রিয়া ভট্টাচার্য, লেখিকা, খড়্গপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর:

#সেই_মেয়েটা শূন্য চোখে আকাশপানে অন্ধকার খোঁজে,ক্ষয়িষ্ণু বুকে ভরে রাখে প্রলয়সলিল।বয়স মাত্র সতেরো, কিশোরীমনের অমলিন উচ্ছ্বাস, প্রথম প্রেমের স্বপ্নঘোর ছুঁয়ে যায় না তাকে,প্রতিরাতে পরিবর্তিত হয় প্রেমিকের চেহারা।হ্যাঁ বিক্রি হয় সে,পঙ্গু সমাজের লোলজিহ্বার স্বাদ মেটাতে দেয় আত্মাহুতি,তবেই গ্রাসাচ্ছাদন জোটে পাশের ঘরে শুয়ে থাকা মুমূর্ষু বাপ আর নাবালক ভাইয়ের,মা পালিয়েছে আরেকজনের সাথে,দায়িত্ব এড়িয়ে ভালোবাসার।তার মুখের একচিলতে হাসির কাছে হাজার স্বর্ণকারাগার  ম্লান লাগে আমার।

#সেই_ছেলেটা মানুষ মারে কুকুর বেড়ালের ন্যায়,সমাজ তাকে আখ্যা দিয়েছে খুনী,মাথার দাম ছুঁয়েছে কয়েক লাখ টাকা।প্রতিরাতে যখন ঘুমিয়ে পড়ে উচ্চবিত্ত নগরসভ্যতা,আমি তাকে দেখি পথসারমেয়দের সাথে খেলতে শিশুসুলভ চপলতায়,বৃষ্টিভেজা মাটির আঘ্রাণ নেয় সে কৈশোরিক সরলতায়।খবর রাখেনি কেউ শিশুকালে তার চোখের সামনেই রাজনৈতিক হিংসার বলি হয়েছিল পরিবার,তথাকথিত সমাজরক্ষকদের হাতেই দগ্ধ হয়েছিল তার সোনার সংসার।নাহ,বিচার হয়নি তাদের কোনো আদালতে,হত্যাকারী যে নিজেই আইন।আজ সে শাস্তি দেয় তাদের নিজ ক্ষমতায়,সমাজপরিত্যক্ত হয়েও প্রাসঙ্গিক সে।তার চোখের তুষানল হতে আমি বিশ্বপিতার যজ্ঞধূম্র নির্গত হতে দেখি,পবিত্রীকৃত।
#সেই_মেয়েটা বড্ড মুখরা,গৃধ্রসম ছিঁড়ে খায় শত্রুকে মুখনিঃসৃত কটুবাক্যের ক্যানাইন দাঁতে।শুকনো চোখের তারায় জাগিয়ে তোলে কয়েকশো ভেসুভিয়াস,দগ্ধ করে চারপাশ উদাসীন নির্মমতায়।কেউ খবর রাখেনি একদিন ভালোবেসে ক্ষতবিক্ষত হয়েছিল সে,দিনের পর দিন বিশ্বাসভঙ্গের যন্ত্রণায় করেছিল নীরব আর্তনাদ।অশ্রুনদীর শীর্ণধারা আজ প্রবেশ করেছে পাতালে,নিগূঢ় অবহেলায়।না কলিযুগ এর বসুমাতা আশ্রয় দেন নি তাকে,নিজ মৃত্যুকামনা বারবার হয়েছে ব্যার্থ।আজ সে একলা বাঁচে,প্রতিরাতে হৃদিতাণ্ডবের ধ্বংসস্তূপ ছেঁচে অন্ধকার নামায় ডাইরির পাতায়।হ্যাঁ মেয়েটির বন্ধ চোখের পলকে আমি কাবার ইবাদত ভাসতে দেখি,আয়ত রূপে।

#সেই_ছেলেটির জেদের কাছে হার মানে পরিবার,আখ্যা দেওয়া হয় রগচটা, ক্ষতিকারক, দাগী বিশেষণে।দেবীর মঙ্গলঘটে লাথি মেরে উলটে দেয় দৃঢ় উপেক্ষায়,জ্ঞানভাণ্ডার সিঞ্চন করে তুলে আনে মণিমাণিক্য, তাকে সাজিয়ে রাখে চুড়ান্ত অবহেলায়।কেউ জানেনা,প্রতিরাত বৃষ্টি নামায় তার ভেজা বালিশে,নিকোটিনাহত ওষ্ঠ রক্তিম বিষ ধারণ করে কণ্ঠে।অবজ্ঞামাখা হাসিতে লুকিয়ে থাকে শব্দশোক,আঁকিবুঁকি কাটে ডাইরির পাতায়।তার কবিতায় আমি হৃদমঞ্জির শুনি,যা দীপ্তিমান হয়ে বিরাজ করে মুখপুস্তিকার পাতায়।
যন্ত্রণাগুলো আপেক্ষিক, বঞ্চনার কবর খুঁড়ে শোণিতপ্রবাহিত হয় ডাইরির পাতায়,তবেই তাকে কবিতা-গল্প বলে আমরা ধন্য ধন্য করি,কখনো করি ব্যবচ্ছেদ সমালোচনার আতশকাঁচের নীচে।সমাজদত্ত জ্বলন্ত দেশকাঠিতে এভাবেই প্রতিপল দগ্ধ হয় কিছু প্রাণ, আকাশপ্রদীপ হয়ে জ্বলে ভেজা ডাইরির বুকে,নৈশচরিত হয়ে জোনাকি নামায় সাহিত্যাঙ্গনে।



Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours