শুভ্রা গুপ্ত, ফিচার রাইটার ও আইনজীবী, বারাসাত, কলকাতা:

মিলিয়েনিয়ার পরিবার ব্যতীত ভুল করে যারা মধ্যবিত্তের পরিবারের জন্মগ্রহণ করেছেন, তাদের অনেকের মুখেই শুনি, মা বাবা কি এমন করেছেন তাদের জন্য, ছোট থেকেই তারা নাকি স্বাবলম্বী, সবই নিজেরা করে নিয়েছে।  হ্যাঁ, শুনতে খুব চাঁছাছোলা লাগলেও অনেকেরই অন্তরের বুলি এটা। জানি না এক মধ্যবিত্তের পরিবারে এক বা একের অধিক সন্তান থাকলে বাবা মায়ের ঠিক কতটা দিতে পারা উচিত সন্তানদের জন্য, নিজেরা পালন করতে গিয়ে টের পাই কমবেশি সবাই, কিন্তু দরদ তবুও কতটা বুঝি কি জানি!
ব্যতিক্রম আছে সর্ব ক্ষেত্রে, কিন্তু ব্যতিক্রম কখনোই উদাহরণ নয়।

কখনও কখনও বৃদ্ধাশ্রমের কথা মনে পড়লে অন্তরে তুমুল ঝাঁকুনি লাগে। যেই বাবা মা সংসারের ভিত হয়ে অধিক ভালোবাসায় আগলে দিনরাত্রি এক করে পুরো পরিবার সামলেছেন, তারা আজ স্মৃতির একাকিত্ব নিয়ে মনে তুমুল কোলাহল নিয়ে অবাক শূন্যতায়। আমরা কত অদ্ভুত স্বার্থপর, তাই না! তাদের ঠকিয়ে দিই বারবার! ছোটবেলায় ঠকিয়ে দেওয়াগুলো বুঝেও আঁচলের আদরে ঢেকে রাখা হৃদয়গুলো আর ঢাকতে চেয়েও ঢাকতে পারেন না চোখের কোনের চিকচিক।

এক মা যখন গর্ভধারণ করেন, সেই থেকে সন্তানের জন্ম পর্যন্ত সন্তান ছেলে হোক বা মেয়ে একই সময় ও একই যন্ত্র‌ণা ভোগ করেই সন্তান জন্ম দিতে হয়। এরপর এক সদ্যোজাতের যত্ন, তাকে খাওয়ানো, রাত জাগা, হিসু-হাগু পরিষ্কার, হাঁটতে শেখানো আরও কত, কত কত পথ পেরিয়ে তবেই সন্তান স্বাবলম্বী হয়। মায়ের সাথে বাবার দিনরাত্রি ঘর বাইরে কাজ সামলানো, রাত জাগা, সন্তানের প্রয়োজনের খুঁটিনাটি জোগাড় করা, বাড়িতে একটা লজেন্স বা ছোট খেলনা হাতে প্রবেশ অপেক্ষারত সন্তানের জন্য আরও অনেক অনেক। সর্বোপরি সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়া পর্যন্ত সন্তানের পাশে থাকা সওব।

ছেলে মেয়ের বিভেদ করে মা বাবার চিন্তা কিন্তু কম পড়ে না এতে। ভাবি যে বিনিময়ে আমরা সত্যিই কি এই অবদান কোনো মূল্যেই চুকিয়ে দিতে পারি? পারলেও ঠিক কতটা সময় দিতে পারি? অথচ সন্তানের ক্ষেত্রে কিন্তু নো কম্প্রোমাইজ।
যারা বলে সব নিজে করে নিয়েছি, আমার খুব ইচ্ছা করে তাদের আঁতুড়ঘরে থাকা সময়কালটা আরও একবার দেখতে।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours