প্রিয়াঙ্কা সরকার, লেখিকা, বর্ধমান:
সময়টা ১৯৯৫। সামাজিকে পরিবর্তন এসেছে গ্রামগুলিতে। মমতার সম্পর্ক নেই কেবল সাধু আকর্ষণ। সব কিছুকেই যেন আত্মহনের কালোকর্কশ পৃথিবী গিলে খায় অন্ন বস্ত্রের দাবি। আর ঠিক তখনই স্মৃতিচারণে শ্রীমার সঙ্গী বাসনাবালা। বাসনাবালার নাম যখন উঠলো তখন পরিচয়টা পরিচিতি পাক সময়ের পরিসরে। তাঁর জন্ম ১৮৯৯ খ্রীস্টাব্দ। ইতিহাস বলছে, ১৯৬৮ তে দক্ষিণ আফ্রিকার দেশ সোয়াজিল্যাণ্ড বৃটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে। ১৯৬৫ তে প্রথম পাক ভারত যুদ্ধ শুরু হয়। তাই সমাজের রূপ বদলাবে এটা তো নতুন কথা নয়। বাল্যবিবাহ তখন অব্যাহত। মাত্র সাত বছরেই হৃষীকেশ নন্দীর সাথে তাঁর বিবাহ হয়। এই বিবাহ এবং বিধবা পরিণতি যে, সমাজের আরো এক নগ্ন দিক প্রকাশ করে ব্যর্থ ফিরিয়ে সমাজ, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। এই বাসনাবালা একদিন শ্রীশ্রী মায়ের কথা বলতে গিয়ে বললেন, শ্রীমা যখন প্রথম প্রথম কামারপুকুরে আসেন,একদিন বাসনাবালা স্বপ্ন দেখেন যে শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ বলছেন, "কাল হালদার পুকুরে যাবি। দেখবি এক মেয়ে কচু শাক তুলে উপরে উঠতে যাবে আর হোঁচট খাবে। তুই তাঁর সেবা কর,তোর ভালো হবে। " স্বপ্নাদেশ পেতেই বাসনাবালা স্বপ্ন অনুসারে ঘাটে যেতেই দেখলেন, শ্রীমাকে। শান্তভাবে তিনি বাছা বলে বাসনাবালাকে বুকে টেনে নিলেন এবং বললেন, "চলো! আজ থেকে তুমি আমার কাছে থাকবে। আমিই মা " সময়ের সাথে হাতে হাত রেখে নির্জনবাসে মায়ের সাথেই সঙ্গী হলেন বাসনাবালা।
বংশপরম্পরার উৎসর্গের পত্রে শ্রীরামকৃষ্ণের মধ্যমভ্রাতা রামেশ্বরের পুত্র শিবারামের ভিক্ষে মা ছিলেন শ্রীমা৷ স্বভাবসিদ্ধ প্রেম আর নয়নতারার পেলব পাপড়ি স্নেহের অনুরূপ শ্বেতজবা যেন মায়ের প্রতিরূপ। উদ্বেগের ঝড়, আড়ালে আবডালে রাখা ভিজে শোক কোনভাবেই তাঁকে আক্রমণ করতে পারে নি। মা নিজে হাতে তখন বুনেছেন জমির বুকে আনন্দ সবুজ পাতা। লক্ষ্মীদিদির সেই পদলেহনে মা সংক্ষিপ্তের রোদ্দুরে দাগকে মেনে নিয়েছিলেন। ফিরতি পথে বৈরাগী অবমাননা তো আত্মায় লাগে না, বরং হৃদয় থেকে সরিয়ে দিতে হয়৷ বাসনাবালাকে লক্ষ্মীদেবী নাকি বড়ো অপমান করতেন। বলতেন " কেন কষ্ট করে পড়ে আছিস! " মায়ের তো শখের প্রেম ছিল না বাসনায়, তাই লক্ষ্মীর ধান তো নশ্বর জীবনের স্বাদ। যে ঠাকুর চলে গেছেন সেই শোনিত ধমনীতে আর আলো কোথায় যে, মা তুচ্ছ বিনিময়ে দ্বন্দ্ব করবেন! পরম আত্মীয় বলতে বাসনাবালা কিছু মানুষের নাম করেন, দুঃখীরাম, মোড়লদের নটবর, লায়েকের শিবপ্রসাদ, লাহাবাড়ির প্রসন্নময়ী৷ মাকে তাঁরা প্রণাম করলে, মা ফিরিয়ে দিয়ে বলতেন, "তোমরা যে ঠাকুরের সাথী, তোমাদের প্রণাম কী করে নিই?"
মা, প্রিয় বাসনাবালাকে বলতেন, "তোর হারালেও খুইতে নেই, ম'লেও কাঁদতে নেই। " ঘন কালো কেশ বরণে, মা যেন আকাশে ছবি এঁকে যান। পেলব মাখা স্নেহে কোনো বিভাজনের চিহ্ন ছুঁতে পারেনি কোনোদিন। ঠাকুরের ভক্তি প্রেমের ঘরে কোনো ভেদাভেদ ছিল না বলেই, মায়ের কাছেও কামারপুকুরের ভুতু শেখ, মান্দারণের মিঞারা আসতেন। লোকে কথা বললেও, ও ছিল আগাছার ঔরস৷ পাহাড়ের চূড়ায় পূর্ণ সময়ের বিন্যাস আর পূর্ণ আলোকরাশি আত্মার উন্মেষ সাকার।
এমনভাবেই দীর্ণতা আলোকে মুছতে পারে নি। স্মৃতিচারণে বাসনাবালা বললেন একদিন তেল মাখাতে মাখাতে তিনি আলোর ফুলকির সহচর হতেই দেখলেন মা সাকারেই দেহ ধারণ করে আছেন। প্রশ্ন করলে বললেন তিনিই দুর্গা, তিনিই জগদ্ধাত্রী, তিনিই সরস্বতী, তিনিই কালী। আসলে নারী মানেই যে শক্তি। আমরা অলৌকিক বললেও আসলে সবটুকুই আধ্যাত্মিক পরিমণ্ডলের এগিয়ে থাকা মানুষের প্রতিমূর্তি। ঘর ছোটো কিংবা বড়ো, কিন্তু কৃচ্ছ্রতাপূর্ণ যাপন হলো আধ্যাত্মিকতা। তবে শ্রীমা বেশীরভাগ সময়েই নীরব ছিলেন। একদিনের আঁকা তুলির যাপন তো জীবন নয়, বরং অনিত্য কে আবছা রেখে নিত্যের পথে এগিয়ে চলাটাই জীবন। স্বয়ং আলোর বীজ কি লুকিয়ে থাকে দীর্ণতায়! তরঙ্গের ঢেউ যে আছড়ে পড়বেই। এমনটাই হলো, বলরাম বসুর গৃহিণী কৃষ্ণভাবিনী দেবী শ্রীমার সঙ্গে দেখা করেন। পথের ধারে অচেনা ফুল তো সৌরভেই স্থান পায়, ব্রাত্য হয় সাধারণী - আলো নয়।
ইতিহাস বলছে পারিবারিক বিদ্বেষ এবং বিচ্ছেদ রামলাল দাদা আর লক্ষ্মীদির সাথ ও শ্রীমাকে আহত করে। কারণ হঠাৎ রামলালদা বাড়ির ও গৃহদেবতার পৃথক বন্দোবস্ত করে দক্ষিণেশ্বরে চলে যান। শ্রীরামকৃষ্ণের কাছে যাতায়াত করতো হরিশ নামে এক ভক্ত। ভক্ত হরিশকে এইভাবে আসা যাওয়ার কারণে হরিশের স্ত্রী ঔষধ খাইয়ে দেন৷ হরিশ তখন পাগল৷ পাগল হয়ে সে মায়ের পিছু পিছু ছুটে যায়। সাত বার ধানের গোলাতে চরকিবাজির মতো ঘোরাতেও যখন সে ঠাণ্ডা হয় নি, তখন মা নিজ মূর্তি ধারণ করেন। মা বুকে হাঁটু দিয়ে, জিভ টেনে ধরেন; তারপর কষিয়ে এক থাপ্পড় দেন। পুরুষটি আদিম পাশবিকা ছেড়ে নিরুত্তর হয়ে থাকে শিহরণে। পরবর্তী কালে শোনা যায়, হরিশ নাকি স্বামী নিরঞ্জনান্দের ভয়ে বৃন্দাবনে পালিয়ে যায় ও ধীরে ধীরে প্রকৃতস্থ হয়। শতেক যন্ত্রণা, কম বয়সি শিষ্যদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ কথাবার্তা ছেড়ে পট পরিবর্তন করে স্থান ; মা হাঁড়ি উথলানো খিদে কে নয়, ভক্তি ও আধ্যাত্মিকতার আলোর মানবী হয়েই মা রূপে কলকাতায় সকলের "মা" হয়ে রইলেন। তবে চেতনাকে শুদ্ধ করে, দুঃখকে চোখে জলের ধারায় তিনি বইতে না দিয়ে, পরবর্তীতে জয়রামবাটীতে স্বীয়শক্তির সাধনক্ষেত্র রূপে স্থান করে নেন।
"যদি শান্তি চাও কারও দোষ দেখো না, দোষ দেখবে নিজের। জগৎকে আপনার করে নিতে শেখ। কেউ পর নয় , জগৎ তোমার। "
সময়টা ১৯৯৫। সামাজিকে পরিবর্তন এসেছে গ্রামগুলিতে। মমতার সম্পর্ক নেই কেবল সাধু আকর্ষণ। সব কিছুকেই যেন আত্মহনের কালোকর্কশ পৃথিবী গিলে খায় অন্ন বস্ত্রের দাবি। আর ঠিক তখনই স্মৃতিচারণে শ্রীমার সঙ্গী বাসনাবালা। বাসনাবালার নাম যখন উঠলো তখন পরিচয়টা পরিচিতি পাক সময়ের পরিসরে। তাঁর জন্ম ১৮৯৯ খ্রীস্টাব্দ। ইতিহাস বলছে, ১৯৬৮ তে দক্ষিণ আফ্রিকার দেশ সোয়াজিল্যাণ্ড বৃটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে। ১৯৬৫ তে প্রথম পাক ভারত যুদ্ধ শুরু হয়। তাই সমাজের রূপ বদলাবে এটা তো নতুন কথা নয়। বাল্যবিবাহ তখন অব্যাহত। মাত্র সাত বছরেই হৃষীকেশ নন্দীর সাথে তাঁর বিবাহ হয়। এই বিবাহ এবং বিধবা পরিণতি যে, সমাজের আরো এক নগ্ন দিক প্রকাশ করে ব্যর্থ ফিরিয়ে সমাজ, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। এই বাসনাবালা একদিন শ্রীশ্রী মায়ের কথা বলতে গিয়ে বললেন, শ্রীমা যখন প্রথম প্রথম কামারপুকুরে আসেন,একদিন বাসনাবালা স্বপ্ন দেখেন যে শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ বলছেন, "কাল হালদার পুকুরে যাবি। দেখবি এক মেয়ে কচু শাক তুলে উপরে উঠতে যাবে আর হোঁচট খাবে। তুই তাঁর সেবা কর,তোর ভালো হবে। " স্বপ্নাদেশ পেতেই বাসনাবালা স্বপ্ন অনুসারে ঘাটে যেতেই দেখলেন, শ্রীমাকে। শান্তভাবে তিনি বাছা বলে বাসনাবালাকে বুকে টেনে নিলেন এবং বললেন, "চলো! আজ থেকে তুমি আমার কাছে থাকবে। আমিই মা " সময়ের সাথে হাতে হাত রেখে নির্জনবাসে মায়ের সাথেই সঙ্গী হলেন বাসনাবালা।
বংশপরম্পরার উৎসর্গের পত্রে শ্রীরামকৃষ্ণের মধ্যমভ্রাতা রামেশ্বরের পুত্র শিবারামের ভিক্ষে মা ছিলেন শ্রীমা৷ স্বভাবসিদ্ধ প্রেম আর নয়নতারার পেলব পাপড়ি স্নেহের অনুরূপ শ্বেতজবা যেন মায়ের প্রতিরূপ। উদ্বেগের ঝড়, আড়ালে আবডালে রাখা ভিজে শোক কোনভাবেই তাঁকে আক্রমণ করতে পারে নি। মা নিজে হাতে তখন বুনেছেন জমির বুকে আনন্দ সবুজ পাতা। লক্ষ্মীদিদির সেই পদলেহনে মা সংক্ষিপ্তের রোদ্দুরে দাগকে মেনে নিয়েছিলেন। ফিরতি পথে বৈরাগী অবমাননা তো আত্মায় লাগে না, বরং হৃদয় থেকে সরিয়ে দিতে হয়৷ বাসনাবালাকে লক্ষ্মীদেবী নাকি বড়ো অপমান করতেন। বলতেন " কেন কষ্ট করে পড়ে আছিস! " মায়ের তো শখের প্রেম ছিল না বাসনায়, তাই লক্ষ্মীর ধান তো নশ্বর জীবনের স্বাদ। যে ঠাকুর চলে গেছেন সেই শোনিত ধমনীতে আর আলো কোথায় যে, মা তুচ্ছ বিনিময়ে দ্বন্দ্ব করবেন! পরম আত্মীয় বলতে বাসনাবালা কিছু মানুষের নাম করেন, দুঃখীরাম, মোড়লদের নটবর, লায়েকের শিবপ্রসাদ, লাহাবাড়ির প্রসন্নময়ী৷ মাকে তাঁরা প্রণাম করলে, মা ফিরিয়ে দিয়ে বলতেন, "তোমরা যে ঠাকুরের সাথী, তোমাদের প্রণাম কী করে নিই?"
মা, প্রিয় বাসনাবালাকে বলতেন, "তোর হারালেও খুইতে নেই, ম'লেও কাঁদতে নেই। " ঘন কালো কেশ বরণে, মা যেন আকাশে ছবি এঁকে যান। পেলব মাখা স্নেহে কোনো বিভাজনের চিহ্ন ছুঁতে পারেনি কোনোদিন। ঠাকুরের ভক্তি প্রেমের ঘরে কোনো ভেদাভেদ ছিল না বলেই, মায়ের কাছেও কামারপুকুরের ভুতু শেখ, মান্দারণের মিঞারা আসতেন। লোকে কথা বললেও, ও ছিল আগাছার ঔরস৷ পাহাড়ের চূড়ায় পূর্ণ সময়ের বিন্যাস আর পূর্ণ আলোকরাশি আত্মার উন্মেষ সাকার।
এমনভাবেই দীর্ণতা আলোকে মুছতে পারে নি। স্মৃতিচারণে বাসনাবালা বললেন একদিন তেল মাখাতে মাখাতে তিনি আলোর ফুলকির সহচর হতেই দেখলেন মা সাকারেই দেহ ধারণ করে আছেন। প্রশ্ন করলে বললেন তিনিই দুর্গা, তিনিই জগদ্ধাত্রী, তিনিই সরস্বতী, তিনিই কালী। আসলে নারী মানেই যে শক্তি। আমরা অলৌকিক বললেও আসলে সবটুকুই আধ্যাত্মিক পরিমণ্ডলের এগিয়ে থাকা মানুষের প্রতিমূর্তি। ঘর ছোটো কিংবা বড়ো, কিন্তু কৃচ্ছ্রতাপূর্ণ যাপন হলো আধ্যাত্মিকতা। তবে শ্রীমা বেশীরভাগ সময়েই নীরব ছিলেন। একদিনের আঁকা তুলির যাপন তো জীবন নয়, বরং অনিত্য কে আবছা রেখে নিত্যের পথে এগিয়ে চলাটাই জীবন। স্বয়ং আলোর বীজ কি লুকিয়ে থাকে দীর্ণতায়! তরঙ্গের ঢেউ যে আছড়ে পড়বেই। এমনটাই হলো, বলরাম বসুর গৃহিণী কৃষ্ণভাবিনী দেবী শ্রীমার সঙ্গে দেখা করেন। পথের ধারে অচেনা ফুল তো সৌরভেই স্থান পায়, ব্রাত্য হয় সাধারণী - আলো নয়।
ইতিহাস বলছে পারিবারিক বিদ্বেষ এবং বিচ্ছেদ রামলাল দাদা আর লক্ষ্মীদির সাথ ও শ্রীমাকে আহত করে। কারণ হঠাৎ রামলালদা বাড়ির ও গৃহদেবতার পৃথক বন্দোবস্ত করে দক্ষিণেশ্বরে চলে যান। শ্রীরামকৃষ্ণের কাছে যাতায়াত করতো হরিশ নামে এক ভক্ত। ভক্ত হরিশকে এইভাবে আসা যাওয়ার কারণে হরিশের স্ত্রী ঔষধ খাইয়ে দেন৷ হরিশ তখন পাগল৷ পাগল হয়ে সে মায়ের পিছু পিছু ছুটে যায়। সাত বার ধানের গোলাতে চরকিবাজির মতো ঘোরাতেও যখন সে ঠাণ্ডা হয় নি, তখন মা নিজ মূর্তি ধারণ করেন। মা বুকে হাঁটু দিয়ে, জিভ টেনে ধরেন; তারপর কষিয়ে এক থাপ্পড় দেন। পুরুষটি আদিম পাশবিকা ছেড়ে নিরুত্তর হয়ে থাকে শিহরণে। পরবর্তী কালে শোনা যায়, হরিশ নাকি স্বামী নিরঞ্জনান্দের ভয়ে বৃন্দাবনে পালিয়ে যায় ও ধীরে ধীরে প্রকৃতস্থ হয়। শতেক যন্ত্রণা, কম বয়সি শিষ্যদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ কথাবার্তা ছেড়ে পট পরিবর্তন করে স্থান ; মা হাঁড়ি উথলানো খিদে কে নয়, ভক্তি ও আধ্যাত্মিকতার আলোর মানবী হয়েই মা রূপে কলকাতায় সকলের "মা" হয়ে রইলেন। তবে চেতনাকে শুদ্ধ করে, দুঃখকে চোখে জলের ধারায় তিনি বইতে না দিয়ে, পরবর্তীতে জয়রামবাটীতে স্বীয়শক্তির সাধনক্ষেত্র রূপে স্থান করে নেন।
"যদি শান্তি চাও কারও দোষ দেখো না, দোষ দেখবে নিজের। জগৎকে আপনার করে নিতে শেখ। কেউ পর নয় , জগৎ তোমার। "
Post A Comment:
0 comments so far,add yours