ভবানীপ্রসাদ ভট্টাচার্য, ফিচার রাইটার, দুর্গাপুর:

পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসা ব্লকের রাজকুসুম গ্রামের  ' গরাই  বাড়ীর ' সরস্বতী  পুজো  ২০০ বছরের  বেশী  প্রাচীন!  গ্রামে  অনান্য  প্রায়  সব  দেবদেবীর  পুজা  হলেও  বাগ্দেবীর  পূজাকে  কেন্দ্র শুধু  রাজকুসুম  নয়  পার্শ্ববর্তী গাড়াদহ, বাঁন্দরা গ্রাম গুলিও  মেতে  ওঠে!
            রাজকুসুম  গ্রামে  ব্রাক্ষ্মন,আগুরী, ও তেলী  ছাড়াও  বাউরী  বাগ্দী, মুচি  ও সাঁওতাল  সম্প্রদায়ের  বাস! বর্তমানে  তেলী  সম্প্রদায়  রাজকুসুম  ছেড়ে  আসানসোল, রাজবাঁধ, পানাগড়  প্রভৃতি  স্হানে  স্হানান্তরিত  হয়ে  স্হায়ী ভাবে  বসবাস  করছে!
               একটা  সময়  গরাই  পরিবার  গ্রামের  সবচেয়ে  ধনী  পরিবার  ছিল! বাড়ীতে প্রতিমা, নারায়ণ  সহ অনান্য  দেব দেবীর  পূজা -আর্চ্চা  হ'তো! এই  পরিবারটি  শিক্ষিত হওয়ায়  শিক্ষার  প্রতি  অনুরাগ  থেকে প্রায়  দু'শ  বছর  পূর্বে  এই  পরিবারের  তৎকালীন  কর্তা  সরস্বতী  পূজার  পত্তন  করেন! প্রতিমাও,বিরল  এখানে  পাকা  মন্দিরে  বিদ্যাদেবী  না সরস্বতীর  সাথে  ঐশ্বর্যের  দেবী  মা  লক্ষ্মী  ও সিদ্ধিদাতা  গনেশ এবং  স্বর্গের  অপ্সরাও  পুজিতা  হ'ন!  সম্ভবতঃতেলীরা  যেহেতু  ব্যবসায়ী  তাই  বিদ্যাদেবীর  সাথে  প্রতিমা গনেশের  পূজা  করেন! কিন্তু জনশ্রুতি , যিনি  এই  পুজার  পত্তন,করেন  তিনি  স্বপ্নাদেশে  যে  প্রতিমা  দর্শন  করেন  সেইরূপ  প্রতিমা নির্মান  করান! এখানে একচালার  প্রতিমা  ওপরে  সিদ্ধিদাতা  গনেশ  মাঝে  ঐশ্বর্যের  দেবী  লক্ষ্মী  ও বিদ্যার  দেবী  সরস্বতী  এবং  ওপরের  দুপাশে  দুই  অপ্সরা  নিচে  দুপাশে  জয়া  ও বিজয়া!
           শোনা  যায়, এই  পরিবারে  একবার  বিপর্যয়  নেমে  আসে! পরিবারের  কর্তার  আকস্মিক  মৃত্যুতে  আর্থিক  বিপর্যয়ে  জেরবার  হয়ে  এবং  গ্রামের  কিছু  মানুষের  চক্রান্তে শশীভুষন  গরাই - এর  মা  একমাত্র  পুত্রকে  নিয়ে  আসানসোলে  চলে  যান! সেখানে  নিজ  প্রচেষ্টায়  শশীভূষন  একজন  বড়  ব্যবসায়ী ও সমাজসেবী রূপে  নিজেকে  প্রতিষ্ঠা  করেন! তাঁর নামে  আসালসোলে  একটি  রাস্তা  আছে ' এস,বি,গরাই  রোড '! রাজ  কুসুমের  সব  দেবতাকে  বাড়ীতে  প্রতিষ্ঠা  করলেও  সরস্বতীকে  প্রতিষ্ঠা  করতে  পারেন  নি! তাই  এখানেই  নির্মিত  হয়েছে  পাকা  মন্দির! প্রতিবছর সরস্বতী  পুজায় স্বপরিবারে  গরাইরা  রাজকুসুমে  চলে  আসেন ! পুজোয়  মেতে  ওঠে  বাচ্চা  বুড়ো সকলে!
           পুজোয়  পঞ্চমী  ও ষষ্ঠী  প্রায়  ১০ হাজার  মানুষের  পংতিভোজের  ব্যাবস্হা  হয়, কিন্তু  কোন  নিমন্ত্রনের  রেওয়াজ  নেই! বিনা নিমন্ত্রনেই  খেতে  আসতে  হয়!
            পুজোকে  কেন্দ্র  করে  যাত্রা, নাটক, বিচিত্রানুষ্ঠানে  মাতে  গ্রামবাসী!
             ষষ্ঠীতেই বিষাদের  সুরে বিসর্জন..আবার একটা  বছরের  প্রতিক্ষা  আর  দেবীর  কাছে  করুন  আবেদন " আবার  এসো  মা...."

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours