জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা:

নবম অংশে 'জ্ঞানের অখন্ড সত্বার একটি চালচিত্র দেওয়ার চেষ্টা করেছি।  সেই চালচিত্রটি আবারো তুলে ধরার চেষ্টা করবো।এই অধ্যায়ে একটি বিষয়কেই তুলে ধরার চেষ্টা করবো সব মিলিয়ে
------ যদি মেনেও চলতে হয়, শাসকের শ্রেনীগত স্বার্থে জ্ঞানের 'খন্ডিকরনের' সর্তকে যদি মেনেও নিতে হয়, তবু আন্তর্জাতীকতার  পথে যে সীমা পর্য্যন্ত জ্ঞানের অখন্ড সত্বা পর্য্যন্ত সে তাকে এগিয়ে দেওয়া যেতো, সেটাকে নেহেরুর পর থেকে ক্রমে খাটো করা  শুরু করা হয়েছিলো।
যদি মেনে চলা হয়, ১৮৪৫ ইউরোপের শ্রমিক বিদ্রোহ, পুজিতন্ত্রে  বানিজ্য সংকট নিয়মতান্ত্রিক হয়ে, অর্থনীতির বৃত্তরেখায় প্রবেশকালটাই
----- জ্ঞানের  অখন্ড সত্বায় খন্ডিতকরন শুরুর কাল, সেই কালে প্রকৃতি বিজ্ঞানকে তার প্রথম তিনটি গতি্র  (ফিসিক্স বা পদার্থ বিদ্যা,, রশায়ন এবং শরীর বিদ্যা) একাত্মতাকে কেউ বাধা দেওয়ার কারন দেখা দেয় নাই।বাধা আসে যখন শরীর বিদ্যাকে 'মন' বা 'ইতিহাস' পর্য্যন্ত বিস্তৃত করতে অস্বিকার করা হয়েছিলো। মন বিদ্যাকে তো 'ফ্রয়েড' এবং 'ম্যালথাসের' বাইরে এগুতেই দেওয়া হয় নাই । আর এদের দু'জনকে মনো বিজ্ঞানী থেকেও, শরীর বিজ্ঞানের সম্প্রসারনই বলা যাবে।
----- নেহেরু তার শিক্ষা নীতিকে যেভাবে সংস্কৃতি এবং গনশিক্ষার সাথে যুক্ত করার সংগ্রাম শুরু করে যেঁ বাধার সম্মুখিন হলেন, প্রাচীনপন্থীদের কাছ থেকে, সেই বাধাকে মোকাবিলা করার যোগ্যতা পরবর্তীকালের কংগ্রেসের ছিলও না। পরিনামে, প্রযুক্তি এবং শিল্পের উৎপাদনগত অগ্রগতি রাখার মতো, শিক্ষার অখন্ডতা বজার রাখতে পারলেও, সেই উন্নত উৎপাদন প্রকৃয়া্কে কোন উন্নত সামাজিক সম্পর্কের সাথে যুক্ত করার প্রয়োজনী জ্ঞান সমাজে নিয়ে আসা সম্বভব  হয় নয়াই। প্রসংগত উল্লেখ যোগ্য
----- নেহেরুর জ্ঞান সত্বাও আন্তর্জাতীকতায় পুজিতান্ত্রিক সীমানা লংঘিত হয় নাই।ইতিহাসে গবেষনা হয়েছে, কিন্তু সেই গবেষনায়, 'মন' এর সাথে ইতিহাস কিংবা 'মনের' সাথে 'শ্রমের' সম্পর্কে প্রবেশের সুযোগ দেন নাই।

সাম্যবাদী আন্দোলনের প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ ছিল, নেহেরু উত্তরকালে যেভাবে  প্রকৃতির তিনটি গতির পারস্পরিকতাকে ভেঙ্গে-চুড়ে জ্ঞানকে খন্ড-বিখন্ড করে দিয়ে
----- সামন্তিক এবং আদিভৌতিক বা মেটাফিসিক্সকে ঢুকিয়ে দিয়ে, যেভাবে মানবিকতাকে খন্ডিত-বিখন্ডিত করে দিয়েছে, সেটাকে পূনঃনির্মান করা দরকার। আজ তো উৎপাদনে প্রযুক্তির আধিপত্য, আর সামাজিক সম্পর্ককে রামায়নী বা মহাভারতীয়।এইভাবে, জ্ঞান সত্বার বিকৃতি ক্রমে ভারতীয় মননসত্বাকেই প্রাচীনত্বের দিকে ঠেলেছে।
 সেই সুত্রেই বলার চেষ্টা করেছি, 'জ্ঞান' আসলে 'ফলিত বিজ্ঞান' যাকে আমরা ইংরাজীতে  Applied science বলে জানি।
 এঙ্গেলস সে কারনেই, 'প্রকৃ্তিতে দ্বান্দ্বীকতা' নামক ' পুস্তকটির ভূমিকায় , ভোটের অধিকার বা গনতন্ত্রের অধিকার  প্রসারের বিষয়কে  'জ্ঞানের' বিকাশের প্রশ্নের সাথে যুক্তিনিষ্ঠভাবে যুক্ত করেছেন।
---- এই যুগলবন্দি কে যে  এক সংগ্রাম বলে উল্লেখ করেছেন, সেই বিষয়টা যারা বুঝেন নাই্‌, তারা আজকের দিনে গনতান্ত্রিক রক্ষার সংগ্রামটাকেই বুঝতে পারবেন না।আজকের দিনের নেতা কর্মীদের আচরন দেখে, কদাচিৎ বুঝা গেছে,
----- সমাজতন্ত্র কেন বুর্জোয়া গনতন্ত্রের কাঠামোটা  বুর্জোয়াদের কাছ থেকে পাওয়া গেলেও, সেটাকে চালু রাখতেও, রেনেশারঁ জ্ঞানের আরধনা এবং অসি ও মসির সংহতির সংগ্রামকে
------ 'রেনেশাঁকাল থেকেও অনেক অনেক এগিয়ে দেওয়া প্রয়োজন হবে।     
কাল বলেছি, আজ আবারো লিখছি অষ্টাবিংশ শতাব্দীতে এঙ্গেলস লিখছেনঃ
       ""মানব জাতির এযাবৎ অভিজ্ঞতায় এটা ছিল সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রগতিশীল বিপ্লব। এটা ছিল এমন একটা সময় যখন প্রয়োজন ছিল বিরাট মানুষের এবং সৃষ্টিও হয়েছিলও বিরাট মানুষদের - যারা বিরাট ছিলেন চিন্তা-শক্তিতে, আবেগে এবং চরিত্রে,সার্বজনীনতায় এবং  জ্ঞানে। যে মানুষেরা বুর্জোয়াদের আধুনিক শাসনের প্রবর্তন করেছিলে তাদেন ছিল কেবল বুর্জোয়া সীমাবদ্ধতা।...... অন্যদিকে সেকালের দুঃসাহসী চরিত্র তাদের কম বেশি পরিমানে উদ্ভদ্ধ করেছিলো...তারা প্রায় সবাই সমসাময়িক  আন্দোলনগুলির মধ্যে, বাস্তব সংগ্রামগুলির মধ্যে, তাদের জীবনযাপন ও  কর্মসম্পাদন করেছেন। তারা পক্ষ  বেছে নিয়েছিলেন ও সংগ্রামে অংশগ্রহন করেছিলেণ, কেউ ভাষনের,  লেখণির মাধ্যমে, কেউ বা তরবারীর সাহায্য, অনেকে দু'ভাবেই""

------ সেখানেই বলার চেষ্টা হয়েছে, রেনেশাঁকে প্রত্যাহার করার পূর্বে পর্য্যন্ত, যতদিন, 'রাজসত্বা'কে সামন্তিক কাঠামো থেকে বের করে এনে, পুজিতন্ত্রে নিয়ে আসা এবং জ্ঞানকে এক অখন্ড রুপে বিকশিত করা  প্রয়োজন ছিলো, ততদিন
------ গনতন্ত্রকে শুধু নির্বাচনী ব্যবস্থার বিস্তারের সাথে সাথে, গনতন্ত্রে  অংশ গ্রহনের সুযোগ অনেকটা বিস্তৃত  ছিলো। 'মন' থেকে বিজ্ঞানেরম অন্য
তিনটি 'গতি' কে বিচ্ছিন্নকরন শুরু হয়, অষ্টাদশ শতাব্দী থেকে।

 ------ স্বাধীনতার পর পর সময় থেকেই যেখানে, ভারতীয় 'পুজির সংহতি' শুরু হয়, তাও মুলত নেহেরু-স্তালিন শিল্প চুক্তির' পর থেকে, সেখানে ভারতীয় শিল্প পুজিকে,
----- আজকের আত্মহননের পরিস্থিতিতে ঠেলে দেওয়ার পরিস্থিতিতি থেকে বাঁচানোর জন্যেও।'জ্ঞান সত্বা'কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সংগ্রামকে এগিয়ে দেওয়ার সুযোগ যদি কংগ্রেসের প্রাচীন পন্থীরা দিতেন
--- তবে কোন মতেই 'সাম্যের' দিক থেকে ভয় পাওয়ার কোন কারন ছিলো না।
নেহেরু-আম্মেদকর,  ভারতীয় সংবিধানে সেই সুযোগ দিয়েও ছিলেন।       সংবিধানে প্রদত্ত অধিকারগুলিকে যদি খুটিয়ে দেখা যায়, সেই ব্যবস্থাগুলিকে চিহ্নত করা যাবে।

  এইভাবে অখন্ড জ্ঞানকে নিচের আট দফা প্রকৃতিগত এবং সামাজিক সুত্রে সুত্রবদ্ধ করে জ্ঞানের সামগ্রিক সত্বাটিকে চিহ্নিত করা  যেতে পারে। কংগ্রেস সরকার যদি চাইতেন , শেষের দুটি নিয়মকে এড়িয়ে গিয়েওঃ ,
-----  জ্ঞান সত্বালে সংহত করতে পারতো। পুজিবাদও সংহত হতে পারতো।
কিন্তু সাম্যের ভয়ে তারা সে কাজ না করে, ভারতের ভাগ্যাকাশে তারা ফ্যাসিবাদের বীজ বপন করেছে।
শ্রমিক শ্রেনীকে তাই, সর্বনিম্বে বর্নীত ইতিহাসের দুটি নিয়মকে কার্য্যকরে শ্রমিক শ্রেনীই ইতিহাসে গনতান্ত্রিক প্রকৃয়া্টিকে কার্য্যকরী রাখবেন।

এইভাবেই যিনি ' জ্ঞানী' তার সংহত রুপ নিম্নের  আট টি বিষয়কে আন্তরিক করে নেওয়া এবং কার্য্যকরী করার আনুগত্যের উপরে নির্ভরশীল

   এখন সামগ্রীকতার বিচারে কাকে জ্ঞানী বলা যাবে সেটা লিখেই আজকের প্রতিবেদনটি শেষ করা  যেতে পারে।
মশী আর অশীর এবং উভয়ের সংহতিতে যিনি নিম্ন জ্ঞানশক্তির অধিকারী হয়েছেন তাকেই জ্ঞানী বলা যাবেঃ
(১)  বিশ্বপ্রকৃ্তি এবং ইতিহাসের অতীতের ছায়ায়  সমসাময়ীক কালকে নিজের বোধ বা জ্ঞানের আয়নায় ধারন করার যোজ্ঞতা। ইংরাজীতে যাকে বলা হয় perceive করার যোজ্ঞতা।
(২) সেই ধারন ক্ষমতাকে বিশ্লেষন করে ভবিষ্যতকে অনুধাবন করার যোগ্যত এবং ভবিষ্যতের সম্ভাবনাকে গনতন্ত্র এবং মানবিক দিকে পরিচালনা করার রীতি নীতি নিয়ে, গবেষনা করার যোগ্যতা। শিক্ষা ও গবেষনা,, সংস্কৃতি, উৎপাদন প্রকৃয়ায় গন অংশগ্রহন করানোর রীতিনীতির সংহত করেই জ্ঞানের সামগ্রিক চেহারাটি চিহ্নিত করা। প্রকৃ্তি জগতের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সৃষ্টি বিলয়,   ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ঘটনাপ্রবাহ, তাদের সম্মেলন এবং তিরোধান, সামগ্রিক জ্ঞানের পরিপ্রেক্ষিতে মুল্যায়ন।
(৩) অনুরুপভাবে, ইতিহাসের মতোই প্রকৃতি বিকাশের নিয়মাবলি perceive   করার পর, , প্রকৃ্তি বিজ্ঞানকে 'শ্রমের' গুনগত বিকাশ এবং সামাজিক উৎপাদনকে  সামাজিক সম্পর্কের সাথে সমন্বয় সাধান।  এই সমন্বয় প্রকৃয়াকে এগিয়ে নিতেই, শিক্ষাকে গনশিক্ষার স্তরে উঠিয়ে আনা, এবং  এই সম্পর্কগুলিতে গন অংশ গ্রহন করিয়ে, ভোটের অধিকারকে অর্থবহ করে তোলা।
(৪) এসব  বিশ্লেষনের মধ্যে দিয়ে নিজেকে আবিস্কার করা এবং এই আবিস্কারে ইতিহাস, প্রকৃ্তি বিজ্ঞান  এবং শ্রমের রুপান্তর ছায়ায়  নিজেকে দিয়ে পারিপার্ষিকতা বুঝে নেওয়া।
(৫) এই বোধ শক্তিকে কাজে লাগিয়ে, যারা প্রতিষ্ঠানগত একতাবদ্ধ যেমন ছাত্র এবং মেহনতিরা, তাদের বিশেষ মর্য্যাদায় সংগঠিত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া।
(৬) ছাত্রদের প্রতিষ্ঠানগত আবেগকে এক বিদ্রোহী রুপে প্রস্ফুটিত হওয়া এবং শ্রেমিক শ্রেনীর বৈপ্লবিক আলোক রশ্মিতে আলোকিত করার সুযোগ করে দেওয়া।
(৭) স্মরনে রাখা শ্রমিক শ্রেনী শুধু প্রতিষ্ঠানিক দিক  থেকেই নয়, উৎপাদনের দিক থেকেও সংগবদ্ধ। সে কারনে বিশ্বের ইতিহাসে কোথায়ো কোন দিন, কোন সাম্প্রদায়ীক কিংবা জাতিগত দাঙ্ঘার জন্ম হওয়াস্র সুযোগ নেই।
(৮) অনুরুপভাবে ছাত্ররাও যেহেতু, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে একতাবদ্ধ, সেজন্য সেক্যুলারিজম এবং তার সাথে মানবিকতার আবেদন সর্বপ্রথম সেখানে নির্মান হয়। সেজনেই এদের আবেগ বিদ্রোহী সত্বায় পরিবর্তিত হওয়ার প্রথম সুযোগ শিক্ষায়তনেই নির্মান হয়। (চ ল বে)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours