শেখ ফরিদ, প্রগতিশীল লেখক, বাংলাদেশ:

এ মুহুর্তে যদি  প্রশ্ন করা হয় আফগানিস্তান বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে কোন  দেশের জনগণ তুলমামূলক বাকস্বাধীনতা বেশি ভোগ করছে? এবং এই চার দেশের কোন দেশে সংখ্যালঘুরা তুলনামূলক বেশি নিরাপদ? আপনি মানুন বা না মানুন, সত্য এই যে, দুটিরই উত্তর হবে ভারত। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সংখ্যালঘুদের  অতীত ও বর্তমান সংখ্যাই বলে দেয় সংখ্যালঘুরা কত অনিরাপদ। আফগানিস্তানে সংখ্যালঘুরা  কেমন আছে এবং বাকস্বাধীনতার অবস্থা কি সারা পৃথিবীর সবাই তা জানে। এ নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই।

সিএএ নিয়ে পথে আন্দোলনে নেমেছে, বামপন্থী দলগুলো। বিরোধীতা করেছে, কংগ্রেস,  তৃনমূল কংগ্রেস তথা মমতা ব্যানার্জির দল। মমতা ব্যানার্জির দল এ জন্য বললাম যে, ঢাকার লোকেরা অনেকেই মমতা ব্যানার্জির নাম জানলেও তার দলের নাম সে তুলনায় খুব কমই জানে। যেমন এ বাংলাদেশের মানুষ এত দিনে শুনেছে এনআরসির কথা। যদিও এটা অনেক আগে রাজীব গান্ধী তথা কংগ্রেস সরকারের পদক্ষেপ ও প্রতিশ্রুতি ছিলো। খোদ কংগ্রেস এখন এর বিরোধীতা করে চলছে! তেমনি এ দেশের মানুষ সিএএ এতদিনে শুনেছে। কিন্তু বিজেপি যে তার নির্বাচনি ম্যানিফেষ্টোতেে এ সব বিষয় উল্লেখ করে ছিলো। তা কেউ বলছে না। বিজেপির এই  এনআরসি,  সিএএ র পদক্ষেপ ভুল নাকি শুদ্ধ তা আগামীদিনের ইতিহাস বলে দেবে। তবে বিজেপি আর যাইই হোক ভন্ড নয়। তারা যা করতে যাচ্ছে তা আগেই বলে দিয়েছে নির্বাচন ম্যানিফেষ্টোর মাধ্যমে। সে হিসেবে ভারতের কোন কোন দল ও ব্যাক্তি  ভন্ডামির আশ্রয় নিয়েছে তা পরিস্কার। মমতা ব্যানার্জি যখন রাজ্যে ক্ষমতায় ছিলেন না, তখন অভিযোগ করেছিলেন অনুপ্রবেশকারীদের ভোটে বামফ্রন্ট জয়ী হয়। এখন অনুপ্রবেশকারীদের পক্ষে!  সম্ভবত এটাই রাজনীতিকদের চরিত্র যা নিজে করলে কৃষ্ণ লীলা অন্যে করলে ঢং।আরো মজার বিষয় লোকসাভায় তথা ভারতীয় সংসদে মমতা ব্যানার্জির দলের ২২ জন সাংসদের মধ্যে ৮ জন সিএএ এর বিরুদ্ধে লোকসভায় ভোট প্রদানে বিরত ছিলো! এটাও অনেকে ভুলে গেছে বা মিডিয়া এ নিয়ে কমই কথা বলছে।

বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, পাকিস্তান থেকে নিপীড়িত সংখ্যালঘুদের ভারতের বর্তমান সরকার নাগরিকত্ব দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাও আবার নিদৃষ্ট সময় ও শর্ত বেধে দেয়া আছে। এই নীতির বিরোধীতা করতে গিয়ে ভারতের বামপন্থী ও কংগ্রেস বলছে, এটা সাম্প্রদায়িক চিন্তা ও কাজ। কেন নির্যাতিত মুসলমানদের নাগরিকত্ব দেয়া হচ্ছে না! অদ্ভূত বিষয়। মুসলিমরা কি তবে মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ দেশে নির্যাতিত?  এটা কি  আর এক  নতুন অভিযোগ করা হলো না, বাংলাদেশ পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে?  আর নির্যাতিত কে আশ্রয় দিলে নির্যাতনকারীকেও আশ্রয় দিতে হবে একই ঘরে, এমন দাবিকে কি বলবো? বিচিত্র, বিস্ময়কর নাকি বদমাইশি দাবী?  ঢাকার কিছু বন্ধুও এমন দাবি করেছে। যদি ঢাকার বন্ধুদের পাল্ট প্রশ্ন করা হয়, আপনারা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছেন ভালো কথা, এবার রোহিঙ্গাদের নিপীড়নকারীদেরও আশ্রয় দিচ্ছেন না কেন? তাহলে তাদের উত্তর কি হবে?  ভুলে গেলে চলবে না,  পাকিস্তানের মানবাধিকার কমিশনেরই রিপোর্ট প্রতিবছর ১ হাজারের বেশি সংখ্যালঘু নারী অপহৃত হয় পাকিস্তানে! এমন কি ধর্মান্তরীত হওয়ারব হার ও বয়স দেখে পাকিস্তানের আদালতই পাল্টা প্রশ্ন তুলেছে কেন কেবল কম বয়সি হিন্দু  কিশোরীরই ধর্মান্তর ঘটে?
তিনটি মুসলিম প্রধান দেশের সংখ্যালঘু  হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান, শিখ, জৈন ও পার্সিদের ভারত নাগরিকত্ব দিতে যাচ্ছে এর ভালো বা মন্দের দিকের চেয়ে  বেশি সমস্যা ভোট ব্যাংক রাজনীতি। সম্ভবত  কংগ্রেস,  তৃণমূল কংগ্রেস  ও বামপন্থীরা মনে করছে এই নিপীড়িত সংখালঘুরা যদি ভারতের নাগরিক হয়ে যায় এর সব ভোট ই বিজেপির বাক্সে পরবে। কেন না, ইতমধ্যেই উল্লেখিত তিন রাজনৈতিক শক্তি সম্মিলিত ভাবেও বিজেপিকে ঠেকাতে পারছে না। তার উপর সিএএ হলে তো বিজেপি আরো সুবিধাজনক অবস্থায় থাকবে। মূল বিষয়টা এখানেই। মুসলিমদের পক্ষ নেয়ার নামে ঐ তিন দল আসলে ভোট ব্যাংক ঠিক রাখার অকৌশল নিয়েছে মাত্র। ঐ তিন দল ভারতীয় মুসলিমদের পক্ষে নেয়ার নামে মুসলিমদের আরো পিছিয়ে রেখেছে তার ভুরি ভুরি প্রমান রয়েছে।  ৫৫ বছর কংগ্রেস দিল্লীর মসনদে ছিলো। তখন তারা  ভারতীয় মুসলিমদের কি ঘরে বসে খাইয়েছি নাকি? মুসলিমদের শিক্ষা দীক্ষায় কেন এগিয়ে নেয় নি। নাকি নরেন্দ্র মোদী ছয় সাত বছরেই মুসলিমদের পিছিয়ে দিয়েছেন? হায়াদারাবাদের আর এক সাম্প্রদায়িক রাজনীতিক আসাদ ওয়াইসি নিজে সাম্প্রদায়িক  দলের প্রতিনিধিত্ব করে বিজেপিকে সাম্প্রদায়িক দল বলে চিৎকার করে থাকেন! এ যেন সূঁই বলে,   চালুন তুই  কেন ছ্যাদা ।  ৪৪০ লোকসভার আসনের দুটো পেয়েই মনে করেন তিনি ভারতের মালিক বনে গেছেন। যদিও তার  রাজ্যে, রাজ্য সভার একটি আসনও তার তার দল দখল করতে পেরেছে কি না সন্দেহ। নিজে লন্ডন থেকে পড়া লেখা করে এসে অন্যদের মাদরাসায় পড়ার নসিহত দিয়ে থাকেন। যাতে ঠিকমত নিজ সম্প্রদায়ের মাথার  উপর কাঠাল ভেঙ্গে খেতে পারেন!

সেই যাই হোক,  আমি মনে করি  আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মুক্তচিন্তকদেরও ভারতে নাগরিকত্ব ও আশ্রয় দেয়া উচিত। কেন না, ভারতবর্ষ প্রচীনকাল থেকেই ভিন্ন মত পথের ধারক ও বাহক। উক্ত তিন দেশে মুক্ত চিন্তকদের জীবন সংখ্যালঘুদের থেকেও বেশি অনিরাপদ। ঐ দেশগুলোতে মুক্তচিন্তার চর্চার সুযোগ সীমিত ছিলো, দিনে দিনে  মুক্তবুদ্ধির চর্চার সুযোগ আরো সীমিত হয়ে আসছে। ভারতীয় সভ্যতাই পৃথিবীর এক মাত্র সভ্য তা যেখানে নাস্তিক্যবাদ অপরাধ বলা হয়নি৷ চার্বাকদর্শন তার প্রমান। এ ছাড়া খোদ স্রষ্টার অস্তিত্বের উপর প্রশ্ন উত্থাপনও পাপ বলা হয়নি ভারতীয় সভ্যতা ও শিক্ষায়। হত্যা করার কথা বলা হয়নি মুক্তচিন্তকদের। যা অন্য যে  কোন ধর্মে  তা অগ্রনযোগ্য এবং ভয়ংকর অপরাধ। এই উপমহাদেশের সব মানুষই ভারতীয় সভ্যতার অংশ।  নাগরিক শব্দটির উৎপত্তিই হওয়ার আগেই প্রচীন গ্রন্থসমূহের মতে, এ উপমহাদের সব মানুষ ভারতের সন্তান। 

নির্যাতিতদের তো বটেই, আমার মতে  অন্তত  বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের কেউ যদি  ভারতের নাগরিকত্ব চায় তাকে তা দেয়া উচিত। যদি সে এবং নিজেকে ভারতের সন্তান মনে করে। আমি মনে করি বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মুক্তচিন্তকদের সকলের আগে ভারতের নাগরিকত্ব দেয়া উচিত। যা সিএএ তে উল্লেখ নেই। অথচ মুক্ত চিন্তকেরা বেশি অনিরাপদ সংখ্যালঘু হিন্দু, বৌদ্ধ খৃষ্টান জৈন পার্সী থেকেও। এবং মুক্তচিন্তকেরাই ভারতীয় সভ্যতাকে সবার সামনে তুলে ধরতে পারবে উত্তম পন্থায়। তাই  ভারতের বর্তমান সরকারের উচিত মুক্ত চিন্তকদের আশ্রয় দেয়া। যদিও সিএএতে সে সুযোগ নেই, কেন না আইনটি যথারীতি সংসদে পাস হয়ে গেছে। এবং ভারতের রাষ্ট্রপতি তাতে স্বাক্ষরও করেছেন গত মাসে।

তবে ভারতকে  ভাবতে হবে নতুন করে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মুক্তচিন্তকদের নিয়ে। কেন না,ভারতীয় সভ্যতার অনেক বিষয়ই গবেষণার বাইরে রয়েছে। যেমন,  ন্যাশনাল মিউজিয়ামে রক্ষিত আছে  লাখ লাখ হস্তলিপি। অথচ গ্রিসের হস্তলিপি পাওয়া গেছে  মাত্র ত্রিশ হাজার! আবার বলছি বাংলাদেশ পাকিস্তানের মানুষ ভারতীয় সভ্যতার অংশ। কেউ মুক্ত চিন্তার জন্যও নির্যাতিত হয়ে থাকে অথবা স্বেছায় ভারতে আসতে চাইলে এবং ভারতীয় সভ্যতার ধারক বাহক হলে তাকে নাগরিকত্ব দেয়া উচিত।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours