জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা:

জ্ঞানের কোন শ্রেণী চরিত্র নেই।কাজেই তাকে খন্ডিত করা কিংবা জনগনের অধিকাংশকে জ্ঞান থেকে যখন বঞ্চিত করার চেষ্টা হয়, তখন ধরে নিতে হবে দেশে কিংবা বিশ্বে স্বৈরতান্ত্রিকতার পথ ধরে ফ্যাসিবাদ আসছে।

কোন জাতী সমাজতান্ত্রিক অথবা পুজিতান্ত্রিক স্বৈরতান্ত্রিক পথ বেয়ে এগুচ্ছে, তার পরিমাপ  এখান থেকেই শুরু হয়। যে সব রাষ্ট্র শিক্ষার বিস্তুৃতির সাথে সাথে সাথে
----- তাকে জ্ঞানের পর্য্যায়ে উঠিয়ে নিয়ে আসা এবং সেই জ্ঞানের অভিমুখে জনগনের সর্বাংশকে স্থাপন করার চেষ্টা করেছে, তাকেই বলা যাবে সমাজতন্ত্রের অভিমুখ। পজিতন্ত্রের সংকট শুরু হওয়ার পূর্বে, যতদিন  সে রেনেঁশার  ভাবপ্রবাহ ধরে, শিক্ষাকে জ্ঞানের অভিমুখে এবং জ্ঞানকে জনগনের মঞ্চে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে।
এই চেষ্টার পেছনে অন্যতম কারন ছিল, জনগনকে উদ্দিপিত করা এবং তার ভোটের অধিকারকে সংহত করেই পুজির সংহতির পথকে এগিয়ে দেখেছে। সে  জন্যেই দেখা  যাবে, চৌদ্দ শ' শতাব্দি থেকে অষ্টাবিংশ শতাব্দি পর্য্যন্ত সময়
জ্ঞানের সর্বত্রগামি ধারাটি ক্রম বিস্তারিত হয়ে নিম্নগামী হতে শুরু করেছে।
লক্ষনীয়, এই সময় পর্য্যন্ত মোটামুটি জ্ঞানের একটা বিশ্বমুখীন শ্রোত বিরাজমান থেকেছে।
------    যদি মেনে চলাহয়, ভারতে বৃটিশরাই প্রথম যুক্তিবাদ এবং যুক্তিবাদী জ্ঞান (ইংরাজী শিক্ষা বলা হোত সেকালে) এর অর্থ একটাই তখনো পুজিতন্ত্র নিজের মধ্যে নিজের বিকশিত হওয়ার সুযোগ ছিল।
-----    এটাও কোন কাকতালীয় নয়, যেঁ ১৮৪৮ সালের এপ্রিলে  কার্লমার্ক্স
কমিউনিষ্ট ম্যানিফেস্টো লিখেছিলেন এবং 'মে' মাসেই বিশ্ব ইতিহাসে প্রথম প্যারিসের রাজপথে শ্রমিকদের প্রথম ব্যারিক্যাড পরেছিলো। ইতিহাস বলে, সে দিন প্যারিসের রাজপথে দু'দিকের নর্দমা, রক্তের বন্যায় ভেষে গিয়েছিলো।

যদি মেনে চলা হয়, মার্ক্সের আবির্ভাবের সাথে সাথে, ফ্রয়েড বা ম্যালথাসের সমাজ বিজ্ঞানের অবসান ঘটিয়েছে, তবে মানতে হবে প্যারীর মজুর বিদ্রোহের কাল থেকেই প্রকৃ্তি বিজ্ঞান থেকে সমাজ বিজ্ঞানের বিচ্ছেদের কাল শুরুর সাথে সাথে
---- জ্ঞান এবং শিক্ষার সেতুবন্ধন ভেংগে দেওয়ার কাজ শুরু করে দিয়ে পুজিতান্ত্রিক শাসন, মানুষকে বোকা বানিয়ে ভোট নেওয়ার কাজতিও শুরু করে দিয়েছিলো। ক্রমে অক্টোবর বিপ্লব থেকেই, যে বিপ্লব ইতিহাসে ক্রমে  মহামানিবক বিপ্লব হিসেবে ক্ষ্যাত হয়েছে, শিক্ষা এবং জ্ঞানের মধ্যে পূর্ন বিচ্ছেদ শুরু করা হয়।
--- ইতিহাসের বিচারে, মার্ক্সসের আবির্ভাব এবং ১৯৪৮ শে সারা ইউরোপের বিদ্রোহকালকে, পুজির কেন্দ্রিকতা কালের  সংকটের কাল কিংবা পুজিতন্ত্রের মধ্য গগনের  কাল বলা হয়ে থাকে এবং অক্টোবর বিপ্লবকালকে পুজির সর্বোচ্চ কেন্দ্রিভবন বা মানবিকতার অভ্যুত্থানের কাল বলা হয়।
--- শিক্ষা ও জ্ঞানের পূর্ণবিচ্ছেদের অর্থই হোল, রেঁনেশাকে এগিয়ে দেওয়ার কালের অবসানের এবং তার সাথে জ্ঞানের সার্বজনীনতার কালেরো অবসান কাল মানতে হবে।
--- সেই যে শুরু হোল বিদ্যালয় বা কলেজ শিক্ষাকে চিত্ত বিকাশের সার্বজনীনতা থেকে বিচ্চদ, তাই প্রথমে একপ্রান্তে  প্রকৃ্তি বিজ্ঞান থেকে ইতিহাসের বিচ্ছেদ এবং অন্যপ্রান্তে প্রকৃ্তি বিজ্ঞানকে শরীর পর্য্যন্ত আটকে দিয়ে,
---- 'মন'কে শরীর থেকে পৃ্থক দেখিয়ে, তার উপর 'স্বর্গীয়' উপাদান আরোপ করার মরিয়া চেষ্টাটাও অক্টোবর বিপ্লবের পূর্বে।
সোভিয়েত প্রতিষ্ঠার পর সব থেকে গুরুত্বপূর্ন ঘটনা এখানেই যে, সে সময় থেকেই বিশ্ব যেমন দু'ভাগ হয়েছে, সমাজতান্ত্রিক এবং সাম্রাজ্যবাদী নিয়ন্ত্রিত বিশ্বে, তেমনি কিন্তু প্রকৃতি বিজ্ঞানের সাথে ইতিহাস বা সমাজ বিজ্ঞানের সংযুক্তির প্রশ্নেও কিন্তু বিশ্ব দু'ভাগে ভাগ হয়ে যেতে লাগলো। প্রকৃ্ত বিজ্ঞানের সাথে সমাজবিজ্ঞানের সংযুক্তিরই অন্য নাম, শরীরের সাথে মনের সংযোজনের পূনঃ প্রতিষ্ঠা করে, মানুষ এবং ইতিহাসের সংযুক্তি ঘটিয়ে
----- উভয়কেই এবং উভয়ের পারস্পরিকতাকে আবিস্কার। সোভিয়েতের নেতৃ্ত্বে এই কাজটি সমাধা করেই, যে পুজিতন্ত্র সাধারন মানুষকে কেবল ভোট ফেলার যন্ত্র বানিয়ে ফেলেছিলো, তাকে রাষ্ট্র ঘটনের সাথে যুক্ত করার
প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার পত্তন করলো।
----- এখান থেকেই মানবিক সম্পদ উন্নয়নকেই সমাজতন্ত্রে প্রাথমিক গুরুত্ব পেলো। যারা সোভিয়েত শাসনের সাথে পরিচিত, তারা জানেন - সেখানে যতদিন সোভিয়েত টিকে ছিল, সেখানে দ্রব্যমূল্য বৃ্দ্ধি ঘটে নাই । সন্তান সন্ততি মানুষ করার দায় রাষ্ট্রের৪। ৮ম সন্তানের জননীকে সোভিয়েত জননীর স্বিকৃতি পেয়েছে।

ভারতবর্ষে সাম্যের বিরুদ্ধে যখন 'বন্দেমাতারম' এবং তার সাথে চিন বা সোভিয়েতে, পুজিপতিদের কেন দল গড়তে দেওয়া হয় না, সে সব প্রশ্ন তুলে অনেক চেচামেচি করতো  । সবাইকে দল করতে দিলে নিশ্চিতভাবে
----- মানব সম্পদ উন্নয়নের কর্মসূচী থেকেই তাদের সরে আসতে হোত। এই যেঁ আর এস এস, সাম্যবাদীদের সব থেকে বড় শত্রু মানে এ কারনেই, যেঁ তারা জানে কমিউনিষ্টরা ভারতে ক্ষমতায় থাকলে, এসব মানুষ খেকো দলকে প্রথম দিনেই অপসারিত করতো।

আজকে চিনের বিরুদ্ধেও এই অভিযোগ তোলা হয়। অথচ শিক্ষার জ্ঞানগত রুপান্তর এবং ভাত কাপড় বাসস্থানের সার্বজনীন জ্ঞান যদি প্রজাতন্ত্রের পধান সর্ত হয়, তবে সেই সর্তপুরনের মধ্যেই যেঁ গনতান্ত্রিক অংশগ্রহনকে সুনিশ্চিত করে, সেটাকেই গনতন্ত্র বিকাশের রুপ বলে মানতে হবে।
------ সেখানে ভারতে যেঁ সব দল নেহেরু অর্থনীতি এবং সমাজভাবনায় একাত্ম থাকবে তাদের সবাইকেই রাজনীতিতে অংশ পাবেই। সেটা পৃ্থক পৃ্থক হক কিংবা একসাথে হক। চিনে এখন পুজিপতিরাও কমিউনিষ্ট পার্টিতে রয়েছে। পুঁজিতে রাষ্ট্রীয় থেকেও দেশী এবং বিদেশী পুজির অনুপাতো অনেক বেশী। কিন্ত তারা রাজনীতিতে জনগনের উপস্থিতিতেকে অর্থপূর্ন করতে
---- শিক্ষাকে জ্ঞান থেকে পৃ্থক করতে অস্বিকার করাতেই, জনশক্তি, রাজনীতি এবং উন্নয়নকে একসুত্রে বেঁধে রাখতে পেরেছে।একই সুত্রে, সবাইকের জন্য  ভাত-কাপড়-বাসস্থান এবং স্বাস্থ্যকে জ্ঞানর সাথে একসুত্রে বেঁধে চলার নীতি থেকে একচুল সরে আসে নাই।
ভারত এবং ভারতীয় উপমহাদেশের দিকে যদি তাকিয়ে দেখা হয়, দেখা যাবে যেঁ সব রাজ্য কিংবা দেশ, সমাজত্নত্র মানুক কিংবা নাই মানুক যারাই
----- শিক্ষা, ভাত=কাপড়, জনস্বাস্থের উপর নজর দিয়েছেন, যেমনভাবে, তারাই তেমনভাবে শ্রেষ্টত্ম পেয়েছেন।এ খানে যারা টাকার অভাবের কথা বলেন  তারা মূলতঃ ছুতো করেন তাদের রাজনীতির কারনে। কিছুদিন পূর্বে যখন
----- ফলিত অর্থনীতির অধ্যাপক প্রভাত পট্টনায়েক দুর্গাপুরে  আসেন তিনি
এক সভায় হিসেব করে দেখিয়ে দেন, কোন রাজ্য যদি বাজেটের ৭.৫% ভাগ মানব সম্পদে খরচা করেচন, তবে সেই বিনিয়োগ অন্ততঃ ৩.৫% রোজগার দেয় রাষ্ট্রকে।রাষ্ট্রের ব্যয় দাড়ায় মাত্র ৪%
----- আজ যদি বাংলা দেশ জাতীয় উন্নয়নের প্রশ্নে ভারতকে টপকে গিয়ে থাকে তার মুল কারন, তাদের জ্ঞান বৃদ্ধির হার অনেক বেশি। সেটা ঘটেছে, মানবিক বিনিয়োগ বৃ্দ্ধির কারনে।
----- অনুরুপভাবে কেরালা। আধুনিক শিল্পে পিছিয়ে থাকা সত্বেও জ্ঞানের প্রশ্নে ভারতে সব থেকে এগিয়ে, নিশ্চিত বলা যায় ওখানে কোনদিন বিজেপি আসবে না।উল্লখ যোগ্য অধ্যাপক প্রভাত পট্টনায়েক, দীর্ঘকাল কেরালার অর্থনৈ্তিক উপদেষ্টা ছিলেন। (ক্রমশ)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours