের অংগ হিসেবে, রেল লাইন বিস্তৃত হোল,টেলিফোন লাইন বসলো এবং জলপথে ভারত ইউরোপের সংযোগ দৃঢ় হোল্‌ সংস্কার আন্দোলনের ভিত্তি স্থাপিত হয়ে গেলো।হাতীয় কংগ্রেস গঠিত হোল, কিন্তু, সে ব্রাহ্মন্যবাদ থেকে বেড়িয়ে আসা অভিজাতবর্গ এবং কেরানীতন্ত্র দ্বারা আচ্ছাদিত থাকায়
------ ভারতীয় অতি পশ্চাতপদতার শেকল ছেড়ে বেরিয়ে আসতে পারলো না।পশ্চাত্য শিক্ষার আলোতে কংগ্রেস আলোকিত হলেও, তার গনভিত্তির যায়গাটি  আর এস এস মার্কা মানুষ, কেরানী এবং ইংরাজী ওয়ালাদের হাতেই ছিলও। কিছু স্বাধীনচেতা ব্যক্তিত্ব এতে আসলেও তাদের ক্ষমতা ছিল না আভ্যন্তরীন স্থবীরতাকে ভেংগে দিতে পারতো।যাইহোক,এর মধ্যেই, আদিবাসি বিদ্রোহের সাথে  কৃষক বিদ্রোহের নিরন্তরতা যুক্ত হওয়ায় যেঁ প্রানচঞ্চলতা এসেছিলো, সেখানে বিপুল গতি এলো অক্টোবর বিপ্লবের পর। এদেশেও এর প্রভাবে,  কৃ্ষক বিদ্রোহের পাশাপাশি‍ শ্রমিক আন্দোলন এবং তার সাথে সাথে 'ওয়াহাবি' আন্দোলন, খিলাফত আন্দোন ইত্যাদি আন্দোলনকে কিছুটা গনতান্ত্রিক রুপ দিলেও,জনশ্রোতে ভাগাভাগি থেকেই গিয়েছিলো। কংগ্রেসের মুল শক্তিটা  মুলতঃ হিন্দু জমিদারদের হাতেই ছিল।এইভাবে, ব্রাহ্মন্যবাদের শেকরে বসেই যেঁ এই আন্দোলন শক্তি যোয়ার করেছে
------ তার উদাহারন একটাই। 'জনগনমন' প্রজাতন্ত্রের মূলমত্র নিদৃষ্ট হলেও, দিব্যি এরা, স্বাধীনতার পরেও, 'বন্দেমাতারম' লাগিয়ে কংগ্রেসের ভেতরেই, আর  এস এস এর ভিত্তি নির্মান করেছে। যুগের পর যুগ । মহাত্মা গান্ধী, নিশ্চিতভাবে  ভারতকে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে এক করার চেষ্টায় , সফলতা পেয়েছেন নিশ্চই, কিন্তু  কমিউনিষ্ট  বিরোধীতা, দ্বিতীয় যুদ্ধে স্তালিন পতনের পতাকা হাতে নিয়ে,
এই একতা নির্মান সম্ভব ছিল না।
এই যখন পরিস্থিতি, নেহেরু কার্য্যতঃ বারুদের স্তুপে বসে সরকার চালিয়েছিলেন। কংগ্রেস আন্তর্জাতীক লাইনে, সোভিয়েতের দিকে, ভেতরের লাইনে কমিউনিষ্ট বিরোধী এবং 'জনগনের' বিপরীতে 'বন্দেমাতারম' পক্ষে। এই কলমের লেখক নিজ চোখে দেখেছেন, এই শ্লোগানটাকে ব্যবহার করেই, ওদের মারহাট্টা সমর্থক  মুসলিমদের দোকান পাট এবং ঘর বাড়ীতে লুট করতে দেখেছি।
শেষ পর্য্যন্ত আমরা স্বাধীনতা পেয়ে গেলাম, জনগনমন এবং রবীন্দ্রনাথের মহাআনবিক সত্বাকে সামনে রেখে প্রজাতন্ত্রিক সংবিধানো আমরা গ্রহন করলাম। মহাত্মা গান্ধীকে জাতির জনক হিসেবে  মানুষ মেনে নিলো। সেখানেও কোন ভূল ছিলো না। কিন্তু চিনের মতো একতা বিপ্লবকে আটকাতে গিয়ে, প্রজাতন্ত্র নির্মানের সাথে সাথেই তার মৃত্যুর বীজ বপন করে গেলেন। সামাজিক দ্বন্দ্ব হিসেবে, বিশ্বপুজির মৃগয়া যেমন বানিয়ে দিলেন দেশকে, তেমনি দেশকে এক করতে গিয়েও, ব্রাহ্মন্যবাদকে আরো শক্তি যুগিয়ে গেলেন। দেশটাকে ভেতর দিক থেকে আরো ভয়ংকর করে দিয়ে গেলেন।  আর সেই অস্ত্র সর্বপ্রথম তার উপরেই প্রয়োগ করা হোল। প্রথম প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপনের পূর্বেই নাথুরামেরা তাকে হত্যা করলো।

তিন ।

পূর্বের এক লেখায় উল্লেখ করেছিলাম,
প্রজাতন্ত্রের এক একটি অধ্যায় রয়েছে।উৎপাদনের সাথে বন্ঠনের সমতার হাত ধরেই প্রজাতন্ত্র এগিয়ে চলে, জাতীয়তার বিস্তারের সাথে সাথে। ইউরোপে এই বিস্তারের সাথে সাথে জ্ঞান সত্যার যেমন এবং যতদিন বিকশিত হয়েছে তেমনি জাতীয়তার সাথে সাথে প্রজাতন্ত্র বিকশিত হয়েছে।
চিন দেশে স্বাধীনতা সংগ্রাম যেহেতু গনমুক্তির সাথে যুক্ত ছিলো সেকারনে,
এই মুক্তির সংগ্রামের সাথে সাথেই ভেতর থেকেই জাতীয়তা এবং প্রজাতন্ত্র ক্রমাসগত বিকশিত হয়ে আন্তর্জাতীকতার পথে মুক্তির সর্ত খুজে পেয়েছে।
চিন এখনো প্রজাতন্ত্রে বিরাজমান। কিন্তু উন্নত বন্ঠন এবং গন শিক্ষা উচ্চমানে থেকে যাওয়ার কারনে
------- সেখানে জাতীয়তা এক বিপুল গতিতে  বিকশিত হয়ে, প্রজাতন্ত্র সেখানে এতো উন্নত মানে উঠেছে, যে জাতী অনেকাংশে সমাজতন্ত্রের কাছে কাছে পৌছে গেছে।

চার।

ভারতে নেহেরুর মৃত্যু এবং ইন্দিরা জমানায় অর্থনৈ্তিক সংহতির কাল শেষ হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে, যেমনভাবে উৎপাদন এবং বন্ঠনের সামঞ্জস্য  ভেংগে গেছে
----- তেমনভাবে জাতীয়তা দুর্বল হয়েছে, সাথে সাথে প্রজাতন্ত্র। যদি মেনে চলা হয়, বিশ্বায়ন যদি চিনের ক্ষেত্রে আশির্বাদ হয়ে গিয়ে বিশ্বয়করভাবে উন্নয়ন এবং শিল্পায়নের কারন হয়ে থাকে,
---- কিন্তু ভারতের ক্ষেত্রেম ভারতীয় শিল্প, প্রযুক্তি, প্রযুক্তি শ্রমিক এবং দেশীয় গবেষনার বারোটা বাজিয়ে, দেশে দাসত্ব  নামিয়ে এনে থাকে এবং তার প্রতিবিম্ব হিসেবে ভারত দেশ এখন নারীদের জন্য সব থেকে বিপদজনক দেশ হিসেবে
বিবেচিত,
---- তার প্রধান কারন বন্ঠনে সন্তুলনহীনতার কারনে, জাতীয়তার অতল যাত্রার সাথে সাথে প্রজাতান্ত্রিক সত্বার বিনাস।

একেই বলে সমাজ বিজ্ঞান। অন্যান্য বিজ্ঞান যখন একটি নিদৃষ্ট নিয়মের মধ্যেও কতকগুলি ফরমুলায় চলে। সমাজ বিজ্ঞান, কিন্তু একই আইনে চল্লেও, চলার ঢ্যারায় কোন নিদৃষ্ট ফরমুলায় চলে না।
------ এখানে, জাতীয়তা বিকশিত হয়ে আন্তর্জাতীকতায় পৌছুয়, প্রজাতান্ত্রিক সত্বার বিকাশের সাথে সাথে। প্রজাতন্ত্র এক থেকে উচ্চতর ধাপে যেমনভাবে উঠতে থাকে, তেমনভাবে জাতীয়তা
----- আবার পুরো নীতিটাই এগুয়,উৎপাদন এবং বন্ঠনের সন্তুলনে
এখানেই আস সেই গুরুতর প্রশ্নটা; সেই রাজনৈ্তিক দলটির বা দলগোষ্টির দায়,যারা জাতীকে, ধর্মীয় ফ্যাসিবাদ  থেকে রক্ষা করবে, সেই দলের
'মতাদর্শগত অবস্থান। (ক্রমশঃ)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours